Forums.Likebd.Com

Full Version: ঢাকায় প্রেমের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
অত্যাধুনিক সাজসজ্জা। বাইরে বর্ণিল আলোকচ্ছটা। ভেতরে আবছা অন্ধকার। আলো-আঁধারির মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা জুটিদের আড্ডা-মাদকতা। রাজধানীর ‘প্রেমপাড়া’ বলে খ্যাত খিলগাঁও তালতলা এলাকার চাইনিজ রেস্টুরেন্টপাড়ার চিত্র এটি। একটি বা দুটি নয়, একই এলাকায় এমন রেস্টুরেন্ট আছে শতাধিক। একটির পাশে আরেকটি। একই ভবনে একাধিক এমন রেস্টুরেন্ট থাকার কারণে এলাকার লোকজনের কাছে এটি চাইনিজপাড়া নামেই পরিচিত ছিল। কিন্তু হাল আমলের প্রেমিক-জুটির আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় এখন এলাকাবাসী নাম দিয়েছে প্রেমপাড়া। এসব রেস্টুরেন্টে কারা যায় তা খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এখানকার মূল গ্রাহক। তালতলা মার্কেটের সামনের প্রধান সড়কের দুই পাশ থেকে শুরু করে আলমদিনার মোড় পর্যন্ত অল্প পরিসরের জায়গার মধ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। শুক্রবার ছুটির দিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায় মানুষের ঢল। ছুটির দিনে প্রিয়জনের সঙ্গে একটু ভালো সময় পার করার জন্য ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন অনেকেই।

দিল্লি দরবার রেস্টুরেন্ট, বেইলি পিঠাঘর, এফএফসি, স্টার চিকেন, এমএফ জি, আমেরিকান বার্গার, বেসিলকো, ক্যাফে কাঠমান্ডু, ক্যাফে রেডচিলি, স্টার বার্গার, কফি লাইমডটকম, লাফিসতা, হিলস চিকেন, এমএল বার্গার, ফ্লেভার স্ট্রিট, ব্রেড অ্যান্ড বিয়ন্ড, এক কাপ চা, আপন কপি হাউজ, বন এপিটিট, ভূতের আড্ডা, ফ্যান্টাসিয়া ফুড, স্যালুব্রে মেক্সিকান ট্যাকে, গলপিয়া বার্গার, ম্যাংগো টি, ক্যাফে চেরি ড্রপস, অলিভারস রেস্টুরেন্ট, এপেলিয়ানো, ট্রেডিশনাল বিডি, পেপইয়েস, ঠান্ডা গরম, সাব লাভারস, ক্যাফে ৫, সিক্স, ৭, প্রেসলি দা বেকার, ফুড ক্রাফট, খাদক ডটকম, ডরজো, চিপ অ্যান্ড ট্রিপ, চিকেন, বিএফসি, পেটুক, শর্মা রেস্টুরেন্ট কিং, ব্লুমেন, রয়েল অর্চিড, টুনিক বাইট, কমিক ক্যাফে, কাবাব ইন্ডাস্ট্রি, গ্রিন্ড হাউজ, ফাইভ স্টার, দ্য ডাইনিং জোন, ইন্ডিয়ান এন্ড ম্যাক্সিকান ফুড, গোল্ডেন গেইট, ক্যাপসিকাম, মেনিশা চাইনিজ, চাইনিজ ওয়ার্ল্ড, ইউমি ইউমি, মুন কাবাব, চাপ সামলাও, ফাইভ স্টার নামের প্রত্যকটি রেস্টুরেন্টে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মচারীরা।

বিয়ে, জন্মদিন, সুন্নতে খাতনা, বিবাহবার্ষিকীর পার্টি হচ্ছে। আবার ছোট পরিবার, বড় পরিবারের ফ্যামিলি পার্টি চলছে। তার পাশাপাশি উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের আগমনের ফলে রেস্টুরেন্টের বাইরে রাস্তার ওপর মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, রিকশা সিএনজি আর পায়ে হাঁটা মানুষের ভিড়ে পা রাখার জায়গা নেই।

