Forums.Likebd.Com

Full Version: সোনালী মোড়কে মোড়া কষ্ট গুলো
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
অপূর্ব সুন্দর চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে ঘর। আটপৌরে
মশারীর শরীর গলে সেই আলো চুইয়ে এসে পড়ছে বিছানায়।
তার পাশে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা রুপার মুখটা জোছনার
আলোতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে দ্বীপ। পালিয়ে যাবার আগের
রাতে হয়তো কোন মানুষই ঘুমাতে পারেনা।
হ্যাঁ, আগামীকাল সন্ধ্যায় পালিয়ে যাবে দ্বীপ। চলে যাবে এই
মায়ার বাঁধন ছেড়ে। বড় পলকা হয়ে গেছে এই বাঁধন। নিজ থেকে
কোন সময় ছিঁড়ে গিয়ে কিছু তিক্ততা সৃষ্টি করার আগেই
পালিয়ে যাচ্ছে সে। যদিও সে নিজে ছাড়া ব্যাপারটা আঁচ করতে
পারছেনা কেউই। সব কিছুই চলছে ঘড়ির কাঁটা ধরে নিখুঁত
ভাবে। নিজে কিছুটা এলোমেলো চললেও তার আশপাশটা
গুছিয়ে রাখার, সামলে চলার চেষ্টা করে সে। কিছু কিছু
পরিকল্পনা ঠাণ্ডা মাথায় বাস্তবায়ন না করলে বড় ধরণের
ভুল থেকে যাবার সম্ভাবনা থাকে, এক্ষেত্রে সে কোন ভুল
করতে চায় না। তাই গত এক বছরে একটু একটু করে সে এগিয়েছে
তার প্লান মাফিক। আগামীকাল সেই প্ল্যানের চূড়ান্ত দিন।
ভালবাসা অদ্ভুত এক বাঁধন। অজানা অচেনা একটা মানুষকে কি
ভয়াবহ আকর্ষণে কাছে টেনে আনে ভালবাসা। তার কাছে মন
খুলে সব কিছু বলা যায়, পরম নির্ভরতায় ধরা যায় তার হাত।
নিজের সুখটা গৌণ হয়ে দাঁড়ায় তখন, তার জন্য কিছু একটা
করতে পারলে জীবন সার্থক মনে হয়। পাগলের মত তার
মায়াভরা মুখটা, হাসিটা, চোখের তারায় ভালবাসাটুকু দেখতে
ইচ্ছে করে। মনে মনে অস্ফুটে হাজারবার বলতে ইচ্ছে করে –
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি …
প্রথম দেখায় কি প্রেম হয়? হয় না আসলে। শুধু আকর্ষণ
জন্মে, মায়া তৈরি হয়। ডিমের ভেতরের কুসুমের মত, তুলতুলে
গাঢ় মায়া। তার চারপাশে তখনও অনিশ্চয়তার মেঘ। হয়তো
ভালবাসা হবে, হয়তো না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম দেখার
ভাল লাগাটুকু অব্যক্তই থেকে যায়। কিছুদিন মন অশান্ত
থাকে, পরে এক সময় এই সময়র কথা চিন্তা করে হাসি পায়।
ঠিক এমনটাই কিন্তু হতে পারতো দ্বীপের জীবনে। কিন্তু
হয়েছে তার উল্টোটা। প্রথমবার রুপাকে দেখার পর তার মাঝে
কোন প্রতিক্রিয়াই তৈরি হয়নি। আর দশটা সদ্য পরিচিত
মেয়ের বাইরে কিছুই মনে হয়নি সাদা জামা পড়া, লিকলিকে
মেয়েটাকে। স্বভাব সুলভ ভাবে দূরত্ব বজায় রেখে গেছে, কথাও
বলেনি বেশী। কিন্তু পরিচয়ের কয়েকদিনের মাথায় দ্বীপের
মনে হয়েছে এই মেয়েটা ভেতর ভেতর অনেক একা। তার সাথে
থাকা চটপটে আধুনিক মেয়েগুলোর মত প্রগলভ নয় সে, নয়
