02-22-2017, 11:07 AM
-বাবা, তুই তাড়াতাড়ি আয়!
-হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আর এক ঘণ্টার মধ্যে চলে আসছি।
সুরভির অবস্থা এখন কেমন?
-মাত্র অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হলো।
ডাক্তার বললেন এখনই ডেলিভারি করাতে হবে।
-আচ্ছা আব্বু তুমি একটু পর পর আমাকে জানাবে কী
হলো!
তন্ময় ফোন কেটে গাড়ির গতি আরও বাড়িয়ে
দিলো। হাইওয়ে রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা। অল্প
সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবে। তন্ময়ের কোনো ইচ্ছা
ছিল না সুরভিকে রেখে এতো দূর যাওয়ার।
অফিসের কাজে বাধ্য হয়েই যেতে হলো। ভাগ্য
এমনই যে যখন সুরভির লেবার পেইন উঠল সে তখন
মিটিংয়ে। মিটিং শেষে দেখে বাবার নাম্বার
থেকে ৩১ বার মিসকল। ফোন দিয়েই শোনে
সুরভিকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। স্ত্রীর এমন
সময়ে স্বামীর থাকার কথা সবচেয়ে কাছে। অথচ
সে তখন দুইশো কিলোমিটার দূরে। তন্ময় এই কথা
শুনে এক মিনিট দেরি করলো না। গাড়ি তৎক্ষণাৎ
বেরিয়ে পড়লো।
ভাবতে ভাবতে তন্ময়ের গাড়ির সামনে একটা
কুকুর এসে পড়ল। সে জোরে ব্রেক চাপে। কিন্তু
গাড়ি থামল না। ঘটনা কী! গাড়ি কি ব্রেক ফেল
করলো! কিছু বোঝার আগেই ধাক্কা খেয়ে কুকুরটা
ছিটকে পড়লো। তন্ময় পেছনে তাকিয়ে সাথে
সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিল। দূরে কতগুলো মাংসপিণ্ড
আর ছেটানো রক্ত। তার মাথা কাজ করছে না।
এভাবে সে একটা প্রাণী মেরে ফেললো!
এদিকে সুরভির চিন্তায় অস্থির লাগছে। গাড়িও
তার নিয়ন্ত্রনে নেই। নিজের ছেলের মুখ দেখা
কি তার কপালে নেই!
তিন বছর প্রেম করে বিয়ে করেছে তন্ময়-সুরভি।
কত পরিকল্পনা করেছে জীবন নিয়ে। গাদাগাদা
বাচ্চার বাবা-মা হবে। সংসারে সুখের অন্ত
থাকবে না।
-তোমার সময় শেষ তন্ময়!
কে বলল? কে বলল এই কথা? এতো ভয়ঙ্কর কণ্ঠ কার!
হঠাৎ গাড়ির ব্যাকভিউ গ্লাসে দেখলো পেছনের
সিটে অদ্ভুত আকৃতির একটা প্রানী। এমন কিছু সে
তার দুঃস্বপ্নেও দেখে নি। এতো ভয়ঙ্কর চেহারা
হওয়া কীভাবে সম্ভব!
তন্ময় বুঝল তার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে
দুশ্চিন্তায়। সে যা শুনছে দেখছে সব মিথ্যা! তার
মস্তিষ্কের তৈরি কল্পনা।
-আমি তোমার দেহ থেকে জীবন আলাদা করতে
এসেছি। তোমার হাতে আর দুই মিনিট সময় আছে।
-কে? কে আপনি?
-আমি সে যাকে তোমরা বলো যমদূত।
-আমি কি সুরভিকে আর কখনো দেখতে পারবো
না! ও কীভাবে থাকবে আমাকে ছাড়া?
