02-22-2017, 12:15 AM
গল্পঃ আজ বসন্ত
.
লিখাঃ Al Farabee (ক্যাপ্টেন ফারাবী)
.
ইরি,কষ্টের রং কেমন?
নীল?
নীল তো আকাশেরও রং আবার সাগর জলেরও।
আকাশ কি কষ্ট পায়?
সাগর কে কি কষ্ট ছুঁয়ে দেয়?
আমি তো নীল না।
তবে আমাকে কেনো তুমি নীল মানুষে রুপান্তরিত করলে?
ইরি, মনে কি পড়ে না রে.....?
সেই ভরদুপুরে বৃষ্টি নামানো দিনের কথা?
রৌদ্রজ্জ্বল দিনেও ভালোবেসে বৃষ্টি নামাতাম আমরা।
কিংবা, সন্ধ্যার আলোছায়ায় আকাশ রাঙ্গানো স্মৃতি কি উঁকি দেয়না তোমার মনে?
সব কি ভুলেই গেলে তুমি?
আহ্ হা.....
এই তুমিই তো ইরি,হ্যাঁ শুধু তুমিই একদিন কুয়াশাভেজা ঘাসের বুক মাড়িয়ে আমার হৃদয় নাড়িয়ে এঁকেছো কত জলছবি!
নদীর মাঝে জেগে উঠা কোনো চরে তখন রোদ হাঁসতো।
আমি তুমি বাতাসে ভিজে রোদের টুকরো কুড়াতাম।
তুমি হুট হাট করেই হেঁসে উঠতে।
আচ্ছা ইরি?
তুমি কি দেখতে পাওনি সেদিনের কাঁশবন?
তোমার হাঁসিতে মুগ্ধ হয়ে ভালোবেসে তারা যে জানিয়েছিলো তোমায় অভিবাদন!
না,দেখো নি তুমি!
তোমার কি আদৌ সে চোখ ছিলো?
নীল আকাশে বাতাসের ঢেউ কিংবা দূর সাগরের ক্ষুধার্ত চিৎকার শুধুই আমার জন্য।
তুমি ওসবের স্রষ্টা,
গ্রহীতা নও।
গ্রহীতা তো আমি!
ভালোবেসে বানিয়েছি ঘর,
হালকা বাতাসেই হলো নড়চড়।
বুকে শূন্য এক বালুচর,
কতদূর তুমি আজ কত পর?
.
এতক্ষন জীবন নামক ডায়েরীর একটা পাতার স্মৃতিচারণ করেছিলাম।
যার কেন্দ্রে ইরি আর ব্যাস আমি।
সেদিন যখন তাকে দেখেছিলাম,
আজও ভুলতে পারিনা সে স্মৃতি।
বিকেলের সোনা রোদে তাকে সোনার মেয়ে মনে হয়েছিলো।
আসন্ন বিকেলে বিষন্ন আমাকে সে নীলারণ্যে পৌঁছে দিয়েছে।
দাড়িয়ে ছিলো ইরি সেদিন আমাদের ছাদে।
কথা হয়নি, দেখেই নিচে চলে এলাম।
বুকটা ধুক ধুক করতে ছিলো।
কে এই মেয়ে?
আমার বাসার কারো রিলেটিভ নাকি ভাড়াটিয়া?
এতো রূপও কারো হয়?
ও রূপ, রূপ গো?
তুই এতো মোহনীয় কেনো রে?
সারাটা সন্ধ্যা সারাটা রাত ঘুমাতে পারিনি।
পরদিন বিকেলে আবার ছাদে গেলাম।
আজও দেখেছি তাকে,
গোধূলি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
এগিয়ে গিয়েছিলাম আমি তার পানে,
হালকা মিষ্টি চুলের গন্ধে আমি বিমোহিত।
পেছনে দাড়িয়েই গলা খাঁকাড়ি দিলাম।
.
---- এহেম, এহেম...... (আমি)
---- জ্বী,কে? (ইরি)
---- আমি ফারাবী,আল-ফারাবী।
---- ওহ্,এই বাড়ির বড় ছেলে।
---- চেনেন আমাকে?
---- না চিনিনা, তবে জানি।
---- কি জানেন?
