02-21-2017, 08:36 AM
হুম আজ সেই কাংক্ষিত ব্রেক আপ করেই আসলাম নীলার
সাথে। আর ভাল লাগে না তাকে। একটা বিরক্তি এসে গেছে তার
ওপর। সারা দিন খালি ফোন দিয়ে খোজ খবর নেয়। এই করছ,
না ওই করছ এত কৈফত দেওয়া যায়? তারওপর আবার আবার
প্রতিদিন বিকালে তাকে সময় দিতে হবে। না হলে সে ক্ষেপে
আগুন হয়ে থাকে। আমার ওপর সব আগুন ঝাড়ে। জিবন টা
পুরাই ঝাঁজরা করে দিয়েছে এই মেয়ে।
.
ব্রেক আপ করার সময় মেয়েটা অনেক কান্নাকাটি করেছিল।
অনেক বার আমার কাছে মাফ চাইছিল। আমার হাত শক্ত করে
ধরে ছিল। আমাকে কোন ভাবেই আসতে দিচ্ছিল না। অনেক
কষ্টে তার হাত থেকে রেহাই পেয়েছি। অনেক ফ্রেশ আর ফ্রি
লাগছে নিজেকে। আজ আমিমি স্বাধীন। হ্যা আজ আমি পুরাই
স্বাধীন। কে বলে প্রেম করে শান্তি আছে। সব ভুল প্রেম
মানেই কষ্ট, ঘোর কষ্ট। যাই হোক এখন আমি মুক্ত।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি ১০ টা বাজে। আয় হায় আজ তো
খবর আছে। ৮.৩০ এ ক্লাস ছিল আমাদের খাটাশ স্যার টার।
আমার ওপর সে অল টাইম ক্ষেপে থাকে। কারনে অকারনে
আমাকে ঝাড়ে। ইশ এই স্যারের সাথেও যদি ব্রেক আপ করতে
পারতাম। ও হ্যা আমি তো নীলার সাথে ব্রেক আপ করেছি।
আর তাই তো আজ কেউ সকালে কল দিয়ে আমার ঘুম টা
ভাংগায় নি। না আমার তো হেব্বি সমস্যা হল। সালা রুম মেট
টাও সেই বদমাস, এক বারও ডাকল না।
.
বুকে অনেক সাহস জমিয়ে গেলাম ভার্সিটি তে। আল্লাহ
আল্লাহ করছি যেন নীলা আর খাটাশ স্যারের সাথে না দেখা
হয়। নীলা আমার দুই ইয়ার জুনিয়র আর আমরা একই ভার্সিটি
তে পড়ি। এই সব ভাবতে ভাবতেই খাটাশ স্যার সামনে চলে
আসল। শুরু হলো আমার প্যারাময় কিছু সময়। কেন ক্লাসে
আসিনি, কি করছিলাম, এত ঘুমাই কেন। আরে ধুর আরো
পোলাপাইন তো আসেনি তাদের ধরা বাদ দিয়ে আমার পিছে
কেন যে পড়ে এই স্যার।
.
স্যারের হাত থেকে ছাড়া পেয়েই একটু জোরে হাটা ধরলাম আর
সামনে দেখলাম নীলা দাড়িয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে আছে
আর চোখের কোনায় দুই এক ফোটা পানিও জমেছে। আমার
তাতে কি, আমি ওই দিকে না তাকিয়েই চলে গেলাম ক্লাসে।
কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না, নীলা আমার সাথে একবার
কথাও বলতে আসলো না। আজিব তো। এক দিনেই আমি এত
পর হয়ে গেলাম। না কি সব ভাবছি আমি। আমিই তো নীলাকে
পর করে দিয়েছে। আমি এখন কারো অধীনে নেই। আমি
স্বাধীন।
.
ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসের ভিতরে মাঠের এক কোনায় গিয়ে
বসলাম। ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি। কিন্তু আড্ডায় মন
বসে না। এখন বাজে দুইটা কিন্তু এখনও নীলা দেখা করল না।
আমাকে আড্ডা থেকে ধরে নিয়ে বাড়ির রাস্তায় হাটতে শুরু
করল না আর। কে জানি বলে উঠলো,
-- ওই শুভ, তুই এতক্ষন ধরে এখানে আছিস, যা বাড়ি যা,
খাওয়া দাওয়া কর নয়ত শুকিয়ে যাবি, আর তোর নীলা কই,
আজ এতক্ষনও আসল না তোকে নিয়ে যেতে। (আসলে নীলা
প্রতিদিন আমাকে ধরে নিয়ে যায় আড্ডা থেকে আর জ্ঞ্যান
দেয় যে এতক্ষন না খেয়ে থাকা যাবে না, থাকলে আমি শুকিয়ে
যাবো, অসুস্থ হয়ে যাবো)
-- না রে দোস্ত আজ আর নীলা আসবে না। ব্রেক আপ
করেছি ওর সাথে। খালি প্যারা দেয়। আর ভাল লাগে না।
-- ধুর ব্যাটা ভুল করলি। ওর মত তোর কেউ টেক কেয়ার করবে
না রে। সালা আমরা তো ইয়ার্কি করে বলতাম ছেড়ে দে।
-- ধুর বাদ দে। এখন আমি স্বাধীন, মুক্ত
.
এতক্ষন হয়ে গেল কিন্তু নীলাকে দেখছি না। গেল টা কই।
আড্ডা থেকে উঠে ক্যাম্পাসে খুঁজলাম, নেই কোথাও, আমাকে
ছাড়া আসলে কোন দিন বাড়ি যেত না। যাক ভাল হয়েছে এখন
আমি একাই মুক্ত ভাবে যেতে পারব। কিন্তু সব কিছু যেন কেমন
লাগছে। সব কিছু ফাকা ফাকা লাগছে। মনে হচ্ছে আমি অনেক
বড় কিছু হারিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কি এমন হারালাম আমি।
.
বিকালে ফ্রেন্ড দের সাথে ঘুরতে গেলাম। ভাল লাগছে না
কিছুই। তাই আমি আগেই চলে আসলাম। দিলাম একটা ঘুম। ঘুম
থেকে উঠেই খাওয়া দাওয়া করে ফেসবুকে ঢুকলাম। ল্যাপটপের
স্ক্রীনে নীলার ছবি টা দেখেই বুকের মধ্যে কেমন জানি করে
উঠলো। খুব কষ্ট হতে লাগল। ধুর আমি কেন কষ্ট পাচ্ছি।
ফেসবুকে ঢুকেও কেন জানি বার বার নীলার প্রোফাইল টা ঘুরে
ফিরে দেখছি আর বার বার দেখছি নীলার ম্যাসেজ গুলা। ১ দিন
আগে এক্টিভ ছিল। ধুর এটা কোন কথা। অনলাইনেও আসছে
না। ধুর এটা কেমন কথা, ওই অনলাইনে আসলেই কি আর না
আসলেই কি। আমি কি জন্যে তখন থেকেই যে নীলার কথা
ভাবছি তাই জানি না।
.
রাত ১ টা বাজে। আমি চ্যাট অন করে আছি। কিন্তু কোন
ম্যাসেজ আসছে না যে, ওই ঘুমাও তারাতাড়ি। ম্যাসেজ টা
আসার পরে একটা কলও আসে। আর আমার একটাই উত্তর হয়
কল টা ধরে "একটু আগেই তো কথা হলো, আবার কল দিচ্ছো
কেন, ঘুমাচ্ছি রে বাবা আরেকটু পর" আর ওই পাশ থেকে একটাই
প্রতিউত্তর "ঘুমাও তারাতাড়ি" (ধমকের সুরে) প্রতিদিন তো
১২ টার মধ্যেই এইসব ঘটনা ঘটে কিন্তু আজ এতক্ষন হয়ে গেল।
নীলা একটা ফোনও দিলো না। খুব খারাপ লাগছে। আমি
এতটাই পর হয়ে গেলাম। আমাকে একটা বার কলও দিলো না।
এটাই কি ভালবাসার নমুনা!!!! খুব রাগ হচ্ছে। কিন্তু আমি
এইসব কি ভাবছি। খালি নীলার কথাই ভাবছি।
.
