02-21-2017, 09:04 AM
সকাল সকাল মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে আরিয়ানের।এত সকালে
কোনদিন আরিয়ান ঘুম থেকে উঠে না।বাবা-মায়ের একমাত্র
ছেলে।খুব উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে না,তবে মোটামুটি ঢাকার
শহরে নিজেদের একটা বাড়ি আছে।বাবা একটা বেসরকারি
কম্পানিতে ভালো বেতনেই জব করে।আর আরিয়ান একটা
প্রাইভেট ভার্সিটিতে সি,এস,ই পড়ছে।
.
আজকে সকাল সকাল ডাকার একমাত্র কারন তার বাবা-মায়ের
ইচ্ছা এবার তারা গ্রামের বাড়িতে ঈদ করবে। কোরবানি দিবে
আরিয়ানের দাদা-দাদীর সাথে তাদের গ্রামে।কিন্তু আরিয়ান
যাবে না তার ফ্রেন্ডরা সবাই যে এই ঢাকায় তাই।তবুও মা
বাবার জোড়াজুরিতে যেতে রাজি হয় আরিয়ান।আরিয়ানের
আব্বু খুব সতর্ক লোক,তাই ঠিক করা হল ঈদে বাস বা ট্রেনে
ভিড়ের মধ্যে না গিয়ে লঞ্চে যাবে।ভাড়াটা একটু বেশি পরবে তবু
লঞ্চ এর যাত্রা নিরাপদ,ঝড় বৃষ্টি না হলেই হয়।
.
ঠিক মত বিকালে তারা রওয়না দিবে।বিকাল ৫টায় লঞ্চ ছেড়ে
যাবে।তাদের আগে থেকেই কেবিন নেওয়া ছিল,ভাড়া একটু বেশি
নিছে তবু ঈদ সবাই এক সাথে করতে পারবে এইটাই ভেবেই
অনেক আনন্দ।আরিয়ানের প্রথমে খারাপ লাগলেও পড়ে অনেক
ভালো লাগে।লঞ্চের ছাদে গিয়ে কিছু ছবি তুলে আরিয়ান।
বিকালের হালকা বাতাস,আর খুব মনোরম পরিবেশ আরিয়ানের
মন ভালো করে দিল।কিছু সময় যাবার পড় আরিয়ান নিচে নেমে
কেবিনের দিকে গেল।
.
কিন্তু দেখে তাদের আব্বু,আম্মুর সাথে আরো ৩জন বসা।এক
ভদ্র মহিলা,এক ভদ্রলোক আর একটা মেয়ে।আসলে আরিয়ান
তাকে মেয়ে নাকি পরী বলবে কিনা ভাবছে,কারন মেয়েটার
চুল,চেহারা আর ড্রেসআপ এত সুন্দর ছিল যা আরিয়ান প্রথম
দেখাতেই ভালো লেগে যায়।আরিয়ানের আম্মু পরিচয় করিয়ে
দেয় এই আমার ছেলে আরিয়ান।আর আরিয়ান এই তোমার
অন্টি পাসের কেবিনে উঠছে।তারাও যাচ্ছে আমাদের সাথে একি
লঞ্চে।আরিয়ান খুব খুশি এত লম্বা জার্নি তে একজন মানুষ
পেল যার সাথে গল্প করে যেতে পারবে।
.
কিন্তু আরিয়ান দেখে মেয়েটা কেমন মনমরা হয়ে বসে আছে কথা
বলছে না।আরিয়ান ভাবল হয়ত ভাব দেখাচ্ছে।আরিয়ান ও কিছু
না বলে চলে যায়।কেবিনে গিয়ে মায়ের কাছে জানতে পারে
মেয়েটার নাম রূপকথা,সবাই কথা বলেই ডাকে।সন্ধ্যা গড়িয়ে
রাত নামল,আরিয়ান কফির একটা মগ হাতে নিয়ে বেলকোনি তে
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে।পরিবেশটা অন্ধকারময় হওয়ায়
চারিদিকটা খুব সুন্দর লাগছিল।মাঝে মাঝে মাঝিদের নৌকায়
মিটিমিটি কুপির আলো আর দূরে বড়বড় জাহাজের সাইরেন
আর আলো খুব ভালোই লাগছিল তার।
.
