02-22-2017, 12:21 AM
গল্প:ডাক্তার অহনা এবং ছদ্মবেশি রোগী
.
মেয়েটাকে দেখার পর চোখ ফেরাতে সত্যি
কষ্ট হচ্ছিল।কেউ এতটা সুন্দর হতে পারে!অপলক
নেত্রে তাকিয়ে থাকাতে হয়ত মেয়েটা
বিরক্তিবোধ করছিল তাই বারে বারে বিরক্তি নিয়ে
তাকাচ্ছিল।ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ধীর পায়ে প্রস্থান
করলাম।
.
.
আমি হাসান।ঢাকায় বাবা,মা,এক ভাই আর এক বোনকে
নিয়ে থাকা হত।এই কদিন আগেই বোনটার বিয়ে
দিলাম।বোনের বিয়েতেই দেখতে পেয়েছিলাম
সেই অপরূপা অপ্সরীকে।তবে অপ্সরীর পরিচয়
আমার অজ্ঞাত।অহেতুক কৌতুহল মান ইজ্জত
খোয়াতে পারে তাই এর থেকে দূরেই ছিলাম
সেদিন।
.
.
নাহ এই মেয়েটা পেয়েছেটা কি?রাতের ঘুম
কেড়ে নিয়েছে,কাজের থেকে মনযোগ
নিয়ে নিয়েছে।কি ক্ষতি করেছি আমি ওর যে এমন
শত্রুতা করছে?নিজেই এসব মনে মনে ভাবছিলাম
আর হাসছিলাম।ওকে দেখার পর থেকে আমি যে
কাজই করি সেখানেই শুধু ওকে দেখতে পাই।
বাস্তবে না বরং তা অন্তর চক্ষুতে।
.
.
শপিং মলে ফ্রেন্ডদের সাথে শপিং করছিলাম।হঠাৎই
কারো দিকে চোখটা আটকে গেল।আরে এই
তো আমার মিস শত্রু যিনি আমার ঘুম,মনযোগ সব চুরি
করেছেন।আজ আবার বান্ধবীদের সাথে হাসছে
আর আমার আবার ওর হাসির উপর ক্রাশ খাওয়া লাগল।
(বাস্তবে আমি জীবনেও ক্রাশ খাইনি দেইখেন
কিন্তু)ও আর ওর বান্ধবীরা এপ্রন পরে আছে।
এবার বুঝলাম হয় ডক্টর বা মেডিকেলের স্টুডেন্ট।
তাহলে তো আমার সাথে ভালই মিলবে।দূর থেকে
ওর কিছু ছবি তুললাম।৪১ মেগা পিক্সেলের ক্যমেরা
হওয়াতে অবশ্য বুঝার কোন উপায় নেই যে
এগুলো দূর থেকে তোলা ছবি।
.
.
আজ হঠাৎই আপুর বাসায় এসে হাজির হলাম।আপু
আমাকে দেখে ভূত দেখার মত আঁতকে উঠল।
অবশ্য আঁতকে উঠারই কথা।যে ছেলেকে আমার
আপুজান বিয়ের পর একবারও বাসায় আনতে পারেনি
আর কম করে হলেও হাজার বার আসতে বলে ধৈর্য
হারিয়ে ফেলেছে আজ তাকে বিনা ডাকায় পাওয়াতে
আঁতকে উঠা স্বাভাবিকই।
.
:আরে হাসান তুই!
.
:নাহ আমি না আমার ভূত।দেখতেই পাচ্ছিস আমি আবার
জিজ্ঞেস করিস কোন দুঃখে।
.
:তোকে মাইর দেয়া দরকার।
.
:বিয়ে হয়ে আমার মাইরের কথা ভুলে গেলি
নাকিরে আপু?সমস্যা নাই রিপিট করা যাবে তুই চাইলে।হা
হা হা।কিরে বাসায় ঢুকতে দিবি নাকি চলে যাব?
.
:আরে আয় আয়।আমার ভাইটা এই প্রথম বোনের
শ্বশুরবাড়িতে আসল তারে লাথি দিয়ে তো আর
ভাগাতে পারিনা।
.
:হুহ(মুখ বেজার করে)
.
:ওলে আমার ভাইটা নাগ কচ্চে লে।
.
:ওই তুই চুপবি?
.
:ওকে যা চুপ করলাম।এখন বল আব্বু, আম্মু,শুভ
(আমাদের ভাই) কেমন আছে?
.
:আলহামদুলিল্লাহ আপু সবাই ভাল।তোর এদিকের সব
কেমন আছে?দুলাভাইকে দেখছিনা যে।
.
:হুম সবাই ভাল।তোর দুলাভাই তো অফিসে।একটু বস
চলে আসবে।
.
:ওই ভাল আছিস তো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ
আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারিস না!!
.
:ওহ হো ভাই আমার সরি ভুল হয়েছে।আলহামদুলি
ল্লাহ।
.
:শোন একটা কাজে এখানে তোর কাছে এলাম।
.
:এইত এতক্ষনে ভাই আমার লাইনের কথা বলছে।তাই
তো বলি এই ফাজিল পোলার হঠাৎ বলা কওয়া ছাড়া
আগমনির কারণ কি?
.
:যাহ তোর বাসায় আর আসবই না।লাগবেনা তোকে।
আল্লাহ হাফিজ।(সেই মাপের রাগী বলে কথা)
.
:এই এই রেগে যাচ্ছিস কেন!! আপু মজা করে
বুঝিস না?বল কি দরকার।
.
তখনই আবার আপুর শ্বাশুড়ি এল।আমি দাঁড়িয়ে সালাম
দিলাম আর কুশল বিনিময় হল।আপুর শ্বাশুড়িটা নাকি খুব ভাল।
লাখে ওয়ান পিস।তারপর উনি চলে যান কি যেন
কাজের কথা বলে।
.
