Forums.Likebd.Com

Full Version: গালে দাগ
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
(১)
ঈদের দিন।একমাস রোজা রাখার পর আজকে খুব আনন্দের
দিন। বিকেলে স্থানীয় বন্ধুদেরকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার প্লান
করলো রাদি। সারাদিন কাটার পর বিকেলে বন্ধুদেরকে নিয়ে
বের হলো। ঈদের দিন বেশির ভাগ মানুষই বিকেলে বের হয়
ঘোরার জন্য। হাটছে আর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে আর
সেই চিরচেনা দুষ্টামি করছে একে অপরের সাথে। রাদিও
দুষ্টামিতে যোগ দিলো। স্বভাবতই রাদি রাস্তায় দুষ্টামি কম
করে। কিন্তু আজকে লোভ সাম্লাতে পারলোনা। হঠাৎ
সামনের দিকে তাকানোতে রাদির দুষ্টামি বন্ধ হয়ে গেল।
কাকে যেন দেখা যাচ্ছে দূর থেকে। একটু সামনে গিয়ে তারপর
বুঝতে পারলো এটা সেই মেয়েটা। এর আগেও দেখেছে কিন্তু
রাদি এতটা অবাক হয় নি যতটা আজ হচ্ছে। তাই নির্বাক
থেকেই এগিয়ে চলল রাদি। বন্ধুদের নাবুঝতে দিয়ে আরেকদফা
দেখার কাজটা করে নিলো। এই কাজটা করার রাদির মতো তার
কোন বন্ধু করতে পারেনা।
মেয়েটার নাম ইরা। রাদির বাসা থেকে সামনে কিছুটা দূরে তার
বাসা। মাঝে মাঝে দেখা হয়। এই যেমন দুই জন অপরিচিত
মানুষের দেখা হয় টজিক তেমনি। শুধু পার্থক্য তারা দুজনই
সুজনকে নামে আর কাজে চেনে,কিন্তু কথা বলেনা। রাদি তার
এলাকার কোন মেয়ের সাথেই কথা বলেনা। তাই এর সাথেও
বলেনি। কিন্তু আজকে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। অবশ্য কথা
বলতেও পারতো। সুযোগ ছিলো। কিন্তু বললো না।
লাল জামায় মেয়েটির সৌন্দর্য যেন উৎলে পরছে। তাই রাদি
বারংবার তাকাচ্ছে পেছনে।
আজ সারাদিন ভালোই কাটলো। রাতে বাসায় ফিরে ক্লান্ত
শরীর যখন এলিয়ে দিলো বিছেনায় তখন চোখ বন্ধ করতেই
ইরার মুখটা ভেসে উঠলো। কি আর করার কল্পনা করে
সারারাত না ঘুমিয়ে ভোরেরদিকে ঘুমালো রাদি। রাদি এবার
ইন্টারমিডিয়েট দিলো। তাই পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকাটাই
স্বভাবিক। সামনে ভর্তি পরীক্ষা। রাদি কোচিং করছিলো
ঢাকায়। তাই চলে গেলো ঢাকায়।
(২)
আজ অনেকদিন পর বাসায় আসলো রাদি। ভর্তি পরীক্ষা
শেষ। এখন রেজাল্টের অপেক্ষা। অনেকদিন পর বাসায় এসে খুব
খুশি রাদি। তার মাথায় ইরা পোকাটার ভনভন কিছুটা কম
ছিলো এতোদিন কিন্তু বাড়িতে এসে আবার বেড়ে গেছে
ভনভনানি। বিকেলে বন্ধুদের সাথে হাটতে বের হলো রাদি।
হাটছিলো ইরার বাড়ির সামনে দিয়েই। বাসনা একটাই, ইরার
দেখা পাওয়া। কিন্তু ভাগ্যের খেল আজকে দেখা হলোনা। পরের
দিন আবার গেল একি রাস্তায়। ভাগ্য এবার সহায় হলো। ইরা
তার বাবার সাথে বের হয়েছে। ইরার কাঁধে ব্যাগ। মনে হয়
প্রাইভেট পড়তে যাবে। রাদি অপলক তাকিয়ে আছে ইরার দিকে।
কিন্তু বেচারি টেরব পেলোনা। যেহেতু প্রাইভেটে যাচ্ছে সেহুতু
রাদি বুঝে গেলো এই সময়ই ইরার সাথে দেখা হওয়ার মোক্ষম
সময়। ঘড়ি বের করে সময়টা দেখে নিলো।
ইদানিং...না না ইদানিং নয় প্রায় প্রতিদিনই রাদিকে ইরাদের
বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে হেটে যায়। উদ্দেশ্য লাল পরির
দর্শন পাওয়া। দেখাও হয়। রাদি তো জানে কখন কখন ইরা
বের হয়। অরিন ও প্রতিদিন দেখছে রাদিকে এদিক দিয়ে
হাটাচলা করতে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না। হয়তো পারে
বুঝতে কিন্তু বুঝতে দিতে চায় না।
রাদির এখন দিন শুরু হয় ইরাকে কল্পনা করে,শেষও হয় ইরাকে
কল্পনা করে। এটাই এখন স্বাভাবিক নয় কি?
