02-21-2017, 08:21 AM
.
নিধি, বট গাছের নিচে আধাঘন্টা ধরে বসে আছে। এখনো আবিদ
আসছে না। একবার আসুক আজ তার একদিন কি নিধির একদিন।
সবকিছুর একটা লিমিট আছে। কিন্তু আবিদের কাছে এসব যেন
কিছুই না। সবসময়ই দেরি করে আসবে। নিধি তার বান্ধবীদের
ক্ষেত্রে দেখেছে তাদের বয়ফ্রেন্ডরা অপেক্ষা করে, কিন্তু
নিধির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সে উল্টা আবিদের জন্য অপেক্ষা
করে। এতে দোষ নিধিরই। কারণ দেখা করার জন্য নিধিই বেশি
পাগল হয়ে থাকে। কেনইবা হবে না মাসে একবার কিংবা দুবারই
তো সুযোগ পায়। আবিদ জব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর নিধি
পড়াশোনা ও পরিবার নিয়ে।
.
ওই তো নবাব সাহেব আসছে। আবিদ দূর থেকেই নিধিকে দেখে
বুঝল যে আজ তার কপালে নির্ঘাত কিছু একটা আছে। আবিদ
নিধির চারপাশে ভালমত চোখ বুলিয়ে নিলো। নাহ, আশেপাশে
লাঠি জাতীয় কিছু নেই। কিন্তু ওই যে নিধির ভ্যানিটিব্যাগ,
ওটাই যথেষ্ঠ। আবিদ নিধিকে প্রায়ই বলে, "তুমি ছোট ব্যাগ
নিয়ে বের হবা। তোমার হাতে ভাল মানায়। এতো বড় ব্যাগ
নিয়ে বের হলে মনে হয় কোথাও দু চারদিনের জন্য বেড়াতে
যাচ্ছ।" তবুও নিধি বড় ব্যাগই নিয়ে আসে। অভ্যাস তো তাই।
.
যাইহোক, আবিদ বুকভরা সাহস নিয়ে নিধির কাছে গেল।
- স্যরি আমার একটু লেইট হয়েছে।
> আরে ও কিছু না। রাস্তাঘাটে জ্যাম পড়তেই পারে।
আবিদ অবাক হয়ে গেল। দূর থেকে নিধিকে দেখে মনে হয়েছিল
কপালে শনির দশা আছে। কিন্তু একি? এত শান্ত? সত্যিই
আবিদ মেয়েটা কখনোই বুঝে উঠতে পারবে না। আবিদ হাসিমুখে
নিধির পাশে বসে বলল
- তুমি এত ভা……… (ব্যাগ দিয়ে মার শুরু হল)
.
> উঠ শয়তান। পুরো ১ ঘন্টা দেরিতে এসে পাশে বসা হচ্ছে?
উঠ। একদম পাশে বসবি না। (মারতে মারতে বলল)
আবিদ দূরে গিয়ে বসলো। মনে মনে বলল বাপরে কি শক্ত
ভ্যানিটিব্যাগ।
- দেখ ………
> একদম চুপ।
- (মুখে আঙ্গুল দিল)
.
কিছুক্ষণ নীরবতার পর নিধি বলল
> এদিকে আয়। (তুই করেও বলে)
- জ্বি ম্যাম।
> আবার ফাইজলামি?
- স্যরি।
> আমি কেন রাগ করেছি?
- আমি তোমাকে অপেক্ষায় রেখেছি তাই।
> নাহ। তুমি আমাদের সময়টা কমিয়ে দিয়েছ তাই। আবার কবে
দেখা হবে তার কোনো ঠিকানা আছে? শুধুশুধু কেন সময়
অপচয় কর?
- আচ্ছা আর হবে না।
> মনে থাকবে?
- হুম।
> কচু থাকবে। এই পর্যন্ত কতবার বলেছি হিসাব নেই।
আবিদ কিছু না বলে নিধির হাত ধরে চুপ করে বসে রইল।
.
অতঃপর কিছুক্ষণ গল্প, খুনসুটি, বাদাম খেয়ে যে যার যার
গন্তব্যে চলে গেল।
.
