02-21-2017, 09:10 AM
ক্লাসটা শেষ করে সবেমাত্র ডিপার্টমেন্টে এসে বসেছে নিশি,
অমনি রিংটোনটা বেজে উঠলো...লেকচার দেওয়ার সময়
ফোনটা অফ রাখা নিয়ম...তাই রেখেছিল নিশি...ক্লাস থেকে
বেরিয়ে বাড়ি থেকে ফোন আসতে পারে মনে করে মোবাইল অন
করেছিল নিশি...স্ক্রিনে ভেষে উঠা নাম্বারটা আননোন তাই
আর ধরা হলোনা...কিছুক্ষণ না যেতেই আবার বেজে উঠলো
ফোনটা...বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে উঠলো নিশির...এই
সময় আবার কে ফোন করল! ধরবো ধরবো বলে এবারও ধরা
হলোনা ফোনটা...
.
ক্লাসের ছেলেগুলো এত দুষ্ট যে মাঝে মাঝে তাদের সামলাতে
প্রচুর বেগ পেতে হয় নিশিকে...সবগুলো ছেলে-মেয়েই
ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ ঘরের...মেয়েগুলো খুব শান্ত, তারা
পড়ালিখা মন দিয়ে করে...ছেলেগুলোও তাই কিন্তু যত সমস্য
ইলেভেন ক্লাসের কিছু ছেলের জন্য...বাদরামি না করলে যেন
তাদের পেটের ভাত হজম হয়না...ছেলেগুলো এতই বদ যে কোন
টিচারের কথাই শুনেনা...পড়াবার সময় শেষ বেঞ্চ থেকে
আওয়াজ দেয়... সেদিন আর্নিকা মেম তাদের সম্পর্কে আমাকে
বলতে গিয়েতো কেদেই দিলেন...নিশির মধ্যে একটা ভরসা
আছে, সেটা তার ব্যক্তিত্ব...নিশি তার অসীম ধৈর্য্যকে কাজে
লাগিয়ে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন...
.
খবরের কাগজটা নিয়ে ঘরের একটা কোনে বসে আছে
নিশি...কিছুক্ষণ পর খবরের কাগজটা সরিয়ে রাখলো
পাশে...চোঁখ-মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই কি নিয়ে এতো চিন্তা
করছে...হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ট্রিং ট্রিং ট্রিং করে...
বেজেই চলেছে কিন্তু নিশি তা তুলার প্রয়োজন মনে
করছেনা...কিছুক্ষণ পর তার মেয়ে এসে ফোনটা নিশির হাতে
দিয়ে আবার চলে যেতে লাগলো...নিশি এক দৃষ্টিতে তার ছোট
মেয়েটার চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখছে...আবার ফোনটা বেজে
উঠাতেই নিশির হুশ ফিরে এলো... এবারও সেই আননোন
নাম্বার...আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ফোনটা রিসিভ করলো
নিশি,,
হ্যালো বলতেই অপাশ থেকে একজন বয়স্ক মহিলার কণ্ঠ ভেষে
এলো...মহিলা তার পূর্বপরিচিত নয়...এক্ষেত্রে অন্যরা যা
করে নিশিও তা-ই করলো...
-পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন করুন?
-মা তুমি আমায় চিনবেনা...আমি তোমার দূর সম্পর্কের
আত্নীয় হই...যাও দেখা হয়েছে তোমার সাথে কিন্তু কথা
হয়নি কখনো...
চেনা নেই জানা নেই একেবারে তুমি করে সম্বোধন করাতে
অবাক হলো নিশি...তার চেয়েও বড় কথা মহিলাটি তেমন কিছু
ক্লিয়ার করেও বলছেননা...মহিলাটি আবার বলতে শুরু করলো,
- আমি তোমার শ্বশুর পক্ষের আত্নীয়...
-কি জন্য ফোন করেছেন?কোন প্রয়োজন?নিজের অজান্তেই
কণ্ঠ নরম হয়ে এলো নিশির...
-প্রয়োজন আমার নয় তোমার...
-মানে কি? আপনার কথার আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা...
-.......................
-আরে কিছু বলছেন না যে?
-তোমার শ্বাশুড়ি ইন্তেকাল করেছেন গত রাত ১১:২৯
মিনিটে...
-কোন শ্বাশুড়ি, কার কথা বলছেন?
-তোমার শ্বাশুড়ি কটা...কবার বিয়ে হয়েছে তোমার...তোমার
শ্বাশুড়ি আমার সম্পর্কে বোন হয়...এই মৃত্যুর সংবাদ
সর্বপ্রথম তোমাকে জানানোই নৈতিক দায়িত্ব মনে
করলাম...