:মোবাইলে একটা পিকচার বের করে আপুর সামনে
ধরে, "এই দেখতো এই মেয়েটাকে চিনিস কি
না।"
.
:ওই তুই অহনার ছবি কই পাইলি?আর তুলছে কে?
নিশ্চয় হাসাইন্না বান্দর।
.
:ওই বান্দর বলবিনা।এর নাম তাইলে অহনা।তুই চিনিস।ফুল
ডিটেলস বল না রে আপু প্লিজ।
.
:কেস কি খুলে বল তারপর ভেবে দেখব।আর হু
ডিটেলস পেতে চাইলে শর্ত আছে কিন্তু।দিনে
দিনে এত ইনকাম বলে কথা।হি হি হি।
.
:আমি না এই মেয়েটার উপ্রে খাইছি।প্লিজ আপু বল
নারে।
.
:আচ্ছা এই মেয়ের ছবি নিয়ে আমার কাছেই আসলি
কেন?
.
:তোর বিয়েতে দেখছিলাম।ভাবলাম আমাদের
যেহেতু কেউ না তাহলে নিশ্চয় তোর শ্বশুরবাড়ির
কেউ হবে তাই তোর কাছেই নিয়ে এলাম।
.
:হুম বুঝলাম।একটু বস আমি আসছি।
.
আপু উঠে গেল।পাঁচ মিনিট পর রুমের বাইরে আপুর
গলা,"আরে অহনা চলই না আমার ভাইয়ের সাথে পরিচয়
করিয়ে দিই।"নীচু গলায় অন্য মেয়েটি বলছে,থাক
না ভাবী।কেমন লাগছে।আবার আপুর কণ্ঠ, বুঝছি
মেয়ে লজ্জা পাচ্ছে।আরে ব্যাপার না চল জলদি।হাত
ধরে টেনে রুমে ঢুকালো অহনাকে।
.
:হাসান পরিচয় করিয়ে দিই।এ হল আমার একমাত্র ননদ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশুনো
শেষ করে এখন একটা ছোট খাট চেম্বারে
বসছে।তোর কোন সমস্যা হলেই ওর কাছে
চলে যাবি।খুব ভাল ডাক্তার কিন্তু ও।আর অহনা এ হল
হাসান।আমার দুষ্টু মিষ্টি ফাজিল ভাই।তোমাকে ওর কথা
আগেও বলেছি।
:জ্বী ভাবি।(এই প্রথম চোখ তুলে আমার দিকে
তাকিয়ে বলল কথাটি)
আপু এতক্ষন কি বলছে তা শুনার থেকে আমি হা
করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকার প্রতিই মনোনিবেশ
করেছি বোধ হয়।ওর মুখ উঠতে দেখার সাথে
সাথে তড়িৎ গতিতে চোখ সরিয়ে নিলাম।নাহলে
আবার কি ভাবে কে জানে।
.
:আচ্ছা ভাবী আমি এখন যাই।আম্মুকে ঔষধ দিতে
হবে।
.
:আচ্ছা অহনা যাও।
.
:কি বুঝলি?(আপু)
.
:আপু প্লিজ লাইন করায়া দে না রে প্লিজ।আর হু
সিঙ্গেল না ডাবল জিজ্ঞেস করলাম না কারণ ডাবল
মেয়েরা এত্ত লজ্জা কখনো পায়না।প্লিজ আপু
করায়া দে না রে।
.
:ওই আমি পারবনা।তুই নিজে যা পারিস কর।আর হু সব
তো জানলিই তো এখন বখশিশ দে আমারে।তিন
বক্স আইসক্রীম আর হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি।আমার আর
অহনার জন্য।বাকিরা খাবেনা কেউ বিরিয়ানি।
.
:তোরা মেয়েরা না শালার সব স্বার্থপর।ভাইটার মানি
ব্যাগে না টান দিলে চলত না?
.
হঠাৎ দরজার পিছনে কারো হাসির আওয়াজ যদিও শব্দটা
খুব মৃদু ।অতঃপর কারো চলে যাওয়ার শব্দ।
.
:বুঝলি কে ছিল?অহনা ছিল রে।
.
:ও দাঁড়িয়ে ছিল কেন!!আপু লাইন করায়া দিলে প্রমিজ
তোরে পাঁচ প্যাকেট বিরিয়ানি আর দশ বক্স
আইসক্রীম কিনে দিব।প্লিজ্জজ্জজ্জ আপু।
.
:আমি বলছি নিজে যা পারবি করে নে।আর আমি যা
চাইছি নিয়ে আই।দুপুরে এখানে খাবি।আর এখন
থেকে তো আমার ভাইরে মনে হয় ডাকা ছাড়াই
পাওয়া যাবে।হি হি হি
.
:তোরে খামু।গেলাম আমি।নিয়ে আসি যা চাইছস।
.
.
রাস্তায় হাঁটছি আর ভাবছি আপু আমার সম্পূর্ণ পরিচয়
নিশ্চয় ওকে বলেনি নতুবা ওর কাছে আমাকে
চিকিৎসার জন্য যেতে বলত না।আরে এটাই তো
আমার একটা সূবর্ণ সুযোগ।আপুর ইচ্ছামত ওর চাওয়া
জিনিস গুলো কিনলাম।আমার পেশা হিসেবে অবশ্য
আমার আপুটার আবদার খুব বড় না।বাসায় ফিরে আপুকে
বিরিয়ানি আর আইসক্রীমের প্যাক ধরিয়ে চলে
আসতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আপু আর আপুর শ্বশুর বাড়ির
সবাই চেপে ধরল যে প্রথম এসেছি খেয়ে
যেতেই হবে।অগত্যা খেয়েই ফিরলাম আর ডঃঅহনা
আহমেদ এর চেম্বারের ঠিকানাটা নিতেও ভুললাম না।
.
.