আজ পাচ দিন হলো নীলাকে কোথাও দেখছি না। কিছুই ভাল
লাগছে না। খুবই খারাপ লাগছে। কেউ আর এখন আমার খোজ
নেয় না। আমার ঠিক মত খাওয়া দাওয়াতে কারো কিছু যায়
আসে না। আমার জন্য কেউ আর ভাবে না। আমাকে কেউ আর
শাসন করে না। কেউ আর ভালবাসে না আমাকে। আর কেউ টেক
কেয়ার করে না। নীলা যে কই গেল কিছুই বুঝছি না। বাড়ির
সামনে যাই ওর তাও নাই, ওর ডিপার্টমেন্ট এ যাই সেখানেও
যাই, ওর বান্ধবীদের জিজ্ঞাস করলে তো বলেই না কিছু উল্টা
অপমান করে। আর ফোন দিয়ে দিয়ে তো মিষ্টিকন্ঠে একটা
কথাই শুনে শুনে মুখস্ত হয়ে গেছে। আমি এই কই দিনে এতটাই
পর হয়ে গেলাম নীলার কাছে। খুব খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে
সমুদ্রের মাঝখানে ভেসে আছি আমি। যেদিকেই যাচ্ছি কোন
কুল কিনারা পাচ্ছি না।
.
আমি খুব ভাল ভাবেই বুঝে গেছি এই পাচ দিনে যে নীলা ছাড়া
আমি অচল। কিছুই ঠিক ভাবে হচ্ছে না এই পাচ দিনে। আমি
কিছুই করতে পারছি নীলাকে ছাড়া। কিছুই ভাল লাগছে না।
জিবন টাই কেমন অগোছালো হয়ে গেছে। কিসের স্বাধীন
আমি। এই স্বাধীনতা আমি চাই না। আমি মুক্তি চাই না। আজ
অনেক চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে আমি নীলাকে ছাড়া
বাচব না। নীলা প্লীয তুমি ফিরে আসো।
.
অনেক সাহস নিয়ে গেলাম নীলার এক বান্ধবীর কাছে। অনেক
বুঝিয়ে বুঝিয়ে তাও কোন লাভ হলো না। শেষে বললাম
তোমাকে আজ লাঞ্চ করাবো। তুমি যত খেতে পারো। শেষে
আমার কথা শুনলো কিন্তু পুরাটা শুনলো না। আমি নীলার
নতুন নাম্বারটা চাইছিলাম কিন্তু ওই নীলাকে কল দিয়ে শুধু
কিছুক্ষন কথা বলার জন্য দিলো। আমি নীলার সাথে অনেক
আসা নিয়ে কথা বলার জন্য প্রস্তুত হলাম
-- নীলা কেমন আছো?
-- কে? আর এইটা তো সোমার নাম্বার
-- আমি কে এইটা তুমি খুব ভাল ভাবেই জানো।
-- কেন কল দিছো আমাকে? আমি তোমার কে? আমি রাখছি,
বাই
-- এই শোন। প্লিয আমার কথা শুনো।
-- যার কাছে আমার কোন দাম নাই তার কথা আমি কেন
শুনবো? আমি রাখলাম
-- প্লিয ফোন রাখবা না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব
না। প্লিয নীলা তুমি ফিরে আসো।
-- আমাকে ছাড়া থাকতে পারবা না কেন? তোমার তো
স্বাধীনতা চাই। তুমি তো এখন স্বাধীন। আমাকে কি দরকার।
-- আমার কোন স্বাধীনতা চাই না। আমার শুধু তোমাকে চাই।
-- আমি রাখলাম, বাই
-- প্লিয আজ বিকাল ৫ টায় আমাদের ফেভারিট প্লেস টায়
দেখা করো। প্লিয
-- সম্ভব না।
-- আমি অপেক্ষা করব।
.
