02-21-2017, 08:24 AM
কোথা থেকে যেনো পিচ্চি একটা এসে একটা প্যাকেট হাতে
ধরিয়ে দিয়েছে
.,
-- আপ্পি এটা তোমার জন্য, আমি যাই
-- এই পিচ্চি দাড়াও, কে দিয়েছে এটা?
--আপ্পি ওটা খুললেই সব বুঝতে পারবে,, টা টা
-- আরে দাড়াও....
.
ধুর পিচ্চিটা তো চলেই গেলো।আজিব তো এটা কে দেবে তাও
আবার একটা পিচ্চিকে দিয়ে পাঠালো।এতক্ষণ ক্যাম্পাসে
দাড়িয়েই ভাবছিলাম এসব, আচ্ছা বাসায় গিয়ে খুলে দেখবো
.
আচ্ছা আমার পরিচয় ই তো দেয়া হয়নি, আমি নোভা
ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষে পড়ি ছাত্রি হিসেবে মোটামুটি,বাবা
মায়ের বড় মেয়ে আমি একটা ছোট বোন আছে ও আমার দেড়
বছরের ছোট।
বাস এইটুকুই,, বলার মতো আর তেমন কিছুই নাই
.,
বিকাল বেলা প্যাকেটটা খুলে আমি তো পুরাই টাসকি,প্যাকেটা
খুলতেই একগুচ্ছ গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে পড়লো , তারপর
একটা চিঠি, অনেক কৌতুহল নিয়ে চিঠিটা খুললাম, ওতে লেখা
ছিলো ,
.
আমার সপ্ন বালিকা
.. তুমি ভাবছ আমি কতটা ব্যাকডেটেড, এই যুগে আবার কেউ
চিঠি লিখে? আসলে আমার নিজেরই খুব হাসি পাচ্ছে, কিন্তু কি
করবো বলো তোমার সামনে আসলেই যে আমি ভাষা হারিয়ে
ফেলি।তুমি জানো
লাভ এট ফার্ষ্ট সাইট বলে একটা কথা আছে, যেটা আমি আগে
বিলিভ করতামনা বাট তোমাকে দেখার পর আমার সেটাই
হয়েছে, প্রথম যেদিন তুমি এসেছিলে দুচোখের আলোতে সেদিন
থেকেই মনের ক্যানভাসে তোমার ছবিটা আঁকা হয়ে গেছে।
.
তোমার মায়ায় আমি জড়িয়ে গেছি, আমার প্রতিটা মুহূর্ত
যেনো তোমার করে নিয়েছ।তোমাকে ছাড়া এখন কিছু,ই ভাবতে
পারছিনা,
""বালিকা তুমি কি আমার সপ্ন দেখার সঙ্গি হবে? কথা দিচ্ছি
অনেক অনেক ভালোবাসবো।আমার মনের রানি বানিয়ে
রাখবো সারাজীবন।দেবে কি হাতটি বাড়িয়ে?
ভালোবাসি ,ভালোবাসি ভিশন ভালোবাসি।
তোমার এনসার এর অপেক্ষায় থাকবো।তুমি যতদিনে বলবে
ততদিন
.
""অর্নব""
.
চিঠিটা পড়ে কিছুক্ষণ থ মেরে বসে রইলাম, অর্নব আমাদের
ফার্ষ্ট বয়, ওকে তো কখনও কোন মেয়ের দিকে তাকাতেও
দেখিনি। ও এই কাজ করবে? নিশ্চই অন্য কেউ ওর নামে
ফাইজলামো করছে।
আপাতত এটা ভেবেই চিঠিটা রেখে দিলাম কিন্তু কে করবে
কাজটা? আচ্ছা কাল ক্যাম্পাসে গেলেই বুঝা যাবে
পরের দিন....
-- বলিস কি অর্নব আর লাভ এটা তো হতেই পারেনা
(সামিয়া)
গতকালের ব্যাপারটা আমার বেস্টফ্রেন্ড সামিয়ার সাথে সেয়ার
করি
-- চিঠিটা তে তো অর্নব ই লেখা দেখলিনা?
-- হুম তা দেখলাম বাট আনবিলিভেবল, ওর মতো একটা
রোবটিক ছেলের দ্বারা কেমনে সম্ভব?
