02-21-2017, 08:12 AM
"তোমাকে না কতবার বলেছি আমার জিনিস ধরবা না।তোমার
জন্যই কিছু খুঁজে পাচ্ছি না আমি,সব উলটপালট হয়ে
আছে..."চিৎকার করে রূপন্তিকে বলল শায়ন।
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে রূপন্তি।মেয়েটার নির্লিপ্ততা
দেখে আরো রেগে গেল শায়ন।এই কারণেই মেয়েটাকে দেখতে
পারে না শায়ন।সবকিছুতেই মুখের মধ্যে নির্লিপ্তি ভাবটা ধরে
রাখে মেয়েটা।
ছেলের চিৎকার শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন শাহেরা
বেগম।"কিরে কি হয়েছে,চিৎকার করছিস কেন?"
"চিৎকার করছি কি আর সাধে? ১:৩০ টা থেকে পরীক্ষা
শুরু,এখন বাজে ১টা।অথচ ঘর থেকে বেরই হতে পারছি না আমি।
আমার ফাইলটাই খুঁজে পাচ্ছি না।সব এই মেয়েটার দোষ।ও
নিশ্চয়ই কোথাও সরিয়েছে।"
"ও এই ব্যাপার!ও সরায় নি।তুই নিজেই তোর ড্রয়ারে
রেখেছিস।এখন মনে করতে পারছিস না।"
মার কথা শুনে তাড়াতাড়ি ড্রয়ারে গিয়ে খুজল শায়ন।
হ্যা,তাইতো!ফাইলটা সেখানেই পড়ে আছে।
দ্রুত ফাইলটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল সে।
ওর চলে যাওয়া দেখতে দেখতে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মা।
রূপন্তিকে একেবারেই সহ্য করতে পারে না ছেলেটা।
প্রথম যখন শায়নের বাবার কাছ থেকে শুনেছিলেন রূপন্তি
নামের মা মরা মেয়েটা এ বাড়িতে থাকতে আসবে তখন তিনিও
ব্যাপারটা ভালো চোখে নেন নি।
এই বয়সী একটা অচেনা অজানা মেয়েকে ঘরে রাখা খুবই কঠিন
ব্যাপার।শায়নকে নিয়ে তিনি খুবই ভয় পাচ্ছিলেন।তার উপর
ছেলেটার দেবদূতের মতো চেহারা।কোন মেয়ে প্রথম দর্শনেই
এই ছেলের প্রেমে পড়লে তাকে দোষ দেয়া যায় না।
তাই ঘোর আপত্তি করেছিলেন শাহেরা বেগম।কিন্তু সব
জল্পনা কল্পনা শেষে ঠিকই মেয়েটাকে ঘরে তুললেন শায়নের
বাবা।
মেয়েটাকে দেখে আরও বেশি চমকে গেলেন তিনি।এতো মায়াবী
মুখ তিনি এর আগে কখনো দেখেন নি।প্রকৃতি যেন তার সমস্ত
সৌন্দর্য এই মেয়েটাকে ঢেলে দিয়েছে।
প্রথম দর্শনেই শায়নের কাছে অসহ্য হয়ে উঠল মেয়েটা।কি
কারণে মেয়েটাকে সহ্য করতে পারে না শায়ন তা আজো জানেন
না শাহেরা বেগম।তবে এতে খুশিই হয়েছিলেন তিনি।ছেলেটাকে
নিয়ে আর সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকা লাগবে না,ভাবতে
ভাবতেই কাজে মন বসালেন তিনি।
.
শায়ন এইবার থার্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে।আজকে তার
শেষ পরীক্ষা।রূপন্তিও থার্ড ইয়ারে পড়ে তবে ভিন্ন
ডিপার্টমেন্টে।ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে হওয়ায় রূপন্তির পরীক্ষা
দুই দিন আগেই শেষ হয়েছে।
.
খেয়েদেয়ে বিকেলবেলা নামাযে বসেছিলেন শাহেরা বেগম।হঠাৎ
মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল।উঠে গিয়ে রিসিভ করতেই ও
পাশ থেকে শায়নের উত্তেজিত গলা শোনা গেল,"হ্যালো
মা,প্র্যাক্টিকেল খাতাটা ফেলে এসেছি বাসায়।দেখো তো
আমার টেবিলে আছে কি না।"
-হ্যা বাবা তোর টেবিলেই আছে।তুই এসে নিয়ে যাবি?
-রাস্তায় অনেক জ্যাম মা।আমি ভাইভার জন্য বসে আছি।
আমি এসে নিতে পারব না তুমি রূপন্তিকে একটু বল না খাতাটা
যেন আমায় এসে দিয়ে যায়।
-আচ্ছা তুই ফোন রাখ।দেখছি কি করা যায়।
.