বিকাল ৪.৩০ বাজে। দাড়িয়ে আছি আমি নীলার অপেক্ষায়।
কিন্তু এ কি নীলা আসছে!!! হুম সত্যিই আসছে আমার নীলা।
কিন্তু এখন তো ৪.৩০ বাজে। আমি জানতাম নীলা আসবেই।
-- কি জন্যে ডেকেছ বলো
-- আমি জানতাম তুমি আসবে
-- কি জন্যে ডেকেছ তাই বলো
-- দেখো নীলা, আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না। আমার
লাইফ তোমার মিষ্টি শাসন ছাড়া, তোমার ভালবাসা ছাড়া,
তোমার টেক কেয়ার ছাড়া অচল। আমি স্বাধীনতা চাই না।
আমি তোমাকে আবার ফিরে পেতে চাই। প্লিয নীলা আমাকে
ক্ষমা করে দাও(হাত ধরে)
-- তুমি ক্ষমা চাচ্ছো কেন? তুমি তো কোন দোষ করোনি।
আর তুমি যা চাচ্ছো তা আর কোন দিনও স্বম্ভব নয়। তুমি
প্লিয আমাকে ছেড়ে দাও। আমার যেতে হবে।
-- প্লিয নীলা। আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি তোমাকে ছাড়া
বাচব না।
--হাত ছাড়ো আমার। (ধমকের সুরে)
-- একবার যখন এই হাত ধরেছি আর কোন দিনও ছাড়বো না।
আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না। প্লিয বোঝার চেষ্টা
করো। আমাকে প্লিয ক্ষমা করে দাও
-- হাত ছাড়ো বলছি ( কান্নাজড়িত সুরে)
.
আমি চুপ চাপ বসে আছি নীলার হাত শক্ত করে ধরে। দুই এক
ফোটা জল চোখ বেয়ে নিচে পড়ছে আমার। নীলাও চুপ চাপ
বসে আছে, ওর চোখ বেয়েও পানি ঝরছে।
.
নীলার হাত ধরে বসে আছি প্রায় ঘন্টা খানেক এর মত, দুই
জনেই চুপ চাপ বসে আকাশ দেখছি। কারো মুখে কোন কথা
নেই।
.
-- হাত কি ছাড়বা না? (নীলা)
-- না। সারা জিবন ধরে রাখব (আমি)
-- সত্যিই তো। আবার ছেড়ে দিবা না তো?
-- না। কোন দিনও না।
অতঃপর নীলা মাথা রাখল আমার কাধে। আবার আমি পরাধীন
হয়ে গেলাম। কিন্তু এই পরাধীন জিবনই ভাল। কি আছে
স্বাধীনতায়???
সাথে। আর ভাল লাগে না তাকে। একটা বিরক্তি এসে গেছে তার
ওপর। সারা দিন খালি ফোন দিয়ে খোজ খবর নেয়। এই করছ,
না ওই করছ এত কৈফত দেওয়া যায়? তারওপর আবার আবার
প্রতিদিন বিকালে তাকে সময় দিতে হবে। না হলে সে ক্ষেপে
আগুন হয়ে থাকে। আমার ওপর সব আগুন ঝাড়ে। জিবন টা
পুরাই ঝাঁজরা করে দিয়েছে এই মেয়ে।
.
ব্রেক আপ করার সময় মেয়েটা অনেক কান্নাকাটি করেছিল।
অনেক বার আমার কাছে মাফ চাইছিল। আমার হাত শক্ত করে
ধরে ছিল। আমাকে কোন ভাবেই আসতে দিচ্ছিল না। অনেক
কষ্টে তার হাত থেকে রেহাই পেয়েছি। অনেক ফ্রেশ আর ফ্রি
লাগছে নিজেকে। আজ আমিমি স্বাধীন। হ্যা আজ আমি পুরাই
স্বাধীন। কে বলে প্রেম করে শান্তি আছে। সব ভুল প্রেম
মানেই কষ্ট, ঘোর কষ্ট। যাই হোক এখন আমি মুক্ত।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি ১০ টা বাজে। আয় হায় আজ তো
খবর আছে। ৮.৩০ এ ক্লাস ছিল আমাদের খাটাশ স্যার টার।
আমার ওপর সে অল টাইম ক্ষেপে থাকে। কারনে অকারনে
আমাকে ঝাড়ে। ইশ এই স্যারের সাথেও যদি ব্রেক আপ করতে
পারতাম। ও হ্যা আমি তো নীলার সাথে ব্রেক আপ করেছি।
আর তাই তো আজ কেউ সকালে কল দিয়ে আমার ঘুম টা
ভাংগায় নি। না আমার তো হেব্বি সমস্যা হল। সালা রুম মেট
টাও সেই বদমাস, এক বারও ডাকল না।
.