---- আপনি আমেরিকান এয়ারে জব করেন,
চীফ পাইলট।
বেশীরভাগ সময়ই বাইরেই থাকেন।
এখন তিন মাসের ছুঁটি পেয়েছেন, তাই দেশে এসেছেন।
এ্যাম আই রাইট?
---- হুম রাইট,তবে এতো কিছু কি করে জানলেন?
---- আমার আম্মুর কাছে শুনেছি।
---- ওহ্,আপনারা কি আমাদের বাড়িতে উঠেছেন?
---- হুম,
---- আপনার নাম?
---- ইরিত্রা ইরি।
---- সুন্দর নাম।
---- ধন্যবাদ,পরে কথা হবে।
---- ওকে,বাই।
---- বাই।
.
ইরি চলে গেলো ছাদ থেকে।
আমি তার চলে যাওয়া দেখছিলাম।
ঘোর লাগানো চলাফেরা তার।
আমি বিভোর,পুরোদমে বিভোর!
এরকম করে প্রতিদিন বিকেলেই ছাদে দেখা হতো।
আসলে তাকে দেখার জন্যই আমি রোজ বিকেলে ছাদে আসতাম।
একসময় নিজের ভেতর কিছু একটা ফিল করতে থাকলাম।
সেটা যে ভালোবাসা ছিলো,তা বুঝতে পেরেছিলাম আরো কিছুদিন পর।
যখন সে সিক ছিলো,আর আমি ছাদে একাই থাকতাম।
সেদিন আর পারিনি,চলে গিয়েছি তিন তলার ডান ফ্ল্যাটে।
ডোর বেল বাজালাম,ইরির মা দরজা খুললো।
আমাকে সাদর অভ্যর্থনাও জানালো।
আমি বসলাম,ইরি একসময় এসে বসলো আমার সামনে।
আমি ইরির চোখের নীচে দেখেছিলাম কালো দাগ।
অনে শুকিয়ে গিয়েছিলো আমার ইরি।
আমার বুকটা মোচড় দিয়েছিলো সেদিন।
আমি বসা থেকে উঠলাম, ইরির পাশে বসলাম।
ইরির মা রুম থেকে চলে গেলো।
আমি ইরির হাত ধরলাম।
কখনো কোনো নারীর হাত ধরিনি।
ক্রমাগত ঘামতে লাগলাম।
আমার এই অস্বস্তিজনক অবস্থা দেখে ইরি হাসতে লাগলো।
তবে হাত ছাড়িয়ে নিলো না।
আমি ইরির হাতটা আরো জোরে চেপে ধরলাম।
ইরির দিকে তাকালাম,তারপর বললাম-
.
---- কি হয়েছে তোমার ইরি? (আমি)
---- কই? কিছু না তো! (ইরি)
---- ছাদে যাও না কেনো?
---- একটু সিক।
---- মেডিসিন নাও তো?
---- হুম,
---- ঠিক মতো মেডিসান নেবে।
---- কেনো?
---- ছাদে যেতে হবে তো,
তুমি ছাড়া তো আর কথা বলার কেউ নেই।
---- তাই?
---- হুম,
---- ফারাবী,,,,,,
---- বলো।
---- ভালোবাসো কি আমায়?
---- খুব করে বাসি।
---- বাস্তব নাকি আবেগের বশে?
---- তুমি জানো না,একটা দিন তোমাকে কতটা মিস করেছি।
---- আচ্ছা!
---- হুম,প্রবল মিস করেছি।
আর এ মিস করার নাম যদি ভালোবাসা হয়,তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি খুব।
---- হুম,
---- হুম কি?
---- ভালোবাসি।
---- রিয়েলি?
---- হুম।
.
সেদিন ছিলো আমার পূর্নতার দিন।
ইরি আস্তে আস্তে সুস্থ হলো।
একসময় পুরোপুরি সুস্হ হলো।
আমি আর ইরি শপিং করতাম,
রেস্টুরেন্টে, পার্কে ঘুরতে যেতাম।
রঙ্গিন ভালোবাসায় রাঙ্গাতাম একে অপরকে।
কি সোনালী রঙ্গিন দিন ছিলো সেসব!
একসময় আমার ছুটি শেষ হলো।
আমাকে ফিরে যেতে হবে সেই আমেরিকা।
হৃদয় তো মানে না বিচ্ছেদের কষ্ট।
কি কষ্ট গো!