-- আমিও তাই ভাবছি রে
-- আচ্ছা ধর অর্নব ই হলো তুই কি রাজি হবি?
-- ওই তুই তো সবই জানস ( খুব লজ্জা পেয়ে যাই)
-- ওকে দেন লেটস ওয়েট এন্ড ওয়াচ দোস্ত
-- আচ্ছা বাদ দে তো চল ক্লাসে যাই
.
আসলে অর্নব কে আমারো ভাল লাগে অনেক, খুব জেন্টেল
একটা ছেলে টেলেন্ট ও, সত্তি বলতে কি চিঠির শেষে ওর নামটা
দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।
সেদিন বারবারই অর্নবকে নোটিস করছিলাম আমি।চিঠিটা
আসলে ও দিয়েছে কিনা বোঝার জন্য, কিন্তু না ও তো
একবারও আমার দিকে তাকায়নি।এভাবে তিন চার দিন নোটিস
করেও ওর কনসেনেট্রশন এ কোন পরিবর্তন দেখলামনা।
সত্যিই অনেক হতাস হয়েছি।এখন পুরো পুরি সিওর হলাম
চিঠিটা ওর নাম দিয়ে অন্য কেউ লিখেছে
.
কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে অর্নবকে নিয়ে এত ভেবেছি যে এখন
মনেহয় ওর প্রতি পুরোপুরিই উইক হয়ে পড়েছি।ওকে নিয়ে
ভাবতে শুরু করেছি।কিন্তু ওতো আমাকে ভালোবাসেনা, সত্যি
অনেক কষ্ট লাগছে।
মন খারাপ করে বাসায় চলে আসলাম, দু তিন দিন আর
কলেজেই যাইনি
.
তিন দিন পর কলেজে আসলাম ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাস থেকে
বের হচ্ছিলাম, হঠাৎ!!!! আমার এনসার টা কিন্তু পেলামনা এই
কথাটা শুনে থমকে দাড়াই।পেছন ফিরে যাকে দেখলাম তার জন্য
আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা
-- অর্নব তুমি!!!!! ( এত্তগুলা অবাক হয়ে)
-- হ্যা আমি, আর কতদিন ওয়েট করতে হবে আমাকে? তুমি গত
তিনদিন ক্লাসে আসনি জানো আমার কত কষ্ট হয়েছে ?
-- কেনো?
-- তুমি বোঝনা? তুমি আরো সময় নিয়ে এনসার দিলেও
আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু কলেজে প্রতিদিন আসতে
হবে। তোমাকে না দেখে আমি থাকতে পারবোনা। বাই (খুব
লাজুকভাবে বলল)
-- এই দাড়াও ওয়েট, তারমানে চিঠিটা তুমিই লিখছ
-- হ্যা কেনো ওখানে তো আমার নাম লিখাই ছিলো
-- সত্তি আমিতো ভেবেছিলাম.....( ইয়াহু খুশিতে তো টেনিস
বলের মতো লাফাইতে ইচ্ছা করতেছে)
-- তোমার যখন ইচ্ছা এনসার জানালেই হবে
-- এই তুমি এত কাপুরুষ কেনো?
--মানে?
-- জোর করে ভালোবাসা আদায় করতে পারনা, এত ভনিতা
করো কেনো
-- পারি তো কিন্তু ভয় হয় যদি তুমি থাপ্পড় মারো?যদি
ফিরিয়ে দাও
-- আরে বোকা থাপ্পড় মারবো কেনো আমিও যে তোমাকে
অনেক ভালবেসে ফেলেছি
-- রিয়েলি?????
-- হুম
-- i love u
-- love u to
.
তারপর থেকে শুরু হলো আমাদের একসাথে পথচলা।ভিষন
ভালবাসি একে অপরকে, সৃষ্টি কর্তা মনেহয় আমাকে ওর জন্যই
তৈরি করেছে আর ওকে শুধুই আমার জন্য।একদিন দেখা না হলে
অস্হির হয়ে যাই সারারাত ফোনে কথা হয় এফ বিতে চ্যাটিং
তো আছেই।
দেখতে দেখতে আমরা ফাস্ট ইয়ার শেষ করে সেকেন্ড ইয়ারে
উঠলাম পড়াশোনাও চলছে ভালোভাবই ও আমার চেয়ে অনেক
ভালো স্টুডেন্ট ছিলো স?ব সময় পড়াশোনার জন্য আমাকে
শাসন করে।আমাদের ভালোবাসায় একবিন্দু কমতি হয়নি
কখনো
এজন্যই হয়তো বলে
বন্ধন সেতো হয়না পুরোনো
সম্পর্কগুলোর বয়স হয়না কোনো,,
আমাদের ও তাই হয়েছে দিন যত যাচ্ছে আমাদের ভালোবাসা
বেড়েছে
ও আমার সব পছন্দ অপছন্দ খেয়াল রাখতো আমিও রাখতাম
.