প্রতিদিনের মতো আজকেও রাদি বের হলো। সেই রাস্তায়
হাটছে যেদিকে অরিনের যাতায়াত। আজও বের হলো ইরা। তবে
মনে হয় প্রাইভেটে যাবে না। সেজেছে খুব। পরেছে একটা হলুদ
ড্রেস। দারুণ লাগছে তাকে। ইরা তার বাবার মোটরসাইকেলে
উঠলো। বাবার বয়সি বেশিরভাগ মানুষ কচ্ছপের গতিতে
মোটরসাইকেল চালায় তা জানা কথা। ইরা যেতে যেতে হঠাৎ
পেছনে তাকালো। রাদিকে ইরাও চেনে। ভালো ছেলে হিসেবেই
চেনে তাকে। ইরা যখন সামনে তাকাতে যাবে তখন রাদি কি যেন
ইশারা করলো। ইশারা বোঝার জন্য ইরা এবার ভালো ভাবে
পেছনে তাকালো। রাদি ইশারার অর্থ ছিলো যে ইরার গালে
দাগ। এতখনে ইরার বাবার মোটরসাইকেল কিছুটা দুরেই চলে
গেল। ইরা তার গালে হাত দিয়ে দাগ মুছছে। ইরার ঠোট দুটি
একটু উপরে উঠে গেলো। রাদি বুঝতেই পারেনি কি থেকে কি
হলো। রাদির একটা কথা মনে পরছে, মেয়ে হাসলো তো
ফাসলো। আজ সারারাত রাদির ঘুম হলো না। না হওয়াটাই
স্বভাবিক।
(৩)
পরের দিন রাদি চলে যাবে। সব ভর্তি পরীক্ষা শেষ হহলেও
মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা এখনো বাকি আছে। তাই যেতে
হচ্ছে। যাওয়ার রাস্তা ইরার বাড়ির সামনে দিয়েই। গল্পে
এরকমটাই হয়। রাদির গাড়ি যখন ইরার বাড়ির সামনে এলো
ইরা তখন বের হলো। মনেহয় প্রাইভেটে ভাবে। শুধু প্রাইভেটেই
যায় । রাদি তাকিয়ে আছে ইরার দিকে। ইরা ইশারায়
বুঝিয়ে দিলো রাদির গালে দাগ। রাদি দাগ মুছতে মুছতে
হাসলো। রাদি মনে মনে বললো সিগন্যাল গ্রীন।
পরীক্ষা দিয়ে কয়েকদিনের মাঝেই রাদি চলে আসলো। এসেই
বের হলো ইরাকে দেখতে। হাটতে হাটতে রাদি তার প্রিয়
যায়গায় এসে থামলো। গৌধুলি পার্ক। সেই প্রিয় পুকুরের
পাশে বেঞ্চটায় বসতেগেলো। দেখলো কেউ বসে আছে। পেছন
থেকে উঠতে বললো কিন্তু উঠলো না। এর আগেও অনেকে
বসতো। কিন্তু তারা রাদিকে দেখলেই উঠে যেত এরা যাচ্ছেনা।
রাদি ক্ষান্ত হয়ে অন্য বেঞ্চে বসলো। হঠাৎ পেছন থেকে
মেয়ালি ডাক পরলো। পেছনে তাকিয়ে দেখলো কিছু মেয়ে। তারা
রাদিকে সেখানে বসতে বললো। রাদি চলে যেতে লাগলো তার
প্রিয় বেঞ্চটায়। কিন্তু পেছন থেকে আবার ডাক পড়লো। এবার
পেছনে তাকাতেই রাদির চোখ ছানাবড়া! এ যে ইরার গলা।
অরিন ডাকছিলো তাকে! রাদি হা হয়ে আছে। ইরা হাসছে। ইরা
বলল
-আপনি এখানে?
-একি প্রশ্ন তো আমারো। তুমি এখানে কেন?
-আমি মাঝে মাঝেই এখানে আসি।
-আমারতো এটা প্রিয় যায়গা।
-আমারো তাই। চলুন বসি।
-হুম চলো।
তারা দুজনে গিয়ে বসলো পুকুরপাড়ের ঐ বেঞ্চটায়।
ইরা বলল
-আপনি না এবার ভর্তি পরীক্ষার্থী?
-হুম। মনেতো হয়।
-কোথায় পরীক্ষা দিলেন?
-ভার্সিটি,মেডিকেল সব খানেই দিয়েছি।
-আজকে তো মেডিকেল ভর্তির রেজাল্ট দেয়ার কথা।
-আমিতো তাই শুনলাম।
-পেয়েছেন?
-নাহ। পাইনি
-Wow Nice. মিস্টি খাওয়াবেন না।
-হুম অবশ্যই। চলো।
-চান্স পাননি তবুও খাওয়াবেন? নাহ থাক।
-না না। চলো। কফি খাই।
-চলুন।
কফি স্টলে সবাই দেখে আছে ইরাদির (ইরা আর রাদির) দিকে।
তাই কোনরকমে তারাতারি চলে আসলো।
-বাসায় যাবেএখন?