বুকে অনেক সাহস জমিয়ে গেলাম ভার্সিটি তে। আল্লাহ
আল্লাহ করছি যেন নীলা আর খাটাশ স্যারের সাথে না দেখা
হয়। নীলা আমার দুই ইয়ার জুনিয়র আর আমরা একই ভার্সিটি
তে পড়ি। এই সব ভাবতে ভাবতেই খাটাশ স্যার সামনে চলে
আসল। শুরু হলো আমার প্যারাময় কিছু সময়। কেন ক্লাসে
আসিনি, কি করছিলাম, এত ঘুমাই কেন। আরে ধুর আরো
পোলাপাইন তো আসেনি তাদের ধরা বাদ দিয়ে আমার পিছে
কেন যে পড়ে এই স্যার।
.
স্যারের হাত থেকে ছাড়া পেয়েই একটু জোরে হাটা ধরলাম আর
সামনে দেখলাম নীলা দাড়িয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে আছে
আর চোখের কোনায় দুই এক ফোটা পানিও জমেছে। আমার
তাতে কি, আমি ওই দিকে না তাকিয়েই চলে গেলাম ক্লাসে।
কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না, নীলা আমার সাথে একবার
কথাও বলতে আসলো না। আজিব তো। এক দিনেই আমি এত
পর হয়ে গেলাম। না কি সব ভাবছি আমি। আমিই তো নীলাকে
পর করে দিয়েছে। আমি এখন কারো অধীনে নেই। আমি
স্বাধীন।
.
ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসের ভিতরে মাঠের এক কোনায় গিয়ে
বসলাম। ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি। কিন্তু আড্ডায় মন
বসে না। এখন বাজে দুইটা কিন্তু এখনও নীলা দেখা করল না।
আমাকে আড্ডা থেকে ধরে নিয়ে বাড়ির রাস্তায় হাটতে শুরু
করল না আর। কে জানি বলে উঠলো,
-- ওই শুভ, তুই এতক্ষন ধরে এখানে আছিস, যা বাড়ি যা,
খাওয়া দাওয়া কর নয়ত শুকিয়ে যাবি, আর তোর নীলা কই,
আজ এতক্ষনও আসল না তোকে নিয়ে যেতে। (আসলে নীলা
প্রতিদিন আমাকে ধরে নিয়ে যায় আড্ডা থেকে আর জ্ঞ্যান
দেয় যে এতক্ষন না খেয়ে থাকা যাবে না, থাকলে আমি শুকিয়ে
যাবো, অসুস্থ হয়ে যাবো)
-- না রে দোস্ত আজ আর নীলা আসবে না। ব্রেক আপ
করেছি ওর সাথে। খালি প্যারা দেয়। আর ভাল লাগে না।
-- ধুর ব্যাটা ভুল করলি। ওর মত তোর কেউ টেক কেয়ার করবে
না রে। সালা আমরা তো ইয়ার্কি করে বলতাম ছেড়ে দে।
-- ধুর বাদ দে। এখন আমি স্বাধীন, মুক্ত
.
এতক্ষন হয়ে গেল কিন্তু নীলাকে দেখছি না। গেল টা কই।
আড্ডা থেকে উঠে ক্যাম্পাসে খুঁজলাম, নেই কোথাও, আমাকে
ছাড়া আসলে কোন দিন বাড়ি যেত না। যাক ভাল হয়েছে এখন
আমি একাই মুক্ত ভাবে যেতে পারব। কিন্তু সব কিছু যেন কেমন
লাগছে। সব কিছু ফাকা ফাকা লাগছে। মনে হচ্ছে আমি অনেক
বড় কিছু হারিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কি এমন হারালাম আমি।
.