আপুর শ্বশুরবাড়ি যেয়ে অহনাকে আমি প্রায়শই
দেখতে পারি কিন্তু তা ভাল দেখায় না।ঠিক করেছি ওর
চেম্বারে গিয়ে রোগের বাহানা দিয়ে ওর সাথে
দেখা করব।যেই ভাবা সেই কাজ।
.
অহনার চেম্বারে সিরিয়াল দিয়ে বসে আছি।মানুষ
আমার কাছে বসে থাকে আর আমি আজ বসে আছি।
হঠাৎই রুম থেকে কোন কারণে অহনাকে বের
হতে দেখলাম।আমার অবশ্য ওকে দেখা হয়ে
গেছে।ওর সাথে চোখাচোখি হয়ে যাওয়াতে ও
এগিয়ে এল।
.
:আরে আপনি?কি মনে করে?
.
:ডক্টরের চেম্বারে মানুষ কেন আসে বলুন
তো?
.
:ওহ আচ্ছা তা সিরিয়ালে কেন আপনি?পরিচিত হওয়ার
সুবাদে আপনি আগেই আসতে পারেন।আসুন আমার
সাথে।
.
ওর সাথে রুমে প্রবেশ করলাম।চেয়ার দেখিয়ে
বসতে বললে বসে পড়লাম।
.
:হুম বলুন কি প্রব্লেম?
.
:শরীর ভাল যাচ্ছেনা তাই এলাম।
.
:কেন শরীর কেন ভাল যাচ্ছেনা?
.
:তা জানলে কি আপনার কাছে আসতাম?
.
খায়া ফালামু লুকে তাকালো অহনা আমার দিকে।বাব্বাহ
ভয় পাইছি যে লুক দিয়েছে।অতঃপর উঠে এসে
হার্ট বিট রেট,,জিহ্বা,,চোখ দেখল।আর আমি ওকে
খুব কাছ থেকে দেখলাম এই প্রথমবার।
.
:কই কোন তো প্রব্লেম দেখছিনা।আচ্ছা আমি
নরমাল কিছু ঔষধ দিচ্ছি খাবেন সেগুলো।
.
:জ্বী ধন্যবাদ।আবার কবে আসব?
.
:আপনার যেদিন কাউকে দেখতে মন চাইবে।
(বিড়বিড় করে)
.
:কিছু বললেন?
.
:জ্বী বললাম যেদিন সমস্যা হবে সেদিন
আসবেন।
.
বিদায় নিয়ে উঠে চলে এলাম।উফফ মেয়েটাকে
যত দেখছি ততই ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।
.
রাতে খাওয়ার পর শুয়ে লেখক আজাদ আবুল কালাম
ভাইয়ের লেখা "রহস্যের অন্তরালে রহস্য" বইটা
সম্পর্কে ফেসবুকে একটা পোস্ট পড়ছিলাম।
আজাদ ভাইয়ের লিখা যে মান সম্মত সে হিসেবে
বইটাও যে ভাল হবে তা চোখ বন্ধ করে বলা যায়।
বইমেলায় যেয়ে কিনতে হবে অবশ্যই বইটা।এমন
সময় ফোন এল। দেখি বড় আপুর ফোন।
অনেকদিন পর ওর ফোন।
.
:কিরে আপু কেমন আছিস?
.
:হুম ভাইয়া ভালই রে।তুই?
.
:আমিও ভাল রে।
.
:এতদিন পর ভুলে ফোন দিলি নাকি?
.
:আরে নাহ।আমার একমাত্র ভাই আমার ননদিনীর
মেয়ের কাছে গেছিল চিকিৎসা নিতে তা শুনে
ভাবলাম খোঁজ নিয়ে দেখি রোগটা কি?
.
:আপু তুই ও না পারিস।ধেত্তেরি।আচ্ছা আপু আমার
সম্পূর্ণ পরিচয় কি ওকে বলেছিস?
.
:আরে নাহ বলিনি তো।তোর জন্য সুযোগ রাখছি।
.
:আমার আপুটা কত্ত ভাল রে।উম্মাহহহহ।
.
:হইছে হইছে আহ্লাদ দেখান লাগব না।মাঝে মাঝে
ফোন দিস।রাখি এখন।আম্মাকে ফোন দিব।
.
:ওকে মাই সুইট আপ্পি।টা টা।
.
.
যাক অহনা তো আমার পরিচয় জানেনা আর সে
হিসেবে আমি ওর কাছে রোগের নাম দিয়ে
যেতেই পারি।দু দিন পর পর আমি যেতে লাগলাম ওর
চেম্বারে।ও বিরক্ত হত না খুশি হত তা বুঝার কোন
কায়দা নেই।অবশ্য আমাকে দেখলেই মেয়েটা কি
বুঝে যেন মুচকি হাসে।কোথাও শুনেছি মেয়েরা
নাকি ছেলেদের মন বোঝে।কে তার কাছে
কেন আসে,,কখন তাকায় সব বুঝে ফেলে।অহনাও
কি তাহলে বুঝে ফেলেছে?বুঝলে তো লালে
লাল।আমি তো চাই ই ও বুঝুক আমি ওকে ভালবাসি।
.
.
এত ঘনঘন আসায় অহনা একদিন কড়া গলায় বলে দিল
সমস্যা ছাড়া এখানে আসবেন না।কথা তো ঠিকই
সমস্যা ছাড়া কে ডাক্তারের কাছে কেন যাবে।
.
.
রাত থেকে জ্বরে অবস্থা কাহিল।সমস্যা নিয়ে
আসতে বলছে তাই রাতে তিন বার ঠান্ডা পানি দিয়ে
গোসল করেছি।আর শীতের রাত তার উপর ঠান্ডা
পানি।ফলাফল স্বরূপ যা চেয়েছি তাই হল।জ্বরে
শরীর পুড়ে যাচ্ছে।হুম আজ আবার মেয়েটার
কাছে যাব।এখন তো বলার মত সমস্যা আছে।
.
