Forums.Likebd.Com

Full Version: ভালোবাসার বখাটে গল্প
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
কলেজ যাওয়ার জন্য বাসা থেকে
বের হয় ফারিয়া।প্রতিদিনের মত
আজকেও বখাটে ছেলেগুলো দাড়িয়ে
আছে চায়ের দোকানটাতে।প্রতিদিন
এসময় ছেলেগুলো দাড়িয়ে থাকে।
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে
রোজ।এমন করে তাকায় যেন
কোনদিন মেয়ে দেখে নাই।বাজে
বাজে কথা বলে উক্ত্যত করে।এসব
দেখে ফারিয়ার মাথাটা গরম হয়ে
যায়। রিকশার অপেক্ষায় আছে ও।
ইতিমধ্যে ফারিয়া লক্ষ্য করে একটা
ছেলে তার পিছনে এসে দাড়িয়েছে।
---এক্সকিউজ মি আপু।
[এবার পিছন ঘুরে ভাল করে তাকায়
ফারিয়া]
---একটা কথা ছিল আপু?
---কি কথা?(রেগে গিয়ে)
---আসলে কথাটা কিভাবে বলবো
বুঝতে পারছি না?
---তো বলতে আসছেন কেন?
---আমি আপনাকে ভালোবাসি।এটা
আমার মনে হয়।আপনার উত্তর এর
অপেক্ষায় আছি।
(ফারিয়া আশ্চর্য হয়ে যায়।ছেলেটা
এভাবে প্রপোজ করবে ও বুঝতেই
পারে নি।ওর রাগ বাড়তে থাকে।রিকশা
আসায় কিছু না বলে রিকশায় উঠে
পড়ে।)
.
.
কলেজ এসে ক্লাসে ঢুকে আবার
মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়।সিট খালি
নাই।একটা আছে তা হৃদয়ের পাশে।এই
ছেলেটাকে ফারিয়ার একদম পছন্দ
না।কলেজ ও এলাকার নাম করা
বখাটে।সবসময় মুখে সিগারেট থাকে
ও প্রায় মারামারি করে।সবচেয়ে
ভয়ের কথা হলো ওর বান্ধবীদের
কাছে শুনছে হৃদয় নাকি ওকে
ভালোবাসে।তাই উপায় না পেয়ে
চুপচাপ গিয়ে বসে পড়ল।
.
.
বিকেলবেলা ফারিয়া তার বান্ধবীর
কাছে জানতে পারে হৃদয় নাকি
রাসেলের মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে।
রাসেল হলো সেই চায়ের দোকানে
আড্ডা দেওয়া বখাটে ছেলেটা যে
আজ সকালে ফারিয়াকে প্রপোজ
করেছিলো।কিন্ত ফারিয়া বিষয়টাকে
সেভাবে নিলো না।সে মনে করলো
বখাটেরা তো মারামারি করবেই।
.
.
পরেরদিন সকালে কলেজ যাওয়ার
জন্য বের হয় ফারিয়া।আজকেও
রাসেল দাড়িয়ে আছে কিন্ত মাথায়
ব্যান্ডেজ লাগানো।রাসেল
ফারিয়াকে ডাক দিলো।
---স্যরি আপু।আমার ভুল হইসে।আমি
জানতাম না আপনি হৃদয় ভাইয়ের
গার্লফ্রেন্ড।
---কি?
---হৃদয় ভাইকে বলিয়েন আমি মাফ
চাইছি।নাহলে মেরে ফেলবে আমাকে।
[বলে দৌড়ে চলে যায় রাসেল।
ফারিয়াকে কোন কথা বলার সুযোগই
দেয় না]
.
.
কলেজে পৌছে হৃদয়কে খুজতে থাকে
ফারিয়া।নিজের সীমা ছাড়িয়ে গেছে
ছেলেটা।সবাইকে বলছে ফারিয়া নাকি
ওর গার্লফ্রেন্ড।নিজেকে কি মনে
করে।খুজতে খুজতে পেয়ে যায়।হৃদয়
ওর অনুসারীদের সামনে বক্তব্য
দিচ্ছিল।ফারিয়া ডাক দিলো ওকে।
এগিয়ে আসে হৃদয়।ছেলেরা সবাই
বলতে থাকে যাও ভাই ভাবী মনে হয়
পটে গেল।
---নিজেকে কি মনে করেন?শাহরুখ
খান?আপনার সঙ্গে আমার কোন
আফেয়্যার আছে?আমি কখনো
আপনাকে বলেছি আমি আপনাকে
ভালোবাসি?