তবুও বিদায় নিলাম একে অপরের থেকে।
চোখের জল যে ঝর্ণাধারায় পরিনত হয়, সেটা সেদিনের ইরির চোখ না দেখলে জানতামই না আমি।
যতক্ষন না বিমানে উঠলাম, ততক্ষণ তাকিয়েই ছিলাম ইরির দিকে।
.
আমেরিকা এসে ফ্লাইট নিয়ে বিজি আমি।
তবে ফ্লাইট শেষেই ইরিকে কল করে কথা বলি।
সময় গড়াতে থাকে আপন গতিতে,
পেরিয়ে যায় চার মাস।
ইরি একসময় কেমন যেনো হয়ে গেলো।
ইরির বদলে যাওয়া টের পেলাম আমি।
ইরি এখন আমার আমার ফোন কল তেমন রেসপন্স করেনা।
একসময় তাকে বিজি পাই ফোনে,অথবা ওয়েটিং!
আমি বুঝতে পারি ইরির পরিবর্তন।
তবুও কল করতাম, তবে কথা হতো না।
একসময় দিনে একবার,সপ্তাহে একবার, কিবা মাসে একবার যোগাযোগ হতো।
তারপর আর যোগাযোগ হয়নি।
ইরি সিম বদলে ফেললো।
এমনকি বাসাও পরিবর্তন করলো।
কারন দেখালো,আমি নাকি অনেকটা অগোছালো।
অথচ আমি আগের মতোই আছি।
আমি বুঝতে পারি,ইরি আর আমার নেই।
.
হারিয়ে গেছে মহুয়ার ঘ্রান উগ্র হুদয় পোড়া গন্ধে।
সোজন বাদিয়ার ঘাট হারিয়ে গেছে কালের অতলে,
হারিয়ে গেছে ছাতিম - হাড়ভাঙ্গা - কেলিকদম্ব - কুম্ভী - কুর্চি,
হারিয়ে গিয়েছে মায়া - মমতা - মানবিকতা - মননশীলতা - মূল্যবোধ।
হারিয়ে গেছে প্রেম, ভালোবাসা।
হারিয়ে গেছে ইরি,
হেরে গেছি আমি ভালোবাসার কাছে।
ইরি বদলে ফেলেছে মানুষ, আর আমি বদলে ফেলেছি শুষ্ক চোখ জোড়া।
.
কষ্টেরা খেলা করে মনের বারান্দায়, যন্ত্রনা উঠে আসে নিঃশ্বাসে।
স্বপ্নেরা ক্রমাগত বিগত হয়।
অন্ধকারের কৃষ্ণ শূন্যতায় মাঝে মাঝে অব্যক্ত যন্ত্রনায় হাত ছুঁড়ে দেই আমি।
কষ্ট তো কমে না রে,
যন্ত্রনার বিষ সারা শরীরে সংক্রমিত হয়।
মহাকালের স্রোতে জলজপানার মতো ভেসে চলে সময়।
যকন ইরি ছিলো,তখনকার রাত থাকতো পূর্নতার।
আর এখন ইরি নেই,তাই রাতগুলো সব শূন্যতার।
রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়।
যন্ত্রনারা চলে আসে বুক বরাবর।
তখন হাতড়ে বেড়াই ঘুমের ট্যাবলেট।
ট্যাবলেটের পাতা শেষ করে পড়ে থাকি বিছানায়।
একটু ঘুম,একটু শান্তি।
আহ্,প্রশান্তি।
.
আবার ছুটি পেলাম।
দেশে আসলাম।
ছাদে গেলেই প্রচন্ড রকম মিস করি ইরিকে।
আমার ইরি নির্ভর হৃদয় এখন বিষাদ বর্বর হয়ে অনুর্বর এক বিদগ্ধ যাযাবরে রূপান্তরিত করেছে আমায়।
গতকালও ছাদে গিয়ে দাড়ালাম।
বিকেলে হলেই আমি ছাদে চলে যাই।
ইরি মাঝে মাঝে যে চেয়ারে বসতো সেটা এখনো আছে ছাদে।
আরেকটা চেয়ার নিয়ে ওই চেয়ারের সামনে বসে আমি ইরিকে কল্পনা করি।
ইরি কল্পনায় আমার সাথে গল্প করে,তার সুখে থাকার গল্প,আমাকে ছেড়ে যাবার গল্প,
হরেক রকম গল্প!