ইন্টারমিডিয়েট ফাইনাল শেষ করলাম।অর্নব আমার থেকে
অনেক ভালো করেছ।
অর্নব অনেক ভালো ভালো জায়গায় চান্স পেলেও আমি তেমন
ভালো কোথাও চান্স পাচ্ছিনা, শেষ মেষ আমাকে একটা
প্রাইভেট ভার্সিটিতেই ভর্তি হতে হলো, আর অর্নব Du তে
চান্স পেয়ে গেছে কদিন পরই ও চলে যাবে, খুব কান্না পাচ্ছে
আমার
গত এক বছর কেউ কাউকে ছাড়া একদিনের জন্যও কোথাও
যাইনি, সেখানে এখন এতগুলো সময় কিভাবে পার করবো।কিন্তু
আমি তো ওকে অনুৎসাহি করতে চাইনা আমিও চাই ও ভাল
কিছুই করুক, তাই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এটা ওকে বুঝতে দিইনি
দুদিন পর ওকে বিদায় দিতে গেলাম
.
--অর্নব অল দ্যা বেস্ট ( অনেক কস্টে কান্না চেপে গেলাম)
-- নোভা তোমাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো,খুব কষ্ট হচ্ছে
আমার , আমি তো মনেহয় মরেই যাব
-- ধুর এসব কোন ব্যাপার হলো? কিছুদিন খারাপ লাগবে
এরপর দেখবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে
.
অনেক কস্টে ওকে বিদায় দিয়েছি , ওরও খুব মন খারাপ ছিলো,
ওকেও এই ফার্স্ট টাইম কাঁদতে দেখেছি।
.
কিছুদিন খুব মন খারাপ থাকে আমার, কিচ্ছু ভালোলাগেনা।
অর্নব একটু পরপরই ফোন করে ভিডিও কল করে তাও ওকে
চরমভাবে মিস করছি
ভার্সিটির প্রথম দিন আজকে আমার অনেক নতুন নতুন
ফ্রেন্ড পেয়েছি সবাই অনেক মজার।কিন্তু মনটা ভালো করতে
পারছিনা যখনই ভাবছি অর্নব তো নেই।মনটা ভেঙে যাচ্ছে।
মন খারাপ করে স্ল্যাবে বসে আছি ,হঠাৎ
.
-- আমার মায়াবতিটার কি বেশি মন খারাপ?,
-- অর্নব তুমি!!! কখন আসছ,আমাকে তো বললেনা তুমি
আসছ (আবেগ কন্ট্রোল করতে পারছিলামনা )
-- এই পাগলি এত ইমোশনাল হচ্ছ কেনো? দেখো আমি চলে
এসেছি, এখানেই এডমিশন নিয়েছি
--মানে? তুমি তো ঢাকা ভার্সিটি তে এডমিশন নিয়েছ
তাইনা?
-- নিয়েছিলাম বাট ওইটা কেনসেল করেছি, তোমাকে ছেড়ে এক
মুহূর্ত থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো
-- তাই বলে তুমি,,, না না এটা ঠিক করোনি।এত ভালো চান্স
কেউ মিস করে?
-- তা জানিনা বাট আমি আমার বাবুনিটাকে আর এক মুহূর্ত
মিস করতে চাইনা
.
ওর সামনে একটিং করলেও মনে মনে খুব খুশি লাগছে।সবকিছু
আবার আগের মতো হয়ে গেছে।দুজনের একসাথে পথ চলা।
দেখতে দেখতে কখন যে ২ বছর চোখের নিমিষে পার হয়ে
গেলো
এদিকে আজকে অনেকদিন থেকেই আমার ফেমিলি থেকে বিয়ের
জন্য চাপ সৃষ্টি করছে
.