নিশি কিছুক্ষণ ভাবলো, হুম নিশি চিনতে পেরেছে...যে
জীবনটাকে ভুলে থাকার জন্য অবিরাম নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে
গেছে নিশি, সে জীবনটা আবার সামনে এসে দাঁড়াল আজ...কি
মোহময় আর কী নিষ্ঠুর সে জীবন...
.
কি দরকার ছিল সেই মহিলার তার শ্বাশুড়ির মৃত্যুর খবরটা
জানানো.. যেখানে তার ঘনিষ্ট জনেরাই এই সংবাদ জানানোর
প্রয়োজন মনে করলোনা..এই সব কথা চিন্তা করতে করতেই
আগের জীবনে ফিরে গেলো নিশি..
কি সুন্দর ভাবেই না তাহসানের সাথে জীবনটা শুরু হয়েছিল
নিশির...বছর দেড়েক কি আনন্দেই না কেটেছিল তার...কিন্তু
সেই আনন্দ বেশিদিন স্হায়ী হয়নি তার একমাত্র কারণ তার
শ্বাশুড়ি...নিশি
র শ্বাশুড়ি হোসনে আরাই এক সময় নিশির দাম্পত্য জীবনে
কাটা ছড়াতে শুরু করে..নিশি তার দাম্পত্য জীবন শেষ অবধি
ধরে রাখতে চাইলেও শ্বাশুড়ির কারণে তা আর সম্ভব হয়ে
উঠেনি..তাহসানও একসময় মায়ের সাথে মিশেছিল..অথচ নিশিই
তার শাশুড়ির পছন্দ করা পুত্রবধূ...
.
ফয়েজ আহমেদ লেনের গ্রীণ হাউসের ২৯ নম্বর বাড়িটাতে
থাকত নিশিরা...নিশিরা মানে নিশি, বাবা, মা এবং একমাত্র
ভাই আকিব...বাড়িটা নিশির খুব প্রিয়...তারা থাকত বাড়ির
দোতালায়...বাড়ান্দাটা খোলামেলা হওয়ায় প্রচুর আলো
বাতাস ঢুকতো...বারান্দায় দাড়িয়ে ঘরের পাশের আম গাছটায়
পাখি দেখতো নিশি...নিশির খুব ভালো লাগে পাখি...
·
আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি...নিশি বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টি
দেখছে আনমনে...বৃষ্টিতে ভিজতে নিশির খুব ভালো লাগে...
কিছুক্ষণ পর মা এসে বললো তাড়াতাড়া রেডি হয়ে নিতে
স্কুলের জন্য দেরি হয়ে যাবেতো...আমি তোকে স্কুলে দিয়ে
কাজে যেতে হবে...আমি মায়ের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে
বলতে লাগলাম,,,
-আমি একা যেতে পারবো স্কুলে...মা আমি এখন ক্লাস নাইনে
পড়ি...আমাকে আর কত কাল ছোট বানিয়ে রাখবে তোমরা...
-তোর বড় হওয়ার জন্যই তো আমাদের যত দুশ্চিন্তা...
-অবাক চোখে নিশি বললো, "তোমার কথার মাথামুন্ডু কিছুই
বুঝছিনা...
-তোর অতসব বুঝা লাগবেনা মা...তোর বুঝার বয়স এখনো
হয়নি...মা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কি যেন চিন্তা
করলেন পরে বললেন ঠিকাছে যা রেডি হয়ে নেয়...তবে সাবধানে
যাস...যাওয়ার আগে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে রিস্কায় চলে যেতে
বললেন...আমি রেডি হয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম...
.
নিশিদের গলির লেনটা খুব বেশি একটা প্রশস্ত নয়...দুটো
রিস্কা পাসাপাশি ক্রস করতে পারলেও দুটো কার তা করতে
পারবেনা...বৃষ্ট
ির জন্য গলিতে রিস্কা পাওয়া না যাওয়ায় মেইন রোড বরাবর
হাটতে লাগলো নিশি...গলির দুপাশে নানা রকমের
বাড়ি...নিশি সেইসব বাড়ি দেখতে দেখতে সামনে এগোতে
লাগলো...নিশি আজও সেই বিলাশবহুল বাড়িটা দেখতে
পেল...বাড়ি না বলে প্রাসাদ বলাই ভাল...খালি তাকিয়ে থাকতে
ইচ্ছে করে...নিশি বাড়িটা দেখতে দেখতে এগুতে লাগলো...যখন
নিশি গেইটের কাছে বরাবর আসলো হঠাৎ একটি কার এসে
হার্ড ব্রেক করলো...ভাগ্য ভালো যে কিছু হয়নি
নিশির...আর একটু হলে হয়তো নিশিকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া
লাগতো...বৃষ্টির দিন হওয়ায় রাস্তার পাশে গর্তে কিছুটা পানি
এসে জমা হয়ে গিয়েছিল...সেখানে যে পানি জমা হয়েছিল কার
এর চাকায় হার্ড ব্রেক করবার সময় সেই পানিগুলো সব নিশির
গায়ে পড়লো...নিশি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কারের
দিকে...নিশির এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছেনা...সে কি
এখন কান্না করবে...কিছুক্ষণ পর কার এর ভিতর থেকে এক
সুদর্শন ছেলে বেরিয়ে এলো...বয়স নিশির চেয়ে খুব বেশি একটা
হবেনা...