:আজ আবার আপনি!চোখ মুখের এ অবস্থা কিভাবে?
লাল হয়ে আছে কেন?
.
:প্রচুর জ্বর।আশা করি ডাক্তারের কাছে আসার এটা
একটা উপযুক্ত কারণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
.
মুহুর্তেই মেয়েটার মুখটা রাগে লাল হয়ে উঠল।তবু
নিজেকে সামনে নিয়ে,
.
:আচ্ছা কিছু নরমাল মেডিসিন দিচ্ছি।তিনদিনের মধ্যে
জ্বর না ভাল হলে আবার আসবেন।
.
:জ্বী ধন্যবাদ।
.
.
মেয়েটা যে কি এমন ঔষধ দিল দুদিনে জ্বর
গায়েব।আমার জ্বর তো এত সহজে ছাড়ার পাত্র না।
নাহ আজ ওকে দেখতে মন চাচ্ছে।যাই দেখেই
আসি ওকে।জ্বর থাকা বা না থাকা পরে দেখছি।
.
.
ওর রুমে যাওয়ার পথে রিসিপশন এর মেয়েটা বলল
স্যার আজকে তো ডাঃ অহনা আহমেদ কোথায়
যেন গেছেন কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে।সরি স্যার
আপনাকে ইনফরমেশনটা দেয়া হয়নি।এক্সট্রিমলি সরি
স্যার।
ইটস ওকে বলে বেরিয়ে এলাম।
.
:এই আপু অহনা কই গেছে রে?ও চেম্বারে নাই
কেন?(বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আপুকে ফোন
দিয়ে)
.
:কই ও তো কোথাও যায়নি।এই একটু আগেই
চেম্বারে যাওয়ার জন্য বের হল।পৌছে ফোনও
তো দিয়েছিল।কেন কি হয়েছে?
.
:কিছু না।রাখি।বাই।
.
মেয়েটা এভাবে দুদিন পর আসতে বলে নিজেই
ভাগল!!একবার তো বলে যায় নাকি মানুষ।আমাকে কি
মানুষ মনে হয় না নাকি?(রাস্তা ফাকা হওয়াই বেশ
জোরেই কথা গুলো বললাম)
.
:কেন আপনাকে বলতে হবে কেন?(পিছন
থেকে অহনা)
.
:আমি জানতে চাই আপনার চলাচল সম্পর্কে তাই।
.
:সে রাইট কি আছে আপনার?আচ্ছা এখন আসছি।
বাইরে যাওয়ার ছুটি নিয়েছি শুনেছেন নিশ্চয়।ছয় দিন
পর পাবেন।
.
:আরে আমার যে খুব জ্বর তার ট্রিটমেন্ট?
.
:আপনার জ্বর তো ভাল হয়ে গেছে মনে
হচ্ছে।আর থাকলেও আপনার নিজেরই তো আমার
থেকে ভাল ট্রিটমেন্ট জানার কথা ডি এম সি এর
সেরা ছাত্র এবং একজন সফল ডক্টর হিসেবে
ডক্টর হাসান।
.
মেয়েটা তাহলে আমার পরিচয় পুরো খুঁজেই
ফেলেছে।হুম অস্বাভাবিক না।নীচের দিকে
তাকিয়ে কি যেন ভাবলাম।হুম যা করার আজই শেষদিন
হয়ত সব বলার।
.
:তুমি জানো কেন আমি তোমার চেম্বারে বারে
বারে আসি।বুঝেছ সেই কারণটা।আমি যেদিন
তোমায় প্রথম দেখি সেদিনই তোমাকে ভাল
লেগে যায়।ভাল লাগাটা কখন ভালবাসায় পরিণত হয়ে
গেছে নিজেও জানিনা।আমার সব খানে শুধুই তুমি।
তুমিহীন হতে আমি পারিনি এক মুহুর্তের জন্যও।
আমার হবে?তোমায় ছাড়া যে থাকা সম্ভব না আমার
পক্ষে।
.
:পারবনা আমিও থাকতে তোমায় ছেড়ে।
.
.
নিজের খুশি ধরে রাখতে পারছিনা।ওকে জড়িয়ে
ধরতে মন চাচ্ছে কিন্তু কি না কি ভাবে।কৌতুহল হচ্ছিল
আমি ডাক্তার ও জানল কিভাবে?প্রশ্নটা করা মাত্র হাসল
ও।
.
:আমি যখন স্টুডেন্ট ছিলাম তখন একদিন কোন একটা
কাগজে দেখেছিলাম ডঃ হাসানকে একজন সফল
ডাক্তার হিসেবে পুরষ্কার হাতে তুলে নিতে।
সুদর্শন চেহারাই মুগ্ধ হয়ে আমি তার প্রেমে
পড়ে যাই।পরে তো তাদের সাথেই আমাদের
আত্মীয়তার সম্পর্ক।
.
:তার মানে আগে থেকেই ভালবাসতে আমাকে?
.
:হু।প্রতি মুহুর্তে চাইতাম শুনতে ভালবাসি।আর এতদিনে
বুদ্ধুর সেটা বলার সময় হয়েছে।
.
.
আর দ্বিধাবোধ না করে জড়িয়ে নিলাম বাহুডোরে।
কিছুক্ষন পর সে রাস্তায় ডক্টর হাসান আর ডক্টর
অহনা হাত ধরে হেটে চলেছে।শুভ হোক এই
ভালবাসার যাত্রা,,দৃঢ় হোক একসাথে ধরা দুটি হাত।
.
.
লেখা:Md Hasan (পিচ্চি রাইটার)
.
গল্পে বোনের কথোপকথন লিখতে গিয়ে খুব
কষ্ট হল।ইশ যদি আমার এমন একটা বোন থাকত
নিজের।বোনহীন ভাইদের পক্ষে এ হয়ত
অনেক বড় এক না পাওয়া।
.