সরজমিন দেখা যায়, রেস্টুরেন্টের ভিতরে মানুষের যেমন ভিড়, অন্যদিকে বাইরে রাস্তার দুপাশে ভাসমান ফাস্টফুডের দোকানগুলোতেও ভিড়। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের আনাগোনাই এখানে বেশি। সুসজ্জিত এসব রেস্টুরেন্টের ভিতরে প্রেমিক জুটিদের আড্ডা, গল্পে সময় পার করতে দেখা গেছে।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোকাররম হোসেন বলেন, আমাদের আড্ডা দেয়ার নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। আগে হাতিরঝিলে আড্ডা দিতাম। এখন আর সেখানে যাই না। কারণ, হাতিরঝিলের পরিবেশ এখন তেমন ভালো না। এখানে আমাদের কোনো ঝামেলা হয় না। কারণ, এখানে সব ভদ্রঘরের ছেলেমেয়েরা আসে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিই, খাওয়া দাওয়া করে বাসায় চলে যাই।

শিক্ষার্থী হাসান মেহেদী ও নুশরাত ইমরুল নিশি বলেন, আমরা ধানমন্ডি থেকে আড্ডা দিতে এসেছি। অনেকের মুখে শুনেছি এই চাইনিজপাড়ার কথা। আগে কখনো আসিনি। আজই প্রথম এলাম। ভালোই লাগছে এখানকার পরিবেশ। খাবারের মানও অনেক ভালো। দামও অনেক সস্তা। হেসে হেসে নুশরাত ইমরুল নিশি বলেন, আড্ডার ভালোই একটা জায়গা পাওয়া গেল। তন্ময় ও শিমলা বলেছেন একই কথা। আশপাশে আড্ডার ভালো জায়গা না থাকায় আমরা প্রায়ই এখানে আসি। ভালো মানের খাবারও এখানে পাওয়া যায়। আমরা বন্ধুবান্ধব সবাই এখানে আসি। একাধিক জুটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের সব ডেটিং স্পটের অবস্থা খারাপ। হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান, রমনা পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, রবীন্দ্র সরোবর, ধানমন্ডি লেকসহ অন্যান্য বিনোদন স্পটগুলোতে বসার মতো পরিবেশ নেই।

ক্রেতার ঢলে দম ফেলার সুযোগ পান না এখানকার রেস্টুরেন্ট কর্মীরা। ভ্রাম্যমাণ পান সিগারেট ব্যবসায়ী জামিল মিয়া বলেন, আমি অনেকদিন এই রাস্তায় ব্যবসা করি। কিছুদিন ধরেই এ জায়গাটা জমজমাট হয়ে গেছে। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বেশি দেখা যায়। অনেকে কলেজের ড্রেসও পরা থাকে। একের পর এক জুটি ভিতরে ডুকে আর তিন চার ঘণ্টা পর বের হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ জায়গাটা এখন প্রেমপাড়া হয়ে গেছে। সারা দিন এখানে ছেলেমেয়েরা আসা যাওয়া করে। পড়ালেখা ফাঁকি দিয়ে এখানেই তারা সময় কাটায়। যেন এখানেই তাদের ঘরবাড়ি, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে এ জায়গার পরিবেশ একসময় গুলশান বনানীকে হার মানাবে।

গোল্ডেন গেট রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মিজানুর রহমান মিজান জানান, এখানে চাইনিজ, ইটালিয়ান, আমেরিকান, থাই, মেক্সিকান, ইন্ডিয়ান, বাংলাসহ সব ধরনের খাবারের আইটেম পাওয়া যায়। সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার খুব বেশি চাপ থাকে। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে দম ফেলার ফুসরত থাকে না। আর অন্য দিনগুলোতেও ভালো বিক্রি হয়। বিশেষ করে ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা আড্ডা দেয়ার জন্য এখানে চলে আসে। তিনি বলেন, গুলশান হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার পর থেকে আবাসিক এলাকায় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। যদি এটা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কয়েক হাজার লোক কর্মসংস্থান হারাবে। সূত্র: মানবজমিন