ছেলেটি কাছে এসে কাকুতিভরা দৃষ্টি নিয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে
বলেছিল সরি...ডাইবার আসলে বুঝতে পারেনি, হঠাৎ আপনি
গাড়ির সামনে এসে পড়বেন...আপনি কাদবেননা প্লীজ...
নিশি ছেলেটির কথা শুনে চোঁখে হাত দিয়েই দেখতে পেল সত্যি
তার চোঁখে পানি...পরক্ষণেই আবার হাসি পেল নিশির কেননা
তাকে কেউ কখনো আপনি করে বলেনা...সবাই তুই তুমি করে
কথা বলে...ছেলেটির বোধ হয় সেদিন খুব তাড়া ছিল তাই আর
সে একমুহূর্ত দেরি না করে কারে সেখান থেকে চলে
গেল...যাওয়ার আগে তার নামটি বলে গেল, "তাহসান"...
.
তাহসানের সেদিন অ্যাকাউন্টিং সেকেন্ড পেপারের পরীক্ষা
ছিল...পরীক্ষার খাতায় লিখার সময় সকালের কথা মানে
মেয়েটির কথা বারে বারে মনে পড়ছিল তাহসানের...কি নিষ্পাপ
সে চেহেরায়...যেন ভাজা মাজটা উল্টে খেতে জানেনা...তাহসান
ের অবশ্য খারাপ লাগছিল কারণ মেয়েটিকে তার কার ভিজিয়ে
দিয়েছিল...যদি মেয়েটির আজ পরীক্ষা থাকে তাহলে কি
হবে...মেয়েটিক সে চেনেনা, কোন বাড়িতে থাকে তাও
জানেনা...যেহুতু গলি থেকে বের হয়েছিল, হয়তো সেখানেই তার
বাসা...
.
সেদিন বাসায় যাওয়ার পর মা জিজ্ঞেস করেছিল স্কুলে না
যাওয়ার কারণ...নিশি গলিতে রিস্কা না পেয়ে মেইন রোডে
যাওয়ার সময় পিছলা খেয়ে পড়ে যাওয়ায় জামা ভিজে গিয়েছিল
বলে মাকে জানায়...ভিজা জামায়তো আর স্কুলে যাওয়া
যায়না... তাহসানের ঘটনাটা নিশি চেপে যায়...
এখন মাঝে মাঝেই তাহসানের সাথে দেখা হয়...প্রথম প্রথম যে
নিশি সাড়াটাড়া দিত, তা কিন্তু নয়...একটু মুখ তুলে তাকানো,
একটু মিষ্টি করে হাসা-এসবের বাইরে তেমন কিছু ঘটেনি নিশির
জীবনে...নিশি আসলে প্রেমট্রেমের বিষয়টি ভালো করে
বুঝতোনা তখন...মাঝে মাঝেই তাহসানকে সে দেখতো চুপটি
করে দাড়িয়ে আছে...নিশি তাতে ভয় পেতনা, উল্টো মায়া
হতো তার জন্য...আস্তে আস্তে নিশিও তাকে সাড়া দিতে শুরু
করে...নিশি এখন তাহসানকে দেখলেই হাসে...তাহসানও হাসির
রং দেখে বুঝে গিয়েছিল নিশি তাকে পছন্দ করে...
.
দু বছর হতে চললো নিশির বিয়ে হয়েছে...চার বছর প্রেম
করবার পরেই বিয়ে হয়েছে তার আর তাহসানের...নিশির যদিও
জানতোনা এত বড় বাড়িতে সে পুত্রবধূ হয়ে আসবে
কিনা...নিশির সৌভাগ্যই বলতে হবে... নিশি খুব সুখেই
আছে...নিশির স্বামি নিশিকে এতো ভালোবাসে যে গায়ে
একটা আর্চ পরতে দেয়নি কখনো...নিশির স্বাশুড়ি যখন
জানতে পারে তার ছেলে নিশিকে পছন্দ করে তিনি তাতে অমত
করেননি...বরং তিনি খুশি হয়েছিলেন...নিশি বাড়ির কোনো
কাজ করতে পারে না কারণ শ্বাশুড়ির কড়া আদেশ...নিশি কাজে
হাত দিলে তার শ্বাশুড়ির একটাই কথা, তুমি কেনো কাজ করবে
মা...ঘরে যে ত্রিশজন কাজের লোক আছে তাদের কেনো রাখা
হলো তাহলে মাইনে দিয়ে...তাও নিশি কাজ করে, আসলে কাজ
করতে তার ভালই লাগে...তাহসান তাকে প্রায়ই ঘুরতে নিয়ে যায়
বিভিন্ন জায়গায়...নিশি মাঝে মাঝে ভাবে এতো সুখ কি করবে
সে...সে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর কাছে এতো সুখ দেওয়ার
জন্য ধন্যবাদ জানায়...