এক রাতে নিধি একটা দুঃস্বপ্ন দেখল। সকালে উঠেই আবিদকে
কল দিল
> তুই আমাকে কখনো একা রেখে চলে যাবি না তো?
- হঠাৎ এমন বলছো কেন?
> আগে উত্তর দে।
- কখনোই না।
> সবসময় আমার পাশে থাকনি তো।
- আমি তোর মাঝেই নিমজ্জিত আছি।
.
নিধি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে ফোনটা রেখে দিল।
আবিদ বোকার মত ফোনটা কানের কাছেই ধরে রইল। অফিসের
তাড়ায় ছিল, তাই তাড়াতাড়ি চলে গেল।
.
ইদানিং নিধি প্রায়ই জিজ্ঞেস করে চলে যাবি না তো? আবিদ
বারবারই বলে "আমি তোর মাঝেই নিমজ্জিত। কোথায় যাব
বল?" তবুও ঘন্টাখানেক পর আবার সেই একই প্রশ্ন করে। তবে
আবিদ রাগ করে না। মনে মনে ভাবে হয়তো একটু চিন্তায়
পড়েছে। কারণ বর্তমানে ভালবাসা গড়ে আর ভাংগে। সেক্ষেত্রে
ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিকই।
.
আজ আবিদ বেতন পেল। দুদিন পর ভ্যালেন্টাইন ডে। এই
উপলক্ষে নিধির জন্য একটা আংটি নিলো। ভালমত প্যাকেট
করে উপরে লিখল, "ভয় করিস না, পাগলী। আমি তোর মাঝেই
নিমজ্জিত।"
.
দুদিন পর,
আজ তাদের দেখা হবে। নিধি সুন্দর একটা ড্রেস পড়ল, চোখে
কাজল, হাতে রঙ্গিন কাঁচের চুড়ি, কানে ঝুমকো, হালকা
মেকআপ করল। অতিরিক্ত মেকআপ ও লিপস্টিক আবিদের
পছন্দ নয়। তাই ওসব দিল না। অতঃপর সুন্দর পরিপাটি করে
সেজেগুজে নির্ধারিত স্থানে পৌছালো। প্রতিবারের ন্যায়
এবারও বসে আছে নিধি। উফফফ! অন্তত এই দিনটাতে তো
লেইট না করলেও পারে। নিধি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
.
কিছুক্ষণ পর আবিদের দুটা ফ্রেন্ড আসলো। নিধি চিনে। খুব
ভাল ছেলে। নিধিকে অত্যন্ত সম্মান করে। আবিদের অনেক
গুনের মধ্যে এটাও একটা যে আবিদ খারাপ ছেলেদের সাথে
বন্ধুত্ব করে না।
.
> আপনারা হঠাৎ? আবিদ কই?
= আপনার জন্য সারপ্রাইজ পার্টি আয়োজন করেছে।
সেইজন্য কেক আনতে গিয়ে একটু আটকা পড়েছে। তাই
আমাদেরকে পাঠিয়েছে। (সুজন)
.
নিধি আবিদকে ফোন করল
> এসব কি? তোকে টাকা খরচ করতে কে বলেছে?
- আমি এখন একটু ভেজালে আছি। তুমি চুপচাপ ওদের সাথে চলে
আসো।
আবিদ ফোন রেখে দিল। নিধি মনে মনে রাগে ফেটে পড়ল।
অহেতুক টাকা নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। নাহ! অনেক
প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছি। আর নয়, আজ সবার সামনেই উচিত
শিক্ষা দিতে হবে।
.
নিধি তাদের সাথে চলে এলো।
> হাসপাতালে পার্টি?
= হাসপাতালের ৫ম তালায় একটা ছোট রেষ্টুরেন্ট আছে।
ওখানে পার্টি হয়।
> চলেন।
.