মেয়েটাকে দেখার পর চোখ ফেরাতে সত্যি
কষ্ট হচ্ছিল।কেউ এতটা সুন্দর হতে পারে!অপলক
নেত্রে তাকিয়ে থাকাতে হয়ত মেয়েটা
বিরক্তিবোধ করছিল তাই বারে বারে বিরক্তি নিয়ে
তাকাচ্ছিল।ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ধীর পায়ে প্রস্থান
করলাম।
.
.
আমি হাসান।ঢাকায় বাবা,মা,এক ভাই আর এক বোনকে
নিয়ে থাকা হত।এই কদিন আগেই বোনটার বিয়ে
দিলাম।বোনের বিয়েতেই দেখতে পেয়েছিলাম
সেই অপরূপা অপ্সরীকে।তবে অপ্সরীর পরিচয়
আমার অজ্ঞাত।অহেতুক কৌতুহল মান ইজ্জত
খোয়াতে পারে তাই এর থেকে দূরেই ছিলাম
সেদিন।
.
.
নাহ এই মেয়েটা পেয়েছেটা কি?রাতের ঘুম
কেড়ে নিয়েছে,কাজের থেকে মনযোগ
নিয়ে নিয়েছে।কি ক্ষতি করেছি আমি ওর যে এমন
শত্রুতা করছে?নিজেই এসব মনে মনে ভাবছিলাম
আর হাসছিলাম।ওকে দেখার পর থেকে আমি যে
কাজই করি সেখানেই শুধু ওকে দেখতে পাই।
বাস্তবে না বরং তা অন্তর চক্ষুতে।
.
.
শপিং মলে ফ্রেন্ডদের সাথে শপিং করছিলাম।হঠাৎই
কারো দিকে চোখটা আটকে গেল।আরে এই
তো আমার মিস শত্রু যিনি আমার ঘুম,মনযোগ সব চুরি
করেছেন।আজ আবার বান্ধবীদের সাথে হাসছে
আর আমার আবার ওর হাসির উপর ক্রাশ খাওয়া লাগল।
(বাস্তবে আমি জীবনেও ক্রাশ খাইনি দেইখেন
কিন্তু)ও আর ওর বান্ধবীরা এপ্রন পরে আছে।
এবার বুঝলাম হয় ডক্টর বা মেডিকেলের স্টুডেন্ট।
তাহলে তো আমার সাথে ভালই মিলবে।দূর থেকে
ওর কিছু ছবি তুললাম।৪১ মেগা পিক্সেলের ক্যমেরা
হওয়াতে অবশ্য বুঝার কোন উপায় নেই যে
এগুলো দূর থেকে তোলা ছবি।
.
.
আজ হঠাৎই আপুর বাসায় এসে হাজির হলাম।আপু
আমাকে দেখে ভূত দেখার মত আঁতকে উঠল।
অবশ্য আঁতকে উঠারই কথা।যে ছেলেকে আমার
আপুজান বিয়ের পর একবারও বাসায় আনতে পারেনি
আর কম করে হলেও হাজার বার আসতে বলে ধৈর্য
হারিয়ে ফেলেছে আজ তাকে বিনা ডাকায় পাওয়াতে
আঁতকে উঠা স্বাভাবিকই।
.
:আরে হাসান তুই!
.
:নাহ আমি না আমার ভূত।দেখতেই পাচ্ছিস আমি আবার
জিজ্ঞেস করিস কোন দুঃখে।
.
:তোকে মাইর দেয়া দরকার।
.
:বিয়ে হয়ে আমার মাইরের কথা ভুলে গেলি
নাকিরে আপু?সমস্যা নাই রিপিট করা যাবে তুই চাইলে।হা
হা হা।কিরে বাসায় ঢুকতে দিবি নাকি চলে যাব?
.
:আরে আয় আয়।আমার ভাইটা এই প্রথম বোনের
শ্বশুরবাড়িতে আসল তারে লাথি দিয়ে তো আর
ভাগাতে পারিনা।
.
:হুহ(মুখ বেজার করে)
.
:ওলে আমার ভাইটা নাগ কচ্চে লে।
.
:ওই তুই চুপবি?
.
:ওকে যা চুপ করলাম।এখন বল আব্বু, আম্মু,শুভ
(আমাদের ভাই) কেমন আছে?
.
:আলহামদুলিল্লাহ আপু সবাই ভাল।তোর এদিকের সব
কেমন আছে?দুলাভাইকে দেখছিনা যে।
.
:হুম সবাই ভাল।তোর দুলাভাই তো অফিসে।একটু বস
চলে আসবে।
.
:ওই ভাল আছিস তো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ
আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারিস না!!
.
:ওহ হো ভাই আমার সরি ভুল হয়েছে।আলহামদুলি
ল্লাহ।
.
:শোন একটা কাজে এখানে তোর কাছে এলাম।
.
:এইত এতক্ষনে ভাই আমার লাইনের কথা বলছে।তাই
তো বলি এই ফাজিল পোলার হঠাৎ বলা কওয়া ছাড়া
আগমনির কারণ কি?
.
:যাহ তোর বাসায় আর আসবই না।লাগবেনা তোকে।
আল্লাহ হাফিজ।(সেই মাপের রাগী বলে কথা)
.
:এই এই রেগে যাচ্ছিস কেন!! আপু মজা করে
বুঝিস না?বল কি দরকার।
.
তখনই আবার আপুর শ্বাশুড়ি এল।আমি দাঁড়িয়ে সালাম
দিলাম আর কুশল বিনিময় হল।আপুর শ্বাশুড়িটা নাকি খুব ভাল।
লাখে ওয়ান পিস।তারপর উনি চলে যান কি যেন
কাজের কথা বলে।
.