.
আসলে বেশি সুখ কারো জীবনেই সহ্য হয়না তাই হয়তো আজ
নিশির এই অবস্হা...বিয়ের দুবছর পর্যন্ত বেশ সুখেই চলছিল
কিন্তু নিশির বেবি হওয়ার পর সব বদলে গেলো...তার কারণ
নিশি একটি মেয়ের জন্ম দিয়েছে...নিশিকে এখন তার শ্বাশুড়ি
একদম দেখতে পারেনা বললেই চলে...তার শ্বাশুড়ির একটিই
কথা সে কেন মেয়ে শিশু জন্ম দিল...নিশির শ্বশুর বেশির ভাগ
সময় দেশের বাইরে থাকে কাজ নিয়ে...দেশে বলতে গেলে থাকাই
হয়না...নিশির শ্বশুর নিশিকে খুব আদর করেন...নিশি যা চান
তাই এনে দেন...মোট কথা তাকে নিজের মেয়ের মতো করে
দেখেন...তার শ্বাশুড়িও তাকে মেয়ের মতো দেখতো কিন্তু
এখন হয়তো মানুষ মনে করেনা...নিশি এখন বাড়ির কাজ
করলেও বলেনা কেন কাজ করছো মা...নিশি মুখ বুজে সব সহ্য
করে...তার স্বামী তাহসানও এখন মায়ের পক্ষে...নিশিকে ঠিক
মত সময় দেয়না এখন...এমনকি তার নিজের মেয়েকে পর্যন্ত
কোলে নেয়না...নিশিও কিছু বলেনা এখন...চুপ করে মেয়েকে
নিয়েই তার সময় কাটে...কিছুদিন ধরে নিশি লক্ষ করছে তার
স্বামি রাত করে বাড়ি ফিরছে...জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলেনা
উল্টো ঝগড়া করে তার সাথে...নিশি প্রায় ভাবে এই কি তার
সেই তাহসান...একদিন সকালে নিশি ঘর পরিষ্কার করার সময়
খাটের নিচে কিছু জিনিস পায়...সে জিনিসগুলো কি তা সিওর
হওয়ার জন্য একজনকে দেখায়...এবং যা শুনে তা সে বিশ্বাস
করতে পারেনা...এগুলো সব নেশাজাত দ্রব্য...সেদিন খবরের
রিপোর্টার গাজা বলে যা দেখিয়েছিল, এগুলো তো হুবহু সে
রকমই...গাজার সাথে আর দেখতে পেল গাছের শিকড়ের মতোন
কিছু একটা...তাহলে তাহসান গাজা ধরেছে?
তাইতো তাহসানের মাথা বিগড়ে গিয়েছিল...পরের দিন এই সব
কিছু তাহসানকে দেখালে তাহসান রাগের চোটে সেদিন প্রথম
নিশির গায়ে হাত তুলে...নিশি সেদিন খুব কান্না
করেছিল...পরের দিন ভোরের দিকে নিশি তার দেড় মাসের
মেয়েটিকে নিয়ে অনেক দূর চলে যায়...সবার সাথে যোগাযোগ
বন্ধ করে দেয় এমন কি বাপের বাড়ির মানুষের সাথেও...দরকার
ছাড়া বাপের বাড়ির কারো সাথে কোনো কথা হতোনা
নিশির...কারণ নিশি কারো বোঝা হতে চায়না...
.
নিশির মেয়ে সামাহার বয়স এখন ৭ বছর...মেয়েকে নিয়ে ভালই
যাচ্ছে দিনকাল...মেয়ে মাঝে মাঝে বাবার কথা জিজ্ঞেস
করে...নিশি কোনো উত্তর দেয়না...তবে একটা কথা নিয়ে
নিশি এখনো চিন্তিত...যে মহিলা তাকে তার শ্বাশুড়ির মৃত্যুর
সংবাদ দিলো...তার কি জাওয়া উচিত সেখনে...মনে মনে ভাবে
নিশি,তার শ্বাশুড়ির যে লাশটা আছে সেখানে তা দয়ামায়াহীন,
অত্যাচারী এক মহিলা...নিশি মেয়েকে নিয়ে যাবে বলে স্হির
করে ফেলেছে... তবে মুখ দেখবে নাকি ঘৃণায় এক দলা থুথু ছিটিয়ে
আসবে...ঘরে বসে এখনো ভেবেই চলেছে নিশি...