-দেহ থেকে জীবন আলাদা করার আগে আমি
সবাইকে শেষ একটা ইচ্ছা পূরণের সুযোগ দেই। তার
ইচ্ছা পূরণও হয়। কিন্তু পৃথিবীর অন্য জীবিত
মানুষেরা কখনোই জানতে পারে না সেটা তার
ইচ্ছা ছিল। তবে তুমি এমন কোনো কিছু চাইতে
পারবে না যাতে তোমার মৃত্যু না হয়। ভাবো
তন্ময় কী চাও! তোমার হাতে একটুও সময় নেই আর।
তন্ময় দেখল বিপরীত দিক থেকে বিশাল একটা
ট্রাক এলোপাথাড়িভাবে চলছে। ড্রাইভার একদম
বেপরোয়া হয়ে চালাচ্ছে। একদম তার গাড়ির
দিকেই আসছে।
আর কয়েকটি মুহূর্ত। তন্ময় মৃত্যুর দিকে এগিয়ে
যাচ্ছে। সে ভাবছে কী হতে পারে তার শেষ
ইচ্ছা! কী হতে পারে! সিদ্ধান্ত নেয়ার সাথে
সাথেই ট্রাকটা তন্ময়ের গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে
ফেললো! চারদিক অন্ধকার। তার সামনে শুধু
পেছনে সিটের থাকা সেই ভয়ানক চেহারা!
__________
হঠাৎ করে একগুচ্ছ আলোর ঝলকানি। সে দেখতে
পেলো মুখোশ পড়া এক লোক তার পেছনে থাপ্পড়
মারছে। ব্যথায় প্রচণ্ড চিৎকার করে উঠলো সে।
চারদিকে একেকজন হেসে উঠছে।
-ছেলেকে মায়ের কাছে দিন।
তার ছোট্ট শরীর রাখা হলো বিছানায়। সামনে
একটা পরিচিত মুখ। আরে এটা তো সুরভি! কিছু
বলতে চেয়েও গলা দিয়ে কোনো কথা বের হলো
না, শুধু অনবরত চিৎকার ছাড়া।
-কাঁদে না লক্ষ্মী আমার! তোমার আব্বু এক্ষুনি
এসে পড়বে।
সে হাত নারিয়ে সুরভিকে বোঝাতে চাইল তন্ময়
আর বেঁচে নেই। শেষ ইচ্ছা অনুসারে যমদূত তাকে
সারাজীবন সুরভির কাছে থাকার সুযোগ দিয়েছে।
নিজেকে অসহায় লাগছে তার। সুরভি কেন কিছুই
বুঝতে পারছে না!
========
শেষ ইচ্ছা
- এম এস আই সোহান
Repost: হেমন্তে বর্ষায় আমি
-হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আর এক ঘণ্টার মধ্যে চলে আসছি।
সুরভির অবস্থা এখন কেমন?
-মাত্র অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হলো।
ডাক্তার বললেন এখনই ডেলিভারি করাতে হবে।
-আচ্ছা আব্বু তুমি একটু পর পর আমাকে জানাবে কী
হলো!
তন্ময় ফোন কেটে গাড়ির গতি আরও বাড়িয়ে
দিলো। হাইওয়ে রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা। অল্প
সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবে। তন্ময়ের কোনো ইচ্ছা
ছিল না সুরভিকে রেখে এতো দূর যাওয়ার।
অফিসের কাজে বাধ্য হয়েই যেতে হলো। ভাগ্য
এমনই যে যখন সুরভির লেবার পেইন উঠল সে তখন
মিটিংয়ে। মিটিং শেষে দেখে বাবার নাম্বার
থেকে ৩১ বার মিসকল। ফোন দিয়েই শোনে
সুরভিকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। স্ত্রীর এমন
সময়ে স্বামীর থাকার কথা সবচেয়ে কাছে। অথচ
সে তখন দুইশো কিলোমিটার দূরে। তন্ময় এই কথা
শুনে এক মিনিট দেরি করলো না। গাড়ি তৎক্ষণাৎ
বেরিয়ে পড়লো।
ভাবতে ভাবতে তন্ময়ের গাড়ির সামনে একটা
কুকুর এসে পড়ল। সে জোরে ব্রেক চাপে। কিন্তু
গাড়ি থামল না। ঘটনা কী! গাড়ি কি ব্রেক ফেল
করলো! কিছু বোঝার আগেই ধাক্কা খেয়ে কুকুরটা
ছিটকে পড়লো। তন্ময় পেছনে তাকিয়ে সাথে
সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিল। দূরে কতগুলো মাংসপিণ্ড
আর ছেটানো রক্ত। তার মাথা কাজ করছে না।
এভাবে সে একটা প্রাণী মেরে ফেললো!