-- কি ব্যাপার নোভা বাড়াবাড়ির একটা লিমিট আছে, তোর
জন্য আর কতজনকে ফিরাইতে হবে
-- আব্বু আমি তো বলেছি আমি এখন বিয়ে করবোনা
-- দেখ এখন যে ছেলেটা এসেছে সে অনেক ভালো ছেলে
ফ্যামিলি ভালো,তোকে অনেক পছন্দ করেছে
-- আব্বু অর্নব এর কথা তো তোমাদেরকে বলেছি তাইনা?
আমি ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা
-- ফালতু কথা বলবিনা তোর বয়স এখন ২১ বছর, তোকে
আমরা এখন বিয়ে দেব অর্নবের বাবা মা কি ওকে ২১ বছর
বয়সে বিয়ে করাবে?
-- আব্বু আমি তো ওয়েট করতে পারি তাইনা?
-- তুই ভুলে যাসনা তোর ছোট আরেকটা বোন আছে ওকেও
বিয়ে দিতে হবে
--আব্বু প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর
- - অনেক বুঝিয়েছিস এবার আমি যেটা বলবো সেটাই হবে
আমি আজকেই ওদেরকে ফাইনাল কথা বলে দিচ্ছি
.
আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা, বাবাতো পুরাই
এগ্রিসিভ আসলে আজকে একবছর থেকেই অনেকগুলো বিয়ের
প্রপোসাল আমি না করেছি , অনেকের সাথে আব্বুর সম্পর্ক
খারাপ হয়ে গেছে।অর্নবকে সবকিছুই জানালাম
.
-- নোভা কি বলো তুমি এসব, তোমার মাথা ঠিক আছে
তো?
-- -আমি আর আব্বুকে আটকাতে পারছিনা, আব্বুর
যুক্তিগুলোও ইগনর করতে পারছিনা,,আমি কি করবো তুমি বলে
দাও
-- আমি এখন ফেমিলিতে বিয়র কথা বললে কি অবস্হা হবে
বুঝতে পারছ? আমার বড় ভাইয়া ও এখনো বিয়ে করেনি।
চলো আমরা পালিয়ে যাই
-- এটা কি বললা অর্নব এতে আমাদের ফেমিলির রেপুটেশন
কোথায় দাড়াবে বুঝতে পারছ?
-- তো কি করবো আমার আর কিচ্ছু মাথায় আসছেনা
দুজনেই খুব টেনশনে পড়ে গেলাম কি করবো এখন?ওইদিন
দুজনে কেঁদেছি অনেক
আমার বিয়ের দিন তারিখ সব ফিক্সট হয়ে গেছে। আমার
অতিরিক্ত জিদাজিদির কারনে বাবা আমার ভার্সিটি যাওয়া
বন্ধ করে দিয়েছে ফোনও নিয়ে নিয়েছে।আমি জানি অর্নব ও
পাগলের মতো হয়ে আছে, আমার সুইসাইড করতে ইচ্ছা করছে ,
কিন্তু মুসলিম হয়ে এরকম একটা জঘন্য কাজ কিকরে করি।
না জানি অর্নবের কি অবস্হা,
.
আজকে সামিয়া এসেছে ওর ফোন দিয়ে অর্নবকে ফোন
দিলাম,কান্নার জন্য কারো মুখ দিয়ে কথা আসছেনা
-- নোভা প্লিজ তুমি বিয়েটা করোনা, আমি মরে যাব সত্তি
বলছি, প্লিজ তুমি ফিরে এসো প্লিজ প্লিজ প্লিজ
-- বিশ্বাস করো অর্নব আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু
কাউকে বোঝাতে পারিনি। আমাদের ভালোবাসা টা সবার কাছে
সস্তা আবেগ ছাড়া আর কিছুইনা।তুমি আমাকে মাফ করে দিও
প্লিজ।
অপর পাশ থেকে শুধু কান্নার সাউন্ড ই শুনতে পেলাম দুজনেই
নির্বাক আমিও কাঁদছি চিৎকার করে
.
সময় জুড়ে আজ শুন্যতা
নিরবে ছুঁয়ে থাকে
ভূলেও আমি ভাবিনি
হারাবো কখনো তোমায় এভাবে.....
.