অমনি রিংটোনটা বেজে উঠলো...লেকচার দেওয়ার সময়
ফোনটা অফ রাখা নিয়ম...তাই রেখেছিল নিশি...ক্লাস থেকে
বেরিয়ে বাড়ি থেকে ফোন আসতে পারে মনে করে মোবাইল অন
করেছিল নিশি...স্ক্রিনে ভেষে উঠা নাম্বারটা আননোন তাই
আর ধরা হলোনা...কিছুক্ষণ না যেতেই আবার বেজে উঠলো
ফোনটা...বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে উঠলো নিশির...এই
সময় আবার কে ফোন করল! ধরবো ধরবো বলে এবারও ধরা
হলোনা ফোনটা...
.
ক্লাসের ছেলেগুলো এত দুষ্ট যে মাঝে মাঝে তাদের সামলাতে
প্রচুর বেগ পেতে হয় নিশিকে...সবগুলো ছেলে-মেয়েই
ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ ঘরের...মেয়েগুলো খুব শান্ত, তারা
পড়ালিখা মন দিয়ে করে...ছেলেগুলোও তাই কিন্তু যত সমস্য
ইলেভেন ক্লাসের কিছু ছেলের জন্য...বাদরামি না করলে যেন
তাদের পেটের ভাত হজম হয়না...ছেলেগুলো এতই বদ যে কোন
টিচারের কথাই শুনেনা...পড়াবার সময় শেষ বেঞ্চ থেকে
আওয়াজ দেয়... সেদিন আর্নিকা মেম তাদের সম্পর্কে আমাকে
বলতে গিয়েতো কেদেই দিলেন...নিশির মধ্যে একটা ভরসা
আছে, সেটা তার ব্যক্তিত্ব...নিশি তার অসীম ধৈর্য্যকে কাজে
লাগিয়ে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন...
.
খবরের কাগজটা নিয়ে ঘরের একটা কোনে বসে আছে
নিশি...কিছুক্ষণ পর খবরের কাগজটা সরিয়ে রাখলো
পাশে...চোঁখ-মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই কি নিয়ে এতো চিন্তা
করছে...হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ট্রিং ট্রিং ট্রিং করে...
বেজেই চলেছে কিন্তু নিশি তা তুলার প্রয়োজন মনে
করছেনা...কিছুক্ষণ পর তার মেয়ে এসে ফোনটা নিশির হাতে
দিয়ে আবার চলে যেতে লাগলো...নিশি এক দৃষ্টিতে তার ছোট
মেয়েটার চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখছে...আবার ফোনটা বেজে
উঠাতেই নিশির হুশ ফিরে এলো... এবারও সেই আননোন
নাম্বার...আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ফোনটা রিসিভ করলো
নিশি,,
হ্যালো বলতেই অপাশ থেকে একজন বয়স্ক মহিলার কণ্ঠ ভেষে
এলো...মহিলা তার পূর্বপরিচিত নয়...এক্ষেত্রে অন্যরা যা
করে নিশিও তা-ই করলো...
-পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন করুন?
-মা তুমি আমায় চিনবেনা...আমি তোমার দূর সম্পর্কের
আত্নীয় হই...যাও দেখা হয়েছে তোমার সাথে কিন্তু কথা
হয়নি কখনো...
চেনা নেই জানা নেই একেবারে তুমি করে সম্বোধন করাতে
অবাক হলো নিশি...তার চেয়েও বড় কথা মহিলাটি তেমন কিছু
ক্লিয়ার করেও বলছেননা...মহিলাটি আবার বলতে শুরু করলো,
- আমি তোমার শ্বশুর পক্ষের আত্নীয়...
-কি জন্য ফোন করেছেন?কোন প্রয়োজন?নিজের অজান্তেই
কণ্ঠ নরম হয়ে এলো নিশির...
-প্রয়োজন আমার নয় তোমার...
-মানে কি? আপনার কথার আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা...
-.......................
-আরে কিছু বলছেন না যে?
-তোমার শ্বাশুড়ি ইন্তেকাল করেছেন গত রাত ১১:২৯
মিনিটে...
-কোন শ্বাশুড়ি, কার কথা বলছেন?
-তোমার শ্বাশুড়ি কটা...কবার বিয়ে হয়েছে তোমার...তোমার
শ্বাশুড়ি আমার সম্পর্কে বোন হয়...এই মৃত্যুর সংবাদ
সর্বপ্রথম তোমাকে জানানোই নৈতিক দায়িত্ব মনে
করলাম...
নিশি কিছুক্ষণ ভাবলো, হুম নিশি চিনতে পেরেছে...যে
জীবনটাকে ভুলে থাকার জন্য অবিরাম নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে
গেছে নিশি, সে জীবনটা আবার সামনে এসে দাঁড়াল আজ...কি
মোহময় আর কী নিষ্ঠুর সে জীবন...