নিধি মনে মনে বলল এমন জায়গায় পার্টি না দেয়াই ভাল। দু
তালায় আসার পর সুজব বলল একদিকে আসেন একটু। নিধি
পিছুপিছু গেল। তারা একটা রুমের সামনে দাড়ালো। নিধিও
দাড়ালো। একজন নার্স স্ট্রেচার করে একটা লাশ নিয়ে এলো।
নিধি স্বাভাবিকভাবেই দাড়িয়ে রইলো। কিন্তু যখন দেখল
আবিদের বন্ধুরা চুপ করে লাশটির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি
ফেলছে তখন নিধির চেহারা অজানা ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
.
নার্স আবিদের বন্ধুদেরকে বলল
- এই নিন ডেড সার্টিফিকেট। রিসেপশনে গিয়ে পেমেন্ট করে
লাশ নিয়ে যেতে পারেন।
সুজন নার্সের হাত থেকে ডেড সার্টিফিকেট নিল। নিধি চুপ
করেই দাড়িয়ে রয়েছে। ভয়ে নিধির মুখ থেকে কোনো কথা
বেরোচ্ছে না। তখন সুজন এসে নিধির দিকে একটা প্যাকেট
বাড়িয়ে দিল। নিধি দেখল প্যাকেটের উপর লিখা, "ভয় করিস না
পাগলী। আমি তোর মাঝেই নিমজ্জিত।"
.
কাপা কাপা হাতে নিধি প্যাকেটটা নিল। তারপর ধীরু পায়ে
স্ট্রেচারের কাছে গিয়ে কাপা কাপা হাতে লাশের চেহারার দিকটা
তুলে আবিদের চেহারা দেখে নিধি আর নিজ পায়ে দাড়িয়ে
থাকতে পারলো না। বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল।
.
আবিদের এক বন্ধু ডাবিং আর্টিস্ট। নিধি যখন ফোন করেছিল
তখন সেই বন্ধু আবিদের আওয়াজ নকল করে নিধির সাথে কথা
বলেছিল।
.
আবিদের এই অকাল মৃত্যু হয়েছে এক দুর্ঘটনায়। আজ যখন
আবিদ নিধির সাথে দেখা করার জন্য আসছিল। তখন একটা
কন্সট্রাকশন বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। রাস্তার ওপারে
এক বন্ধুকে দেখে আবিদ ডাক দিল। বন্ধুটা এপারে আসছে হঠাৎ
সেই কন্সট্রাকশন বিল্ডিংয়ের উপরের দেয়াল ভেংগে পড়ে।
তাতে আবিদ সহ আরও দুজন আহত হয়। আবিদের সেই বন্ধু
আবিদকে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার পর আবিদকে ডেড
ঘোষণা করে ডাক্তার। সেই বন্ধুটা আবিদের মেসের বন্ধুদেরকে
সব জানায়। আবিদের মেসের বন্ধুরা জানত যে আবিদ নিধির
সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। কিন্তু তা হল না। তাই আবিদের
বন্ধুরা মিথ্যা বলে নিধিকে নিয়ে আসে। কারণ সত্যটা সেখানে
বললে হয়তো নিধিকে হাসপাতালে আনা যেত না।
.
সব ভালবাসা পূর্ণতা পায় না। নিয়তি অন্যকিছু নির্ধারিত করে
রাখে। আবিদ বেঁচে আছে নিধির মাঝে। আবিদের কথাটি সত্য
হল, "আমি তোর মাঝেই নিমজ্জিত।" আবিদ নিধির মাঝে
নিমজ্জিত। তাদের প্রতিটি মূহুর্ত নিধির মাঝেই নিমজ্জিত
আছে।
.
এখন নিধি সবসময় একটাই দোয়া করে, আবিদ যেন
জান্নাতবাসী হয়।
.