সেইম এইজের রিলেশন গুলো বেশিরভাগ এভাবেই ঝরে যায়,
সেটা যতই রিয়েল লাভ হোক
ধরিয়ে দিয়েছে
.,
-- আপ্পি এটা তোমার জন্য, আমি যাই
-- এই পিচ্চি দাড়াও, কে দিয়েছে এটা?
--আপ্পি ওটা খুললেই সব বুঝতে পারবে,, টা টা
-- আরে দাড়াও....
.
ধুর পিচ্চিটা তো চলেই গেলো।আজিব তো এটা কে দেবে তাও
আবার একটা পিচ্চিকে দিয়ে পাঠালো।এতক্ষণ ক্যাম্পাসে
দাড়িয়েই ভাবছিলাম এসব, আচ্ছা বাসায় গিয়ে খুলে দেখবো
.
আচ্ছা আমার পরিচয় ই তো দেয়া হয়নি, আমি নোভা
ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষে পড়ি ছাত্রি হিসেবে মোটামুটি,বাবা
মায়ের বড় মেয়ে আমি একটা ছোট বোন আছে ও আমার দেড়
বছরের ছোট।
বাস এইটুকুই,, বলার মতো আর তেমন কিছুই নাই
.,
বিকাল বেলা প্যাকেটটা খুলে আমি তো পুরাই টাসকি,প্যাকেটা
খুলতেই একগুচ্ছ গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে পড়লো , তারপর
একটা চিঠি, অনেক কৌতুহল নিয়ে চিঠিটা খুললাম, ওতে লেখা
ছিলো ,
.
আমার সপ্ন বালিকা
.. তুমি ভাবছ আমি কতটা ব্যাকডেটেড, এই যুগে আবার কেউ
চিঠি লিখে? আসলে আমার নিজেরই খুব হাসি পাচ্ছে, কিন্তু কি
করবো বলো তোমার সামনে আসলেই যে আমি ভাষা হারিয়ে
ফেলি।তুমি জানো
লাভ এট ফার্ষ্ট সাইট বলে একটা কথা আছে, যেটা আমি আগে
বিলিভ করতামনা বাট তোমাকে দেখার পর আমার সেটাই
হয়েছে, প্রথম যেদিন তুমি এসেছিলে দুচোখের আলোতে সেদিন
থেকেই মনের ক্যানভাসে তোমার ছবিটা আঁকা হয়ে গেছে।
.
তোমার মায়ায় আমি জড়িয়ে গেছি, আমার প্রতিটা মুহূর্ত
যেনো তোমার করে নিয়েছ।তোমাকে ছাড়া এখন কিছু,ই ভাবতে
পারছিনা,
""বালিকা তুমি কি আমার সপ্ন দেখার সঙ্গি হবে? কথা দিচ্ছি
অনেক অনেক ভালোবাসবো।আমার মনের রানি বানিয়ে
রাখবো সারাজীবন।দেবে কি হাতটি বাড়িয়ে?
ভালোবাসি ,ভালোবাসি ভিশন ভালোবাসি।
তোমার এনসার এর অপেক্ষায় থাকবো।তুমি যতদিনে বলবে
ততদিন
.
""অর্নব""
.
চিঠিটা পড়ে কিছুক্ষণ থ মেরে বসে রইলাম, অর্নব আমাদের
ফার্ষ্ট বয়, ওকে তো কখনও কোন মেয়ের দিকে তাকাতেও
দেখিনি। ও এই কাজ করবে? নিশ্চই অন্য কেউ ওর নামে
ফাইজলামো করছে।
আপাতত এটা ভেবেই চিঠিটা রেখে দিলাম কিন্তু কে করবে
কাজটা? আচ্ছা কাল ক্যাম্পাসে গেলেই বুঝা যাবে
পরের দিন....
-- বলিস কি অর্নব আর লাভ এটা তো হতেই পারেনা
(সামিয়া)
গতকালের ব্যাপারটা আমার বেস্টফ্রেন্ড সামিয়ার সাথে সেয়ার
করি
-- চিঠিটা তে তো অর্নব ই লেখা দেখলিনা?
-- হুম তা দেখলাম বাট আনবিলিভেবল, ওর মতো একটা
রোবটিক ছেলের দ্বারা কেমনে সম্ভব?
-- আমিও তাই ভাবছি রে
-- আচ্ছা ধর অর্নব ই হলো তুই কি রাজি হবি?
