Forums.Likebd.Com

Full Version: অফুরন্ত ভালবাসা।
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দেয়া হয়না"" এই লেখাটা পড়তে পড়তে
একদম অতিস্ট হয়ে গেছি।
আবার যে বাসা এই সাইনবোর্ড ছাড়া আছে সে বাসার ভিতরে
ঢুকলে বাসার মালিকেরাও এই একই কথা বলে।
.
মেসে থাকতে পারিনা আমি,একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে
চাকরি করি।
তাই বাধ্য হয়ে মেসেই থাকতে হয়।
আগে কলেজ পাশের এলাকাতেই ছিলো, তাই বাসা থেকে
যাতায়াত করতে পারতাম।
কিন্তু এই চাকরি হবার পর মেসেই থাকতে হচ্ছে।
প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে এসে বাসা খুজতে বের হই।
.
মা-বাবার একমাত্র ছেলে আমি। পড়াশোনা শেষ করে
চাকরিতে জয়েন করেছি।
মা-বাবা খুব ভাল করেই জানে যে আমি মেসে থাকতে পারিনা।
তাই তারা বলেছিলো বিয়ে করে বউ নিয়ে আসতে,এতে বাসা
পেতে আর বেগ পেতে হবেনা।
কিন্তু না করে এসেছি,এখন বুঝতে পারছি কতটা ভুল করেছি।
বাবা মার কথাটা শুনলে আমাকে আজ মেসে থাকতে হতোনা।
.
৩ দিন ছুটি পেয়ে বাসায় চলে আসলাম।
কথায় কথায় মেসে থাকতে পারিনা সে কথা তুললাম যেন তারা
আবার বিয়ের কথা বলে।
কথাটা কাজেও লাগলো।
আবার বিয়ের কথা বললো,আমি আর এবার সুযোগ হাতছাড়া
করলাম না,রাজি হয়ে গেলাম।
তাড়া নাকি মেয়ে দেখে রেখেছে,কাল আবার আমাকে নিয়ে যাবে
মেয়ে দেখতে।
.
পরদিন গেলাম,,
মেয়ে তো সুন্দর,আমরও পছন্দ হলো কিন্তু তা তো আর
সরাসরি বলা যায়না,মা জিগ্যেস করলে বললাম 'তোমাদের
পছন্দই আমার পছন্দ'
.
মেয়ের সাথে আমাকে আলাদাভাবে কথা বলতে বলা হলো,কিন্তু
আমি না করে দিলাম।
সত্যি বলতে লজ্জা লাগছিলো তো।
সেদিনের মতো বাসায় চলে আসলাম।
বাবা-মা বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আমাকে জানাবেন,যেহেতু
তাদেরও পছন্দ আবার আমারও পছন্দ।
আমার তো ছুটি শেষ তাই আবারও সেই মেসে ফিরতে হলো।
কিন্তু মেসে এসে মনে হচ্ছিলো নুপুরের ফোন নাম্বারটা নিয়ে
আসা উচিত ছিলো।
ওহ,সরি, আমার হবু বউটার নাম নুপুর।
আফসোস হচ্ছে কেন যে নাম্বারের কথা মনে
পড়লোনা,ধুররর!!!
সামনের মাসেই নাকি বিয়ে।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন তারিখ ঘনিয়ে আসলো।
আমিও আবার সময়মতো ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে
এলাম।
.
.
বিয়েটাও হয়ে গেলো আমাদের।
বিয়ের রাতে সব বন্ধু বান্ধবের ঝড়-তুফান শেষ করে
বাসর ঘরে ঢুকলাম।
ছোটবেলা থেকে এ রাতকে নিয়ে কতো স্বপ্ন
আমার কিন্তু ফাজিল বন্ধু-বান্ধবগুলা কত্তো সময় নষ্ট
করে দিয়েছে। ১১:৩৬ বাজে।
.
ঘরে ঢুকে গেলাম,ঢুকেই অবাক!
শুনেছি এ রাতে বউ ঘোমটা দেয়া থাকে,কিন্তু এই
মেয়ে তো সোজা আমার দিকে চেয়ে আছে!
কান্না বা কোনো বিরক্তর ছাপ নেই তার চোখে!
কিছুই বুঝতে পারলাম না..
.
আমি গিয়ে তার কাছে বসলাম,
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই সে বলে উঠলো__
শুনুন আমি আপনার সাথে বিয়েতে রাজি হয়েছি
ঠিকই..কিন্তু বেশি অধিকার দেখাতে আসবেন
না,আমি আগে আপনাকে চিনতে চাই জানতে
চাই,তারপর দেখা যাবে যে আপনাকে আমি স্বামী
হিসেবে মানবো কিনা..বুঝলেন?
আমি আস্তে করে শুধু হুম বললাম..
আমার সারাজীবনের স্বপ্ন একনিমিষেই নষ্ট করে
দিলো..মনটাও খারাপ করে দিলো..