.
কি দরকার ছিল সেই মহিলার তার শ্বাশুড়ির মৃত্যুর খবরটা
জানানো.. যেখানে তার ঘনিষ্ট জনেরাই এই সংবাদ জানানোর
প্রয়োজন মনে করলোনা..এই সব কথা চিন্তা করতে করতেই
আগের জীবনে ফিরে গেলো নিশি..
কি সুন্দর ভাবেই না তাহসানের সাথে জীবনটা শুরু হয়েছিল
নিশির...বছর দেড়েক কি আনন্দেই না কেটেছিল তার...কিন্তু
সেই আনন্দ বেশিদিন স্হায়ী হয়নি তার একমাত্র কারণ তার
শ্বাশুড়ি...নিশি
র শ্বাশুড়ি হোসনে আরাই এক সময় নিশির দাম্পত্য জীবনে
কাটা ছড়াতে শুরু করে..নিশি তার দাম্পত্য জীবন শেষ অবধি
ধরে রাখতে চাইলেও শ্বাশুড়ির কারণে তা আর সম্ভব হয়ে
উঠেনি..তাহসানও একসময় মায়ের সাথে মিশেছিল..অথচ নিশিই
তার শাশুড়ির পছন্দ করা পুত্রবধূ...
.
ফয়েজ আহমেদ লেনের গ্রীণ হাউসের ২৯ নম্বর বাড়িটাতে
থাকত নিশিরা...নিশিরা মানে নিশি, বাবা, মা এবং একমাত্র
ভাই আকিব...বাড়িটা নিশির খুব প্রিয়...তারা থাকত বাড়ির
দোতালায়...বাড়ান্দাটা খোলামেলা হওয়ায় প্রচুর আলো
বাতাস ঢুকতো...বারান্দায় দাড়িয়ে ঘরের পাশের আম গাছটায়
পাখি দেখতো নিশি...নিশির খুব ভালো লাগে পাখি...
·
আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি...নিশি বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টি
দেখছে আনমনে...বৃষ্টিতে ভিজতে নিশির খুব ভালো লাগে...
কিছুক্ষণ পর মা এসে বললো তাড়াতাড়া রেডি হয়ে নিতে
স্কুলের জন্য দেরি হয়ে যাবেতো...আমি তোকে স্কুলে দিয়ে
কাজে যেতে হবে...আমি মায়ের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে
বলতে লাগলাম,,,
-আমি একা যেতে পারবো স্কুলে...মা আমি এখন ক্লাস নাইনে
পড়ি...আমাকে আর কত কাল ছোট বানিয়ে রাখবে তোমরা...
-তোর বড় হওয়ার জন্যই তো আমাদের যত দুশ্চিন্তা...
-অবাক চোখে নিশি বললো, "তোমার কথার মাথামুন্ডু কিছুই
বুঝছিনা...
-তোর অতসব বুঝা লাগবেনা মা...তোর বুঝার বয়স এখনো
হয়নি...মা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কি যেন চিন্তা
করলেন পরে বললেন ঠিকাছে যা রেডি হয়ে নেয়...তবে সাবধানে
যাস...যাওয়ার আগে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে রিস্কায় চলে যেতে
বললেন...আমি রেডি হয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম...
.
নিশিদের গলির লেনটা খুব বেশি একটা প্রশস্ত নয়...দুটো
রিস্কা পাসাপাশি ক্রস করতে পারলেও দুটো কার তা করতে
পারবেনা...বৃষ্ট
ির জন্য গলিতে রিস্কা পাওয়া না যাওয়ায় মেইন রোড বরাবর
হাটতে লাগলো নিশি...গলির দুপাশে নানা রকমের
বাড়ি...নিশি সেইসব বাড়ি দেখতে দেখতে সামনে এগোতে
লাগলো...নিশি আজও সেই বিলাশবহুল বাড়িটা দেখতে
পেল...বাড়ি না বলে প্রাসাদ বলাই ভাল...খালি তাকিয়ে থাকতে
ইচ্ছে করে...নিশি বাড়িটা দেখতে দেখতে এগুতে লাগলো...যখন
নিশি গেইটের কাছে বরাবর আসলো হঠাৎ একটি কার এসে
হার্ড ব্রেক করলো...ভাগ্য ভালো যে কিছু হয়নি
নিশির...আর একটু হলে হয়তো নিশিকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া
লাগতো...বৃষ্টির দিন হওয়ায় রাস্তার পাশে গর্তে কিছুটা পানি
এসে জমা হয়ে গিয়েছিল...সেখানে যে পানি জমা হয়েছিল কার
এর চাকায় হার্ড ব্রেক করবার সময় সেই পানিগুলো সব নিশির
গায়ে পড়লো...নিশি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কারের
দিকে...নিশির এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছেনা...সে কি
এখন কান্না করবে...কিছুক্ষণ পর কার এর ভিতর থেকে এক
সুদর্শন ছেলে বেরিয়ে এলো...বয়স নিশির চেয়ে খুব বেশি একটা
হবেনা...
