Forums.Likebd.Com

Full Version: তবু প্রতারক পুরুষকেই ভালবাসি
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
---স্যার আমি অবন্তি ফাস্ট ইয়ার নিউ|
***ওকে ,ভালভাবে ক্লাশ করোএকদম ফাকি দিবে না|এখন কি
তোমার ক্লাশ নেই?এখানে কি করছো?
--- একচুয়াল্যি স্যার আমি আপনার জন্য ই এখানে এসেছি|
****মানে?
---মানে স্যার আমার এখন ক্লাশ নেই( আমতা আমতা সুরে)
*** তবে লাইব্রেরীতে যাও|
---স্যার একটা কথা ছিল|
*** হ্যা বলো ( অবন্তীর দিকে তাকিয়ে বল্লো)
---( অবন্তী হাতের পেছনে লুকিয়ে রাখা গোলাপটি স্যারের
সামনে ধরে বল্লো) এটা আপনার জন্য স্যার||
একটু মনে মনে হোচট খেলো আশিক স্যার|তারপর ইতস্তত
ভংগিতে বল্লো
*** ফুল কেনো?
--- আমাদের গাছের প্রথম গোলাপটি আপনাকে দিতে চেয়েছি
তাই||
***ওকে ধন্যবাদ,তবে আশা করি এমন কাজ আর করবে
না,কারন ক্যাম্পাসে আমি কোন ছাত্রীর কাছ থেকে ফুল নিতে
পারি না|আশা করি কথাটি তুমি বুঝতে পেরেছো|
কথাটি বলেই আশিক স্যার অবন্তীকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো|