১০ মিনিটের ব্রেকে শায়ন রাহাকে নিয়ে ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে
অপেক্ষা করতে লাগল রূপন্তির জন্য।রাহা শায়নের বেস্ট
ফ্রেন্ড।রাহার সাথে সব কিছুই শেয়ার করে শায়ন।রাহা যে
শায়নকে মনে মনে পছন্দ করে সেটা জানে সে।যেখানে সব
মেয়েরা প্রথম দেখাতেই শায়নের উপর ক্রাশ খায়,সেখানে
রূপন্তির নির্লিপ্ত ভঙ্গিটা মোটেই ভাল লাগেনি শায়নের।আর
তাছাড়া ছোটবেলায় ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী একটা মেয়ে
শায়নকে খুব অপমান করেছিল,সেই ঘটনার পর থেকেই শায়ন
কোন সুন্দরী মেয়েকেই সহ্য করতে পারে না।আর মেয়েটা
সবসময়ই চোখেমুখে একটা দুখী ভাব ফুটিয়ে রাখে।কি এমন দুঃখ
মেয়েটার যে সবসময় মনমড়া হয়ে থাকতে হবে!একদমই মিশুক
না মেয়েটা।এ কারণেই মেয়েটাকে ভাল লাগে না তার।
এসব ভাবতে ভাবতেই রূপন্তি চলে এল।খাতাটা এগিয়ে দিতেই
রূপন্তিকে থ্যাংকস দিল শায়ন।আচমকা কি যেন হয়ে গেল
রাহার।রূপন্তি চলেই যাচ্ছিল।রাহা জোরে জোরে শায়নকে
বলল,
-এ কে?তোর কাজের মেয়ে?
রাহার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেল শায়ন।রাগী চোখে রাহার
দিকে তাকিয়ে বলল,
-রাহা!তুই কি পাগল হয়ে গেলি?
-তুইই না বলেছিলি তোদের বাসায় নতুন কাজের মেয়ে এসেছে?
এটাই তোদের নতুন কাজের মেয়ে?
রাহার কথা শুনে চমকে তার দিকে ফিরে তাকাল শায়ন।
-কি খ্যাত একটা মেয়ে।ইয়্যাক!
এবারে রূপন্তি ফিরে তাকাল।মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
-হ্যা,আমি শায়নদের বাসার নতুন কাজের মেয়ে।ইয়্যাক বলছ
কেন?কাজের মেয়েরা খ্যাত হবে না তো বড়লোকের মেয়েরা
খ্যাত হবে?
কথাগুলো বলেই রূপন্তি গটগট করে হেটে চলে গেল।শায়ন
রূপন্তির চলে যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।রাহা বিড়
বিড় করে বলল,
-ফাযিল একটা মেয়ে!
.
রাতের বেলা খেয়েদেয়ে ছাদে উঠল শায়ন।উঠেই দেখল রূপন্তি
ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।কেন যেন খুব মায়া হতে
লাগল রূপন্তিকে দেখে।হঠাৎ করেই হীনম্মন্যতায় ভুগতে লাগল
শায়ন।রূপন্তি পেছনে ফিরতেই বলে উঠল শায়ন,
-আই এম এক্সট্রিমলি সরি।রাহার ব্যবহারের জন্য আমি
সত্যিই দুঃখিত।আর আমি ওকে কখনোই বলিনি যে তুমি
আমাদের বাসার কাজের মেয়ে।ও আজ কেনো এমন করল কে
জানে।
রূপন্তি হাসার মত ভঙ্গি করে বলল,
-আপনি আমায় সরি বলছেন কেন?আমি তো আপনাকে সরি
বলতে বলিনি।
এবারে শায়ন আকুল হয়ে বলল,
-প্লিজ রূপন্তি,এভাবে বলো না।আমি জানি আজকের ঘটনার
জন্য আমিই দায়ী।
-আমি আপনাকে সরি বলতে নিষেধ করেছি অন্য কারণে।আপনি
কি শুনতে চান কারণটা কি?