কিছু সময় পর আরিয়ান তার গায়ে আলতো একটা ছোঁয়া
পায়,আসলে একটু অন্ধকার হওয়ায় রূপকথা সাথে আরিয়ানের
ধাক্কা লাগে।আরিয়ান তাকে সরি বলে কিন্তু রূপকথা তার দিকে
তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে ঠিক আছে,আরিয়ান ভাবে
মেয়েটা খুব অহংকারী এত কথা বলতে চাইছে আরিয়ান, তবু তার
সাথে কথা বলছে না।মেয়েটা তার পাশে দাঁড়িয়ে তার দিকে
আড়চোখে তাকাচ্ছে সেইটা আরিয়ান কেবিনের আলোতে
ভালো করেই বুঝতে পারছে।তবু মেয়েটার এত দাম দেখে
আরিয়ান কিছুই বলে না।
.
কিছু সময় পর "কথা" বলে তার মা ডাকদেয়।মেয়েটা ভিতরে চলে
যায়,মিনিট ৩০পর আবার আসে।
আরিয়ান ভাবছে মেয়েটাকে কিছু বলবে,এমন করে থাকলে সে
কিচ্ছু বলতে পারবে না।এই ভাবতে ভাবতে আরিয়ান রূপকথাকে
বলে দেখেন আমি আপনার সাথে একটু কথা বলব প্লিজ আপনি
যাবেন ন আমার পাশ থেকে।আরিয়ান বলে আমি আপনার সাথে
ফ্রেন্ডশিপ করতে চাই।আপনার লজ্জা পাবার দরকার নাই
আপনি কি করবেন ফ্রেন্ডশিপ আমার সাথে?
.
মেয়েটা কিছু না বলেই চলে যায় কেবিনে।কথা হয়না আর
আরিয়ানের সাথে,কিন্তু রাত তখন ১১টা আরিয়ান কেবিনের
সামনের বেলকোনিতে বসে বসে গান শুনছিল এমন সময় তার
ফোনে একটা কল আসে আরিয়ান রিসিব করে,নদীর মধ্যে
হওয়ায় নেটওয়ার্ক তেমন পাওয়া যাচ্ছিল না।আরিয়ান জোড়ে
জোড়ে কথা বলছিল।তার কোন এক ফ্রেন্ড কে বলছে আমার
বাংলালিক সিমে নেট থাকে না তুই আমার জিপি
০১৭৮৩৮১২৭৮......এই নাম্বারে ফোন দিস।
.
কথা বলার শেষে আরিয়ান খেয়াল করে মেয়েটা তাদের
কেবনিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটার কাছে যায় আরিয়ান
কথা বলতে চায়,কিন্তু মেয়েটা একটা কাগজ আরিয়ানের হাতে
ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় মেয়েটা কাগজে লিখে দেয় আমি আপনার
উত্তর দিতে পারব না।আরিয়ান দেখে অনেক রাত,এখন আর
মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করবে না সকালে কথা বলবে।আরিয়ান ঘুম
থেকে উঠল,ব্রাশ করছে তার মা বলছে আমারা ১০টার দিকেই
পিরোজপুর পৌঁছে যাবো,ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নে।
.
আরিয়ানের মনে পরে যায় মেয়েটার কথা।তাড়াতাড়ি কেবিনের
সামনে যায়,কিন্তু একি কেবিনে কেউ নেই।তবে কই
গেল,আরিয়ান পাগলের মত সারা লঞ্চ খুঁজতে লাগে কিন্তু
কোথাও নেই।পরে কেবিন মাস্টারের সাথে কথা বলে জানতে
পারে তারা বরিশালের যাত্রী ছিল।আর লঞ্চ বরিশাল
পৌছাইছিল ভোরের দিকে।আরিয়ানের চোখে জল চলে
আসে,কাউকে ভালোবাসল অতছ বলতে পারল না।
.