বিঃদ্রঃ রাস্তাঘাটে চলার সময় একটু সাবধানে চলবেন। বিশেষ
করে কন্সট্রাকশন সাইড দিয়ে চলাচল করবেন না। ফুট ওভার
ব্রিজ ব্যবহার করুন। আপনি হয়তো জানেনই না আপনার
জীবনের সাথে অনেক জীবন জড়িয়ে আছে। নিরাপদে থাকুন।
সুস্থ থাকুন।
নিধি, বট গাছের নিচে আধাঘন্টা ধরে বসে আছে। এখনো আবিদ
আসছে না। একবার আসুক আজ তার একদিন কি নিধির একদিন।
সবকিছুর একটা লিমিট আছে। কিন্তু আবিদের কাছে এসব যেন
কিছুই না। সবসময়ই দেরি করে আসবে। নিধি তার বান্ধবীদের
ক্ষেত্রে দেখেছে তাদের বয়ফ্রেন্ডরা অপেক্ষা করে, কিন্তু
নিধির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সে উল্টা আবিদের জন্য অপেক্ষা
করে। এতে দোষ নিধিরই। কারণ দেখা করার জন্য নিধিই বেশি
পাগল হয়ে থাকে। কেনইবা হবে না মাসে একবার কিংবা দুবারই
তো সুযোগ পায়। আবিদ জব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর নিধি
পড়াশোনা ও পরিবার নিয়ে।
.
ওই তো নবাব সাহেব আসছে। আবিদ দূর থেকেই নিধিকে দেখে
বুঝল যে আজ তার কপালে নির্ঘাত কিছু একটা আছে। আবিদ
নিধির চারপাশে ভালমত চোখ বুলিয়ে নিলো। নাহ, আশেপাশে
লাঠি জাতীয় কিছু নেই। কিন্তু ওই যে নিধির ভ্যানিটিব্যাগ,
ওটাই যথেষ্ঠ। আবিদ নিধিকে প্রায়ই বলে, "তুমি ছোট ব্যাগ
নিয়ে বের হবা। তোমার হাতে ভাল মানায়। এতো বড় ব্যাগ
নিয়ে বের হলে মনে হয় কোথাও দু চারদিনের জন্য বেড়াতে
যাচ্ছ।" তবুও নিধি বড় ব্যাগই নিয়ে আসে। অভ্যাস তো তাই।
.
যাইহোক, আবিদ বুকভরা সাহস নিয়ে নিধির কাছে গেল।
- স্যরি আমার একটু লেইট হয়েছে।
> আরে ও কিছু না। রাস্তাঘাটে জ্যাম পড়তেই পারে।
আবিদ অবাক হয়ে গেল। দূর থেকে নিধিকে দেখে মনে হয়েছিল
কপালে শনির দশা আছে। কিন্তু একি? এত শান্ত? সত্যিই
আবিদ মেয়েটা কখনোই বুঝে উঠতে পারবে না। আবিদ হাসিমুখে
নিধির পাশে বসে বলল
- তুমি এত ভা……… (ব্যাগ দিয়ে মার শুরু হল)
.
> উঠ শয়তান। পুরো ১ ঘন্টা দেরিতে এসে পাশে বসা হচ্ছে?
উঠ। একদম পাশে বসবি না। (মারতে মারতে বলল)
আবিদ দূরে গিয়ে বসলো। মনে মনে বলল বাপরে কি শক্ত
ভ্যানিটিব্যাগ।
- দেখ ………
> একদম চুপ।
- (মুখে আঙ্গুল দিল)
.
কিছুক্ষণ নীরবতার পর নিধি বলল
> এদিকে আয়। (তুই করেও বলে)
- জ্বি ম্যাম।
> আবার ফাইজলামি?
- স্যরি।
> আমি কেন রাগ করেছি?
- আমি তোমাকে অপেক্ষায় রেখেছি তাই।
> নাহ। তুমি আমাদের সময়টা কমিয়ে দিয়েছ তাই। আবার কবে
দেখা হবে তার কোনো ঠিকানা আছে? শুধুশুধু কেন সময়
অপচয় কর?
- আচ্ছা আর হবে না।
> মনে থাকবে?
- হুম।
> কচু থাকবে। এই পর্যন্ত কতবার বলেছি হিসাব নেই।
আবিদ কিছু না বলে নিধির হাত ধরে চুপ করে বসে রইল।
.
অতঃপর কিছুক্ষণ গল্প, খুনসুটি, বাদাম খেয়ে যে যার যার
গন্তব্যে চলে গেল।
.