ছেলেটি কাছে এসে কাকুতিভরা দৃষ্টি নিয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে
বলেছিল সরি...ডাইবার আসলে বুঝতে পারেনি, হঠাৎ আপনি
গাড়ির সামনে এসে পড়বেন...আপনি কাদবেননা প্লীজ...
নিশি ছেলেটির কথা শুনে চোঁখে হাত দিয়েই দেখতে পেল সত্যি
তার চোঁখে পানি...পরক্ষণেই আবার হাসি পেল নিশির কেননা
তাকে কেউ কখনো আপনি করে বলেনা...সবাই তুই তুমি করে
কথা বলে...ছেলেটির বোধ হয় সেদিন খুব তাড়া ছিল তাই আর
সে একমুহূর্ত দেরি না করে কারে সেখান থেকে চলে
গেল...যাওয়ার আগে তার নামটি বলে গেল, "তাহসান"...
.
তাহসানের সেদিন অ্যাকাউন্টিং সেকেন্ড পেপারের পরীক্ষা
ছিল...পরীক্ষার খাতায় লিখার সময় সকালের কথা মানে
মেয়েটির কথা বারে বারে মনে পড়ছিল তাহসানের...কি নিষ্পাপ
সে চেহেরায়...যেন ভাজা মাজটা উল্টে খেতে জানেনা...তাহসান
ের অবশ্য খারাপ লাগছিল কারণ মেয়েটিকে তার কার ভিজিয়ে
দিয়েছিল...যদি মেয়েটির আজ পরীক্ষা থাকে তাহলে কি
হবে...মেয়েটিক সে চেনেনা, কোন বাড়িতে থাকে তাও
জানেনা...যেহুতু গলি থেকে বের হয়েছিল, হয়তো সেখানেই তার
বাসা...
.
সেদিন বাসায় যাওয়ার পর মা জিজ্ঞেস করেছিল স্কুলে না
যাওয়ার কারণ...নিশি গলিতে রিস্কা না পেয়ে মেইন রোডে
যাওয়ার সময় পিছলা খেয়ে পড়ে যাওয়ায় জামা ভিজে গিয়েছিল
বলে মাকে জানায়...ভিজা জামায়তো আর স্কুলে যাওয়া
যায়না... তাহসানের ঘটনাটা নিশি চেপে যায়...
এখন মাঝে মাঝেই তাহসানের সাথে দেখা হয়...প্রথম প্রথম যে
নিশি সাড়াটাড়া দিত, তা কিন্তু নয়...একটু মুখ তুলে তাকানো,
একটু মিষ্টি করে হাসা-এসবের বাইরে তেমন কিছু ঘটেনি নিশির
জীবনে...নিশি আসলে প্রেমট্রেমের বিষয়টি ভালো করে
বুঝতোনা তখন...মাঝে মাঝেই তাহসানকে সে দেখতো চুপটি
করে দাড়িয়ে আছে...নিশি তাতে ভয় পেতনা, উল্টো মায়া
হতো তার জন্য...আস্তে আস্তে নিশিও তাকে সাড়া দিতে শুরু
করে...নিশি এখন তাহসানকে দেখলেই হাসে...তাহসানও হাসির
রং দেখে বুঝে গিয়েছিল নিশি তাকে পছন্দ করে...
.
দু বছর হতে চললো নিশির বিয়ে হয়েছে...চার বছর প্রেম
করবার পরেই বিয়ে হয়েছে তার আর তাহসানের...নিশির যদিও
জানতোনা এত বড় বাড়িতে সে পুত্রবধূ হয়ে আসবে
কিনা...নিশির সৌভাগ্যই বলতে হবে... নিশি খুব সুখেই
আছে...নিশির স্বামি নিশিকে এতো ভালোবাসে যে গায়ে
একটা আর্চ পরতে দেয়নি কখনো...নিশির স্বাশুড়ি যখন
জানতে পারে তার ছেলে নিশিকে পছন্দ করে তিনি তাতে অমত
করেননি...বরং তিনি খুশি হয়েছিলেন...নিশি বাড়ির কোনো
কাজ করতে পারে না কারণ শ্বাশুড়ির কড়া আদেশ...নিশি কাজে
হাত দিলে তার শ্বাশুড়ির একটাই কথা, তুমি কেনো কাজ করবে
মা...ঘরে যে ত্রিশজন কাজের লোক আছে তাদের কেনো রাখা
হলো তাহলে মাইনে দিয়ে...তাও নিশি কাজ করে, আসলে কাজ
করতে তার ভালই লাগে...তাহসান তাকে প্রায়ই ঘুরতে নিয়ে যায়
বিভিন্ন জায়গায়...নিশি মাঝে মাঝে ভাবে এতো সুখ কি করবে
সে...সে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর কাছে এতো সুখ দেওয়ার
জন্য ধন্যবাদ জানায়...