-তুমি যাবে নাকি? তাড়া থাকলে যাও। আজ বিকেলটা খুব
সুন্দর। এখন যেততে ইচ্ছে হচ্ছেনা।
-আচ্ছা পরেই যাই তাহলে।
-ধন্যবাদ। চলো হাটি?
-চলুন..
ইরাদি চলছে পুকুরের পার ঘেসে। রোমান্টিক সময়ে এসব
যায়গায় হাটার তুলনা হয়না।
রাদির ফোন বেজে উঠলো। রাদি ফোন দেখছিলো তাই প্রায়
পড়েই যাচ্ছিলো পুকুরে। ইরা হাত ধরে ফেলে রাদির।
-কি হলো? পড়ে যাচ্ছেন কেন?
-আসলে বুঝতে পারিনি।
-এতোটা সেল্ফ ডিফেন্স লেস আপনি?
-তুমিতো আছো ধরার জন্য।
বলেই রাদি অবাক হয়ে গেলো। কি থেকে কি বলল বুঝতেই
পারেনি।
-জি? কি বললেন বুঝতে পারলাম না।
রাদি মনে মনে বলছে যাক কিছু শুনতে পারেনি।
-না আসলে রেজাল্ট এসেছে। আমি ঢাকা মেডিকেলে চান্স
পেয়েছি।
-আপনি না বললেন চান্স পাননি?
-সরি মিথ্যে বলেছিলাম।
এইমাত্র পেলাম রেজাল্ট।
-আমি মিথ্যে একদম পছন্দ করি না।
-আচ্ছা সরি।
-নাহ। সরি বললেও মাফ হবে না।
-কেন? সরি সরি সরি.....। আমি লাইফে এতোবার সরি বলিনি
-আমি লাইফে এতো সরি শুনিনি। কিন্তু সেদিন মিথ্যা
বলেছিলেন কেন? আমার গালেতো কোন দাগ ছিলো না।
-তুমিও তো মিথ্যা বলেছো। আমার ও সেদিন দাগ ছিলো না।
-ইয়ে আসলে..... কিন্তু মিথ্যাতো আগে আপনি বলেছেন
-আসলে তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। তাই...
সেদিন....
-কেন?
-আসলে তোমাকে মনে হয় পছন্দ করে ফেলেছি।
-কিহ???? (ক্ষেপে গিয়ে)
-আসলে পছন্দ নয়। ভালোবেসে ফেলেছি!
-আজ বলছেন কেন? আগে বলতেই পারতেন? তাছাড়া ইদানিং
দেখেছি আপনি আমাদের বাড়ির সামনে ঘুরছেন। অবশ্য আমি
বুঝতে পেরেছিলাম। আপনি আমাকে ফলো করছিলেন।
আসলে....
-আসলে? আসলে কি?? বলো বলো।।।
-নাহ। বলবো না। এভাবে কেউ প্রোপোজ করে।
নেই কোন ফুল,নেই কোন ভয়
এভাবে কি প্রোপজ হয়?
-খুব সুন্দর কবিতা বলেছো।
-কিহ।। থাকো তুমি আমি চললাম।
ইরা চলতে শুরু করলো। একটু পরে প্রছনে তাকিয়ে দেখলো
রাদি একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ইরা অবাক। ভাবছে
এসময় ফুল কথায় পেল?
-ফুল কোথায় পেয়েছি ভাবছো তাই না? আসলে তোমাকে
আগেই দেখেছি পার্কে আসতে। আর কফি শপ থেকে বের হওয়ার
সময় কিনে একটি ছেলের দ্বারায় এখানে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
তাই এদিকদিয়েই তোমাকে হাটতে নিয়ে এসেছি।
-আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ফলো করছিলাম। তুমি
বোধ হয় লক্ষ্য করোনি। ঈদের দিনে তুমি যতটা হ্যান্ডসাম
তারচেয়ে বেয়াহি হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছিলো।
-এটা বললে ছেলেরা কি পটে?
-জানিনা তবে হয়তোবা হয়।
-ঈদের দিনে তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছিলো।
-এটা বললে কি মেয়েরা পটে?
-জানিনা তবে হয়তোবা হয়।
-হাটু গেরেই থাকবে নাকি...?
-না না। কি করবো বলে দাও?
-কিহ!! আবার ফাজলামো??? আমি চললাম।
-হাটু গেরে বলছি তুমি আমাকে ভালোবাসো।।।
-কিহ!!!?
-ইয়ে মানে...আমি তোমাকে ভালোবাসিইইই।।।
-আমি বাসিনা।
-আচ্ছা থাকো। এবার আমি চললাম। তোমার ঐ বান্ধবিটা
খুব....
-দাড়াও খবর করছি তোমার
.
হুহ..শুরু হয়ে গেছে স্টোরি শুরু হতে না হতে ঝগড়া।।। হায়রে
লাভ স্টোরি!!
ওহো? পাঠক আপনার গালেতো দাগ।।।