এ কেমন বউ জুটলো আমার! এটা তো আমি
কল্পনাতেও ভাবিনি!
.
রাতে বিছানাতেই ঘুমালাম..
রাতটা ভালভাবেই কেটে গেলো..
সকালবেলা আমাদের টুকটাক কথা-বার্তা হলো..
আমি সোজা তুমি করেই বলতাম..
বেশ কয়েকদিন মুটামুটি ভালোভাবেই কেটে
গেলো..
আবার আমার ছুটিও শেষ হয়ে এলো..
ছুটি শেষ হবার ২ দিন আগে গিয়ে বাসা ঠিক করে
এলাম..এখন তো আর আমি ব্যাচেলর নই যে কেউ
বাসা ভাড়া দিতে চাইবেনা..
তাই বাসা ভাড়া পেতেও সময় লাগলোনা..
.
.
আমি পরদিন বউ নিয়ে বাসায় উঠলাম..
২ জন মিলে সবকিছু গোছগাছ করে ফেললাম..
আমাদের দুজনের টুকটাক কথা চললেও আমাদের
মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিলোনা..
প্রথমদিন বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খেলাম..
খাবার সময় বললাম__ রান্না করার জন্য একটা বুয়া
রেখে দেবো দু-একদিনের মধ্যে..কথা বলে
রেখেছি..
আমার কথা শুনে নুপুর খুব রাগ দেখালো,আর বললো
"কেন আমি কি রান্না করতে পারিনা!
শুনুন আমি রান্না করবো আর আপনি আমার রান্নার
কাজে হেল্প করবেন..
আর যদি বুয়া রাখেন তাহলে আমি কালকেই গ্রামে
চলে যাবো...
রাজি থাকলে বলেন,নয়তো আমি এখনই ব্যাগ
গোছানো শুরু করবো..
-হুম,রাজী না হবার কি আছে?
.
.
সকাল বেলা থেকে আমাকে কাজ দেয়া হলো মরিচ
আর পেয়াজ কাটা.
তো মরিচটা আমি ভালোভাবেই কাটতে
পারলাম,কিন্তু পেঁয়াজ কাটতে গিয়েই বিপাকে
পরলাম,পেঁয়াজ কাটার সময় চোখ দিয়ে খুব পানি
বের হলো! একটা পেঁয়াজও কাটতে পারলাম না!!
.
--দেখি,ছারুন এসব,ছাগল দিয়ে হালচাষ হয়না বুঝিছি.
(নুপুর)
হাসতে হাসতে কথাটা বলে দিলো!
আমাকেও রুমে চলে যেতে বললো.
চলে এলাম রুমে..
রান্নাটা ভালই করতে পারে,
দুপুরে এক-দেড় মিনিটের জন্য কল করে,খুব বেশী কথা
হয়না..
রাতে যখন ঘুমাতাম তখন দুজন দুদিকে ফিরে
ঘুমাতাম..আমার ছোট বেলা থেকেই অভ্যাস ছিলো
কোলবালিশ নিয়ে ঘুমানোর,তাই আমি কোল বালিশ
নিয়েই ঘুমাতাম...
সেদিনও যথারীতি কোলবালিশ নিয়েই
ঘুমিয়েছিলাম,মাঝরাতে কখন কোলবালিশটা নিচে
পরে গেছে তা টের পাইনি..তাই কোলবালিশ ভেবে
বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলাম টের
পাইনি..সকালে উঠে এই অবস্থা দেখলাম!
নুপুরও টের পেয়েছে কিন্তু কিছু বলেনি! সকালবেলা
কেমন যেনো ইতস্তত লাগছিলো...
কিন্তু এই ব্যাপারে ও কিছু বললোনা,আমিও আর কিছু
ভাবলাম না এটা নিয়ে..
.
বেশ কয়েকদিন ভালভাবেই কেটে গেলো..
আমিও ওর প্রেমে পড়ে গেছি অনেকটা কিন্তু ও তো
কিছু বলেনা!
ছুটির দিন দেখে আমি নুপুরকে বেড়াতে যাবার কথা
বললাম,নুপুরও সানন্দে রাজী হয়ে গেলো..
বিকালে দুজনে বের হলাম.
দুজনে রিকশা করে যাচ্ছিলাম,অনেকেরই তো
অভ্যাস মেয়ে দেখলেই তাকিয়ে থাকা,তো নুপুরের
দিকেও অনেকে তাকাচ্ছিলো..তাই আমি বললাম
মুখটা ঢেকে নিতে,নুপুরও সঙ্গে সঙ্গে একটা হাসি
দিয়ে মুখটা ওড়না দিয়ে ঢেকে নিলো..
.
রিকশা থেকে নেমে বেশ কয়েক যায়গায় ঘুরতে
গেলাম..
আর শেষে গেলাম একটা পার্কে..