-হ্যা,আমি শুনতে চাই।
রূপন্তি আনমনে বলতে থাকল,
-আমাদের গ্রামের বাড়ি ছিল নরসিংদীর শহরে।জমিজমা
টাকাপয়সা কোনোকিছুরই অভাব ছিল না আমাদের।ছোটবেলা
থেকেই মা ছিল আমার সমস্ত পৃথিবী।সবসময় মায়ের পিছনে
পড়ে থাকতাম।অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়ার পর বাবা মা
আমাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয় পড়ালেখা করার জন্য।ক্লাস এইট
পর্যন্ত আমি কখনো নিজের হাতে খাইনি।মা-ই আমাকে
খাইয়ে দিতেন।কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় একদিন বাবা
ফোন করে বললেন,
"তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আয় মা।তোর মার অবস্থা ভাল না।"
দ্রুত বাসায় পৌছেই দেখি মার অবস্থার আরো অবনতি
হয়েছে।মা আমাকে কাছে ডেকে বললেন,
"শোন মা,আমি চলে যাচ্ছি।তোর বাবাকে দেখিস।আর তোকে
একটা কথা বলব।সারাজীবন মনে রাখবি,কখনো কারো করুণার
পাত্র হবি না।শক্ত হয়ে থাকিস মা।"
এই বলে মা সারাজীবনের জন্য না ফেরার দেশে চলে গেলেন।মা
মারা যাওয়ার পর বাবা কেমন যেন উদ্ভ্রান্তের মত হয়ে
গেলেন।কোনোকিছুর প্রতিই খেয়াল ছিল না তাঁর।এর মধ্যে
আমার ছোট চাচারা আমাদের সমস্ত জমি নিজের নামে লিখে
নিলেন।আমরা গৃহহীন হয়ে পড়লাম।অনেক কষ্টে আমি আমার
পড়ালেখা চালিয়ে নিলাম।মায়ের গয়না বন্ধকী রেখে আমি
এইচএসসি পরীক্ষা দিলাম।হয়ত আইনি সাহায্য নিলে
জমিগুলো ফেরত পেতে পারতাম।কিন্তু তার মন মানসিকতা
আমাদের কারোরই ছিল না।আপনি জানেন এই চার বছরে আমি
অনেক কষ্ট করেছি।কিন্তু কখনো কারো করুণার পাত্র হইনি।
কিন্তু এবার আমাদের হলে কিছু সমস্যায় পরার পর আপনাদের
বাসায় উঠতে বাধ্য হয়েছি।এই চার বছরে যেহেতু আমায় কেউ
করুণা করেনি,আজ আপনি আমায় কেন করুণা করবেন?
কথাগুলো বলেই রূপন্তি নিচে নেমে গেল।অবাক হয়ে ভাবতে
লাগল শায়ন,কি অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব মেয়েটার!এই কয়দিনে
মেয়েটাকে সে কত কষ্ট দিয়েছে,কত অপমান করেছে,তবু সে
শায়নকে কিছু বলেনি।বুকে পাথর চাপা দিয়ে নিজের কষ্ট নিজে
বহন করেছে মেয়েটা।হঠাৎ করেই কেন যেন এই মায়াময় চেহারার
মেয়েটার জন্য তীব্র কষ্ট অনুভব করতে থাকে শায়ন।
.
কিছুদিন পরপরই জ্বর আসছে রূপন্তির।কিন্তু অসুস্থ থাকার
কথাটা সে কাউকে বলেনি।কাউকে না বললেও শায়ন ঠিকই লক্ষ
করেছে ব্যপারটা।ঐদিন ছাদে মেয়েটার সাথে কথা বলার পর
শায়ন ঠিক করেছে,এই মায়াবি চেহারার মেয়েটাকে সে আর
কখনোই কষ্ট দিবে না।
আজ মনে হয় আবার জ্বরটা আসবে।রূপন্তির কেমন জানি গা
টা ম্যাজম্যাজ করছে।খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ল রূপন্তি।শুয়েই
ঘুমিয়ে পড়ল।সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ধীরেধীরে চোখ মেলল
সে।চোখ মেলে দেখল একটা উদ্বিগ্ন মুখ তার দিকে তাকিয়ে
আছে।চমকে লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসল সে।
রূপন্তি চমকে উঠায় হেসে ফেলল শায়ন।হাত বাড়িয়ে তার কপাল
ছুঁয়ে বলল,
-জ্বরটা এখন আর নেই।
রূপন্তি অবাক হয়ে বলল,
-আপনি কি সারারাত এখানে বসেছিলেন?
-হ্যা।তুমি ঘুমের ঘোরে কি যেন বলছিলে।তোমাকে ওষুধ খাইয়ে
ভেবেছিলাম চলে যাব।পরে ভাবলাম রাতে যদি জ্বরটা বাড়ে।তাই
সারারাত তোমার পাশে বসেছিলাম।
রূপন্তি অবাক হয়ে শায়নের দিকে তাকিয়ে রইল।হঠাৎ করেই কি
মনে করে হেসে ফেলল সে।শায়ন মুগ্ধ হয়ে রূপন্তির দিকে
তাকিয়ে রইল।এই কয়েকমাসে রূপন্তি আজই প্রথম হাসল।
কোনো মানুষের হাসি যে এত সুন্দর হতে পারে শায়ন আগে তা
জানত না।
রূপন্তি শায়নকে বলল,
-অনেক হয়েছে,এবার আপনি যান,একটু ঘুমিয়ে নিন।আন্টি চলে
আসতে পারে।শায়ন দুষ্টুমি মাখা হাসি দিয়ে বলল,
-না,আরো কিছুক্ষণ থাকি।
রূপন্তি বলল,
-আমি এখন কিন্তু আন্টিকে ডাকব।আন্টিইই!