---না।
---তো সবাইকে কেন বলেছেন আমি
আপনার গার্লফ্রেন্ড?কিভাবে
ভাবলেন আপনার মতো বখাটের
প্রেমে আমি পড়বো?ফাজলামির
একটা সীমা আছে সেটা আপনি
ছাড়িয়ে গেছেন।পারলে ভালো হয়ে
যান।আর একটা কথা এসব কথা যেন
আর শুনতে না হয়।
হৃদয় মাথা নিচু করে থাকে।কিছু বলতে
পারে না।ফারিয়া চলে যাচ্ছে।আজ
মনে হয় সব রাগ ঝেড়ে দিল মেয়েটা।
.
.
সময়টা বয়ে চলছে।এইচ.এস.এসি
পরীক্ষা শেষ।এর মধ্যে কিছু
পরিবর্তন ঘটেছে।হৃদয় অনেক ভালো
করে পড়াশুনা করে পরীক্ষা দিয়েছে।
ফারিয়া কেমন যেন রোগা হয়ে গেছে।
কিন্ত হৃদয় বখাটেগিরি ছাড়তে পারে
নাই।না পেরেছে ফারিয়াকে ভালবেসে
না থাকতে।ফারিয়াকে আগের মত
ভালোবাসে।ফারিয়ার খোজখবর
ঠিকি রাখে।
.
.
ফারিয়া অনেক অসুস্হ॥ডাক্তার
পরীক্ষা করে জানতে পারে দুইটি
কিডনীই নষ্ট।যত দ্রুত সম্ভব একটা
কিডনী যোগাড় করতে হবে॥কোথাও
কিডনী পাওয়া যাচ্ছিল না।পাওয়া
গেলে অনেক টাকা চাচ্ছে যেটা
ফারিয়ার পরিবার পক্ষে দেওয়া
সম্ভব নয়।তারা খুজতে থাকে
কিডনী॥কিন্ত কয়েকদিন পর
ডাক্তার বললো কে যেন মারা
যাওয়ার আগে কিডনীর ব্যবস্থা
করে দিয়ে গেছেন॥
.
.
আল্লাহর রহমতে ও সবার দোয়ায়
ফারিয়া সুস্হ হয়ে উঠলো।সুস্হ
হওয়ার পর ডাক্তার একটা চিঠি এনে
দিল ফারিয়াক।
.
.
প্রিয় ফারিয়া,
যতক্ষনে আপনি চিঠিটা পড়বেন
ততক্ষনে আমি হয়তো আকাশের
তারা হয়ে গেছি।কলেজে যেদিন
প্রথম দেখেছিলাম সেদিনি আপনার
প্রেমে পড়ে গেছিলাম।রাসেলকে
আমি কখনো বলিনি আপনি আমার
গার্লফ্রেন্ড।ইচ্ছে করে রাসেলকে
মারি নি ও আপনাকে ডিস্টার্ব করে
বলে মেরেছিলাম।যেদিন আপনি
আমার ভালোবাসাকে প্রত্যাখান
করলেন সেদিন প্রতিজ্ঞা
করেছিলাম প্রতিষ্ঠ হয়ে দেখাবো
আপনাকে।কিন্ত সেটা আর হলো না।
এতদিন যে শরীর যে ক্যান্সার বাসা
বেধেছিল তা শেষ স্টেজে এসে
পৌছেছিল।ডাক্তার বলেছিলো আর
বাচবো না।এরই মধ্যে জানতে পারি
আপনার নাকি কিডনী দুটোই নষ্ট।
তাই ভাবলাম মারা যাওয়ার আগে
একটা ভালো কাজ করে যাই।বাবা মা চিকিৎসার জন্য যে টাকা যোগাড় করেছেন সেটা দিয়ে একটা কিডনী কিনলাম।কারণ যাকে
ভালোবাসি তাকে মরতে দেই
কিভাবে?তাই কিডনী দিয়ে
গেলাম চলে যাচ্ছি আপনার চোখের আড়ালে।জানি চিঠিটা পড়ে চোখের
জল আটকাতে পারবেন না।আমারো
একটা কষ্ট থেকে গেল আপনাকে
তুমি করতে পারলাম না।এখন তো
আমি নেই জানি আপনার মনে আমার
জন্যে ভালোবাসা জন্মাবে।ইচ্ছে
ছিলো এইদিনটা দেখে যাবো সেটা
আর হলো না।
ভালো থাকবেন।
ইতি,
আপনার দেখা বখাটে ছেলেটি
হৃদয়
সত্যি তো হৃদয়ের জন্য আজ
ফারিয়ার মনে ভালোবাসার জন্ম
নিয়েছে।সত্যি তো চোখ দিয়ে
অবিরাম গতিতে জল গড়িয়ে পড়ছে॥
চোখের জল দিয়ে চিঠিটা ভিজে
যাচ্ছে....
.
.
লেখাঃAnamul Haque Tamim
(প্রকৃতি বিজ্ঞানী)
উৎসর্গঃনির্জন রাতের হিমু