পরে মায়ের কাছে জানতে চায় কোন ঠিকানা দিছে কিনা।
আরিয়ানের মা বলে না দেইনি তবে বলছে মগবাজার এলাকার
আশেপাশে থাকে।আরিয়ান কিছুই বলে না শুধু দুচোখ দিয়ে
দূরের জিনিষ গুলি দেখতে দেখতে।তাদের গন্তব্যতে চলে আসে।
আরিয়ান মন খারাপ করেই ঈদ কাটায়,সারাক্ষণ মেয়েটার কথা
ভাবে,কেন বলল না তার সাথে মেয়েটি কথা,খুব ভালোবেসে
ফেলছে মেয়েটাকে।ঈদের ছুটি শেষ করে আরিয়ানের ফ্যামিলি
ঢাকায় চলে আসে।
.
আরিয়ান খুঁজে যাচ্ছে মেয়েটাকে।কিন্তু আজো তার দেখা পেল
না,প্রায় ১০দিন পর আরিয়ানের নাম্বারে একটা অপরিচিত
নাম্বার থেকে কল,রিসিব করে হ্যালো হ্যালো বলছে আরিয়ান
কিন্তু ওই পাস থেকে কিছু সময় পর ফোন কেটে দেয়। একটু পর
এসএমএস আসে আপনি কি আমার সাথে একটু দেখা করতে
পারবেন।আরিয়ান ভাবে কে হবে,সেই মেয়েটা না তো?আবার
ভাবে তা কি করে হয় মেয়েটা তো তার নাম্বার নেয়নি তবে।
আরিয়ান কল দেয় কিন্তু অপর পাশ থেকে ফোন কেটে দেয়।
.
আরিয়ান এসএমএস দেয় কে আপনি?
অপর পাশ থেকে এসএমএস আসে দেখা করে দেখুনতো কে
আমি।
আরিয়ান জানতে চায় কই দেখা করবেন।ঠিক হয় হাতিরঝিলে
ঠিক বিকাল ৫টায়।আরিয়ান এর মনে থাকে না।এসএমএস আসে
বিকাল ৫টায় কই আপনি আসুন আরিয়ানের বাসাও কাছে হওয়ায়
তাড়াতাড়ি যেতে পারে।কিন্তু খুঁজতে খুঁজতে আরিয়ান তাকে পায়
না,যখন ফিরে আসবে তখনই এসএমএস আসে কই চলে যাচ্ছেন
পিছনে তাকান একবার।আরিয়ান দেখে সেই মেয়েটা যাকে সে
লঞ্চে দেখেছিল।আরিয়ান নির্বাক পুতুলের মত দাঁড়িয়ে তাকিয়ে
আছে মেয়েটার দিকে।চোখে জল ছলছল করছে।
.
হটাৎ করেই বলা শুরু করল আরিয়ান সেইদিন আমায় না বলেই
চলে গেলেন কেন,কত খুজছি আমি আপনাকে জানেন কতটা মিস
করছি।আরিয়ান দেখে মেয়েটা এখনো কোন কথা বলছে না।
কিন্তু মেয়েটার হাতে কিছু অফসেট পেপার।আরিয়ান কে একটা
কাগজে লিখে দিল আমি ও আপনাকে অনেক খুজছি।আপনার
নাম্বার অনেক মনে করার ট্রাই করছি কিন্তু সেইদিন রাতে
যখন আপনার ফ্রেন্ডকে নাম্বার বলছিলেন লাস্ট একটা ডিজিট
আমি শুনতে পারি নাই।পরে আমি সেই নাম্বার টার সাথে ১-০
অব্দি একটা একটা করে নাম্বার যোগ করে ফোন দিছি
১০নাম্বারে গিয়ে আপনাকে পাই,আপনার বয়েস শুনে চিনতে
পারি।
.