শায়ন লাফ দিয়ে উঠে বলল,
-না না,দাড়াও যাচ্ছি,যাচ্ছি।
রূপন্তি হাসিমাখা মুখ নিয়ে শায়নের চলে যাওয়া দেখতে লাগল।
.
আজ প্রায় ১৪ দিন হতে চলল শায়ন বাসায় নেই।কোথায় কি
কাজে গিয়েছে তা শুধু শাহেরা বেগমই বলতে পারবেন।
কাল রূপন্তির জন্মদিন।আজকে সকাল থেকেই কেন জানি
অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে রূপন্তির।আশেপাশে সবাই আছে।
কিন্তু তার কেবলই মনে হচ্ছে কেউই নেই।আজ হঠাৎ করে মাকে
খুব বেশি মনে পড়ছে।এমন সময় বাবার ফোন আসল।বাবা
উত্তেজিত গলায় বললেন,
-মা জানিস,আমরা আমাদের সম্পত্তির অর্ধেক বুঝে পেয়েছি।
আজ কি যে খুশি লাগছে।আর এ কাজে কারা সাহায্য করেছে
জানিস মা?
রূপন্তি আনন্দে প্রায় কেঁদে ফেলে বলল,
-কারা বাবা?
রূপন্তির বাবা বললেন,
-হাসিবুর আর ওর ছেলে শায়ন।
রূপন্তি এবার বুঝল,শায়ন এই ১৪ দিনে রূপন্তিদের হারানো
সম্পত্তি উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছে।আসলেই বড় অদ্ভুত এই
ছেলেটা।
রাত ১০ টার দিকে শায়ন ফিরে এসেই মায়ের রুমে গিয়ে বসল।মা
ছেলের চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন,
-কিরে,কিছু বলবি?
শায়ন লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল,
-মা,আমি একটা মেয়েকে প্রচণ্ড ভালোবাসি।আজ তাকে
প্রপোজ করব।তুমি আমাকে অনুমতি দাও,নইলে আমি মরে
যাব।
মা চোখ বড় বড় করে বললেন,
-তুই কি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছিস?
শায়ন মুচকি হেসে বলল,
-হ্যা মা।
এবার মা ছেলের কান টেনে বললেন,
-তাই, না?যা,অনুমতি দিলাম।শায়ন বলল,
-তুমি জানতে চাইবে না মেয়েটা কে?
-না,আমি চাইব না।মা রা পৃথিবীর সবকিছুই জানে।তুই ছাদে
যা,আমি ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
এই বলেই মা মিষ্টি একটা হাসি দিলেন।
.
আকাশে আজ সোনার থালার মত বড় একটা চাঁদ উঠেছে।শায়ন
একা দাঁড়িয়ে আছে।একটু পরে নূপুরের আওয়াজ শুনে ফিরে
তাকাল শায়ন।পিছনে ফিরেই চমকে উঠল সে।রূপন্তিকে আজ মা
শাড়ি পরিয়ে দিয়েছেন।অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে।আধো
আলো আধো অন্ধকারের এই মায়াবী মুখটা দেখার পর পৃথিবীর
সকল সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়।রূপন্তি শায়নের সামনে এসে
দাঁড়াতেই শায়ন বলল,
-হ্যাপি বার্থডে,রূপন্তি।আজ আমি তোমার কাছে একটা
জিনিস চাইব,তুমি দেবে?
রূপন্তি বড় বড় চোখ মেলে বলল,
-কি?
-তোমার জীবনের দুঃখগুলো আমায় ভাগ করে নিতে দিবে?
রূপন্তির কি যেন হয়ে গেল।অনবরত ওর চোখ দিয়ে পানি ঝরতে
লাগল।
শায়ন কাছে আসে রূপন্তির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
-কি পারবে না এই অবুঝ ছেলেটার সাথে নিজের জীবনের কষ্ট
গুলো ভাগ করে নিতে?