ছোটবেলা থেকেই ভীষন জেদী আর একরোখা|রাগলে এখনো
গাল দুটি লাল হয়ে যায়|খুব অপমান বোধ হচ্ছিল নিজের
কাছে,তবু কিছুই করার ছিল না|
সেই দিন রাগটা বেস হজম করে যায় অবন্তী|কারন স্কুল ছেড়ে
কলেজে পা দেবার পরই প্রথম দেখায় আশিক স্যারকে ওর ভাল
লেগে যায়|যেখানে হাজার ছেলে অবন্তীকে পছন্দ করে,সেখানে
কাউকে পাত্তা না দিয়ে তার মনে স্যার কে ধরেছে|
কি আর করা কচি মনে যা ধরে তাই সই|দিন দিন স্যারের জন্য
পাগলামী বেড়েই যাচ্ছে|
স্যার ইংলিশ সাহিত্যের টিচার,তাই তাকে ইংলিশ গল্প
পড়ানোর ভার দেয়া হলো কলেজ থেকে|ইয়াং,স্মার্ট কথা
বলার অসাধারন ভংগীমা,যে কেউ তার প্রেমে পরে যাবে|ক্লাশ
নেবার সময় তার ভেতরে আরো বেসি পার্সোনালিটি ভর করে|
বেসি দিন হয়নি কলেজে জয়েন করছে|মাস ছয় হবে,এর মাঝে
অনেকেই তাকে বিরক্ত করেছে তবে অবন্তীর মত এমন ক্রেজি
কেউ ছিল না|অবন্তীর ক্লাশের বান্ধবীরে এটা নিয়ে বেস মজা
করতো|
অবন্তী মাঝে মাঝে নিজের ক্লাশ রেখে আশিক স্যারের অন্য
ক্লাশের রুমের সামনে থেকে যাওয়া আসা করত|
সেদিন ক্লাশে আশিক স্যার বিখ্যাত গল্প জিম আর ডেলা
পড়াচ্ছেন|ভালবাসার ডেফিনেশন বুঝাচ্ছেন|
এমন সময় অবন্তী হাত তুল্লো|স্যার তার লেকচার থামিয়ে
জিজ্ঞেস করলো,
*** কোন প্রশ্ন?
--- ( অবন্তী দাড়িয়ে বল্লো ) লাভ ইউ
*** হোয়াট?( রাগে স্যার তখন লাল হয়ে গেছেন)
--- না মানে স্যার আই লাভ ইউ কাকে বলা যায়? মানে
সাহিত্যে এ বিষয়ে কোন সুনির্দিস্ট ব্যাখা আছে কি না তা
জানতে চাচ্ছিলাম|
ওর প্রশ্নে ক্লাশের মধ্যে হাসিড় বন্যা বয়ে গেলো|পরিস্থিতি
সামাল দেবার জন্য স্যার বল্লেন
*** ক্লাশের বাইরে গিয়ে দাড়াও|
--- স্যার ,আমি এমন কি করেছি?
***তোমাকে যা বলেছি তাই করবে,আর আমার ক্লাশ শেষে
টিচার্স রুমে দেখা করবে|
প্রথমে অবন্তী ব্যাপারটি তেমন পাত্তা দেয়নি|কিন্তু স্যারের
মুড দেখে ও ভয় পেয়ে গেলো|এর পর ক্লাশের বাইরে দাড়িয়ে
রইল,ক্লাশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত|
টিচার্স রুমে এক কোনে দাড়িয়ে ছিল অবন্তী|স্যার
বল্লেন**** আমি নেক্সট টাইম তোমার প্যারেন্টস কে ডেকে
আনব এখানে|
---সরি স্যার ,আমি আপনাকে ছোট করতে চগেলো|প্লিজ
প্লিজ স্যার এমন আর হবে না|
*** এবার যেতে পারো| আর হ্যা টিচার হিসেবে যত টুকু
দরকার ঠিক তত টুকু ই করবে আশা করি|
রুম থেকে বেরিয়ে যাবার সময় অবন্তী স্যারের দিকে তাকিয়ে
মুখ ভ্যাংচি মেরে বেরিয়ে গেলো|
ইদানিং স্যারের ফোনে অনেক কল আসে|স্যার যখন ই রিসিভ
করে ও পাশ থেকে কেউ কথা বলে না|
ওই ঘটনার পরের সপ্তাহের ঘটনা,স্যার ক্লাশ নিচ্ছেনপাশের
রুমে|মোবাইল ফোনটা স্যারের পকেটে|তার ফোনে মেসেজ
এলো,চেক করতেই তাতে লেখা---শার্ট টিতে একদম মানায়নি
তোমাকে,তুমি সব সময় হালকা কালার শার্ট পড়বে|
স্যার ফোন রেখে দিয়ে তার মত ক্লাশ নিতে থাকলেন|
রাতের বেলা মেসেজ এলো--- কাল তুমি বেবি পিংক শার্ট টা
পড়বে|
স্যারের মেসেজ দেখে বুঝতে বাকি রইলো না যে,কে মেসেজ
পাঠাচ্ছে|
ক্লাশে ঢুকবে ঠিক এমন সময় ,স্যার সামনে এসে দাড়ালেন,
*** তোমার ব্যাগ চেক করব,ব্যাগ দেখাও|
--- ওকে লেটস চেক,বলেই ব্যাগটা ওপেন করে মুখের সামনে
ধরলো অবন্তী|
*** তোমার ফোন দেখাও আমাকে!
--- খুব কড়া ভাবে স্যারের দিকে তাকিয়ে বল্লো,স্যার আমি
ফোন ইউজ করি না|বিলিভ না হলে ব্যাগটা আপনার কাছে
রেখে দিন|এই বলে ব্যাগটু ধপাস করে হাত দিয়ে মেঝেতে ফেলে
অবন্তী চলে গেলো|
আসলে ফোনটা অবন্তী তার শরীরের অন্য কোথাও লুকিয়ে
রেখেছিল|
হাসতে হাসতে অবন্তী হেটে যাচ্ছে কিন্তু হাতে তার ফোন|
তখনি মেসেজ দিলো, লাভ ইউ টু মাচ|এত রং দেখিয়োনা খুন
হয়ে যাবো|
স্যার কিছু ধরতে পারলেন না|সেদিন ক্লাসে ঢুকতেই ব্লাক
বোর্ডে লেখা দেখে থমকে দাড়ায় আশিক স্যার|ওখানে লেখা
আছে, আশিক = প্রেমিক |
এবার স্যার দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, সবাই কি জানো আমার
নাম?