কখনো কখনো মনে হয়, সত্যি সত্যিই ইরি এসে আমার সাথে গল্প করছে।
ঘোর কাটতেই মনে হয়,নাহ্.....
এটাও একটা কল্পনা।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
ছাদ থেকে নামার জন্য পা বাড়াতেই কে যেনো বলে উঠলো,
"এই ফারাবী,কেমন আছো রে?"
চমকে উঠে আমি পেছন ফিরে তাকাই।
দেখি ইরি দাড়িয়ে আছে।
ইরির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই ইরি বলে,
"কি গো? অমন করে তাকিয়ে কি দেখছো? কেমন আছো সেটা বললে না?"
"আমি কেমন আছি ইরি?" ইরিকেই পাল্টা প্রশ্নটা করি আমি।
কিন্ত ইরি সে প্রশ্নের উত্তর দেয় না।
প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারা ছাত্রীর মতই মাথা নীচু করে হেঁটে যায় ইরি।
আমি স্পষ্ট দেখতে পাই,
ইরি হেঁটে যাচ্ছে।
ছাদ পেরিয়ে বাতাসে হাঁটছে,
ভেসে ভেসে হাঁটছে ইরি।
আমাকে আশ্রয়হীন, অবলম্বনহীন করে একসময় হাঁটতে হাঁটতে মিলে যায় ইরি আকাশে।
আমার সমস্ত পৃথিবীটা দুলে উঠে।
মনে হয়,কেউ ছিলো না আমার।
কোনো দিন না,কখনো না।
বুকের মাঝখানে নিঃশব্দে আর্তনাদে সবকিছু কেমন যেনো মনে হয় -
স্থির!
বিবর্ণ!!
মৃত!!!
অথচ ছাদে এসে আজ একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম ইরিকে,
"ইরি,আজ বসন্ত!"
.
গল্পঃ আজ বসন্ত
.
লিখাঃ Al Farabee (ক্যাপ্টেন ফারাবী)
.
লিখাঃ Al Farabee (ক্যাপ্টেন ফারাবী)
.
ইরি,কষ্টের রং কেমন?
নীল?
নীল তো আকাশেরও রং আবার সাগর জলেরও।
আকাশ কি কষ্ট পায়?
সাগর কে কি কষ্ট ছুঁয়ে দেয়?
আমি তো নীল না।
তবে আমাকে কেনো তুমি নীল মানুষে রুপান্তরিত করলে?
ইরি, মনে কি পড়ে না রে.....?
সেই ভরদুপুরে বৃষ্টি নামানো দিনের কথা?
রৌদ্রজ্জ্বল দিনেও ভালোবেসে বৃষ্টি নামাতাম আমরা।
কিংবা, সন্ধ্যার আলোছায়ায় আকাশ রাঙ্গানো স্মৃতি কি উঁকি দেয়না তোমার মনে?
সব কি ভুলেই গেলে তুমি?
আহ্ হা.....
এই তুমিই তো ইরি,হ্যাঁ শুধু তুমিই একদিন কুয়াশাভেজা ঘাসের বুক মাড়িয়ে আমার হৃদয় নাড়িয়ে এঁকেছো কত জলছবি!
নদীর মাঝে জেগে উঠা কোনো চরে তখন রোদ হাঁসতো।
আমি তুমি বাতাসে ভিজে রোদের টুকরো কুড়াতাম।
তুমি হুট হাট করেই হেঁসে উঠতে।
আচ্ছা ইরি?
তুমি কি দেখতে পাওনি সেদিনের কাঁশবন?
তোমার হাঁসিতে মুগ্ধ হয়ে ভালোবেসে তারা যে জানিয়েছিলো তোমায় অভিবাদন!
না,দেখো নি তুমি!
তোমার কি আদৌ সে চোখ ছিলো?
নীল আকাশে বাতাসের ঢেউ কিংবা দূর সাগরের ক্ষুধার্ত চিৎকার শুধুই আমার জন্য।
তুমি ওসবের স্রষ্টা,
গ্রহীতা নও।
গ্রহীতা তো আমি!