-- ওই তুই তো সবই জানস ( খুব লজ্জা পেয়ে যাই)
-- ওকে দেন লেটস ওয়েট এন্ড ওয়াচ দোস্ত
-- আচ্ছা বাদ দে তো চল ক্লাসে যাই
.
আসলে অর্নব কে আমারো ভাল লাগে অনেক, খুব জেন্টেল
একটা ছেলে টেলেন্ট ও, সত্তি বলতে কি চিঠির শেষে ওর নামটা
দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।
সেদিন বারবারই অর্নবকে নোটিস করছিলাম আমি।চিঠিটা
আসলে ও দিয়েছে কিনা বোঝার জন্য, কিন্তু না ও তো
একবারও আমার দিকে তাকায়নি।এভাবে তিন চার দিন নোটিস
করেও ওর কনসেনেট্রশন এ কোন পরিবর্তন দেখলামনা।
সত্যিই অনেক হতাস হয়েছি।এখন পুরো পুরি সিওর হলাম
চিঠিটা ওর নাম দিয়ে অন্য কেউ লিখেছে
.
কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে অর্নবকে নিয়ে এত ভেবেছি যে এখন
মনেহয় ওর প্রতি পুরোপুরিই উইক হয়ে পড়েছি।ওকে নিয়ে
ভাবতে শুরু করেছি।কিন্তু ওতো আমাকে ভালোবাসেনা, সত্যি
অনেক কষ্ট লাগছে।
মন খারাপ করে বাসায় চলে আসলাম, দু তিন দিন আর
কলেজেই যাইনি
.
তিন দিন পর কলেজে আসলাম ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাস থেকে
বের হচ্ছিলাম, হঠাৎ!!!! আমার এনসার টা কিন্তু পেলামনা এই
কথাটা শুনে থমকে দাড়াই।পেছন ফিরে যাকে দেখলাম তার জন্য
আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা
-- অর্নব তুমি!!!!! ( এত্তগুলা অবাক হয়ে)
-- হ্যা আমি, আর কতদিন ওয়েট করতে হবে আমাকে? তুমি গত
তিনদিন ক্লাসে আসনি জানো আমার কত কষ্ট হয়েছে ?
-- কেনো?
-- তুমি বোঝনা? তুমি আরো সময় নিয়ে এনসার দিলেও
আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু কলেজে প্রতিদিন আসতে
হবে। তোমাকে না দেখে আমি থাকতে পারবোনা। বাই (খুব
লাজুকভাবে বলল)
-- এই দাড়াও ওয়েট, তারমানে চিঠিটা তুমিই লিখছ
-- হ্যা কেনো ওখানে তো আমার নাম লিখাই ছিলো
-- সত্তি আমিতো ভেবেছিলাম.....( ইয়াহু খুশিতে তো টেনিস
বলের মতো লাফাইতে ইচ্ছা করতেছে)
-- তোমার যখন ইচ্ছা এনসার জানালেই হবে
-- এই তুমি এত কাপুরুষ কেনো?
--মানে?
-- জোর করে ভালোবাসা আদায় করতে পারনা, এত ভনিতা
করো কেনো
-- পারি তো কিন্তু ভয় হয় যদি তুমি থাপ্পড় মারো?যদি
ফিরিয়ে দাও
-- আরে বোকা থাপ্পড় মারবো কেনো আমিও যে তোমাকে
অনেক ভালবেসে ফেলেছি
-- রিয়েলি?????
-- হুম
-- i love u
-- love u to
.
তারপর থেকে শুরু হলো আমাদের একসাথে পথচলা।ভিষন
ভালবাসি একে অপরকে, সৃষ্টি কর্তা মনেহয় আমাকে ওর জন্যই
তৈরি করেছে আর ওকে শুধুই আমার জন্য।একদিন দেখা না হলে
অস্হির হয়ে যাই সারারাত ফোনে কথা হয় এফ বিতে চ্যাটিং
তো আছেই।
দেখতে দেখতে আমরা ফাস্ট ইয়ার শেষ করে সেকেন্ড ইয়ারে
উঠলাম পড়াশোনাও চলছে ভালোভাবই ও আমার চেয়ে অনেক
ভালো স্টুডেন্ট ছিলো স?ব সময় পড়াশোনার জন্য আমাকে
শাসন করে।আমাদের ভালোবাসায় একবিন্দু কমতি হয়নি
কখনো
এজন্যই হয়তো বলে
বন্ধন সেতো হয়না পুরোনো
সম্পর্কগুলোর বয়স হয়না কোনো,,
আমাদের ও তাই হয়েছে দিন যত যাচ্ছে আমাদের ভালোবাসা
বেড়েছে
ও আমার সব পছন্দ অপছন্দ খেয়াল রাখতো আমিও রাখতাম
.