এক রাতে নিধি একটা দুঃস্বপ্ন দেখল। সকালে উঠেই আবিদকে
কল দিল
> তুই আমাকে কখনো একা রেখে চলে যাবি না তো?
- হঠাৎ এমন বলছো কেন?
> আগে উত্তর দে।
- কখনোই না।
> সবসময় আমার পাশে থাকনি তো।
- আমি তোর মাঝেই নিমজ্জিত আছি।
.
নিধি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে ফোনটা রেখে দিল।
আবিদ বোকার মত ফোনটা কানের কাছেই ধরে রইল। অফিসের
তাড়ায় ছিল, তাই তাড়াতাড়ি চলে গেল।
.
ইদানিং নিধি প্রায়ই জিজ্ঞেস করে চলে যাবি না তো? আবিদ
বারবারই বলে "আমি তোর মাঝেই নিমজ্জিত। কোথায় যাব
বল?" তবুও ঘন্টাখানেক পর আবার সেই একই প্রশ্ন করে। তবে
আবিদ রাগ করে না। মনে মনে ভাবে হয়তো একটু চিন্তায়
পড়েছে। কারণ বর্তমানে ভালবাসা গড়ে আর ভাংগে। সেক্ষেত্রে
ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিকই।
.
আজ আবিদ বেতন পেল। দুদিন পর ভ্যালেন্টাইন ডে। এই
উপলক্ষে নিধির জন্য একটা আংটি নিলো। ভালমত প্যাকেট
করে উপরে লিখল, "ভয় করিস না, পাগলী। আমি তোর মাঝেই
নিমজ্জিত।"
.
দুদিন পর,
আজ তাদের দেখা হবে। নিধি সুন্দর একটা ড্রেস পড়ল, চোখে
কাজল, হাতে রঙ্গিন কাঁচের চুড়ি, কানে ঝুমকো, হালকা
মেকআপ করল। অতিরিক্ত মেকআপ ও লিপস্টিক আবিদের
পছন্দ নয়। তাই ওসব দিল না। অতঃপর সুন্দর পরিপাটি করে
সেজেগুজে নির্ধারিত স্থানে পৌছালো। প্রতিবারের ন্যায়
এবারও বসে আছে নিধি। উফফফ! অন্তত এই দিনটাতে তো
লেইট না করলেও পারে। নিধি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
.
কিছুক্ষণ পর আবিদের দুটা ফ্রেন্ড আসলো। নিধি চিনে। খুব
ভাল ছেলে। নিধিকে অত্যন্ত সম্মান করে। আবিদের অনেক
গুনের মধ্যে এটাও একটা যে আবিদ খারাপ ছেলেদের সাথে
বন্ধুত্ব করে না।
.
> আপনারা হঠাৎ? আবিদ কই?
= আপনার জন্য সারপ্রাইজ পার্টি আয়োজন করেছে।
সেইজন্য কেক আনতে গিয়ে একটু আটকা পড়েছে। তাই
আমাদেরকে পাঠিয়েছে। (সুজন)
.
নিধি আবিদকে ফোন করল
> এসব কি? তোকে টাকা খরচ করতে কে বলেছে?
- আমি এখন একটু ভেজালে আছি। তুমি চুপচাপ ওদের সাথে চলে
আসো।
আবিদ ফোন রেখে দিল। নিধি মনে মনে রাগে ফেটে পড়ল।
অহেতুক টাকা নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। নাহ! অনেক
প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছি। আর নয়, আজ সবার সামনেই উচিত
শিক্ষা দিতে হবে।
.
নিধি তাদের সাথে চলে এলো।
> হাসপাতালে পার্টি?
= হাসপাতালের ৫ম তালায় একটা ছোট রেষ্টুরেন্ট আছে।
ওখানে পার্টি হয়।
> চলেন।
.
