02-21-2017, 08:44 AM
"-বিল দিব নাকি আরো খাবা?"
.
রিধির প্রশ্নের কোন উত্তর দিলনা রেজা।
রেজাকে দেখে মনে হলো ও রিধির কথা শুনতেই পায়নি।ও
তখনো খাওয়ার দিকে মনোযোগী। রেজা ওর প্লেটে থাকা
রুটির শেষ অংশ টা মাংশের ঝোলে ডুবিয়ে নিয়ে মুখে পুরে দিয়ে
তারপর রিধির দিকে তাকালো।
.
-কিছু বললা?
-হ্যাঁ,
-কি?
-আরো খাবা নাকি বিল দিবো,
-নাহ আর না খাই,, প্রেমিকার টাকায় এত খাওয়া ঠিক না।
-তাহলে চলো উঠি।
-আচ্ছা,,
.
রেজা আগে দোকান থেকে বাহিরে বের হয়ে আসলো ।অনেক
দিন পর ও ভাল মন্দ কিছু খেয়েছে। এখন একটা ঘুম দিলে হয়।
ইদানিং ওর ভালো ঘুম হচ্ছেনা। খালি পেটে ভাল ঘুম হয়না।
এখন ভরা পেট আছে, সেইরকম ঘুম হবে।হালকা শীত পরেছে,এই
সময় লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুম জম্পেস হয়।
এসব ভাবতে ভাবতেই রিধি এসে সামনে দাঁড়ায়। রিধি আজ নীল
একটা জামা পরে এসেছে। দেখতে ভালই লাগছে তবে ওকে
হোয়াইট পরলে আরো বেশি ভাল লাগত।
নীল নাকি বিরহের রঙ, তবে কি রিধি জেনে শুনেই এমন পরে
এসেছে, আজকের পর আর দেখা হবেনা তাই।দেখা তো হতেও
পারে,, রিধি যে মলে শপিং করতে যাবে সেখানে রেজা কাজ
করতে পারে,, এমন তো হতেও পারে। আবার রিধির বাচ্চা যে
স্কুলে পড়বে সেখান কার টিচার রেজা হতে পারে।হুট করে
প্যারেন্টস ডে তে দেখা হয়ে যাতে পারে দুজনের ।এসব ভাবতেই
রেজার মুখে হাসি চলে আসে।কি সব ভাবছে ও আজে বাজে।
.
রেজার হাসি দেখে রিধি বলে উঠে,
-হাসছ কেন?
-এমনি,,
-এমনিতে পাগলেরা হাসে !
-তাহলে মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি,, কি করা যায় বলো তো?
.
রিধি কোন উত্তর দিলনা,ইদানিং এসব নিয়ে কথা বলতে ভাল
লাগেনা।সিরিয়াস নেস খুঁজে চলছে ও,কিন্তু রেজা মোটেও
সিরিয়াস নয় কোন কিছুতে। রিধি বরংচ প্রশ্ন করল,,
-এখন কি করবা?
-তুমি যা বলবা,
-হাঁটবা?
-ভরা পেটে হাঁটা কেমন হয়ে যায়না?
-আচ্ছা,, চলো রিকশা নেই,
-আচ্ছা।
.
একটা খালি রিকশা দেখে উঠে পরে দুজন।
রিকশা চলা শুরু করতেই রেজা বলল,
-আজকের পরিবেশ টা অনেক সুন্দর তাইনা?
-হুম।
-আচ্ছা তোমার হবু বর কি করে?
-পারিবারিক ব্যাবসা,
-ইনকাম কেমন?
-কোটি টাকা নাকি নারাচাড়া করে,
-তাহলে তো ভালো, তুমি মাঝে মাঝে টাকা পয়সা দিয়ে
তোমার প্রাক্তন প্রেমিক কে সাহায্য করতে পারবা,,
.
রেজার কথা শুনে রিধি বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকায়। এই
ছেলে যে এত নিলজ্জ তা আগে জানা ছিল না।এর সাথে এত দিন
কিভাবে প্রেম করেছে রিধি, তা মাথায় আসছেনা?