ইন্টারমিডিয়েট ফাইনাল শেষ করলাম।অর্নব আমার থেকে
অনেক ভালো করেছ।
অর্নব অনেক ভালো ভালো জায়গায় চান্স পেলেও আমি তেমন
ভালো কোথাও চান্স পাচ্ছিনা, শেষ মেষ আমাকে একটা
প্রাইভেট ভার্সিটিতেই ভর্তি হতে হলো, আর অর্নব Du তে
চান্স পেয়ে গেছে কদিন পরই ও চলে যাবে, খুব কান্না পাচ্ছে
আমার
গত এক বছর কেউ কাউকে ছাড়া একদিনের জন্যও কোথাও
যাইনি, সেখানে এখন এতগুলো সময় কিভাবে পার করবো।কিন্তু
আমি তো ওকে অনুৎসাহি করতে চাইনা আমিও চাই ও ভাল
কিছুই করুক, তাই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এটা ওকে বুঝতে দিইনি
দুদিন পর ওকে বিদায় দিতে গেলাম
.
--অর্নব অল দ্যা বেস্ট ( অনেক কস্টে কান্না চেপে গেলাম)
-- নোভা তোমাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো,খুব কষ্ট হচ্ছে
আমার , আমি তো মনেহয় মরেই যাব
-- ধুর এসব কোন ব্যাপার হলো? কিছুদিন খারাপ লাগবে
এরপর দেখবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে
.
অনেক কস্টে ওকে বিদায় দিয়েছি , ওরও খুব মন খারাপ ছিলো,
ওকেও এই ফার্স্ট টাইম কাঁদতে দেখেছি।
.
কিছুদিন খুব মন খারাপ থাকে আমার, কিচ্ছু ভালোলাগেনা।
অর্নব একটু পরপরই ফোন করে ভিডিও কল করে তাও ওকে
চরমভাবে মিস করছি
ভার্সিটির প্রথম দিন আজকে আমার অনেক নতুন নতুন
ফ্রেন্ড পেয়েছি সবাই অনেক মজার।কিন্তু মনটা ভালো করতে
পারছিনা যখনই ভাবছি অর্নব তো নেই।মনটা ভেঙে যাচ্ছে।
মন খারাপ করে স্ল্যাবে বসে আছি ,হঠাৎ
.
-- আমার মায়াবতিটার কি বেশি মন খারাপ?,
-- অর্নব তুমি!!! কখন আসছ,আমাকে তো বললেনা তুমি
আসছ (আবেগ কন্ট্রোল করতে পারছিলামনা )
-- এই পাগলি এত ইমোশনাল হচ্ছ কেনো? দেখো আমি চলে
এসেছি, এখানেই এডমিশন নিয়েছি
--মানে? তুমি তো ঢাকা ভার্সিটি তে এডমিশন নিয়েছ
তাইনা?
-- নিয়েছিলাম বাট ওইটা কেনসেল করেছি, তোমাকে ছেড়ে এক
মুহূর্ত থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো
-- তাই বলে তুমি,,, না না এটা ঠিক করোনি।এত ভালো চান্স
কেউ মিস করে?
-- তা জানিনা বাট আমি আমার বাবুনিটাকে আর এক মুহূর্ত
মিস করতে চাইনা
.
ওর সামনে একটিং করলেও মনে মনে খুব খুশি লাগছে।সবকিছু
আবার আগের মতো হয়ে গেছে।দুজনের একসাথে পথ চলা।
দেখতে দেখতে কখন যে ২ বছর চোখের নিমিষে পার হয়ে
গেলো
এদিকে আজকে অনেকদিন থেকেই আমার ফেমিলি থেকে বিয়ের
জন্য চাপ সৃষ্টি করছে
.
