Forums.Likebd.Com

Full Version: গল্পঃ- সম্পর্কের কথা
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের রেজাল্ট পাবলিশড হইছে
অনেক আগেই। কিন্তু মার্ক শিট দেওয়া বাকি ছিল।
কিছুক্ষণ আগে জিহাদ ফোন করে বলল আজ নাকি
মার্ক শিট দিছে। মার্ক শিট নিয়ে আমার কোনরকম
মাথা ব্যথা ছিল না আমি প্রথম বর্ষের মত এবারো
যথারীতি এক সাবজেক্টে ফেল করছি। আমার
রেজাল্ট দেখে ব্যাচমেট অনেকেই জিজ্ঞাসা
করেছিল তুইতো নিয়মিত ক্লাস করিস তুই ফেল করলি
কিভাবে? আমি ওদের কথার কোন যথাযথ উত্তর
দিতে পারিনি। মুচকি হেসে বলেছিলাম শুধু ক্লাস
করলেই হয়রে পাগলা পড়ালেখা করতে হয়। জিহাদের
ফোন পাওয়ার পর আমি অবন্তীকে ফোন দিলাম
পরাপর তিনবার কল দিলাম কিন্তু রিসিভ করলো না।
অবন্তী আমাদের ডিপার্টমেন্টের টপক্লাস স্টুডেন্ট
প্লাস আমার ভাল একজন ফ্রেন্ড। ওর সাথে আমার
ফ্রেন্ডশিপ হয় প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার সময়।
আমার আর ওর পাশাপাশি ছিট পরছিল। ওর রোলনম্বর
অবশ্য আমার চেয়ে অনেক কম ছিল কিন্তু কিভাবে
যেন সিট প্লানিং এর সময় আমার আর ওর
পাশাপাশি ছিট পরে যায়। আমি যে বেঞ্চে
ছিলাম তার ডান পাশের বেঞ্চে ও বসেছিল ।
পরীক্ষার হলে গিয়ে অবশ্য দেখেছিলাম ও আমার
পাশের বেঞ্চে।পরীক্ষার প্রথম দিন প্রশ্ন দেখে
মাথা ঘুরে গেল সামথিং কয়েকটা প্রশ্ন কমন পরছে।
প্রশ্ন দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল নির্ঘাত ফেল
ছাড়া অন্যকিছু হবে না। কিছুক্ষণ বসে থেকে লেখা
শুরু করলাম এক ঘন্টা যাওয়ার পর আর কিছুই লিখতে
পারছিলামনা। কলম মুখে দিয়ে বসে ছিলাম। ইচ্ছা
করলে অবন্তীর খাতা দেখে লিখতে পারি কিন্তু
চক্ষুলজ্জার কারণে লিখছিলাম না তাছাড়া ওর
সাথে পুরা একটা বছরে একটা কথাও বলি নাই। এখন
কিভাবে ওর কাছে হেল্প চাইবো? কলম চিবাইতে
চিবাইতে হঠাৎ অবন্তীর দিকে নজর পড়লো দেখলাম
আমার দিকে কটু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার
তাকাতে দেখেই আস্তে করে জিজ্ঞাস করলো লিখ
না কেন?আমাদের মাঝে বেশী দূরত্ব না থাকায়
আমি ওর কথা স্পষ্ট শুনতে পেলাম। আমি বললাম কমন
নাই লিখব কিভাবে? অবন্তী ওর খাতার একটা পৃষ্ঠা
উল্টে দিল বেঞ্চের পাশে তারপর বলল এখন লিখতে
থাকো। আমি ওর পৃষ্ঠা দেখে লেখা শুরু করেছিলাম।
সেদিন হল থেকে বের হয়ে ওকে ধন্যবাদ জানাতে
ভুল করিনি। তারপর প্রায় প্রতিটা পরীক্ষায় ওর
খাতা দেখে লিখতাম। কিন্তু বিপত্তি বাধলাম
রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষার দিন স্যার কিভাবে যেন
বুঝে গেল আমি অবন্তীর খাতা দেখে লিখছি তারপর
আমাকে ওই বেঞ্চ থেকে উঠিয়ে দিল। ফলাফল
রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাবজেক্টে ফেল আবার ইম্প্রুভ
পরীক্ষা দিলাম।
(২)
প্রতিদিন পরীক্ষা শেষে ওর সাথে হালকা পাতলা
কথা বলতাম। প্রথম বর্ষের লাস্ট পরীক্ষার দিন ওর
ফেসবুক আইডি নিলাম। পরীক্ষা শেষে ও বাসায়
চলে গেল। মাঝেমাঝে ফেসবুকে কথা বলতাম ভাল
লাগা খারাপ লাগা শেয়ার করতাম এভাবে ছুটি
কেটে গেল। দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হলে ওর সাথে
মেলামেশা বেড়ে গেলো দুই জনের সম্পর্ক তুমি
থেকে তুইয়ে নেমে এলো। শুরু হল আমাদের বন্ধুত্বের
নতুন অধ্যায়। শুরু হলো নতুন এক সম্পর্ক।
.