তবে রেজা আগে এমন ছিল না যখন থেকে জানলো রিধি
বড়লোক ছেলেকে বিয়ে করছে তবে থেকেই এমন শুরু।
আজ সকালে রেজা নিজে রিধিকে ফোন দিয়ে বিকেলে দেখা
করতে বলল সাথে এও বলল যেন সাথে কিছু টাকা পয়সাও আনে।
.
রিধি যে রেজাকে ধোকা দিয়েছে তাও নয়, ও বলেছিল রেজাকে
যেন ওকে বিয়ে করে। রেজা হাসি মুখে জবাব দিয়েছিল,
-কি খাওয়াব বিয়ে করে?
এর পর কথা বলা বেকার। বেকার ছেলের বিয়ে করার কোন
প্রশ্নই আসেনা।
তবুও মাঝে মাঝে রিধির ইচ্ছে করে রেজাকে নিয়ে পালিয়ে
যেতে,বিয়ে করতে,সংসার করতে।
রেজার কথা টা বাসায় বলতে ইচ্ছে হয় খুব রিধির কিন্তু কেউ
যেন রিধির গলা টিপে ধরে বারণ করে এসব বলতে।
.
কিছুক্ষন পর রেজা আবার বলল,
-তোমার হবু বর যদি আমাদের এভাবে দেখে ফেলে তখন কি
হবে?
-জানিনা,বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে,
-তা করবেনা,
-কেন?
-এত সুন্দরী মেয়ে হাত ছাড়া করবেনা,,,
.
রিধি কিছু বলল না চুপ করে রইল।
হালকা বাতাশ বইছে,তাতে ভাল লাগার চেয়ে বেশি ঠান্ডা
লাগছে রিধির।সেটা খুব সহজেই বুঝতে পারল রেজা, তাই নিজের
জ্যাকেট টা রিধিকে দিতে দিতে বলল,
-মেয়েরা ঠান্ডার কাপড় কম পরে বের হয় কেন বলতে পারবা?
-নাহ,কেন?
-যেন এত দাম দিয়ে কেনা জামাটা সবাই দেখতে পারে,
-তাই নাকি?
-হুম,তাই।
-জানতাম না,,
-তোমার হলুদ তো কালকে তাই না?
-হ্যাঁ,
-বিয়ে পরশু,
-হুম,,
-বিয়েতে খাবারের আইটেম কি কি থাকবে ?
-জানিনা,
-খাসির রেজালা হলে একটা ফোন দিও,
-আচ্ছা,,
.
আর কিছুক্ষন রিকশা চলতেই রিধির ফোন বেজে উঠল।রিধি
ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখল, বাসা থেকে ফোন দিয়েছে।
বিয়ের আগে মেয়ের বাসার মানুষ খুব চিন্তায় থাকে, মেয়ে বাইরে
গেলেই ভাবে মেয়ে পালিয়ে যায়নি তো।রিধি ফোন রিসিভ
করেই বলল,
-হ্যাঁ, মা। আধাঘন্টায় আসছি,,
.
রেজা রিকশাওয়ালা কে রিধি বাড়ির ঠিকানার দিকে নিতে বলল।
মিনিট দশেকের মধ্য রিকশা রিধির বাড়ির সামনে চলে এল।রিধি
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিবে তখন রেজা বলল,
-শেষ রিকশা ভাড়াটা আমি দিই,তুমি তো সব সময় দিলে,
.
রিধি কিছু বলল না,চুপচাপ ভেতরে চলে গেল।রেজা শুধু তাকিয়ে
রইল।ও ভেবেছিল রিধি ওকে কিছু বলবে কিন্তু তা হল না।
আবেগ গুলো কেন জানি দ্রুতই হালকা হয়ে যায়।কদিন আগেও
যখন রিধিকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিত তখন কত কি না
বলত রিধি।মাঝে মাঝে কেঁদেও ফেলত।
রেজা আর অপেক্ষা করল না, রিকশাওয়ালাকে টানতে বলল।
.
তবে মিনিট দুয়েক পর রিধি বাসা থেকে বাইরে বের হয়ে
এল,রেজাকে কিছু বলার জন্য নয়। রেজার জ্যাকেট টা ফেরত
দেয়া হয়নি তাই! কিন্তু ততক্ষনে রিকশা চলে গেছে।
রিধি মনে মনে ভাবল কাল সকালে রেজার মেসে গিয়ে দিয়ে এলেই
হবে।
.