-- কি ব্যাপার নোভা বাড়াবাড়ির একটা লিমিট আছে, তোর
জন্য আর কতজনকে ফিরাইতে হবে
-- আব্বু আমি তো বলেছি আমি এখন বিয়ে করবোনা
-- দেখ এখন যে ছেলেটা এসেছে সে অনেক ভালো ছেলে
ফ্যামিলি ভালো,তোকে অনেক পছন্দ করেছে
-- আব্বু অর্নব এর কথা তো তোমাদেরকে বলেছি তাইনা?
আমি ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা
-- ফালতু কথা বলবিনা তোর বয়স এখন ২১ বছর, তোকে
আমরা এখন বিয়ে দেব অর্নবের বাবা মা কি ওকে ২১ বছর
বয়সে বিয়ে করাবে?
-- আব্বু আমি তো ওয়েট করতে পারি তাইনা?
-- তুই ভুলে যাসনা তোর ছোট আরেকটা বোন আছে ওকেও
বিয়ে দিতে হবে
--আব্বু প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর
- - অনেক বুঝিয়েছিস এবার আমি যেটা বলবো সেটাই হবে
আমি আজকেই ওদেরকে ফাইনাল কথা বলে দিচ্ছি
.
আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা, বাবাতো পুরাই
এগ্রিসিভ আসলে আজকে একবছর থেকেই অনেকগুলো বিয়ের
প্রপোসাল আমি না করেছি , অনেকের সাথে আব্বুর সম্পর্ক
খারাপ হয়ে গেছে।অর্নবকে সবকিছুই জানালাম
.
-- নোভা কি বলো তুমি এসব, তোমার মাথা ঠিক আছে
তো?
-- -আমি আর আব্বুকে আটকাতে পারছিনা, আব্বুর
যুক্তিগুলোও ইগনর করতে পারছিনা,,আমি কি করবো তুমি বলে
দাও
-- আমি এখন ফেমিলিতে বিয়র কথা বললে কি অবস্হা হবে
বুঝতে পারছ? আমার বড় ভাইয়া ও এখনো বিয়ে করেনি।
চলো আমরা পালিয়ে যাই
-- এটা কি বললা অর্নব এতে আমাদের ফেমিলির রেপুটেশন
কোথায় দাড়াবে বুঝতে পারছ?
-- তো কি করবো আমার আর কিচ্ছু মাথায় আসছেনা
দুজনেই খুব টেনশনে পড়ে গেলাম কি করবো এখন?ওইদিন
দুজনে কেঁদেছি অনেক
আমার বিয়ের দিন তারিখ সব ফিক্সট হয়ে গেছে। আমার
অতিরিক্ত জিদাজিদির কারনে বাবা আমার ভার্সিটি যাওয়া
বন্ধ করে দিয়েছে ফোনও নিয়ে নিয়েছে।আমি জানি অর্নব ও
পাগলের মতো হয়ে আছে, আমার সুইসাইড করতে ইচ্ছা করছে ,
কিন্তু মুসলিম হয়ে এরকম একটা জঘন্য কাজ কিকরে করি।
না জানি অর্নবের কি অবস্হা,
.
আজকে সামিয়া এসেছে ওর ফোন দিয়ে অর্নবকে ফোন
দিলাম,কান্নার জন্য কারো মুখ দিয়ে কথা আসছেনা
-- নোভা প্লিজ তুমি বিয়েটা করোনা, আমি মরে যাব সত্তি
বলছি, প্লিজ তুমি ফিরে এসো প্লিজ প্লিজ প্লিজ
-- বিশ্বাস করো অর্নব আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু
কাউকে বোঝাতে পারিনি। আমাদের ভালোবাসা টা সবার কাছে
সস্তা আবেগ ছাড়া আর কিছুইনা।তুমি আমাকে মাফ করে দিও
প্লিজ।
অপর পাশ থেকে শুধু কান্নার সাউন্ড ই শুনতে পেলাম দুজনেই
নির্বাক আমিও কাঁদছি চিৎকার করে
.
সময় জুড়ে আজ শুন্যতা
নিরবে ছুঁয়ে থাকে
ভূলেও আমি ভাবিনি
হারাবো কখনো তোমায় এভাবে.....
.
সেইম এইজের রিলেশন গুলো বেশিরভাগ এভাবেই ঝরে যায়,
সেটা যতই রিয়েল লাভ হোক