:মোবাইলে একটা পিকচার বের করে আপুর সামনে
ধরে, "এই দেখতো এই মেয়েটাকে চিনিস কি
না।"
.
:ওই তুই অহনার ছবি কই পাইলি?আর তুলছে কে?
নিশ্চয় হাসাইন্না বান্দর।
.
:ওই বান্দর বলবিনা।এর নাম তাইলে অহনা।তুই চিনিস।ফুল
ডিটেলস বল না রে আপু প্লিজ।
.
:কেস কি খুলে বল তারপর ভেবে দেখব।আর হু
ডিটেলস পেতে চাইলে শর্ত আছে কিন্তু।দিনে
দিনে এত ইনকাম বলে কথা।হি হি হি।
.
:আমি না এই মেয়েটার উপ্রে খাইছি।প্লিজ আপু বল
নারে।
.
:আচ্ছা এই মেয়ের ছবি নিয়ে আমার কাছেই আসলি
কেন?
.
:তোর বিয়েতে দেখছিলাম।ভাবলাম আমাদের
যেহেতু কেউ না তাহলে নিশ্চয় তোর শ্বশুরবাড়ির
কেউ হবে তাই তোর কাছেই নিয়ে এলাম।
.
:হুম বুঝলাম।একটু বস আমি আসছি।
.
আপু উঠে গেল।পাঁচ মিনিট পর রুমের বাইরে আপুর
গলা,"আরে অহনা চলই না আমার ভাইয়ের সাথে পরিচয়
করিয়ে দিই।"নীচু গলায় অন্য মেয়েটি বলছে,থাক
না ভাবী।কেমন লাগছে।আবার আপুর কণ্ঠ, বুঝছি
মেয়ে লজ্জা পাচ্ছে।আরে ব্যাপার না চল জলদি।হাত
ধরে টেনে রুমে ঢুকালো অহনাকে।
.
:হাসান পরিচয় করিয়ে দিই।এ হল আমার একমাত্র ননদ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশুনো
শেষ করে এখন একটা ছোট খাট চেম্বারে
বসছে।তোর কোন সমস্যা হলেই ওর কাছে
চলে যাবি।খুব ভাল ডাক্তার কিন্তু ও।আর অহনা এ হল
হাসান।আমার দুষ্টু মিষ্টি ফাজিল ভাই।তোমাকে ওর কথা
আগেও বলেছি।
:জ্বী ভাবি।(এই প্রথম চোখ তুলে আমার দিকে
তাকিয়ে বলল কথাটি)
আপু এতক্ষন কি বলছে তা শুনার থেকে আমি হা
করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকার প্রতিই মনোনিবেশ
করেছি বোধ হয়।ওর মুখ উঠতে দেখার সাথে
সাথে তড়িৎ গতিতে চোখ সরিয়ে নিলাম।নাহলে
আবার কি ভাবে কে জানে।
.
:আচ্ছা ভাবী আমি এখন যাই।আম্মুকে ঔষধ দিতে
হবে।
.
:আচ্ছা অহনা যাও।
.
:কি বুঝলি?(আপু)
.
:আপু প্লিজ লাইন করায়া দে না রে প্লিজ।আর হু
সিঙ্গেল না ডাবল জিজ্ঞেস করলাম না কারণ ডাবল
মেয়েরা এত্ত লজ্জা কখনো পায়না।প্লিজ আপু
করায়া দে না রে।
.
:ওই আমি পারবনা।তুই নিজে যা পারিস কর।আর হু সব
তো জানলিই তো এখন বখশিশ দে আমারে।তিন
বক্স আইসক্রীম আর হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি।আমার আর
অহনার জন্য।বাকিরা খাবেনা কেউ বিরিয়ানি।
.
:তোরা মেয়েরা না শালার সব স্বার্থপর।ভাইটার মানি
ব্যাগে না টান দিলে চলত না?
.
হঠাৎ দরজার পিছনে কারো হাসির আওয়াজ যদিও শব্দটা
খুব মৃদু ।অতঃপর কারো চলে যাওয়ার শব্দ।
.
:বুঝলি কে ছিল?অহনা ছিল রে।
.
:ও দাঁড়িয়ে ছিল কেন!!আপু লাইন করায়া দিলে প্রমিজ
তোরে পাঁচ প্যাকেট বিরিয়ানি আর দশ বক্স
আইসক্রীম কিনে দিব।প্লিজ্জজ্জজ্জ আপু।
.
:আমি বলছি নিজে যা পারবি করে নে।আর আমি যা
চাইছি নিয়ে আই।দুপুরে এখানে খাবি।আর এখন
থেকে তো আমার ভাইরে মনে হয় ডাকা ছাড়াই
পাওয়া যাবে।হি হি হি
.
:তোরে খামু।গেলাম আমি।নিয়ে আসি যা চাইছস।
.
.
রাস্তায় হাঁটছি আর ভাবছি আপু আমার সম্পূর্ণ পরিচয়
নিশ্চয় ওকে বলেনি নতুবা ওর কাছে আমাকে
চিকিৎসার জন্য যেতে বলত না।আরে এটাই তো
আমার একটা সূবর্ণ সুযোগ।আপুর ইচ্ছামত ওর চাওয়া
জিনিস গুলো কিনলাম।আমার পেশা হিসেবে অবশ্য
আমার আপুটার আবদার খুব বড় না।বাসায় ফিরে আপুকে
বিরিয়ানি আর আইসক্রীমের প্যাক ধরিয়ে চলে
আসতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আপু আর আপুর শ্বশুর বাড়ির
সবাই চেপে ধরল যে প্রথম এসেছি খেয়ে
যেতেই হবে।অগত্যা খেয়েই ফিরলাম আর ডঃঅহনা
আহমেদ এর চেম্বারের ঠিকানাটা নিতেও ভুললাম না।
.
.