পরের দিন সকালে রেজার জ্যাকেট ফেরত দেয়ার জন্য বাসা
থেকে বের হয় রিধি। রেজার মেসের সামনে আগেও অনেক কবার
এসেছিল,তাই চিনতে কোন প্রবলেম ছিল না। কিন্তু জ্যাকেট
কিভাবে দেবে এটাই প্রবলেম,
রেজার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে,এদিকে আবার সময় ও চলে যাচ্ছে।
রিধিকে জ্যাকেট ফেরত দিয়ে খুব দ্রুতই বাসায় ফিরতে হবে।
বাসায় বলে এসেছে একটু কেনা কাঁটার জন্য বাইরে যাচ্ছে কিন্তু
অনেক সময় হয়ে গেছে প্রায়, রিধি কি করবে বুঝতে
পারছেনা,,মেসে ঢুকে যাবে নাকি?
এসব মেসে আবার মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ।
.
রিধি মেসে ঢুকল না, গেটে কবার আওয়াজ করল।তাতেই এক
বয়স্ক লোক বেড়িয়ে এলো।রিধি কিছু বলার আগেই লোক টা
বলল,
-তুমি কি রেজার কাছে এসেছ?
-হ্যাঁ,,
-তাহলে তুমিই রিধি,,
.
রিধি লোক টার কথা শুনে অবাক হল,জিজ্ঞেস করল,
-আপনি কিভাবে চিনলেন?
-রেজার জ্যাকেট তোমার হাতে তাই,,
-ও কি আছে?
-না,,
-কোথায় গেছে?
.
আসো, ভিতরে বসে কথা বলি।রিধি লোক টার পিছনে ভেতরে
যেতে যেতে বলল,
-আপনি কে?
-ম্যানেজার এ মেসের,,
-ও,,
.
ম্যানেজার লোক টা রিধিকে নিজের রুমে নিয়ে গেল,,এটা অবশ্য
ওয়েটিং রুম ও।এ রুমে বেশি কিছু নাই,,একটা টেবিল আর তিনটা
চেয়ার।
.
লোক টা রিধিকে বসতে বলে,নিজে অন্য একটা চেয়ার টেনে
নিয়ে বসলো।তারপর
টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা খাম বের করে রিধির সামনে
রাখল।
রিধি জিজ্ঞেস করল,
-এটা কি,,
.
লোক টা খাম খুলতে খুলতে বলল,
-রেজার এপোয়েন্টমেন্ট লেটার,,
.
রিধি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-রেজা চাকুরী পেয়েছে?
-হুম,,বেতন ২০ হাজার।
-আমাকে বলেনি তো,,
-বলে কি করবে,, তোমার হবু স্বামী তো প্রচুর ইনকাম করে,
.
রিধি কিছু বলল না শুধু তাকিয়ে রইল ম্যানেজার লোক টার
দিকে। ম্যানেজার লোক টা আবার বলতে লাগল,
-রেজা তোমাকে প্রচুর ভালবাসতো।ও প্রায় বলত তোমার
মত ভাল মেয়ে নাকি হয় না।
-ও,,
-আরো অনেক কথাই বলতো।
কাল সন্ধ্যায় ও যখন ফিরল তখন মনে হয়েছিল ও কাঁদছিল।
কিছু হয়েছিল নাকি কাল?
.
ম্যানেজার লোক টার কথা শুনে রিধির চোখে পানি এসে গেল।
ও নিজের চোখের পানি লুকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-ও এখন কোথায়?
-জানিনা,,সকালে কাপড় চোপড় নিয়ে বেড়িয়ে গেছে,,
-কিছু বলে যায়নি?
-না,,কাল রাতে শুধু বলেছিল,ভাল লাগছে না এ শহর। চলে যাবে
এখান থেকে এটুকুই।
-ও,,
.
কথা শেষ হতেই রিধির ফোন বেজে উঠল। রিধির মনেই ছিলনা
যে ও অল্প কিছুক্ষনের জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিল।কিন্তু
অনেক্ষন পার হয়ে গেছে। ফোন একবার বেজে বন্ধ হয়ে গেল।
ম্যানেজার লোক টা বলল,
-বাসার ফোন?