সবাই এক সাথে উত্তর দিলো,জ্বী স্যার|
***আচ্ছা টিচারদের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধা কি তোমরা দিতে
জানো না? কে লিখেছে এটা?
---অবন্তী দাড়িয়ে বল্লো , স্যার আমি লিখিনি|
ওই দিন স্যার ক্লাস নেননি আর|অবন্তীকে ও কিছু বলেননি|
এর মাঝেই কলেজে মোটামুটি সাড়া পড়ে গেছে যে আশিক
স্যারকে ফাস্ট ইয়ারের কোন স্টুডেন্ট ডিস্টার্ব করে|এ নিয়ে
বেশ মজা করে অন্য টিচার মহল|তবে এ নিয়ে বেস বিব্রত
আশিক স্যার||
তবে অবন্তী ও ছেড়ে দেবার মত ছিল না|অনেক ভাবে আশিক
স্যারকে বিরক্ত করেছে|তাকে বুঝাতে চেয়েছে যে ,অবন্তী তাকে
চায়|কিন্তু স্যার একটি বারের জন্যও প্রশ্রয় দেয়নি
অবন্তীকে|তবে যথেস্ট পারসোনিটি থাকার কারনেই হয়ত
পেরেছে|অথবা ক্যারিয়ারের শুরুতেই কোন স্ক্যান্ডেলে নিজেকে
জড়াতে চাননি|
যাই হোক ,সে দিন দেখলাম অবন্তীর খুব মন খারাপ|কারন
একটা উড়ো খবর ছড়িয়ে গেছে যে , আশিক স্যার বদলি হয়ে
ঢাকা চলে যাচ্ছেন|
শিওর হবার জন্য,ছুটে যায় টিচারস রুমে|দেখে স্যার নেই|
লাইব্রেরি তে শুনতে পায় আজ রাতেই স্যার ঢাকা যাচ্ছেন|
অবন্তী স্যারের মোবাইলে কল দেয়|কিন্তু পায়নি| হয়ত
নাম্বারটি বদলে ফেলেছে|এবার অবন্তী স্যার যেখানে থাকেন
ওখানে যায়|দেখে স্যার রুমে নেই|বাইরে কোথাও গিয়েছেন,তাই
ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করেন স্যার ফেরা পর্যন্ত|লাভ হলো না
স্যারের সাথে দেখা হয়নি|
বাসায় গিয়ে ব্যাগে দু একটি কাপড় গুছিয়ে নেয়|কারন বাসায়
তার লেখা পড়ায় বেস ডিস্টার্ব হচ্ছে তাই কয়েক টা দিন এক
বান্ধুবীর সাথে হোস্টেলে থাকবে|এই বলে বাসা থেকে চলে যায়|
রাত দশটায় বাস ছেড়ে যাবে ঢাকার উদ্দ্যেশে|আশিক স্যারের
সিট টি ঠিক জানালার পাশে|স্যার উঠে বসে তার কিছু সময়
পরই বাস ছেড়ে দেয়|পাশের ছিটে এক মহিলা বোরখা পরে জড়
শড় হয়ে বসে আছে|রাতটি মোটামুটি ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেন স্যার|
সকাল ছয়টায় বাস ঢাকা এসে থামে,স্যার নেমে দাড়ালেন এমন
সময় পাশের ছিটে বসা মহিলা বোরখা পরা উনি স্যারের হাতটি
ধরে ফেলে|স্যার অবাক হয়ে বল্লেন, কি হয়েছে? কোন
সমস্যা?
---হ্যা না মানে ..
*** কে আপনি?ভয়েজটা চেনা চেনা লাগছে||
উত্তরে কিছু বল্লো না মহিলাটা|
স্যার কিছু সময় চুপ থেকে বল্লো ** ওহ সীট অবন্তী?তুমি?