এদিকে সুরভির চিন্তায় অস্থির লাগছে। গাড়িও
তার নিয়ন্ত্রনে নেই। নিজের ছেলের মুখ দেখা
কি তার কপালে নেই!
তিন বছর প্রেম করে বিয়ে করেছে তন্ময়-সুরভি।
কত পরিকল্পনা করেছে জীবন নিয়ে। গাদাগাদা
বাচ্চার বাবা-মা হবে। সংসারে সুখের অন্ত
থাকবে না।
-তোমার সময় শেষ তন্ময়!
কে বলল? কে বলল এই কথা? এতো ভয়ঙ্কর কণ্ঠ কার!
হঠাৎ গাড়ির ব্যাকভিউ গ্লাসে দেখলো পেছনের
সিটে অদ্ভুত আকৃতির একটা প্রানী। এমন কিছু সে
তার দুঃস্বপ্নেও দেখে নি। এতো ভয়ঙ্কর চেহারা
হওয়া কীভাবে সম্ভব!
তন্ময় বুঝল তার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে
দুশ্চিন্তায়। সে যা শুনছে দেখছে সব মিথ্যা! তার
মস্তিষ্কের তৈরি কল্পনা।
-আমি তোমার দেহ থেকে জীবন আলাদা করতে
এসেছি। তোমার হাতে আর দুই মিনিট সময় আছে।
-কে? কে আপনি?
-আমি সে যাকে তোমরা বলো যমদূত।
-আমি কি সুরভিকে আর কখনো দেখতে পারবো
না! ও কীভাবে থাকবে আমাকে ছাড়া?
-দেহ থেকে জীবন আলাদা করার আগে আমি
সবাইকে শেষ একটা ইচ্ছা পূরণের সুযোগ দেই। তার
ইচ্ছা পূরণও হয়। কিন্তু পৃথিবীর অন্য জীবিত
মানুষেরা কখনোই জানতে পারে না সেটা তার
ইচ্ছা ছিল। তবে তুমি এমন কোনো কিছু চাইতে
পারবে না যাতে তোমার মৃত্যু না হয়। ভাবো
তন্ময় কী চাও! তোমার হাতে একটুও সময় নেই আর।
তন্ময় দেখল বিপরীত দিক থেকে বিশাল একটা
ট্রাক এলোপাথাড়িভাবে চলছে। ড্রাইভার একদম
বেপরোয়া হয়ে চালাচ্ছে। একদম তার গাড়ির
দিকেই আসছে।
আর কয়েকটি মুহূর্ত। তন্ময় মৃত্যুর দিকে এগিয়ে
যাচ্ছে। সে ভাবছে কী হতে পারে তার শেষ
ইচ্ছা! কী হতে পারে! সিদ্ধান্ত নেয়ার সাথে
সাথেই ট্রাকটা তন্ময়ের গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে
ফেললো! চারদিক অন্ধকার। তার সামনে শুধু
পেছনে সিটের থাকা সেই ভয়ানক চেহারা!
__________
হঠাৎ করে একগুচ্ছ আলোর ঝলকানি। সে দেখতে
পেলো মুখোশ পড়া এক লোক তার পেছনে থাপ্পড়
মারছে। ব্যথায় প্রচণ্ড চিৎকার করে উঠলো সে।
চারদিকে একেকজন হেসে উঠছে।
-ছেলেকে মায়ের কাছে দিন।
তার ছোট্ট শরীর রাখা হলো বিছানায়। সামনে
একটা পরিচিত মুখ। আরে এটা তো সুরভি! কিছু
বলতে চেয়েও গলা দিয়ে কোনো কথা বের হলো
না, শুধু অনবরত চিৎকার ছাড়া।
-কাঁদে না লক্ষ্মী আমার! তোমার আব্বু এক্ষুনি
এসে পড়বে।
সে হাত নারিয়ে সুরভিকে বোঝাতে চাইল তন্ময়
আর বেঁচে নেই। শেষ ইচ্ছা অনুসারে যমদূত তাকে
সারাজীবন সুরভির কাছে থাকার সুযোগ দিয়েছে।
নিজেকে অসহায় লাগছে তার। সুরভি কেন কিছুই
বুঝতে পারছে না!
========
শেষ ইচ্ছা
- এম এস আই সোহান
Repost: হেমন্তে বর্ষায় আমি