-হ্যাঁ,
-ফোন ধরে বলো, আসছো।নয়ত বাসায় চিন্তা করবে।
-আমি এই বিয়ে করব না,
-পাগল মেয়ে নাকি।রেজাকে কোথায় খুঁজবে।
বাবা মায়ের কথাটাও তো চিন্তা করতে হবে,,
-বাসায় কথা বলো,,
-আমি রিকশা ঠিক করে নিয়ে আসছি,,
.
লোক টা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই রিধি ফোন ধরে বলল,
-আসছি মা,,
.
রিধি রিকশায় উঠে বসতেই ম্যানেজার লোক টা বলল,
-জ্যাকেট টা দিয়ে যাও।রেজা ফিরে এলে দিয়ে দেব,,
.
রিধি ওর চোখের পানি মুছে বলল,
-থাক,, ও আমার সব নিয়ে গেছে।ওর এটুকু আমার কাছে থাক,,
.
রিকশা চলা শুরু করতেই রিধির চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগল।ও
রেজার জ্যাকেট টা ধরে কাঁদতে লাগল।
হুট করেই রিধির মরে যেতে ইচ্ছে হলো।
রেজা ওকে কেন বলল না কিছু?
একবার বললেই ও চলে আসত রেজার কাছে?
রিধিকে সুখী করতে গিয়ে,,অসুখী করে দিল না তো?
.
দুজনের কত না স্বপ্ন ছিল,যা সামান্য টাকার কাছেই হেরে
গেল। স্বপ্ন গুলো দ্রুত মাটি চাপা পরে যায় একটু সুখের কাছে।
মাঝে মাঝে জীবনে সুখে থাকাই মুখ্য হয়ে যায়।
এত সুখেও কিছু মানুষ সুখী হয়না।তবুও তারা ভাল থাকার চেষ্টা
করে।
বাড়ির কাছে রিকশা আসতেই রিধি চোখ মুছে নিল।রিকশা
ভাড়া মিটিয়ে হাসি মুখে বাড়ির ভেতর ঢুকল।মাঝে মাঝে ভাল
আছি, দেখানোটাই অনেক জরুরী হয়ে যায় ,,
যখন তোমার হাসি মুখের উপর অনেকের হাসি মুখ নির্ভর
করে।
.
রিধির প্রশ্নের কোন উত্তর দিলনা রেজা।
রেজাকে দেখে মনে হলো ও রিধির কথা শুনতেই পায়নি।ও
তখনো খাওয়ার দিকে মনোযোগী। রেজা ওর প্লেটে থাকা
রুটির শেষ অংশ টা মাংশের ঝোলে ডুবিয়ে নিয়ে মুখে পুরে দিয়ে
তারপর রিধির দিকে তাকালো।
.
-কিছু বললা?
-হ্যাঁ,
-কি?
-আরো খাবা নাকি বিল দিবো,
-নাহ আর না খাই,, প্রেমিকার টাকায় এত খাওয়া ঠিক না।
-তাহলে চলো উঠি।
-আচ্ছা,,
.
রেজা আগে দোকান থেকে বাহিরে বের হয়ে আসলো ।অনেক
দিন পর ও ভাল মন্দ কিছু খেয়েছে। এখন একটা ঘুম দিলে হয়।
ইদানিং ওর ভালো ঘুম হচ্ছেনা। খালি পেটে ভাল ঘুম হয়না।
এখন ভরা পেট আছে, সেইরকম ঘুম হবে।হালকা শীত পরেছে,এই
সময় লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুম জম্পেস হয়।
এসব ভাবতে ভাবতেই রিধি এসে সামনে দাঁড়ায়। রিধি আজ নীল
একটা জামা পরে এসেছে। দেখতে ভালই লাগছে তবে ওকে
হোয়াইট পরলে আরো বেশি ভাল লাগত।
নীল নাকি বিরহের রঙ, তবে কি রিধি জেনে শুনেই এমন পরে
এসেছে, আজকের পর আর দেখা হবেনা তাই।দেখা তো হতেও
পারে,, রিধি যে মলে শপিং করতে যাবে সেখানে রেজা কাজ
করতে পারে,, এমন তো হতেও পারে। আবার রিধির বাচ্চা যে
স্কুলে পড়বে সেখান কার টিচার রেজা হতে পারে।হুট করে
প্যারেন্টস ডে তে দেখা হয়ে যাতে পারে দুজনের ।এসব ভাবতেই
রেজার মুখে হাসি চলে আসে।কি সব ভাবছে ও আজে বাজে।
.
