02-21-2017, 08:41 AM
# নিঃশ্বাসে_ভালোবাসা (অনুগল্প)
.
.
- মৌনতাই কি সম্মতির লক্ষ্মণ নয়?
.
আমি অভ্র, পোল্যান্ড এর বাল্টিসে একটা হোটেলে
রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করি। ওই হোটেলেরই একটা
অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে আমি আর আমার স্ত্রী নির্জনা
থাকি। হোটেল রিসেপশনিস্ট হিসেবে সুবিধা একটু বেশি। ছোট
থেকে পোল্যান্ড এ বড় হওয়ায় পোলিশ ভাষা মোটামোটি
ভালোই পারি। কিছু মেধা থাকায় আর টাইপিং এর অভিজ্ঞতা
থাকায় চাকরিটা যোগাড় করতে বেশি সমস্যা হয় নি। আমার
বয়স যখন ১৫ তখন বাবা মা আমাকে নিয়ে বাংলাদেশ চলে
আসেন। আবহাওয়ায় বিস্তর ফারাক থাকায় প্রথম প্রথম
অসুস্থ হয়ে যেতাম। কিন্তু আস্তে আস্তে মানিয়ে নিয়েছি।
কলেজ লাইফ আর ভার্সিটি লাইফ বাংলাদেশেই। মায়ের কাছেই
বাংলা ভাষা শিখেছি। কিন্তু একটা এক্সিডেন্ট এ বাবা-মা মারা
যাওয়ার পর বিয়ে করে পোল্যান্ড চলে আসি। মাতাল এক
ড্রাইভার এর কারণে আমি আমার বাবা মাকে হারিয়েছি। তাই
রাগে পোল্যান্ড চলে এসেছি। নির্জনা প্রথমে আসতে চাইছিল
না। ওকে বলেছি ৬ মাস একটু ঘুরব তারপর আবার ফিরে আসব।
কিন্তু আমার আর ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। ওকে
মানানোর জন্য মিথ্যে কথা বলতে হয়েছে। কষ্ট করে চাকরিটা
জুটিয়ে নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে না। তো আজ সকালে নির্জনার
সাথে বাংলাদেশ ফেরা নিয়ে একটু ঝগড়া হওয়ায় ও মুখ ফুলিয়ে
বসে আছে। রাতে ঘরে যাওয়ার পর ও কোনও কথা না বলে
প্লেটে একটা বার্গার আর ছোট একটা পিজা নিয়ে ডাইনিং
টেবিলের ওপর রেখে ঘরে গিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল।
.
আমি আর কি করব খেয়ে নিয়ে ওর পাশে গিয়ে শুলাম। শুতে
গিয়ে দেখি মাঝখানে বড় বড় দুটো কোলবালিশ। বুঝলাম ঘটনা
পুরো সিরিয়াস। তাই নরম কন্ঠে ওকে ডাক দিলাম।
- নির্জনা?? ও বউ,,, ঘুমিয়ে পড়েছ??
- তুমি আমার সাথে কথা বলবে না।
- এত রাগ করছ কেন? আমি যদি তোমার কথা মেনে নিই
তাহলে একদম পথে বসে যাব।
- আপনজনদের ছেড়ে থাকার কষ্ট তুমি কি বুঝবে?? এদেশে
থেকে কি উপকারটা হচ্ছে,,?? আমাকে যখন এখানে আনো তখন
বলেছিলে ৬ মাস থাকবে। ২ বছর হয়ে গেল, তুমি এখানখার
স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছ। বাংলাদেশে কি আর কখনও ফিরে
যাবেনা?
- দেখ নির্জনা,, এখানে কত সুবিধা আছে। কড়া আইন আছে,
নিরাপত্তা আছে, আধুনিকতা আছে। কিন্তু ওখানে কি পাবে?
দরিদ্র একটা দেশ। কত ঝামেলা,,, পুলিশ ঘুষ খায়। রাস্তায়
ট্রাফিক,,, রেপ,খুন এসব হর হামেশা হচ্ছে। লাইফ রিস্ক
নেওয়ার কি প্রয়োজন?? আমার বাবা মাকে হারিয়েছি। আমি
তোমাকে হারাতে পারব না।
আমি তোমাকে ভালোবাসি নির্জনা।
.