জামা কাপড়ে উগ্র আধুনিকা। তবুও কেমন যেন একটা স্নিগ্ধতা
ঘিরে থাকে রুপাকে। এখনও সেই স্নিগ্ধতাটুকু ঘুমন্ত রুপার মুখে
এখনও দেখে দ্বীপ। তার খুব ইচ্ছে করে রুপার গোলাপ ঠোঁটে
একটা চুমু খায়, কিন্তু না, সেদিনের সেই রুপা আর আজকে তার
ঘুমন্ত স্ত্রী রুপার মাঝে যোজন যোজন তফাত।
কি আশ্চর্য সুন্দর ছিল সেই সময়গুলো। প্রতিদিন খুব
সকালে উঠে গোসল সেরে বেড়িয়ে যাওয়া। এরপর এক সাথে
ব্রেকফাস্ট করে রুপাকে ক্লাসে পৌঁছে দিয়ে ক্লাসে যেতো
দ্বীপ। যার আগে ক্লাস শেষ হতো, সে অপেক্ষা করতো
অন্যজনের জন্যে। ক্লাসমেটরা খেপাতো দুজনকেই। তাতেও
লজ্জা মাখা আনন্দ ছিল। প্রতিটা দিন যেন নতুন আনন্দে
ভরে থাকতো। সবার চোখ এড়িয়ে হাত ধরা, পাশাপাশি হাঁটার
সময় একটু বেশী কাছে চলে আসা। দ্বীপের হাত জড়িয়ে ধরে
নিশ্চিন্ত পদক্ষেপে চলা রুপার অস্তিত্ব, রুপার সুগন্ধ খুব
বেশী ভাল লাগতো তখন। এখনও লাগে, এখনও সদ্যস্নাতা
রুপাকে সুযোগ পেলেই জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে দ্বীপ, ফলাফল
বেশীর ভাগ সময়েই – এক ধাক্কায় কুপোকাত। নাহ … রুপাকে
সে কিছুই বুঝতে দেয়নি। মেয়েটা জানতেও পারেনি কত বড়
ক্ষতি সে করে ফেলেছে।
সম্পর্কের ছয় মাসের মাথায় যেদিন রুপা ওকে বললো “চলো
বিয়ে করে ফেলি”, শুনে দ্বীপ কেমন যেন একটা ধাক্কা
খেয়েছিল মনে মনে। প্রেম আর বিয়ের মধ্যে অনেক তফাত।
প্রেম তো শুধু মুক্ত বিহঙ্গের মত ওড়া উড়ি, আর বিয়ে
অনেক বড় একটা দায়িত্ব। আমাদের সমাজে নিজের পছন্দের
ছেলে বা মেয়ের ব্যাপারে বাবা মাকে রাজী করানোটাই দূরহ
ব্যাপার। কোন এক অজানা কারণে বাবা মা সব সময়েই ধরে
নেন যে তার সন্তানের পছন্দের ছেলে বা মেয়েটি মোটেও ভাল
না। এই অবস্থা থেকে তাদের রাজী করানোতে অনেক কাঠ খড়
পোড়াতে হয়। তারপর শুরু হয় আত্মীয়স্বজনের আজব সব
যুক্তি দিয়ে বিয়ে বন্ধ করবার পায়তারা। কখনও মেয়ের বাবার
দূর সম্পর্কের ভাইয়ের মাথা খারাপ ছিল, কখনও ছেলের
ফ্যামিলিতে একজন হত-দরিদ্র মানুষ আছেন – এই ধরনের
আজব সব ইতিহাস বের হয়ে আসে তখন। সবার ক্ষেত্রেই
মোটামুটি এমনটাই ঘটে। তাই “বিয়ে করে ফেলি” বলাটা যত
সহজ, সেটাকে কাজে পরিণত করাটা তার চাইতে শতগুণ বেশী
জটিল।
কয়েকদিন পরে রুপাই বলেছিল ওর রুমমেট অলরেডি বিয়ে করে
ফেলেছে, কিছুদিনের মধ্যেই আলাদা বাসা নিয়ে হল ছেড়ে দেবে
ওরা। শুনে বেশ সাহস পায় দ্বীপ। আসলে একটা বয়স থাকে,
যখন নিয়ম ভাঙ্গাটাই আনন্দের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর
ভালবাসার মানুষটাকে কাছে পাবার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষাটা তো
আছেই। ব্যাপারটা সবটুকুই শরীর নির্ভর নয় অবশ্যই।
ভালবাসার মানুষটির সাথে সারাক্ষণ থাকাটাই মুখ্য।
এরপর কত হিসেব