আপুর শ্বশুরবাড়ি যেয়ে অহনাকে আমি প্রায়শই
দেখতে পারি কিন্তু তা ভাল দেখায় না।ঠিক করেছি ওর
চেম্বারে গিয়ে রোগের বাহানা দিয়ে ওর সাথে
দেখা করব।যেই ভাবা সেই কাজ।
.
অহনার চেম্বারে সিরিয়াল দিয়ে বসে আছি।মানুষ
আমার কাছে বসে থাকে আর আমি আজ বসে আছি।
হঠাৎই রুম থেকে কোন কারণে অহনাকে বের
হতে দেখলাম।আমার অবশ্য ওকে দেখা হয়ে
গেছে।ওর সাথে চোখাচোখি হয়ে যাওয়াতে ও
এগিয়ে এল।
.
:আরে আপনি?কি মনে করে?
.
:ডক্টরের চেম্বারে মানুষ কেন আসে বলুন
তো?
.
:ওহ আচ্ছা তা সিরিয়ালে কেন আপনি?পরিচিত হওয়ার
সুবাদে আপনি আগেই আসতে পারেন।আসুন আমার
সাথে।
.
ওর সাথে রুমে প্রবেশ করলাম।চেয়ার দেখিয়ে
বসতে বললে বসে পড়লাম।
.
:হুম বলুন কি প্রব্লেম?
.
:শরীর ভাল যাচ্ছেনা তাই এলাম।
.
:কেন শরীর কেন ভাল যাচ্ছেনা?
.
:তা জানলে কি আপনার কাছে আসতাম?
.
খায়া ফালামু লুকে তাকালো অহনা আমার দিকে।বাব্বাহ
ভয় পাইছি যে লুক দিয়েছে।অতঃপর উঠে এসে
হার্ট বিট রেট,,জিহ্বা,,চোখ দেখল।আর আমি ওকে
খুব কাছ থেকে দেখলাম এই প্রথমবার।
.
:কই কোন তো প্রব্লেম দেখছিনা।আচ্ছা আমি
নরমাল কিছু ঔষধ দিচ্ছি খাবেন সেগুলো।
.
:জ্বী ধন্যবাদ।আবার কবে আসব?
.
:আপনার যেদিন কাউকে দেখতে মন চাইবে।
(বিড়বিড় করে)
.
:কিছু বললেন?
.
:জ্বী বললাম যেদিন সমস্যা হবে সেদিন
আসবেন।
.
বিদায় নিয়ে উঠে চলে এলাম।উফফ মেয়েটাকে
যত দেখছি ততই ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।
.
রাতে খাওয়ার পর শুয়ে লেখক আজাদ আবুল কালাম
ভাইয়ের লেখা "রহস্যের অন্তরালে রহস্য" বইটা
সম্পর্কে ফেসবুকে একটা পোস্ট পড়ছিলাম।
আজাদ ভাইয়ের লিখা যে মান সম্মত সে হিসেবে
বইটাও যে ভাল হবে তা চোখ বন্ধ করে বলা যায়।
বইমেলায় যেয়ে কিনতে হবে অবশ্যই বইটা।এমন
সময় ফোন এল। দেখি বড় আপুর ফোন।
অনেকদিন পর ওর ফোন।
.
:কিরে আপু কেমন আছিস?
.
:হুম ভাইয়া ভালই রে।তুই?
.
:আমিও ভাল রে।
.
:এতদিন পর ভুলে ফোন দিলি নাকি?
.
:আরে নাহ।আমার একমাত্র ভাই আমার ননদিনীর
মেয়ের কাছে গেছিল চিকিৎসা নিতে তা শুনে
ভাবলাম খোঁজ নিয়ে দেখি রোগটা কি?
.
:আপু তুই ও না পারিস।ধেত্তেরি।আচ্ছা আপু আমার
সম্পূর্ণ পরিচয় কি ওকে বলেছিস?
.
:আরে নাহ বলিনি তো।তোর জন্য সুযোগ রাখছি।
.
:আমার আপুটা কত্ত ভাল রে।উম্মাহহহহ।
.
:হইছে হইছে আহ্লাদ দেখান লাগব না।মাঝে মাঝে
ফোন দিস।রাখি এখন।আম্মাকে ফোন দিব।
.
:ওকে মাই সুইট আপ্পি।টা টা।
.
.
যাক অহনা তো আমার পরিচয় জানেনা আর সে
হিসেবে আমি ওর কাছে রোগের নাম দিয়ে
যেতেই পারি।দু দিন পর পর আমি যেতে লাগলাম ওর
চেম্বারে।ও বিরক্ত হত না খুশি হত তা বুঝার কোন
কায়দা নেই।অবশ্য আমাকে দেখলেই মেয়েটা কি
বুঝে যেন মুচকি হাসে।কোথাও শুনেছি মেয়েরা
নাকি ছেলেদের মন বোঝে।কে তার কাছে
কেন আসে,,কখন তাকায় সব বুঝে ফেলে।অহনাও
কি তাহলে বুঝে ফেলেছে?বুঝলে তো লালে
লাল।আমি তো চাই ই ও বুঝুক আমি ওকে ভালবাসি।
.
.
এত ঘনঘন আসায় অহনা একদিন কড়া গলায় বলে দিল
সমস্যা ছাড়া এখানে আসবেন না।কথা তো ঠিকই
সমস্যা ছাড়া কে ডাক্তারের কাছে কেন যাবে।
.
.
রাত থেকে জ্বরে অবস্থা কাহিল।সমস্যা নিয়ে
আসতে বলছে তাই রাতে তিন বার ঠান্ডা পানি দিয়ে
গোসল করেছি।আর শীতের রাত তার উপর ঠান্ডা
পানি।ফলাফল স্বরূপ যা চেয়েছি তাই হল।জ্বরে
শরীর পুড়ে যাচ্ছে।হুম আজ আবার মেয়েটার
কাছে যাব।এখন তো বলার মত সমস্যা আছে।
.