.
আসলে বেশি সুখ কারো জীবনেই সহ্য হয়না তাই হয়তো আজ
নিশির এই অবস্হা...বিয়ের দুবছর পর্যন্ত বেশ সুখেই চলছিল
কিন্তু নিশির বেবি হওয়ার পর সব বদলে গেলো...তার কারণ
নিশি একটি মেয়ের জন্ম দিয়েছে...নিশিকে এখন তার শ্বাশুড়ি
একদম দেখতে পারেনা বললেই চলে...তার শ্বাশুড়ির একটিই
কথা সে কেন মেয়ে শিশু জন্ম দিল...নিশির শ্বশুর বেশির ভাগ
সময় দেশের বাইরে থাকে কাজ নিয়ে...দেশে বলতে গেলে থাকাই
হয়না...নিশির শ্বশুর নিশিকে খুব আদর করেন...নিশি যা চান
তাই এনে দেন...মোট কথা তাকে নিজের মেয়ের মতো করে
দেখেন...তার শ্বাশুড়িও তাকে মেয়ের মতো দেখতো কিন্তু
এখন হয়তো মানুষ মনে করেনা...নিশি এখন বাড়ির কাজ
করলেও বলেনা কেন কাজ করছো মা...নিশি মুখ বুজে সব সহ্য
করে...তার স্বামী তাহসানও এখন মায়ের পক্ষে...নিশিকে ঠিক
মত সময় দেয়না এখন...এমনকি তার নিজের মেয়েকে পর্যন্ত
কোলে নেয়না...নিশিও কিছু বলেনা এখন...চুপ করে মেয়েকে
নিয়েই তার সময় কাটে...কিছুদিন ধরে নিশি লক্ষ করছে তার
স্বামি রাত করে বাড়ি ফিরছে...জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলেনা
উল্টো ঝগড়া করে তার সাথে...নিশি প্রায় ভাবে এই কি তার
সেই তাহসান...একদিন সকালে নিশি ঘর পরিষ্কার করার সময়
খাটের নিচে কিছু জিনিস পায়...সে জিনিসগুলো কি তা সিওর
হওয়ার জন্য একজনকে দেখায়...এবং যা শুনে তা সে বিশ্বাস
করতে পারেনা...এগুলো সব নেশাজাত দ্রব্য...সেদিন খবরের
রিপোর্টার গাজা বলে যা দেখিয়েছিল, এগুলো তো হুবহু সে
রকমই...গাজার সাথে আর দেখতে পেল গাছের শিকড়ের মতোন
কিছু একটা...তাহলে তাহসান গাজা ধরেছে?
তাইতো তাহসানের মাথা বিগড়ে গিয়েছিল...পরের দিন এই সব
কিছু তাহসানকে দেখালে তাহসান রাগের চোটে সেদিন প্রথম
নিশির গায়ে হাত তুলে...নিশি সেদিন খুব কান্না
করেছিল...পরের দিন ভোরের দিকে নিশি তার দেড় মাসের
মেয়েটিকে নিয়ে অনেক দূর চলে যায়...সবার সাথে যোগাযোগ
বন্ধ করে দেয় এমন কি বাপের বাড়ির মানুষের সাথেও...দরকার
ছাড়া বাপের বাড়ির কারো সাথে কোনো কথা হতোনা
নিশির...কারণ নিশি কারো বোঝা হতে চায়না...
.
নিশির মেয়ে সামাহার বয়স এখন ৭ বছর...মেয়েকে নিয়ে ভালই
যাচ্ছে দিনকাল...মেয়ে মাঝে মাঝে বাবার কথা জিজ্ঞেস
করে...নিশি কোনো উত্তর দেয়না...তবে একটা কথা নিয়ে
নিশি এখনো চিন্তিত...যে মহিলা তাকে তার শ্বাশুড়ির মৃত্যুর
সংবাদ দিলো...তার কি জাওয়া উচিত সেখনে...মনে মনে ভাবে
নিশি,তার শ্বাশুড়ির যে লাশটা আছে সেখানে তা দয়ামায়াহীন,
অত্যাচারী এক মহিলা...নিশি মেয়েকে নিয়ে যাবে বলে স্হির
করে ফেলেছে... তবে মুখ দেখবে নাকি ঘৃণায় এক দলা থুথু ছিটিয়ে
আসবে...ঘরে বসে এখনো ভেবেই চলেছে নিশি...