- আমিও তোমাকে ভালোবাসি অভ্র। আর আমি তোমাকে
ফিল করাতে চাই বাঙালির ভালোবাসা কি। দেখ, এক্সিডেন্ট
এর ভয়ে কি রাস্তায় চলা বন্ধ করে দেব? ঘর থেকে বেরোব
না?? এদেশ আধুনিক হতে পারে। এদেশে সব সুবিধা থাকতে
পারে। কড়া আইন থাকতে পারে। কিন্তু এদেশে প্রাণ নেই।
সবাই রোবটের মত আচরণ করে। এদেশে ষড় ঋতু নেই। পদ্মার
ইলিশ নেই। পিঠা পুলির সময় নেই। শিশির ভেজা ঘাস নেই।
সকালের মিষ্টি রোদ নেই। বাংলার সংস্কৃতি নেই।
- তুমি ঠিক কি বলতে চাইছ??
- আমার প্রাণের দেশ বাংলাদেশের কথা বলছি। সে দেশে
প্রাণ আছে। সেখানে নবান্ন উৎসব হয়। পহেলা বৈশাখে পান্তা
ভাত খাওয়া হয়। শীতের সকালে গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে
রৌদ্রস্নান করা হয়। শিশির ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে খালি
পায়ে হাঁটা যায়। বর্ষাকালে বৃষ্টি বিলাস করা হয়। গ্রীষ্ম কালে
আম কাঁঠাল খাওয়া হয়। হতে পারে সে দেশে দূর্নীতি বেশি।
পুলিশ ঘুষ খায়। কিন্তু এর পেছনে কারণ আছে। যারা জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে আমাদের রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে তারাই বেতন
কম পাচ্ছে। আর প্রভাবশালী লোকেদের কথা অমান্য করলে
চাকরিচ্যুত হতে হচ্ছে। এজন্য তারা এটা করতে বাধ্য। আর
কেউ মায়ের পেট থেকে দূর্নীতি শিখে আসে না। আশেপাশের
পরিবেশ বাধ্য করে। তবুও আমার দেশের মানুষ ভালো।
ভালোবাসা আছে একে অপরের প্রতি। একজনের বিপদে পুরো
এলাকার লোক পাশে এসে দাঁড়ায়। সেদেশে এখনও মেয়েরা
সম্মানে থাকে। এদেশের মত অবাধে কুকর্ম করে বেড়ায় না।
এজন্য আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে রয়েছে বাংলাদেশের জন্য
ভালোবাসা। তোমার এই দেশে এসব পাব??
.
ওর এই অকাট্য যুক্তির ওপর আমার মুখ দিয়ে কথা বেরোল না।
আমি নিশ্চুপ রইলাম। তখন ও ওই কথা বলল। আমি বললাম,
- ঠিক আছে, দেখছি কত দ্রুত এই রোবটের দেশ থেকে বেরিয়ে
প্রাণের দেশে প্রবেশ করা যায়।
- সত্যি তুমি যাবে??
- হ্যাঁ যাব,,, পোল্যান্ড এ জন্ম হলেও আমি একজন বাঙালী।
এটা বিস্মৃত হলেও তুমি মনে করিয়ে দিয়েছ।
আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
- আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আর সাথে সাথে আমার
দেশকেও ভালোবাসি।
এটা বলে ও কোল বালিশ দুটো সরিয়ে আমার বুকে মাথা
রাখল। আমিও গর্বে ওকে বুকে জড়িয়ে রাখলাম। ও
দেশমাতৃকাকে ভালোবাসে। আর আমাকেও বাধ্য করিয়েছে।
প্রথমবার দেশের প্রতি টান অনুভব করলাম। বুঝলাম, হ্যাঁ
আমিও আমার প্রাণের দেশকে, আমাদের লাল সবুজের দেশ
বাংলাদেশকে ভালোবাসি। অনেক অনেক ভালোবাসি।
.