মুখটা খোল দেখি,বলেই মুখের কাপড় সরাতে লাগলো|
আচমকা অবন্তী স্যারের গলা জড়িয়ে ধরে কেদে ফেল্লেন,---
স্যার আমি পারব না আপনাকে ভুলে থাকতে|প্লিজ আমাকে
ফিরিয়ে দেবেন না প্লিজ|
স্যার তখন ওর হাত সরাতে গিয়ে ও থেমে গেলেন|চুপ হয়ে
দাড়িয়ে রইলেন|তারপর ওর হাত ধরে পাশের একটি রেস্তোরায়
নিয়ে গিয়ে বসালেন|স্যার দেখেছেন ও সারা রাত কিছু খায়নি|
তাই দুজনে মিলে নাস্তা করলেন|ওকে একদম হার্ট করে কথা
বলেনি|বেস কিছু সময় নিলেন|এবার ওর কাছ থেকে ওর বাসার
ফোন নাম্বার নিলেন|আর ওনার কলেজে জানালেন যে,ওনার
আজ আসা হবে না|
কি হতে যাচ্ছে তা কিন্তু অবন্তী জানে না|তবে অবনী বেস
আশাবাদী ছিল,যে স্যার তাকে এখন আর ফেরাবেন না|অবন্তী
কে রেখে স্যার একবার ওয়াশ রুমে গেলেন|ফিরে এসে বল্লেন
--- অবন্তী তুমি এখন ফিরে যাবে লক্ষী মেয়ের মত|এরপর
আমার সব কাজ সেরে আমি আসব তোমাকে নিতে|
অবন্তী বল্লো, স্যার না গেলে হয় না?এই বলেই কান্না করতে
শুরু করলো|
স্যার তখন ওর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বল্লো,একদম
পাগলামি করো না,এখানে আমার নিজের ই থাকার জায়গা
নেই,তোমাকে কই রাখবো!
বেটার আমি সব গুছিয়ে তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো|
অনেক বোঝানোর পরে অবন্তী রাজী হয়|আসলে ওই সময়
স্যার খারাপ ব্যাবহার করলে,অবন্তী উল্টা পাল্টা কিছু করতে
পারতো|কারন যে মেয়ে মাত্র ক দিনের চেনা মানুষের জন্য
নিজের ঘর ছাড়তে পারে ,সে ইমোশনালি অনেক কিছুই করতে
পারে|
যখন অবন্তীর বাবা মা ওকে নিতে বাস স্ট্যান্ড এসে
পৌছায়,তখন দুপুর দুইটা|ওরা একটা মাইক্রো বাসে করে আসে|
ফিরে যাবার সময়,অবন্তী আশিক স্যার কে জড়িয়ে ধরে কাদে|
তখন স্যার বল্লেন, যাও তুমি ভেবোনা আমি খুব শীঘ্রই নিতে
আসবো|
দশ বছর পরে,অবন্তী আজো আশিক স্যারকে খুজে
বেড়ায়,ফেসবুকের পাতায় আবার কখনো কখনো আশে পাশের
মানুষ গুলোর ভীড়ে|কিন্তু ওর প্রতীক্ষা আর শেষ হয়না|
শুনেছি,ফিরে আসার পরে অবন্তীকে জোড় করে বিয়ে দেয় ওর
ফ্যামিলি|এক বছরের মাথায়,অবন্তী বাবার ঘরে চলে আসে|
বেসিক্যল্যি অবন্তী মেনে নিতে পারেনি স্বাভাবিক ভাবে|আর
পুরুষ মানেই প্রতারক ওর কাছে|ইমোশনাল্লি ব্লাক মেইল
করতে এরা বেস পটু|তবুও ভালবাসে,বার বার ভালবাসে|
ভালবাসাতো হয়না মনের বিপরীতে|তবে একতরফা হয়|যার
স্বাদ যে নিয়েছে শুধু মাত্র সেই জানে||