রেজার হাসি দেখে রিধি বলে উঠে,
-হাসছ কেন?
-এমনি,,
-এমনিতে পাগলেরা হাসে !
-তাহলে মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি,, কি করা যায় বলো তো?
.
রিধি কোন উত্তর দিলনা,ইদানিং এসব নিয়ে কথা বলতে ভাল
লাগেনা।সিরিয়াস নেস খুঁজে চলছে ও,কিন্তু রেজা মোটেও
সিরিয়াস নয় কোন কিছুতে। রিধি বরংচ প্রশ্ন করল,,
-এখন কি করবা?
-তুমি যা বলবা,
-হাঁটবা?
-ভরা পেটে হাঁটা কেমন হয়ে যায়না?
-আচ্ছা,, চলো রিকশা নেই,
-আচ্ছা।
.
একটা খালি রিকশা দেখে উঠে পরে দুজন।
রিকশা চলা শুরু করতেই রেজা বলল,
-আজকের পরিবেশ টা অনেক সুন্দর তাইনা?
-হুম।
-আচ্ছা তোমার হবু বর কি করে?
-পারিবারিক ব্যাবসা,
-ইনকাম কেমন?
-কোটি টাকা নাকি নারাচাড়া করে,
-তাহলে তো ভালো, তুমি মাঝে মাঝে টাকা পয়সা দিয়ে
তোমার প্রাক্তন প্রেমিক কে সাহায্য করতে পারবা,,
.
রেজার কথা শুনে রিধি বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকায়। এই
ছেলে যে এত নিলজ্জ তা আগে জানা ছিল না।এর সাথে এত দিন
কিভাবে প্রেম করেছে রিধি, তা মাথায় আসছেনা?
তবে রেজা আগে এমন ছিল না যখন থেকে জানলো রিধি
বড়লোক ছেলেকে বিয়ে করছে তবে থেকেই এমন শুরু।
আজ সকালে রেজা নিজে রিধিকে ফোন দিয়ে বিকেলে দেখা
করতে বলল সাথে এও বলল যেন সাথে কিছু টাকা পয়সাও আনে।
.
রিধি যে রেজাকে ধোকা দিয়েছে তাও নয়, ও বলেছিল রেজাকে
যেন ওকে বিয়ে করে। রেজা হাসি মুখে জবাব দিয়েছিল,
-কি খাওয়াব বিয়ে করে?
এর পর কথা বলা বেকার। বেকার ছেলের বিয়ে করার কোন
প্রশ্নই আসেনা।
তবুও মাঝে মাঝে রিধির ইচ্ছে করে রেজাকে নিয়ে পালিয়ে
যেতে,বিয়ে করতে,সংসার করতে।
রেজার কথা টা বাসায় বলতে ইচ্ছে হয় খুব রিধির কিন্তু কেউ
যেন রিধির গলা টিপে ধরে বারণ করে এসব বলতে।
.
কিছুক্ষন পর রেজা আবার বলল,
-তোমার হবু বর যদি আমাদের এভাবে দেখে ফেলে তখন কি
হবে?
-জানিনা,বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে,
-তা করবেনা,
-কেন?
-এত সুন্দরী মেয়ে হাত ছাড়া করবেনা,,,
.
রিধি কিছু বলল না চুপ করে রইল।
হালকা বাতাশ বইছে,তাতে ভাল লাগার চেয়ে বেশি ঠান্ডা
লাগছে রিধির।সেটা খুব সহজেই বুঝতে পারল রেজা, তাই নিজের
জ্যাকেট টা রিধিকে দিতে দিতে বলল,
-মেয়েরা ঠান্ডার কাপড় কম পরে বের হয় কেন বলতে পারবা?
-নাহ,কেন?
-যেন এত দাম দিয়ে কেনা জামাটা সবাই দেখতে পারে,
-তাই নাকি?
-হুম,তাই।
-জানতাম না,,
-তোমার হলুদ তো কালকে তাই না?
-হ্যাঁ,
-বিয়ে পরশু,
-হুম,,
-বিয়েতে খাবারের আইটেম কি কি থাকবে ?