সমাপ্ত
.
.
- মৌনতাই কি সম্মতির লক্ষ্মণ নয়?
.
আমি অভ্র, পোল্যান্ড এর বাল্টিসে একটা হোটেলে
রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করি। ওই হোটেলেরই একটা
অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে আমি আর আমার স্ত্রী নির্জনা
থাকি। হোটেল রিসেপশনিস্ট হিসেবে সুবিধা একটু বেশি। ছোট
থেকে পোল্যান্ড এ বড় হওয়ায় পোলিশ ভাষা মোটামোটি
ভালোই পারি। কিছু মেধা থাকায় আর টাইপিং এর অভিজ্ঞতা
থাকায় চাকরিটা যোগাড় করতে বেশি সমস্যা হয় নি। আমার
বয়স যখন ১৫ তখন বাবা মা আমাকে নিয়ে বাংলাদেশ চলে
আসেন। আবহাওয়ায় বিস্তর ফারাক থাকায় প্রথম প্রথম
অসুস্থ হয়ে যেতাম। কিন্তু আস্তে আস্তে মানিয়ে নিয়েছি।
কলেজ লাইফ আর ভার্সিটি লাইফ বাংলাদেশেই। মায়ের কাছেই
বাংলা ভাষা শিখেছি। কিন্তু একটা এক্সিডেন্ট এ বাবা-মা মারা
যাওয়ার পর বিয়ে করে পোল্যান্ড চলে আসি। মাতাল এক
ড্রাইভার এর কারণে আমি আমার বাবা মাকে হারিয়েছি। তাই
রাগে পোল্যান্ড চলে এসেছি। নির্জনা প্রথমে আসতে চাইছিল
না। ওকে বলেছি ৬ মাস একটু ঘুরব তারপর আবার ফিরে আসব।
কিন্তু আমার আর ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। ওকে
মানানোর জন্য মিথ্যে কথা বলতে হয়েছে। কষ্ট করে চাকরিটা
জুটিয়ে নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে না। তো আজ সকালে নির্জনার
সাথে বাংলাদেশ ফেরা নিয়ে একটু ঝগড়া হওয়ায় ও মুখ ফুলিয়ে
বসে আছে। রাতে ঘরে যাওয়ার পর ও কোনও কথা না বলে
প্লেটে একটা বার্গার আর ছোট একটা পিজা নিয়ে ডাইনিং
টেবিলের ওপর রেখে ঘরে গিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল।
.
আমি আর কি করব খেয়ে নিয়ে ওর পাশে গিয়ে শুলাম। শুতে
গিয়ে দেখি মাঝখানে বড় বড় দুটো কোলবালিশ। বুঝলাম ঘটনা
পুরো সিরিয়াস। তাই নরম কন্ঠে ওকে ডাক দিলাম।
- নির্জনা?? ও বউ,,, ঘুমিয়ে পড়েছ??
- তুমি আমার সাথে কথা বলবে না।
- এত রাগ করছ কেন? আমি যদি তোমার কথা মেনে নিই
তাহলে একদম পথে বসে যাব।
- আপনজনদের ছেড়ে থাকার কষ্ট তুমি কি বুঝবে?? এদেশে
থেকে কি উপকারটা হচ্ছে,,?? আমাকে যখন এখানে আনো তখন
বলেছিলে ৬ মাস থাকবে। ২ বছর হয়ে গেল, তুমি এখানখার
স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছ। বাংলাদেশে কি আর কখনও ফিরে
যাবেনা?
- দেখ নির্জনা,, এখানে কত সুবিধা আছে। কড়া আইন আছে,
নিরাপত্তা আছে, আধুনিকতা আছে। কিন্তু ওখানে কি পাবে?
দরিদ্র একটা দেশ। কত ঝামেলা,,, পুলিশ ঘুষ খায়। রাস্তায়
ট্রাফিক,,, রেপ,খুন এসব হর হামেশা হচ্ছে। লাইফ রিস্ক
নেওয়ার কি প্রয়োজন?? আমার বাবা মাকে হারিয়েছি। আমি
তোমাকে হারাতে পারব না।
আমি তোমাকে ভালোবাসি নির্জনা।
.