রূপন্তি শায়নকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-আমি আমার জীবনের সুখগুলোও তোমার সাথে ভাগ করে
নিতে চাই শায়ন।
শায়ন রূপন্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
-ভালবাসি রূপন্তি,তোমায় অনেক ভালবাসি...।।।
জন্যই কিছু খুঁজে পাচ্ছি না আমি,সব উলটপালট হয়ে
আছে..."চিৎকার করে রূপন্তিকে বলল শায়ন।
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে রূপন্তি।মেয়েটার নির্লিপ্ততা
দেখে আরো রেগে গেল শায়ন।এই কারণেই মেয়েটাকে দেখতে
পারে না শায়ন।সবকিছুতেই মুখের মধ্যে নির্লিপ্তি ভাবটা ধরে
রাখে মেয়েটা।
ছেলের চিৎকার শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন শাহেরা
বেগম।"কিরে কি হয়েছে,চিৎকার করছিস কেন?"
"চিৎকার করছি কি আর সাধে? ১:৩০ টা থেকে পরীক্ষা
শুরু,এখন বাজে ১টা।অথচ ঘর থেকে বেরই হতে পারছি না আমি।
আমার ফাইলটাই খুঁজে পাচ্ছি না।সব এই মেয়েটার দোষ।ও
নিশ্চয়ই কোথাও সরিয়েছে।"
"ও এই ব্যাপার!ও সরায় নি।তুই নিজেই তোর ড্রয়ারে
রেখেছিস।এখন মনে করতে পারছিস না।"
মার কথা শুনে তাড়াতাড়ি ড্রয়ারে গিয়ে খুজল শায়ন।
হ্যা,তাইতো!ফাইলটা সেখানেই পড়ে আছে।
দ্রুত ফাইলটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল সে।
ওর চলে যাওয়া দেখতে দেখতে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মা।
রূপন্তিকে একেবারেই সহ্য করতে পারে না ছেলেটা।
প্রথম যখন শায়নের বাবার কাছ থেকে শুনেছিলেন রূপন্তি
নামের মা মরা মেয়েটা এ বাড়িতে থাকতে আসবে তখন তিনিও
ব্যাপারটা ভালো চোখে নেন নি।
এই বয়সী একটা অচেনা অজানা মেয়েকে ঘরে রাখা খুবই কঠিন
ব্যাপার।শায়নকে নিয়ে তিনি খুবই ভয় পাচ্ছিলেন।তার উপর
ছেলেটার দেবদূতের মতো চেহারা।কোন মেয়ে প্রথম দর্শনেই
এই ছেলের প্রেমে পড়লে তাকে দোষ দেয়া যায় না।
তাই ঘোর আপত্তি করেছিলেন শাহেরা বেগম।কিন্তু সব
জল্পনা কল্পনা শেষে ঠিকই মেয়েটাকে ঘরে তুললেন শায়নের
বাবা।
মেয়েটাকে দেখে আরও বেশি চমকে গেলেন তিনি।এতো মায়াবী
মুখ তিনি এর আগে কখনো দেখেন নি।প্রকৃতি যেন তার সমস্ত
সৌন্দর্য এই মেয়েটাকে ঢেলে দিয়েছে।
প্রথম দর্শনেই শায়নের কাছে অসহ্য হয়ে উঠল মেয়েটা।কি
কারণে মেয়েটাকে সহ্য করতে পারে না শায়ন তা আজো জানেন
না শাহেরা বেগম।তবে এতে খুশিই হয়েছিলেন তিনি।ছেলেটাকে
নিয়ে আর সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকা লাগবে না,ভাবতে
ভাবতেই কাজে মন বসালেন তিনি।
.
শায়ন এইবার থার্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে।আজকে তার
শেষ পরীক্ষা।রূপন্তিও থার্ড ইয়ারে পড়ে তবে ভিন্ন
ডিপার্টমেন্টে।ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে হওয়ায় রূপন্তির পরীক্ষা
দুই দিন আগেই শেষ হয়েছে।
.
খেয়েদেয়ে বিকেলবেলা নামাযে বসেছিলেন শাহেরা বেগম।হঠাৎ
মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল।উঠে গিয়ে রিসিভ করতেই ও
পাশ থেকে শায়নের উত্তেজিত গলা শোনা গেল,"হ্যালো
মা,প্র্যাক্টিকেল খাতাটা ফেলে এসেছি বাসায়।দেখো তো
আমার টেবিলে আছে কি না।"
-হ্যা বাবা তোর টেবিলেই আছে।তুই এসে নিয়ে যাবি?
-রাস্তায় অনেক জ্যাম মা।আমি ভাইভার জন্য বসে আছি।
আমি এসে নিতে পারব না তুমি রূপন্তিকে একটু বল না খাতাটা
যেন আমায় এসে দিয়ে যায়।
-আচ্ছা তুই ফোন রাখ।দেখছি কি করা যায়।
.