-জানিনা,
-খাসির রেজালা হলে একটা ফোন দিও,
-আচ্ছা,,
.
আর কিছুক্ষন রিকশা চলতেই রিধির ফোন বেজে উঠল।রিধি
ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখল, বাসা থেকে ফোন দিয়েছে।
বিয়ের আগে মেয়ের বাসার মানুষ খুব চিন্তায় থাকে, মেয়ে বাইরে
গেলেই ভাবে মেয়ে পালিয়ে যায়নি তো।রিধি ফোন রিসিভ
করেই বলল,
-হ্যাঁ, মা। আধাঘন্টায় আসছি,,
.
রেজা রিকশাওয়ালা কে রিধি বাড়ির ঠিকানার দিকে নিতে বলল।
মিনিট দশেকের মধ্য রিকশা রিধির বাড়ির সামনে চলে এল।রিধি
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিবে তখন রেজা বলল,
-শেষ রিকশা ভাড়াটা আমি দিই,তুমি তো সব সময় দিলে,
.
রিধি কিছু বলল না,চুপচাপ ভেতরে চলে গেল।রেজা শুধু তাকিয়ে
রইল।ও ভেবেছিল রিধি ওকে কিছু বলবে কিন্তু তা হল না।
আবেগ গুলো কেন জানি দ্রুতই হালকা হয়ে যায়।কদিন আগেও
যখন রিধিকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিত তখন কত কি না
বলত রিধি।মাঝে মাঝে কেঁদেও ফেলত।
রেজা আর অপেক্ষা করল না, রিকশাওয়ালাকে টানতে বলল।
.
তবে মিনিট দুয়েক পর রিধি বাসা থেকে বাইরে বের হয়ে
এল,রেজাকে কিছু বলার জন্য নয়। রেজার জ্যাকেট টা ফেরত
দেয়া হয়নি তাই! কিন্তু ততক্ষনে রিকশা চলে গেছে।
রিধি মনে মনে ভাবল কাল সকালে রেজার মেসে গিয়ে দিয়ে এলেই
হবে।
.
পরের দিন সকালে রেজার জ্যাকেট ফেরত দেয়ার জন্য বাসা
থেকে বের হয় রিধি। রেজার মেসের সামনে আগেও অনেক কবার
এসেছিল,তাই চিনতে কোন প্রবলেম ছিল না। কিন্তু জ্যাকেট
কিভাবে দেবে এটাই প্রবলেম,
রেজার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে,এদিকে আবার সময় ও চলে যাচ্ছে।
রিধিকে জ্যাকেট ফেরত দিয়ে খুব দ্রুতই বাসায় ফিরতে হবে।
বাসায় বলে এসেছে একটু কেনা কাঁটার জন্য বাইরে যাচ্ছে কিন্তু
অনেক সময় হয়ে গেছে প্রায়, রিধি কি করবে বুঝতে
পারছেনা,,মেসে ঢুকে যাবে নাকি?
এসব মেসে আবার মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ।
.
রিধি মেসে ঢুকল না, গেটে কবার আওয়াজ করল।তাতেই এক
বয়স্ক লোক বেড়িয়ে এলো।রিধি কিছু বলার আগেই লোক টা
বলল,
-তুমি কি রেজার কাছে এসেছ?
-হ্যাঁ,,
-তাহলে তুমিই রিধি,,
.
রিধি লোক টার কথা শুনে অবাক হল,জিজ্ঞেস করল,
-আপনি কিভাবে চিনলেন?
-রেজার জ্যাকেট তোমার হাতে তাই,,
-ও কি আছে?
-না,,
-কোথায় গেছে?
.
আসো, ভিতরে বসে কথা বলি।রিধি লোক টার পিছনে ভেতরে
যেতে যেতে বলল,
-আপনি কে?
-ম্যানেজার এ মেসের,,
-ও,,
.
ম্যানেজার লোক টা রিধিকে নিজের রুমে নিয়ে গেল,,এটা অবশ্য
ওয়েটিং রুম ও।এ রুমে বেশি কিছু নাই,,একটা টেবিল আর তিনটা
চেয়ার।
.