বিকালে ফ্রেন্ড দের সাথে ঘুরতে গেলাম। ভাল লাগছে না
কিছুই। তাই আমি আগেই চলে আসলাম। দিলাম একটা ঘুম। ঘুম
থেকে উঠেই খাওয়া দাওয়া করে ফেসবুকে ঢুকলাম। ল্যাপটপের
স্ক্রীনে নীলার ছবি টা দেখেই বুকের মধ্যে কেমন জানি করে
উঠলো। খুব কষ্ট হতে লাগল। ধুর আমি কেন কষ্ট পাচ্ছি।
ফেসবুকে ঢুকেও কেন জানি বার বার নীলার প্রোফাইল টা ঘুরে
ফিরে দেখছি আর বার বার দেখছি নীলার ম্যাসেজ গুলা। ১ দিন
আগে এক্টিভ ছিল। ধুর এটা কোন কথা। অনলাইনেও আসছে
না। ধুর এটা কেমন কথা, ওই অনলাইনে আসলেই কি আর না
আসলেই কি। আমি কি জন্যে তখন থেকেই যে নীলার কথা
ভাবছি তাই জানি না।
.
রাত ১ টা বাজে। আমি চ্যাট অন করে আছি। কিন্তু কোন
ম্যাসেজ আসছে না যে, ওই ঘুমাও তারাতাড়ি। ম্যাসেজ টা
আসার পরে একটা কলও আসে। আর আমার একটাই উত্তর হয়
কল টা ধরে "একটু আগেই তো কথা হলো, আবার কল দিচ্ছো
কেন, ঘুমাচ্ছি রে বাবা আরেকটু পর" আর ওই পাশ থেকে একটাই
প্রতিউত্তর "ঘুমাও তারাতাড়ি" (ধমকের সুরে) প্রতিদিন তো
১২ টার মধ্যেই এইসব ঘটনা ঘটে কিন্তু আজ এতক্ষন হয়ে গেল।
নীলা একটা ফোনও দিলো না। খুব খারাপ লাগছে। আমি
এতটাই পর হয়ে গেলাম। আমাকে একটা বার কলও দিলো না।
এটাই কি ভালবাসার নমুনা!!!! খুব রাগ হচ্ছে। কিন্তু আমি
এইসব কি ভাবছি। খালি নীলার কথাই ভাবছি।
.
আজ পাচ দিন হলো নীলাকে কোথাও দেখছি না। কিছুই ভাল
লাগছে না। খুবই খারাপ লাগছে। কেউ আর এখন আমার খোজ
নেয় না। আমার ঠিক মত খাওয়া দাওয়াতে কারো কিছু যায়
আসে না। আমার জন্য কেউ আর ভাবে না। আমাকে কেউ আর
শাসন করে না। কেউ আর ভালবাসে না আমাকে। আর কেউ টেক
কেয়ার করে না। নীলা যে কই গেল কিছুই বুঝছি না। বাড়ির
সামনে যাই ওর তাও নাই, ওর ডিপার্টমেন্ট এ যাই সেখানেও
যাই, ওর বান্ধবীদের জিজ্ঞাস করলে তো বলেই না কিছু উল্টা
অপমান করে। আর ফোন দিয়ে দিয়ে তো মিষ্টিকন্ঠে একটা
কথাই শুনে শুনে মুখস্ত হয়ে গেছে। আমি এই কই দিনে এতটাই
পর হয়ে গেলাম নীলার কাছে। খুব খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে
সমুদ্রের মাঝখানে ভেসে আছি আমি। যেদিকেই যাচ্ছি কোন
কুল কিনারা পাচ্ছি না।
.
আমি খুব ভাল ভাবেই বুঝে গেছি এই পাচ দিনে যে নীলা ছাড়া
আমি অচল। কিছুই ঠিক ভাবে হচ্ছে না এই পাচ দিনে। আমি
কিছুই করতে পারছি নীলাকে ছাড়া। কিছুই ভাল লাগছে না।
জিবন টাই কেমন অগোছালো হয়ে গেছে। কিসের স্বাধীন
আমি। এই স্বাধীনতা আমি চাই না। আমি মুক্তি চাই না। আজ
অনেক চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে আমি নীলাকে ছাড়া
বাচব না। নীলা প্লীয তুমি ফিরে আসো।
.