ভালোবেসে বানিয়েছি ঘর,
হালকা বাতাসেই হলো নড়চড়।
বুকে শূন্য এক বালুচর,
কতদূর তুমি আজ কত পর?
.
এতক্ষন জীবন নামক ডায়েরীর একটা পাতার স্মৃতিচারণ করেছিলাম।
যার কেন্দ্রে ইরি আর ব্যাস আমি।
সেদিন যখন তাকে দেখেছিলাম,
আজও ভুলতে পারিনা সে স্মৃতি।
বিকেলের সোনা রোদে তাকে সোনার মেয়ে মনে হয়েছিলো।
আসন্ন বিকেলে বিষন্ন আমাকে সে নীলারণ্যে পৌঁছে দিয়েছে।
দাড়িয়ে ছিলো ইরি সেদিন আমাদের ছাদে।
কথা হয়নি, দেখেই নিচে চলে এলাম।
বুকটা ধুক ধুক করতে ছিলো।
কে এই মেয়ে?
আমার বাসার কারো রিলেটিভ নাকি ভাড়াটিয়া?
এতো রূপও কারো হয়?
ও রূপ, রূপ গো?
তুই এতো মোহনীয় কেনো রে?
সারাটা সন্ধ্যা সারাটা রাত ঘুমাতে পারিনি।
পরদিন বিকেলে আবার ছাদে গেলাম।
আজও দেখেছি তাকে,
গোধূলি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
এগিয়ে গিয়েছিলাম আমি তার পানে,
হালকা মিষ্টি চুলের গন্ধে আমি বিমোহিত।
পেছনে দাড়িয়েই গলা খাঁকাড়ি দিলাম।
.
---- এহেম, এহেম...... (আমি)
---- জ্বী,কে? (ইরি)
---- আমি ফারাবী,আল-ফারাবী।
---- ওহ্,এই বাড়ির বড় ছেলে।
---- চেনেন আমাকে?
---- না চিনিনা, তবে জানি।
---- কি জানেন?
---- আপনি আমেরিকান এয়ারে জব করেন,
চীফ পাইলট।
বেশীরভাগ সময়ই বাইরেই থাকেন।
এখন তিন মাসের ছুঁটি পেয়েছেন, তাই দেশে এসেছেন।
এ্যাম আই রাইট?
---- হুম রাইট,তবে এতো কিছু কি করে জানলেন?
---- আমার আম্মুর কাছে শুনেছি।
---- ওহ্,আপনারা কি আমাদের বাড়িতে উঠেছেন?
---- হুম,
---- আপনার নাম?
---- ইরিত্রা ইরি।
---- সুন্দর নাম।
---- ধন্যবাদ,পরে কথা হবে।
---- ওকে,বাই।
---- বাই।
.
ইরি চলে গেলো ছাদ থেকে।
আমি তার চলে যাওয়া দেখছিলাম।
ঘোর লাগানো চলাফেরা তার।
আমি বিভোর,পুরোদমে বিভোর!
এরকম করে প্রতিদিন বিকেলেই ছাদে দেখা হতো।
আসলে তাকে দেখার জন্যই আমি রোজ বিকেলে ছাদে আসতাম।
একসময় নিজের ভেতর কিছু একটা ফিল করতে থাকলাম।
সেটা যে ভালোবাসা ছিলো,তা বুঝতে পেরেছিলাম আরো কিছুদিন পর।
যখন সে সিক ছিলো,আর আমি ছাদে একাই থাকতাম।
সেদিন আর পারিনি,চলে গিয়েছি তিন তলার ডান ফ্ল্যাটে।
ডোর বেল বাজালাম,ইরির মা দরজা খুললো।
আমাকে সাদর অভ্যর্থনাও জানালো।
আমি বসলাম,ইরি একসময় এসে বসলো আমার সামনে।
আমি ইরির চোখের নীচে দেখেছিলাম কালো দাগ।
অনে শুকিয়ে গিয়েছিলো আমার ইরি।
আমার বুকটা মোচড় দিয়েছিলো সেদিন।
আমি বসা থেকে উঠলাম, ইরির পাশে বসলাম।
ইরির মা রুম থেকে চলে গেলো।
আমি ইরির হাত ধরলাম।
কখনো কোনো নারীর হাত ধরিনি।
ক্রমাগত ঘামতে লাগলাম।
আমার এই অস্বস্তিজনক অবস্থা দেখে ইরি হাসতে লাগলো।
তবে হাত ছাড়িয়ে নিলো না।
আমি ইরির হাতটা আরো জোরে চেপে ধরলাম।
ইরির দিকে তাকালাম,তারপর বললাম-
.