লোক টা রিধিকে বসতে বলে,নিজে অন্য একটা চেয়ার টেনে
নিয়ে বসলো।তারপর
টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা খাম বের করে রিধির সামনে
রাখল।
রিধি জিজ্ঞেস করল,
-এটা কি,,
.
লোক টা খাম খুলতে খুলতে বলল,
-রেজার এপোয়েন্টমেন্ট লেটার,,
.
রিধি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-রেজা চাকুরী পেয়েছে?
-হুম,,বেতন ২০ হাজার।
-আমাকে বলেনি তো,,
-বলে কি করবে,, তোমার হবু স্বামী তো প্রচুর ইনকাম করে,
.
রিধি কিছু বলল না শুধু তাকিয়ে রইল ম্যানেজার লোক টার
দিকে। ম্যানেজার লোক টা আবার বলতে লাগল,
-রেজা তোমাকে প্রচুর ভালবাসতো।ও প্রায় বলত তোমার
মত ভাল মেয়ে নাকি হয় না।
-ও,,
-আরো অনেক কথাই বলতো।
কাল সন্ধ্যায় ও যখন ফিরল তখন মনে হয়েছিল ও কাঁদছিল।
কিছু হয়েছিল নাকি কাল?
.
ম্যানেজার লোক টার কথা শুনে রিধির চোখে পানি এসে গেল।
ও নিজের চোখের পানি লুকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-ও এখন কোথায়?
-জানিনা,,সকালে কাপড় চোপড় নিয়ে বেড়িয়ে গেছে,,
-কিছু বলে যায়নি?
-না,,কাল রাতে শুধু বলেছিল,ভাল লাগছে না এ শহর। চলে যাবে
এখান থেকে এটুকুই।
-ও,,
.
কথা শেষ হতেই রিধির ফোন বেজে উঠল। রিধির মনেই ছিলনা
যে ও অল্প কিছুক্ষনের জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিল।কিন্তু
অনেক্ষন পার হয়ে গেছে। ফোন একবার বেজে বন্ধ হয়ে গেল।
ম্যানেজার লোক টা বলল,
-বাসার ফোন?
-হ্যাঁ,
-ফোন ধরে বলো, আসছো।নয়ত বাসায় চিন্তা করবে।
-আমি এই বিয়ে করব না,
-পাগল মেয়ে নাকি।রেজাকে কোথায় খুঁজবে।
বাবা মায়ের কথাটাও তো চিন্তা করতে হবে,,
-বাসায় কথা বলো,,
-আমি রিকশা ঠিক করে নিয়ে আসছি,,
.
লোক টা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই রিধি ফোন ধরে বলল,
-আসছি মা,,
.
রিধি রিকশায় উঠে বসতেই ম্যানেজার লোক টা বলল,
-জ্যাকেট টা দিয়ে যাও।রেজা ফিরে এলে দিয়ে দেব,,
.
রিধি ওর চোখের পানি মুছে বলল,
-থাক,, ও আমার সব নিয়ে গেছে।ওর এটুকু আমার কাছে থাক,,
.
রিকশা চলা শুরু করতেই রিধির চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগল।ও
রেজার জ্যাকেট টা ধরে কাঁদতে লাগল।
হুট করেই রিধির মরে যেতে ইচ্ছে হলো।
রেজা ওকে কেন বলল না কিছু?
একবার বললেই ও চলে আসত রেজার কাছে?
রিধিকে সুখী করতে গিয়ে,,অসুখী করে দিল না তো?
.
দুজনের কত না স্বপ্ন ছিল,যা সামান্য টাকার কাছেই হেরে
গেল। স্বপ্ন গুলো দ্রুত মাটি চাপা পরে যায় একটু সুখের কাছে।
মাঝে মাঝে জীবনে সুখে থাকাই মুখ্য হয়ে যায়।
এত সুখেও কিছু মানুষ সুখী হয়না।তবুও তারা ভাল থাকার চেষ্টা
করে।
বাড়ির কাছে রিকশা আসতেই রিধি চোখ মুছে নিল।রিকশা
ভাড়া মিটিয়ে হাসি মুখে বাড়ির ভেতর ঢুকল।মাঝে মাঝে ভাল
আছি, দেখানোটাই অনেক জরুরী হয়ে যায় ,,
যখন তোমার হাসি মুখের উপর অনেকের হাসি মুখ নির্ভর
করে।