আরিয়ান জানতে চায়,তো আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না
কেন?মেয়েটার চোখ থেকে পানি পড়ছে।আবার কাগজে লিখে
দিল আমি কথা বলতে পারি না।আরিয়ান ও লেখাটা পড়ে
হাটুগেরে বসে পড়ল মেয়েটার সামনে,সে ও কাঁদছে।যাকে পাগলের
মত ভালোবাসল তার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে
পারবে না।মেয়েটা চলে যাচ্ছিল আরিয়ানের কান্না দেখে,ভাবছে
হয়ত সে তাকে ভালোবাসবে না।
.
আরিয়ান পিছন থেকে হাত ধরল মেয়েটার,জানতে চায় এতদিন
পর পেলাম তোমায় আর কিছু না শুনেই চলে যাচ্ছ,কিন্তু আমি
যে তোমায় ভালোবাসি।তুমি কথা বলতে পারোনা ঠিক আছে
কিন্তু মন দিয়ে আমায় ভালোবাসতে তো পারবে?রূপকথা ও
কাঁদছে আরিয়ান ও তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।সত্যিকারের
ভালোবাসা গুলির মাঝে যখন কান্না-কাটি হয় তখন
ভালোবাসার সম্পর্ক আরো গভীর হয়।আজো তারা পাগলের
মত ভালোবাসে একে অপরকে।
.
আরিয়ান লঞ্চের বেলকোনি তে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা গুলি
ভাবছে আর মনের অজান্তে চোখ দিয়ে ভালোবাসার অশ্রু
গড়িয়ে পরছে।আজকে আবার ৩বছর পর তারা দাদু বাড়ি যাচ্ছে
ঈদ করতে।তবে এবার তারা তাদের সাথে নিয়ে যাচ্ছে দুই বছরের
মেয়ে আরথী কে।
.
কোনদিন আরিয়ান ঘুম থেকে উঠে না।বাবা-মায়ের একমাত্র
ছেলে।খুব উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে না,তবে মোটামুটি ঢাকার
শহরে নিজেদের একটা বাড়ি আছে।বাবা একটা বেসরকারি
কম্পানিতে ভালো বেতনেই জব করে।আর আরিয়ান একটা
প্রাইভেট ভার্সিটিতে সি,এস,ই পড়ছে।
.
আজকে সকাল সকাল ডাকার একমাত্র কারন তার বাবা-মায়ের
ইচ্ছা এবার তারা গ্রামের বাড়িতে ঈদ করবে। কোরবানি দিবে
আরিয়ানের দাদা-দাদীর সাথে তাদের গ্রামে।কিন্তু আরিয়ান
যাবে না তার ফ্রেন্ডরা সবাই যে এই ঢাকায় তাই।তবুও মা
বাবার জোড়াজুরিতে যেতে রাজি হয় আরিয়ান।আরিয়ানের
আব্বু খুব সতর্ক লোক,তাই ঠিক করা হল ঈদে বাস বা ট্রেনে
ভিড়ের মধ্যে না গিয়ে লঞ্চে যাবে।ভাড়াটা একটু বেশি পরবে তবু
লঞ্চ এর যাত্রা নিরাপদ,ঝড় বৃষ্টি না হলেই হয়।
.
ঠিক মত বিকালে তারা রওয়না দিবে।বিকাল ৫টায় লঞ্চ ছেড়ে
যাবে।তাদের আগে থেকেই কেবিন নেওয়া ছিল,ভাড়া একটু বেশি
নিছে তবু ঈদ সবাই এক সাথে করতে পারবে এইটাই ভেবেই
অনেক আনন্দ।আরিয়ানের প্রথমে খারাপ লাগলেও পড়ে অনেক
ভালো লাগে।লঞ্চের ছাদে গিয়ে কিছু ছবি তুলে আরিয়ান।
বিকালের হালকা বাতাস,আর খুব মনোরম পরিবেশ আরিয়ানের
মন ভালো করে দিল।কিছু সময় যাবার পড় আরিয়ান নিচে নেমে
কেবিনের দিকে গেল।
.