নিধি মনে মনে বলল এমন জায়গায় পার্টি না দেয়াই ভাল। দু
তালায় আসার পর সুজব বলল একদিকে আসেন একটু। নিধি
পিছুপিছু গেল। তারা একটা রুমের সামনে দাড়ালো। নিধিও
দাড়ালো। একজন নার্স স্ট্রেচার করে একটা লাশ নিয়ে এলো।
নিধি স্বাভাবিকভাবেই দাড়িয়ে রইলো। কিন্তু যখন দেখল
আবিদের বন্ধুরা চুপ করে লাশটির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি
ফেলছে তখন নিধির চেহারা অজানা ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
.
নার্স আবিদের বন্ধুদেরকে বলল
- এই নিন ডেড সার্টিফিকেট। রিসেপশনে গিয়ে পেমেন্ট করে
লাশ নিয়ে যেতে পারেন।
সুজন নার্সের হাত থেকে ডেড সার্টিফিকেট নিল। নিধি চুপ
করেই দাড়িয়ে রয়েছে। ভয়ে নিধির মুখ থেকে কোনো কথা
বেরোচ্ছে না। তখন সুজন এসে নিধির দিকে একটা প্যাকেট
বাড়িয়ে দিল। নিধি দেখল প্যাকেটের উপর লিখা, "ভয় করিস না
পাগলী। আমি তোর মাঝেই নিমজ্জিত।"
.
কাপা কাপা হাতে নিধি প্যাকেটটা নিল। তারপর ধীরু পায়ে
স্ট্রেচারের কাছে গিয়ে কাপা কাপা হাতে লাশের চেহারার দিকটা
তুলে আবিদের চেহারা দেখে নিধি আর নিজ পায়ে দাড়িয়ে
থাকতে পারলো না। বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল।
.
আবিদের এক বন্ধু ডাবিং আর্টিস্ট। নিধি যখন ফোন করেছিল
তখন সেই বন্ধু আবিদের আওয়াজ নকল করে নিধির সাথে কথা
বলেছিল।
.
আবিদের এই অকাল মৃত্যু হয়েছে এক দুর্ঘটনায়। আজ যখন
আবিদ নিধির সাথে দেখা করার জন্য আসছিল। তখন একটা
কন্সট্রাকশন বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। রাস্তার ওপারে
এক বন্ধুকে দেখে আবিদ ডাক দিল। বন্ধুটা এপারে আসছে হঠাৎ
সেই কন্সট্রাকশন বিল্ডিংয়ের উপরের দেয়াল ভেংগে পড়ে।
তাতে আবিদ সহ আরও দুজন আহত হয়। আবিদের সেই বন্ধু
আবিদকে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার পর আবিদকে ডেড
ঘোষণা করে ডাক্তার। সেই বন্ধুটা আবিদের মেসের বন্ধুদেরকে
সব জানায়। আবিদের মেসের বন্ধুরা জানত যে আবিদ নিধির
সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। কিন্তু তা হল না। তাই আবিদের
বন্ধুরা মিথ্যা বলে নিধিকে নিয়ে আসে। কারণ সত্যটা সেখানে
বললে হয়তো নিধিকে হাসপাতালে আনা যেত না।
.
সব ভালবাসা পূর্ণতা পায় না। নিয়তি অন্যকিছু নির্ধারিত করে
রাখে। আবিদ বেঁচে আছে নিধির মাঝে। আবিদের কথাটি সত্য
হল, "আমি তোর মাঝেই নিমজ্জিত।" আবিদ নিধির মাঝে
নিমজ্জিত। তাদের প্রতিটি মূহুর্ত নিধির মাঝেই নিমজ্জিত
আছে।
.
এখন নিধি সবসময় একটাই দোয়া করে, আবিদ যেন
জান্নাতবাসী হয়।
.
বিঃদ্রঃ রাস্তাঘাটে চলার সময় একটু সাবধানে চলবেন। বিশেষ
করে কন্সট্রাকশন সাইড দিয়ে চলাচল করবেন না। ফুট ওভার
ব্রিজ ব্যবহার করুন। আপনি হয়তো জানেনই না আপনার
জীবনের সাথে অনেক জীবন জড়িয়ে আছে। নিরাপদে থাকুন।
সুস্থ থাকুন।