---- কি হয়েছে তোমার ইরি? (আমি)
---- কই? কিছু না তো! (ইরি)
---- ছাদে যাও না কেনো?
---- একটু সিক।
---- মেডিসিন নাও তো?
---- হুম,
---- ঠিক মতো মেডিসান নেবে।
---- কেনো?
---- ছাদে যেতে হবে তো,
তুমি ছাড়া তো আর কথা বলার কেউ নেই।
---- তাই?
---- হুম,
---- ফারাবী,,,,,,
---- বলো।
---- ভালোবাসো কি আমায়?
---- খুব করে বাসি।
---- বাস্তব নাকি আবেগের বশে?
---- তুমি জানো না,একটা দিন তোমাকে কতটা মিস করেছি।
---- আচ্ছা!
---- হুম,প্রবল মিস করেছি।
আর এ মিস করার নাম যদি ভালোবাসা হয়,তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি খুব।
---- হুম,
---- হুম কি?
---- ভালোবাসি।
---- রিয়েলি?
---- হুম।
.
সেদিন ছিলো আমার পূর্নতার দিন।
ইরি আস্তে আস্তে সুস্থ হলো।
একসময় পুরোপুরি সুস্হ হলো।
আমি আর ইরি শপিং করতাম,
রেস্টুরেন্টে, পার্কে ঘুরতে যেতাম।
রঙ্গিন ভালোবাসায় রাঙ্গাতাম একে অপরকে।
কি সোনালী রঙ্গিন দিন ছিলো সেসব!
একসময় আমার ছুটি শেষ হলো।
আমাকে ফিরে যেতে হবে সেই আমেরিকা।
হৃদয় তো মানে না বিচ্ছেদের কষ্ট।
কি কষ্ট গো!
তবুও বিদায় নিলাম একে অপরের থেকে।
চোখের জল যে ঝর্ণাধারায় পরিনত হয়, সেটা সেদিনের ইরির চোখ না দেখলে জানতামই না আমি।
যতক্ষন না বিমানে উঠলাম, ততক্ষণ তাকিয়েই ছিলাম ইরির দিকে।
.
আমেরিকা এসে ফ্লাইট নিয়ে বিজি আমি।
তবে ফ্লাইট শেষেই ইরিকে কল করে কথা বলি।
সময় গড়াতে থাকে আপন গতিতে,
পেরিয়ে যায় চার মাস।
ইরি একসময় কেমন যেনো হয়ে গেলো।
ইরির বদলে যাওয়া টের পেলাম আমি।
ইরি এখন আমার আমার ফোন কল তেমন রেসপন্স করেনা।
একসময় তাকে বিজি পাই ফোনে,অথবা ওয়েটিং!
আমি বুঝতে পারি ইরির পরিবর্তন।
তবুও কল করতাম, তবে কথা হতো না।
একসময় দিনে একবার,সপ্তাহে একবার, কিবা মাসে একবার যোগাযোগ হতো।
তারপর আর যোগাযোগ হয়নি।
ইরি সিম বদলে ফেললো।
এমনকি বাসাও পরিবর্তন করলো।
কারন দেখালো,আমি নাকি অনেকটা অগোছালো।
অথচ আমি আগের মতোই আছি।
আমি বুঝতে পারি,ইরি আর আমার নেই।
.
হারিয়ে গেছে মহুয়ার ঘ্রান উগ্র হুদয় পোড়া গন্ধে।
সোজন বাদিয়ার ঘাট হারিয়ে গেছে কালের অতলে,
হারিয়ে গেছে ছাতিম - হাড়ভাঙ্গা - কেলিকদম্ব - কুম্ভী - কুর্চি,
হারিয়ে গিয়েছে মায়া - মমতা - মানবিকতা - মননশীলতা - মূল্যবোধ।
হারিয়ে গেছে প্রেম, ভালোবাসা।
হারিয়ে গেছে ইরি,
হেরে গেছি আমি ভালোবাসার কাছে।
ইরি বদলে ফেলেছে মানুষ, আর আমি বদলে ফেলেছি শুষ্ক চোখ জোড়া।
.