কিন্তু দেখে তাদের আব্বু,আম্মুর সাথে আরো ৩জন বসা।এক
ভদ্র মহিলা,এক ভদ্রলোক আর একটা মেয়ে।আসলে আরিয়ান
তাকে মেয়ে নাকি পরী বলবে কিনা ভাবছে,কারন মেয়েটার
চুল,চেহারা আর ড্রেসআপ এত সুন্দর ছিল যা আরিয়ান প্রথম
দেখাতেই ভালো লেগে যায়।আরিয়ানের আম্মু পরিচয় করিয়ে
দেয় এই আমার ছেলে আরিয়ান।আর আরিয়ান এই তোমার
অন্টি পাসের কেবিনে উঠছে।তারাও যাচ্ছে আমাদের সাথে একি
লঞ্চে।আরিয়ান খুব খুশি এত লম্বা জার্নি তে একজন মানুষ
পেল যার সাথে গল্প করে যেতে পারবে।
.
কিন্তু আরিয়ান দেখে মেয়েটা কেমন মনমরা হয়ে বসে আছে কথা
বলছে না।আরিয়ান ভাবল হয়ত ভাব দেখাচ্ছে।আরিয়ান ও কিছু
না বলে চলে যায়।কেবিনে গিয়ে মায়ের কাছে জানতে পারে
মেয়েটার নাম রূপকথা,সবাই কথা বলেই ডাকে।সন্ধ্যা গড়িয়ে
রাত নামল,আরিয়ান কফির একটা মগ হাতে নিয়ে বেলকোনি তে
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে।পরিবেশটা অন্ধকারময় হওয়ায়
চারিদিকটা খুব সুন্দর লাগছিল।মাঝে মাঝে মাঝিদের নৌকায়
মিটিমিটি কুপির আলো আর দূরে বড়বড় জাহাজের সাইরেন
আর আলো খুব ভালোই লাগছিল তার।
.
কিছু সময় পর আরিয়ান তার গায়ে আলতো একটা ছোঁয়া
পায়,আসলে একটু অন্ধকার হওয়ায় রূপকথা সাথে আরিয়ানের
ধাক্কা লাগে।আরিয়ান তাকে সরি বলে কিন্তু রূপকথা তার দিকে
তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে ঠিক আছে,আরিয়ান ভাবে
মেয়েটা খুব অহংকারী এত কথা বলতে চাইছে আরিয়ান, তবু তার
সাথে কথা বলছে না।মেয়েটা তার পাশে দাঁড়িয়ে তার দিকে
আড়চোখে তাকাচ্ছে সেইটা আরিয়ান কেবিনের আলোতে
ভালো করেই বুঝতে পারছে।তবু মেয়েটার এত দাম দেখে
আরিয়ান কিছুই বলে না।
.
কিছু সময় পর "কথা" বলে তার মা ডাকদেয়।মেয়েটা ভিতরে চলে
যায়,মিনিট ৩০পর আবার আসে।
আরিয়ান ভাবছে মেয়েটাকে কিছু বলবে,এমন করে থাকলে সে
কিচ্ছু বলতে পারবে না।এই ভাবতে ভাবতে আরিয়ান রূপকথাকে
বলে দেখেন আমি আপনার সাথে একটু কথা বলব প্লিজ আপনি
যাবেন ন আমার পাশ থেকে।আরিয়ান বলে আমি আপনার সাথে
ফ্রেন্ডশিপ করতে চাই।আপনার লজ্জা পাবার দরকার নাই
আপনি কি করবেন ফ্রেন্ডশিপ আমার সাথে?