১০ মিনিটের ব্রেকে শায়ন রাহাকে নিয়ে ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে
অপেক্ষা করতে লাগল রূপন্তির জন্য।রাহা শায়নের বেস্ট
ফ্রেন্ড।রাহার সাথে সব কিছুই শেয়ার করে শায়ন।রাহা যে
শায়নকে মনে মনে পছন্দ করে সেটা জানে সে।যেখানে সব
মেয়েরা প্রথম দেখাতেই শায়নের উপর ক্রাশ খায়,সেখানে
রূপন্তির নির্লিপ্ত ভঙ্গিটা মোটেই ভাল লাগেনি শায়নের।আর
তাছাড়া ছোটবেলায় ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী একটা মেয়ে
শায়নকে খুব অপমান করেছিল,সেই ঘটনার পর থেকেই শায়ন
কোন সুন্দরী মেয়েকেই সহ্য করতে পারে না।আর মেয়েটা
সবসময়ই চোখেমুখে একটা দুখী ভাব ফুটিয়ে রাখে।কি এমন দুঃখ
মেয়েটার যে সবসময় মনমড়া হয়ে থাকতে হবে!একদমই মিশুক
না মেয়েটা।এ কারণেই মেয়েটাকে ভাল লাগে না তার।
এসব ভাবতে ভাবতেই রূপন্তি চলে এল।খাতাটা এগিয়ে দিতেই
রূপন্তিকে থ্যাংকস দিল শায়ন।আচমকা কি যেন হয়ে গেল
রাহার।রূপন্তি চলেই যাচ্ছিল।রাহা জোরে জোরে শায়নকে
বলল,
-এ কে?তোর কাজের মেয়ে?
রাহার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেল শায়ন।রাগী চোখে রাহার
দিকে তাকিয়ে বলল,
-রাহা!তুই কি পাগল হয়ে গেলি?
-তুইই না বলেছিলি তোদের বাসায় নতুন কাজের মেয়ে এসেছে?
এটাই তোদের নতুন কাজের মেয়ে?
রাহার কথা শুনে চমকে তার দিকে ফিরে তাকাল শায়ন।
-কি খ্যাত একটা মেয়ে।ইয়্যাক!
এবারে রূপন্তি ফিরে তাকাল।মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
-হ্যা,আমি শায়নদের বাসার নতুন কাজের মেয়ে।ইয়্যাক বলছ
কেন?কাজের মেয়েরা খ্যাত হবে না তো বড়লোকের মেয়েরা
খ্যাত হবে?
কথাগুলো বলেই রূপন্তি গটগট করে হেটে চলে গেল।শায়ন
রূপন্তির চলে যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।রাহা বিড়
বিড় করে বলল,
-ফাযিল একটা মেয়ে!
.
রাতের বেলা খেয়েদেয়ে ছাদে উঠল শায়ন।উঠেই দেখল রূপন্তি
ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।কেন যেন খুব মায়া হতে
লাগল রূপন্তিকে দেখে।হঠাৎ করেই হীনম্মন্যতায় ভুগতে লাগল
শায়ন।রূপন্তি পেছনে ফিরতেই বলে উঠল শায়ন,
-আই এম এক্সট্রিমলি সরি।রাহার ব্যবহারের জন্য আমি
সত্যিই দুঃখিত।আর আমি ওকে কখনোই বলিনি যে তুমি
আমাদের বাসার কাজের মেয়ে।ও আজ কেনো এমন করল কে
জানে।
রূপন্তি হাসার মত ভঙ্গি করে বলল,
-আপনি আমায় সরি বলছেন কেন?আমি তো আপনাকে সরি
বলতে বলিনি।
এবারে শায়ন আকুল হয়ে বলল,
-প্লিজ রূপন্তি,এভাবে বলো না।আমি জানি আজকের ঘটনার
জন্য আমিই দায়ী।
-আমি আপনাকে সরি বলতে নিষেধ করেছি অন্য কারণে।আপনি
কি শুনতে চান কারণটা কি?