- আমিও তোমাকে ভালোবাসি অভ্র। আর আমি তোমাকে
ফিল করাতে চাই বাঙালির ভালোবাসা কি। দেখ, এক্সিডেন্ট
এর ভয়ে কি রাস্তায় চলা বন্ধ করে দেব? ঘর থেকে বেরোব
না?? এদেশ আধুনিক হতে পারে। এদেশে সব সুবিধা থাকতে
পারে। কড়া আইন থাকতে পারে। কিন্তু এদেশে প্রাণ নেই।
সবাই রোবটের মত আচরণ করে। এদেশে ষড় ঋতু নেই। পদ্মার
ইলিশ নেই। পিঠা পুলির সময় নেই। শিশির ভেজা ঘাস নেই।
সকালের মিষ্টি রোদ নেই। বাংলার সংস্কৃতি নেই।
- তুমি ঠিক কি বলতে চাইছ??
- আমার প্রাণের দেশ বাংলাদেশের কথা বলছি। সে দেশে
প্রাণ আছে। সেখানে নবান্ন উৎসব হয়। পহেলা বৈশাখে পান্তা
ভাত খাওয়া হয়। শীতের সকালে গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে
রৌদ্রস্নান করা হয়। শিশির ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে খালি
পায়ে হাঁটা যায়। বর্ষাকালে বৃষ্টি বিলাস করা হয়। গ্রীষ্ম কালে
আম কাঁঠাল খাওয়া হয়। হতে পারে সে দেশে দূর্নীতি বেশি।
পুলিশ ঘুষ খায়। কিন্তু এর পেছনে কারণ আছে। যারা জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে আমাদের রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে তারাই বেতন
কম পাচ্ছে। আর প্রভাবশালী লোকেদের কথা অমান্য করলে
চাকরিচ্যুত হতে হচ্ছে। এজন্য তারা এটা করতে বাধ্য। আর
কেউ মায়ের পেট থেকে দূর্নীতি শিখে আসে না। আশেপাশের
পরিবেশ বাধ্য করে। তবুও আমার দেশের মানুষ ভালো।
ভালোবাসা আছে একে অপরের প্রতি। একজনের বিপদে পুরো
এলাকার লোক পাশে এসে দাঁড়ায়। সেদেশে এখনও মেয়েরা
সম্মানে থাকে। এদেশের মত অবাধে কুকর্ম করে বেড়ায় না।
এজন্য আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে রয়েছে বাংলাদেশের জন্য
ভালোবাসা। তোমার এই দেশে এসব পাব??
.
ওর এই অকাট্য যুক্তির ওপর আমার মুখ দিয়ে কথা বেরোল না।
আমি নিশ্চুপ রইলাম। তখন ও ওই কথা বলল। আমি বললাম,
- ঠিক আছে, দেখছি কত দ্রুত এই রোবটের দেশ থেকে বেরিয়ে
প্রাণের দেশে প্রবেশ করা যায়।
- সত্যি তুমি যাবে??
- হ্যাঁ যাব,,, পোল্যান্ড এ জন্ম হলেও আমি একজন বাঙালী।
এটা বিস্মৃত হলেও তুমি মনে করিয়ে দিয়েছ।
আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
- আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আর সাথে সাথে আমার
দেশকেও ভালোবাসি।
এটা বলে ও কোল বালিশ দুটো সরিয়ে আমার বুকে মাথা
রাখল। আমিও গর্বে ওকে বুকে জড়িয়ে রাখলাম। ও
দেশমাতৃকাকে ভালোবাসে। আর আমাকেও বাধ্য করিয়েছে।
প্রথমবার দেশের প্রতি টান অনুভব করলাম। বুঝলাম, হ্যাঁ
আমিও আমার প্রাণের দেশকে, আমাদের লাল সবুজের দেশ
বাংলাদেশকে ভালোবাসি। অনেক অনেক ভালোবাসি।
.
সমাপ্ত