:আজ আবার আপনি!চোখ মুখের এ অবস্থা কিভাবে?
লাল হয়ে আছে কেন?
.
:প্রচুর জ্বর।আশা করি ডাক্তারের কাছে আসার এটা
একটা উপযুক্ত কারণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
.
মুহুর্তেই মেয়েটার মুখটা রাগে লাল হয়ে উঠল।তবু
নিজেকে সামনে নিয়ে,
.
:আচ্ছা কিছু নরমাল মেডিসিন দিচ্ছি।তিনদিনের মধ্যে
জ্বর না ভাল হলে আবার আসবেন।
.
:জ্বী ধন্যবাদ।
.
.
মেয়েটা যে কি এমন ঔষধ দিল দুদিনে জ্বর
গায়েব।আমার জ্বর তো এত সহজে ছাড়ার পাত্র না।
নাহ আজ ওকে দেখতে মন চাচ্ছে।যাই দেখেই
আসি ওকে।জ্বর থাকা বা না থাকা পরে দেখছি।
.
.
ওর রুমে যাওয়ার পথে রিসিপশন এর মেয়েটা বলল
স্যার আজকে তো ডাঃ অহনা আহমেদ কোথায়
যেন গেছেন কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে।সরি স্যার
আপনাকে ইনফরমেশনটা দেয়া হয়নি।এক্সট্রিমলি সরি
স্যার।
ইটস ওকে বলে বেরিয়ে এলাম।
.
:এই আপু অহনা কই গেছে রে?ও চেম্বারে নাই
কেন?(বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আপুকে ফোন
দিয়ে)
.
:কই ও তো কোথাও যায়নি।এই একটু আগেই
চেম্বারে যাওয়ার জন্য বের হল।পৌছে ফোনও
তো দিয়েছিল।কেন কি হয়েছে?
.
:কিছু না।রাখি।বাই।
.
মেয়েটা এভাবে দুদিন পর আসতে বলে নিজেই
ভাগল!!একবার তো বলে যায় নাকি মানুষ।আমাকে কি
মানুষ মনে হয় না নাকি?(রাস্তা ফাকা হওয়াই বেশ
জোরেই কথা গুলো বললাম)
.
:কেন আপনাকে বলতে হবে কেন?(পিছন
থেকে অহনা)
.
:আমি জানতে চাই আপনার চলাচল সম্পর্কে তাই।
.
:সে রাইট কি আছে আপনার?আচ্ছা এখন আসছি।
বাইরে যাওয়ার ছুটি নিয়েছি শুনেছেন নিশ্চয়।ছয় দিন
পর পাবেন।
.
:আরে আমার যে খুব জ্বর তার ট্রিটমেন্ট?
.
:আপনার জ্বর তো ভাল হয়ে গেছে মনে
হচ্ছে।আর থাকলেও আপনার নিজেরই তো আমার
থেকে ভাল ট্রিটমেন্ট জানার কথা ডি এম সি এর
সেরা ছাত্র এবং একজন সফল ডক্টর হিসেবে
ডক্টর হাসান।
.
মেয়েটা তাহলে আমার পরিচয় পুরো খুঁজেই
ফেলেছে।হুম অস্বাভাবিক না।নীচের দিকে
তাকিয়ে কি যেন ভাবলাম।হুম যা করার আজই শেষদিন
হয়ত সব বলার।
.
:তুমি জানো কেন আমি তোমার চেম্বারে বারে
বারে আসি।বুঝেছ সেই কারণটা।আমি যেদিন
তোমায় প্রথম দেখি সেদিনই তোমাকে ভাল
লেগে যায়।ভাল লাগাটা কখন ভালবাসায় পরিণত হয়ে
গেছে নিজেও জানিনা।আমার সব খানে শুধুই তুমি।
তুমিহীন হতে আমি পারিনি এক মুহুর্তের জন্যও।
আমার হবে?তোমায় ছাড়া যে থাকা সম্ভব না আমার
পক্ষে।
.
:পারবনা আমিও থাকতে তোমায় ছেড়ে।
.
.
নিজের খুশি ধরে রাখতে পারছিনা।ওকে জড়িয়ে
ধরতে মন চাচ্ছে কিন্তু কি না কি ভাবে।কৌতুহল হচ্ছিল
আমি ডাক্তার ও জানল কিভাবে?প্রশ্নটা করা মাত্র হাসল
ও।
.
:আমি যখন স্টুডেন্ট ছিলাম তখন একদিন কোন একটা
কাগজে দেখেছিলাম ডঃ হাসানকে একজন সফল
ডাক্তার হিসেবে পুরষ্কার হাতে তুলে নিতে।
সুদর্শন চেহারাই মুগ্ধ হয়ে আমি তার প্রেমে
পড়ে যাই।পরে তো তাদের সাথেই আমাদের
আত্মীয়তার সম্পর্ক।
.
:তার মানে আগে থেকেই ভালবাসতে আমাকে?
.
:হু।প্রতি মুহুর্তে চাইতাম শুনতে ভালবাসি।আর এতদিনে
বুদ্ধুর সেটা বলার সময় হয়েছে।
.
.
আর দ্বিধাবোধ না করে জড়িয়ে নিলাম বাহুডোরে।
কিছুক্ষন পর সে রাস্তায় ডক্টর হাসান আর ডক্টর
অহনা হাত ধরে হেটে চলেছে।শুভ হোক এই
ভালবাসার যাত্রা,,দৃঢ় হোক একসাথে ধরা দুটি হাত।
.
.
লেখা:Md Hasan (পিচ্চি রাইটার)
.
গল্পে বোনের কথোপকথন লিখতে গিয়ে খুব
কষ্ট হল।ইশ যদি আমার এমন একটা বোন থাকত
নিজের।বোনহীন ভাইদের পক্ষে এ হয়ত
অনেক বড় এক না পাওয়া।