কষ্টেরা খেলা করে মনের বারান্দায়, যন্ত্রনা উঠে আসে নিঃশ্বাসে।
স্বপ্নেরা ক্রমাগত বিগত হয়।
অন্ধকারের কৃষ্ণ শূন্যতায় মাঝে মাঝে অব্যক্ত যন্ত্রনায় হাত ছুঁড়ে দেই আমি।
কষ্ট তো কমে না রে,
যন্ত্রনার বিষ সারা শরীরে সংক্রমিত হয়।
মহাকালের স্রোতে জলজপানার মতো ভেসে চলে সময়।
যকন ইরি ছিলো,তখনকার রাত থাকতো পূর্নতার।
আর এখন ইরি নেই,তাই রাতগুলো সব শূন্যতার।
রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়।
যন্ত্রনারা চলে আসে বুক বরাবর।
তখন হাতড়ে বেড়াই ঘুমের ট্যাবলেট।
ট্যাবলেটের পাতা শেষ করে পড়ে থাকি বিছানায়।
একটু ঘুম,একটু শান্তি।
আহ্,প্রশান্তি।
.
আবার ছুটি পেলাম।
দেশে আসলাম।
ছাদে গেলেই প্রচন্ড রকম মিস করি ইরিকে।
আমার ইরি নির্ভর হৃদয় এখন বিষাদ বর্বর হয়ে অনুর্বর এক বিদগ্ধ যাযাবরে রূপান্তরিত করেছে আমায়।
গতকালও ছাদে গিয়ে দাড়ালাম।
বিকেলে হলেই আমি ছাদে চলে যাই।
ইরি মাঝে মাঝে যে চেয়ারে বসতো সেটা এখনো আছে ছাদে।
আরেকটা চেয়ার নিয়ে ওই চেয়ারের সামনে বসে আমি ইরিকে কল্পনা করি।
ইরি কল্পনায় আমার সাথে গল্প করে,তার সুখে থাকার গল্প,আমাকে ছেড়ে যাবার গল্প,
হরেক রকম গল্প!
কখনো কখনো মনে হয়, সত্যি সত্যিই ইরি এসে আমার সাথে গল্প করছে।
ঘোর কাটতেই মনে হয়,নাহ্.....
এটাও একটা কল্পনা।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
ছাদ থেকে নামার জন্য পা বাড়াতেই কে যেনো বলে উঠলো,
"এই ফারাবী,কেমন আছো রে?"
চমকে উঠে আমি পেছন ফিরে তাকাই।
দেখি ইরি দাড়িয়ে আছে।
ইরির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই ইরি বলে,
"কি গো? অমন করে তাকিয়ে কি দেখছো? কেমন আছো সেটা বললে না?"
"আমি কেমন আছি ইরি?" ইরিকেই পাল্টা প্রশ্নটা করি আমি।
কিন্ত ইরি সে প্রশ্নের উত্তর দেয় না।
প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারা ছাত্রীর মতই মাথা নীচু করে হেঁটে যায় ইরি।
আমি স্পষ্ট দেখতে পাই,
ইরি হেঁটে যাচ্ছে।
ছাদ পেরিয়ে বাতাসে হাঁটছে,
ভেসে ভেসে হাঁটছে ইরি।
আমাকে আশ্রয়হীন, অবলম্বনহীন করে একসময় হাঁটতে হাঁটতে মিলে যায় ইরি আকাশে।
আমার সমস্ত পৃথিবীটা দুলে উঠে।
মনে হয়,কেউ ছিলো না আমার।
কোনো দিন না,কখনো না।
বুকের মাঝখানে নিঃশব্দে আর্তনাদে সবকিছু কেমন যেনো মনে হয় -
স্থির!
বিবর্ণ!!
মৃত!!!
অথচ ছাদে এসে আজ একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম ইরিকে,
"ইরি,আজ বসন্ত!"
.
গল্পঃ আজ বসন্ত
.
লিখাঃ Al Farabee (ক্যাপ্টেন ফারাবী)