-হ্যা,আমি শুনতে চাই।
রূপন্তি আনমনে বলতে থাকল,
-আমাদের গ্রামের বাড়ি ছিল নরসিংদীর শহরে।জমিজমা
টাকাপয়সা কোনোকিছুরই অভাব ছিল না আমাদের।ছোটবেলা
থেকেই মা ছিল আমার সমস্ত পৃথিবী।সবসময় মায়ের পিছনে
পড়ে থাকতাম।অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়ার পর বাবা মা
আমাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয় পড়ালেখা করার জন্য।ক্লাস এইট
পর্যন্ত আমি কখনো নিজের হাতে খাইনি।মা-ই আমাকে
খাইয়ে দিতেন।কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় একদিন বাবা
ফোন করে বললেন,
"তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আয় মা।তোর মার অবস্থা ভাল না।"
দ্রুত বাসায় পৌছেই দেখি মার অবস্থার আরো অবনতি
হয়েছে।মা আমাকে কাছে ডেকে বললেন,
"শোন মা,আমি চলে যাচ্ছি।তোর বাবাকে দেখিস।আর তোকে
একটা কথা বলব।সারাজীবন মনে রাখবি,কখনো কারো করুণার
পাত্র হবি না।শক্ত হয়ে থাকিস মা।"
এই বলে মা সারাজীবনের জন্য না ফেরার দেশে চলে গেলেন।মা
মারা যাওয়ার পর বাবা কেমন যেন উদ্ভ্রান্তের মত হয়ে
গেলেন।কোনোকিছুর প্রতিই খেয়াল ছিল না তাঁর।এর মধ্যে
আমার ছোট চাচারা আমাদের সমস্ত জমি নিজের নামে লিখে
নিলেন।আমরা গৃহহীন হয়ে পড়লাম।অনেক কষ্টে আমি আমার
পড়ালেখা চালিয়ে নিলাম।মায়ের গয়না বন্ধকী রেখে আমি
এইচএসসি পরীক্ষা দিলাম।হয়ত আইনি সাহায্য নিলে
জমিগুলো ফেরত পেতে পারতাম।কিন্তু তার মন মানসিকতা
আমাদের কারোরই ছিল না।আপনি জানেন এই চার বছরে আমি
অনেক কষ্ট করেছি।কিন্তু কখনো কারো করুণার পাত্র হইনি।
কিন্তু এবার আমাদের হলে কিছু সমস্যায় পরার পর আপনাদের
বাসায় উঠতে বাধ্য হয়েছি।এই চার বছরে যেহেতু আমায় কেউ
করুণা করেনি,আজ আপনি আমায় কেন করুণা করবেন?
কথাগুলো বলেই রূপন্তি নিচে নেমে গেল।অবাক হয়ে ভাবতে
লাগল শায়ন,কি অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব মেয়েটার!এই কয়দিনে
মেয়েটাকে সে কত কষ্ট দিয়েছে,কত অপমান করেছে,তবু সে
শায়নকে কিছু বলেনি।বুকে পাথর চাপা দিয়ে নিজের কষ্ট নিজে
বহন করেছে মেয়েটা।হঠাৎ করেই কেন যেন এই মায়াময় চেহারার
মেয়েটার জন্য তীব্র কষ্ট অনুভব করতে থাকে শায়ন।
.
কিছুদিন পরপরই জ্বর আসছে রূপন্তির।কিন্তু অসুস্থ থাকার
কথাটা সে কাউকে বলেনি।কাউকে না বললেও শায়ন ঠিকই লক্ষ
করেছে ব্যপারটা।ঐদিন ছাদে মেয়েটার সাথে কথা বলার পর
শায়ন ঠিক করেছে,এই মায়াবি চেহারার মেয়েটাকে সে আর
কখনোই কষ্ট দিবে না।
আজ মনে হয় আবার জ্বরটা আসবে।রূপন্তির কেমন জানি গা
টা ম্যাজম্যাজ করছে।খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ল রূপন্তি।শুয়েই
ঘুমিয়ে পড়ল।সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ধীরেধীরে চোখ মেলল
সে।চোখ মেলে দেখল একটা উদ্বিগ্ন মুখ তার দিকে তাকিয়ে
আছে।চমকে লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসল সে।
রূপন্তি চমকে উঠায় হেসে ফেলল শায়ন।হাত বাড়িয়ে তার কপাল
ছুঁয়ে বলল,
-জ্বরটা এখন আর নেই।
রূপন্তি অবাক হয়ে বলল,
-আপনি কি সারারাত এখানে বসেছিলেন?
-হ্যা।তুমি ঘুমের ঘোরে কি যেন বলছিলে।তোমাকে ওষুধ খাইয়ে
ভেবেছিলাম চলে যাব।পরে ভাবলাম রাতে যদি জ্বরটা বাড়ে।তাই
সারারাত তোমার পাশে বসেছিলাম।
রূপন্তি অবাক হয়ে শায়নের দিকে তাকিয়ে রইল।হঠাৎ করেই কি
মনে করে হেসে ফেলল সে।শায়ন মুগ্ধ হয়ে রূপন্তির দিকে
তাকিয়ে রইল।এই কয়েকমাসে রূপন্তি আজই প্রথম হাসল।
কোনো মানুষের হাসি যে এত সুন্দর হতে পারে শায়ন আগে তা
জানত না।
রূপন্তি শায়নকে বলল,
-অনেক হয়েছে,এবার আপনি যান,একটু ঘুমিয়ে নিন।আন্টি চলে
আসতে পারে।শায়ন দুষ্টুমি মাখা হাসি দিয়ে বলল,
-না,আরো কিছুক্ষণ থাকি।
রূপন্তি বলল,
-আমি এখন কিন্তু আন্টিকে ডাকব।আন্টিইই!