.
মেয়েটা কিছু না বলেই চলে যায় কেবিনে।কথা হয়না আর
আরিয়ানের সাথে,কিন্তু রাত তখন ১১টা আরিয়ান কেবিনের
সামনের বেলকোনিতে বসে বসে গান শুনছিল এমন সময় তার
ফোনে একটা কল আসে আরিয়ান রিসিব করে,নদীর মধ্যে
হওয়ায় নেটওয়ার্ক তেমন পাওয়া যাচ্ছিল না।আরিয়ান জোড়ে
জোড়ে কথা বলছিল।তার কোন এক ফ্রেন্ড কে বলছে আমার
বাংলালিক সিমে নেট থাকে না তুই আমার জিপি
০১৭৮৩৮১২৭৮......এই নাম্বারে ফোন দিস।
.
কথা বলার শেষে আরিয়ান খেয়াল করে মেয়েটা তাদের
কেবনিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটার কাছে যায় আরিয়ান
কথা বলতে চায়,কিন্তু মেয়েটা একটা কাগজ আরিয়ানের হাতে
ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় মেয়েটা কাগজে লিখে দেয় আমি আপনার
উত্তর দিতে পারব না।আরিয়ান দেখে অনেক রাত,এখন আর
মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করবে না সকালে কথা বলবে।আরিয়ান ঘুম
থেকে উঠল,ব্রাশ করছে তার মা বলছে আমারা ১০টার দিকেই
পিরোজপুর পৌঁছে যাবো,ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নে।
.
আরিয়ানের মনে পরে যায় মেয়েটার কথা।তাড়াতাড়ি কেবিনের
সামনে যায়,কিন্তু একি কেবিনে কেউ নেই।তবে কই
গেল,আরিয়ান পাগলের মত সারা লঞ্চ খুঁজতে লাগে কিন্তু
কোথাও নেই।পরে কেবিন মাস্টারের সাথে কথা বলে জানতে
পারে তারা বরিশালের যাত্রী ছিল।আর লঞ্চ বরিশাল
পৌছাইছিল ভোরের দিকে।আরিয়ানের চোখে জল চলে
আসে,কাউকে ভালোবাসল অতছ বলতে পারল না।
.
পরে মায়ের কাছে জানতে চায় কোন ঠিকানা দিছে কিনা।
আরিয়ানের মা বলে না দেইনি তবে বলছে মগবাজার এলাকার
আশেপাশে থাকে।আরিয়ান কিছুই বলে না শুধু দুচোখ দিয়ে
দূরের জিনিষ গুলি দেখতে দেখতে।তাদের গন্তব্যতে চলে আসে।
আরিয়ান মন খারাপ করেই ঈদ কাটায়,সারাক্ষণ মেয়েটার কথা
ভাবে,কেন বলল না তার সাথে মেয়েটি কথা,খুব ভালোবেসে
ফেলছে মেয়েটাকে।ঈদের ছুটি শেষ করে আরিয়ানের ফ্যামিলি
ঢাকায় চলে আসে।
.
আরিয়ান খুঁজে যাচ্ছে মেয়েটাকে।কিন্তু আজো তার দেখা পেল
না,প্রায় ১০দিন পর আরিয়ানের নাম্বারে একটা অপরিচিত
নাম্বার থেকে কল,রিসিব করে হ্যালো হ্যালো বলছে আরিয়ান
কিন্তু ওই পাস থেকে কিছু সময় পর ফোন কেটে দেয়। একটু পর
এসএমএস আসে আপনি কি আমার সাথে একটু দেখা করতে
পারবেন।আরিয়ান ভাবে কে হবে,সেই মেয়েটা না তো?আবার
ভাবে তা কি করে হয় মেয়েটা তো তার নাম্বার নেয়নি তবে।
আরিয়ান কল দেয় কিন্তু অপর পাশ থেকে ফোন কেটে দেয়।
.
আরিয়ান এসএমএস দেয় কে আপনি?