অনেক সাহস নিয়ে গেলাম নীলার এক বান্ধবীর কাছে। অনেক
বুঝিয়ে বুঝিয়ে তাও কোন লাভ হলো না। শেষে বললাম
তোমাকে আজ লাঞ্চ করাবো। তুমি যত খেতে পারো। শেষে
আমার কথা শুনলো কিন্তু পুরাটা শুনলো না। আমি নীলার
নতুন নাম্বারটা চাইছিলাম কিন্তু ওই নীলাকে কল দিয়ে শুধু
কিছুক্ষন কথা বলার জন্য দিলো। আমি নীলার সাথে অনেক
আসা নিয়ে কথা বলার জন্য প্রস্তুত হলাম
-- নীলা কেমন আছো?
-- কে? আর এইটা তো সোমার নাম্বার
-- আমি কে এইটা তুমি খুব ভাল ভাবেই জানো।
-- কেন কল দিছো আমাকে? আমি তোমার কে? আমি রাখছি,
বাই
-- এই শোন। প্লিয আমার কথা শুনো।
-- যার কাছে আমার কোন দাম নাই তার কথা আমি কেন
শুনবো? আমি রাখলাম
-- প্লিয ফোন রাখবা না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব
না। প্লিয নীলা তুমি ফিরে আসো।
-- আমাকে ছাড়া থাকতে পারবা না কেন? তোমার তো
স্বাধীনতা চাই। তুমি তো এখন স্বাধীন। আমাকে কি দরকার।
-- আমার কোন স্বাধীনতা চাই না। আমার শুধু তোমাকে চাই।
-- আমি রাখলাম, বাই
-- প্লিয আজ বিকাল ৫ টায় আমাদের ফেভারিট প্লেস টায়
দেখা করো। প্লিয
-- সম্ভব না।
-- আমি অপেক্ষা করব।
.
বিকাল ৪.৩০ বাজে। দাড়িয়ে আছি আমি নীলার অপেক্ষায়।
কিন্তু এ কি নীলা আসছে!!! হুম সত্যিই আসছে আমার নীলা।
কিন্তু এখন তো ৪.৩০ বাজে। আমি জানতাম নীলা আসবেই।
-- কি জন্যে ডেকেছ বলো
-- আমি জানতাম তুমি আসবে
-- কি জন্যে ডেকেছ তাই বলো
-- দেখো নীলা, আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না। আমার
লাইফ তোমার মিষ্টি শাসন ছাড়া, তোমার ভালবাসা ছাড়া,
তোমার টেক কেয়ার ছাড়া অচল। আমি স্বাধীনতা চাই না।
আমি তোমাকে আবার ফিরে পেতে চাই। প্লিয নীলা আমাকে
ক্ষমা করে দাও(হাত ধরে)
-- তুমি ক্ষমা চাচ্ছো কেন? তুমি তো কোন দোষ করোনি।
আর তুমি যা চাচ্ছো তা আর কোন দিনও স্বম্ভব নয়। তুমি
প্লিয আমাকে ছেড়ে দাও। আমার যেতে হবে।
-- প্লিয নীলা। আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি তোমাকে ছাড়া
বাচব না।
--হাত ছাড়ো আমার। (ধমকের সুরে)
-- একবার যখন এই হাত ধরেছি আর কোন দিনও ছাড়বো না।
আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না। প্লিয বোঝার চেষ্টা
করো। আমাকে প্লিয ক্ষমা করে দাও
-- হাত ছাড়ো বলছি ( কান্নাজড়িত সুরে)
.
আমি চুপ চাপ বসে আছি নীলার হাত শক্ত করে ধরে। দুই এক
ফোটা জল চোখ বেয়ে নিচে পড়ছে আমার। নীলাও চুপ চাপ
বসে আছে, ওর চোখ বেয়েও পানি ঝরছে।
.
নীলার হাত ধরে বসে আছি প্রায় ঘন্টা খানেক এর মত, দুই
জনেই চুপ চাপ বসে আকাশ দেখছি। কারো মুখে কোন কথা
নেই।
.
-- হাত কি ছাড়বা না? (নীলা)
-- না। সারা জিবন ধরে রাখব (আমি)
-- সত্যিই তো। আবার ছেড়ে দিবা না তো?
-- না। কোন দিনও না।
অতঃপর নীলা মাথা রাখল আমার কাধে। আবার আমি পরাধীন
হয়ে গেলাম। কিন্তু এই পরাধীন জিবনই ভাল। কি আছে
স্বাধীনতায়???