শায়ন লাফ দিয়ে উঠে বলল,
-না না,দাড়াও যাচ্ছি,যাচ্ছি।
রূপন্তি হাসিমাখা মুখ নিয়ে শায়নের চলে যাওয়া দেখতে লাগল।
.
আজ প্রায় ১৪ দিন হতে চলল শায়ন বাসায় নেই।কোথায় কি
কাজে গিয়েছে তা শুধু শাহেরা বেগমই বলতে পারবেন।
কাল রূপন্তির জন্মদিন।আজকে সকাল থেকেই কেন জানি
অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে রূপন্তির।আশেপাশে সবাই আছে।
কিন্তু তার কেবলই মনে হচ্ছে কেউই নেই।আজ হঠাৎ করে মাকে
খুব বেশি মনে পড়ছে।এমন সময় বাবার ফোন আসল।বাবা
উত্তেজিত গলায় বললেন,
-মা জানিস,আমরা আমাদের সম্পত্তির অর্ধেক বুঝে পেয়েছি।
আজ কি যে খুশি লাগছে।আর এ কাজে কারা সাহায্য করেছে
জানিস মা?
রূপন্তি আনন্দে প্রায় কেঁদে ফেলে বলল,
-কারা বাবা?
রূপন্তির বাবা বললেন,
-হাসিবুর আর ওর ছেলে শায়ন।
রূপন্তি এবার বুঝল,শায়ন এই ১৪ দিনে রূপন্তিদের হারানো
সম্পত্তি উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছে।আসলেই বড় অদ্ভুত এই
ছেলেটা।
রাত ১০ টার দিকে শায়ন ফিরে এসেই মায়ের রুমে গিয়ে বসল।মা
ছেলের চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন,
-কিরে,কিছু বলবি?
শায়ন লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল,
-মা,আমি একটা মেয়েকে প্রচণ্ড ভালোবাসি।আজ তাকে
প্রপোজ করব।তুমি আমাকে অনুমতি দাও,নইলে আমি মরে
যাব।
মা চোখ বড় বড় করে বললেন,
-তুই কি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছিস?
শায়ন মুচকি হেসে বলল,
-হ্যা মা।
এবার মা ছেলের কান টেনে বললেন,
-তাই, না?যা,অনুমতি দিলাম।শায়ন বলল,
-তুমি জানতে চাইবে না মেয়েটা কে?
-না,আমি চাইব না।মা রা পৃথিবীর সবকিছুই জানে।তুই ছাদে
যা,আমি ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
এই বলেই মা মিষ্টি একটা হাসি দিলেন।
.
আকাশে আজ সোনার থালার মত বড় একটা চাঁদ উঠেছে।শায়ন
একা দাঁড়িয়ে আছে।একটু পরে নূপুরের আওয়াজ শুনে ফিরে
তাকাল শায়ন।পিছনে ফিরেই চমকে উঠল সে।রূপন্তিকে আজ মা
শাড়ি পরিয়ে দিয়েছেন।অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে।আধো
আলো আধো অন্ধকারের এই মায়াবী মুখটা দেখার পর পৃথিবীর
সকল সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়।রূপন্তি শায়নের সামনে এসে
দাঁড়াতেই শায়ন বলল,
-হ্যাপি বার্থডে,রূপন্তি।আজ আমি তোমার কাছে একটা
জিনিস চাইব,তুমি দেবে?
রূপন্তি বড় বড় চোখ মেলে বলল,
-কি?
-তোমার জীবনের দুঃখগুলো আমায় ভাগ করে নিতে দিবে?
রূপন্তির কি যেন হয়ে গেল।অনবরত ওর চোখ দিয়ে পানি ঝরতে
লাগল।
শায়ন কাছে আসে রূপন্তির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
-কি পারবে না এই অবুঝ ছেলেটার সাথে নিজের জীবনের কষ্ট
গুলো ভাগ করে নিতে?
রূপন্তি শায়নকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-আমি আমার জীবনের সুখগুলোও তোমার সাথে ভাগ করে
নিতে চাই শায়ন।
শায়ন রূপন্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
-ভালবাসি রূপন্তি,তোমায় অনেক ভালবাসি...।।।