সেখানে অনেক কাপলেরা হাত ধরে হাটা হাটি
করছে,আবার কেউ কেউ বসে আছে| আমারও ওদের
মতো মন চাচ্ছে,মানে নুপুরের হাত ধরে ঘুরতে মন
চাচ্ছে!
কিন্তু সাহস হচ্ছেনা!
তবুঔ আস্তে করে হাতটা ধরে ফেললাম...নুপুর একটু
তাকিয়ে দেখলো আর একটু হাসলো..
আমার ভালোই লাগছিলো..দুজনে এক জায়গায়
বসলাম আর বাদাম কিনে খেতে লাগলাম..একটুপরে
মনে হলো নুপুরকে প্রোপোজ করি তাই ভেবে নুপুরকে
একটু বসে থাকতে বললাম,পাঁচ মিনিটের কথা বলে
আসলাম..
তারপর সেখান থেকে ঢুকলাম ফুলের দোকানে কিছু
ফুল কিনতে..
তরতাজা দেখে কয়েকটা ফুল কিনলাম..সব মিলিয়ে
প্রায় দশ মিনিট পার হয়ে গেলো|
আমি ফুল নিয়ে আগের জায়গায় ফিরে আসলাম
কিন্তু সেখানে নুপুর নেই!
আশেপাশে কোথাও নেই!
আমি পাশে ব্রেন্ঞ্চে বসা দুজনকে জিগ্গেস করলাম
যে এখানে যে মেয়েটি ছিলো সে কোন দিকে
গেছে?
জবাবে তারা যা বললো তা শুনে মনে হয় আমার
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো!
নুপুর নাকি একটা ছেলের সাথে এই পাশ দিয়ে
গিয়েছে!
আমিওঐদিকেই ছুটতে লাগলাম,একটুপরে ওর
নাম্বারে কল দিলাম কিন্ত তখনই আমার পকেটে ওর
ফোনটা বেজে উঠলো..আমি ফুলের দোকানে যাবার
আগে ওর ফোনটা আমার
কাছেই ছিলো,আর ফুল কিনতে যাবার সময়ও পকেটে
করে কখন নিয়ে নিয়েছি মনে নেই..
উফ!! মাথা কাজ করছেনা একদম!
আমি পার্কের আশেপাশের প্রায় সব যায়গা দিয়েই
খুজে দেখলাম,কিন্তু কোথাও নেই..
আবার পার্কের ভিতেরেই গেলাম,সেখানে সব
জায়গায় খুজতে খুজতে আবার আমরা যে জায়গায়
বসে ছিলাম সেই জায়গায় গেলাম...
সেখানে গিয়ে দেখি নুপুর ফুল হাতে নিয়ে বসে
কাঁদছে!! ওর হাতে একগুচ্ছো ফুল!
আমি নুপুরের একদম কাছে চলে গেলাম..
এটুকু সময়ের মধ্যেই খুব কেঁদেছে মনে হয়..চোখ ফুলে
গেছে..
জিগ্গেস করলাম একটা ছেলের সাথে কোথায়
গিয়েছিলে?
ও বললো একটা কম বয়সি ছেলের সাথে ফুলের
দোকানে গিয়েছিলাম,আমি তো এই এলাকা
চিনিনা,তাই|
আর এসে দেখি তুমি আসনি,অনেক্ষন দেরি করলাম
কিন্তু তুমি তো এলেনা,তাই আমি ভয় পেয়ে
গেছিলাম..
.
নুপুরের গলা কাঁপছে,কান্না করছে আর কথা বলছে!
আর ও তো আমার সাথে আপনি করেই বলতো,কিন্তু
এখন তুমি করে!
যাক,ভালোই হয়েছে..
-আর আমিও তখন ফুল কিনতেই গেছিলাম,আর এসে
দেখি তুমি নেই,তাই তোমাকে খুজতে এদিক ওদিক
গিয়েছিলাম..(আমি)
-আর আমাকে রেখে কোথাও যাওয়া চলবেনা..(নুপুর)
-হুম
.
দুজনে হাটতে শুরু করলাম..এবার আমি না নুপুর ই
আমার হাতটা ধরে নিলো,বেশ জোরেই ধরলো..
দুজনের হাতেই ফুল..
আমি ফুল কিনেছি নুপুরকে দেবার জন্য,আর নুপুর ফুল
কিনেছে আমাকে দেবার জন্য!
হাটতে হাটতে একটু পর হাটা থামিয়ে দিয়ে
ফুলগুলো দিয়ে নুপুরকে প্রোপোজ করে ফেললাম..
নুপুরও ওর হাতের ফুলগুলো আমাকে দিলো.
দুজনেই হাটতে লাগলাম হাত ধরে...মনে হয় এভাবে
হাত ধরে হাজার হাজার মাইল একসাথে হাটতে
পারবো!
.
বি:দ্র:গল্পটি সম্পুর্ন কাল্পনিক,বাস্তবাতার সাথে
কোনো মিল নেই|