অপর পাশ থেকে এসএমএস আসে দেখা করে দেখুনতো কে
আমি।
আরিয়ান জানতে চায় কই দেখা করবেন।ঠিক হয় হাতিরঝিলে
ঠিক বিকাল ৫টায়।আরিয়ান এর মনে থাকে না।এসএমএস আসে
বিকাল ৫টায় কই আপনি আসুন আরিয়ানের বাসাও কাছে হওয়ায়
তাড়াতাড়ি যেতে পারে।কিন্তু খুঁজতে খুঁজতে আরিয়ান তাকে পায়
না,যখন ফিরে আসবে তখনই এসএমএস আসে কই চলে যাচ্ছেন
পিছনে তাকান একবার।আরিয়ান দেখে সেই মেয়েটা যাকে সে
লঞ্চে দেখেছিল।আরিয়ান নির্বাক পুতুলের মত দাঁড়িয়ে তাকিয়ে
আছে মেয়েটার দিকে।চোখে জল ছলছল করছে।
.
হটাৎ করেই বলা শুরু করল আরিয়ান সেইদিন আমায় না বলেই
চলে গেলেন কেন,কত খুজছি আমি আপনাকে জানেন কতটা মিস
করছি।আরিয়ান দেখে মেয়েটা এখনো কোন কথা বলছে না।
কিন্তু মেয়েটার হাতে কিছু অফসেট পেপার।আরিয়ান কে একটা
কাগজে লিখে দিল আমি ও আপনাকে অনেক খুজছি।আপনার
নাম্বার অনেক মনে করার ট্রাই করছি কিন্তু সেইদিন রাতে
যখন আপনার ফ্রেন্ডকে নাম্বার বলছিলেন লাস্ট একটা ডিজিট
আমি শুনতে পারি নাই।পরে আমি সেই নাম্বার টার সাথে ১-০
অব্দি একটা একটা করে নাম্বার যোগ করে ফোন দিছি
১০নাম্বারে গিয়ে আপনাকে পাই,আপনার বয়েস শুনে চিনতে
পারি।
.
আরিয়ান জানতে চায়,তো আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না
কেন?মেয়েটার চোখ থেকে পানি পড়ছে।আবার কাগজে লিখে
দিল আমি কথা বলতে পারি না।আরিয়ান ও লেখাটা পড়ে
হাটুগেরে বসে পড়ল মেয়েটার সামনে,সে ও কাঁদছে।যাকে পাগলের
মত ভালোবাসল তার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে
পারবে না।মেয়েটা চলে যাচ্ছিল আরিয়ানের কান্না দেখে,ভাবছে
হয়ত সে তাকে ভালোবাসবে না।
.
আরিয়ান পিছন থেকে হাত ধরল মেয়েটার,জানতে চায় এতদিন
পর পেলাম তোমায় আর কিছু না শুনেই চলে যাচ্ছ,কিন্তু আমি
যে তোমায় ভালোবাসি।তুমি কথা বলতে পারোনা ঠিক আছে
কিন্তু মন দিয়ে আমায় ভালোবাসতে তো পারবে?রূপকথা ও
কাঁদছে আরিয়ান ও তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।সত্যিকারের
ভালোবাসা গুলির মাঝে যখন কান্না-কাটি হয় তখন
ভালোবাসার সম্পর্ক আরো গভীর হয়।আজো তারা পাগলের
মত ভালোবাসে একে অপরকে।
.
আরিয়ান লঞ্চের বেলকোনি তে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা গুলি
ভাবছে আর মনের অজান্তে চোখ দিয়ে ভালোবাসার অশ্রু
গড়িয়ে পরছে।আজকে আবার ৩বছর পর তারা দাদু বাড়ি যাচ্ছে
ঈদ করতে।তবে এবার তারা তাদের সাথে নিয়ে যাচ্ছে দুই বছরের
মেয়ে আরথী কে।
.