প্রতিটা সম্পর্কই, একটা গাছের মতো, একটা পাখির
মত,আবার নতুন কেনা কোন জিনিসের মত। একটা
গাছে যদি নিয়মিত পানি দেওয়া হয় গাছের পাশে
জন্মানো আগাছা ছেঁটে ফেলা হয় তাহলে গাছ খুব
তাড়াতাড়ি বড় হতে থাকে। তেমনি সম্পর্ক যদি
নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়। সম্পর্কের মাঝে জন্ম
নেওয়া আগাছা ছেঁটে ফেলা হয় তাহলে সম্পর্ক খুব
গভীর হয়।
.
একটা পাখি যদি দুই ডানা ব্যবহার না করে উড়তে
চায় তাহলে পাখি বেশী সময় উড়তে পারে না।পাখি
দীর্ঘ সময় উড়তে চাইলে পাখির দুই ডানা ব্যবহার
করতে হয়। তেমনি কোন সম্পর্ক যদি একজন টেনে
নিতে চায় তাহলে সম্পর্ক গভীর করা যায় না।
সম্পর্ক গভীর করতে হলে দুজনকেই সমান ভাবে ডানা
উড়াতে হয়। না হলে যেকোনো একজন ডানা উড়াতে
উড়াতে ক্লান্ত হয়ে যায়।
.
নতুন কেনা কোন জিনিসের প্রতি আমাদের আকর্ষণ
ভালবাসা আগ্রহ সবকিছুই বেশী থাকে। যখন কোন
নতুন জিনিস কেনা হয় তখন ওই জিনিসের প্রতি একটু
বেশী যত্ন নেওয়া হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে জিনিস
পুরাতন হয়ে গেলে ওই জিনিসের প্রতি ভালবাসা
কমে যায় কোন একদিন ওই জিনিসকে ডাষ্টবিনে
ফেলা দেওয়া হয়। তেমনি যখন কোন সম্পর্ক শুরু হয়
তখন সম্পর্কের প্রতি সবার ভালবাসা একটু বেশী
থাকে। সম্পর্কের প্রতি যত্ন থাকে। সম্পর্ক পুরাতন
হওয়ার সাথে সাথে সম্পর্কের মধ্যে থাকা
ভালবাসা যত্ন হারিয়ে গিয়ে ওই স্থানে অবহেলা
আর ঘৃণা জাগয়া করে নেয়।
,
(৩)
আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল একটি গাছের মত
করেই। ভালভাবে পরিচর্যা করে নিয়েছিলাম দুজনে
মিলে। ব্যাচমেটদের বলা বিভিন্ন কটু কথার মত
আগাছা গুলোও ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। দুজনের
মাঝে খুব ভাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছিল।
দুজনের বোঝাপড়া খুব ভালছিল। কিন্তু ওইযে সময়ের
পরিবর্তন। সম্পর্কের শুরুতে কোন কিছু জিজ্ঞাসা
করলে খুব উৎসুক হয়ে সব বলে দিত। কিন্তু এখন কিছু
জিজ্ঞাসা করলে কৈফিয়ত চাওয়া হয়। আগে
ফাজলামি করলে ওগুলো ফাজলামিই মনে হতো
কিন্তু এখন বাড়তি কথা মনে হয়। আগে ফোন রিসিভ
না করলে জিজ্ঞাস করলে বলেদিতো কী করছে।
কয়েকদিন আগে জিজ্ঞাস করায় বলল, ফোন না
রিসিভ করা মানেই ফোনের কাছে ছিলাম না তুই
বুঝিস না। আমি সেদিন চুপ করেছিলাম কিছু বলতে
পারি শুধু ওর পরিবর্তন লক্ষ্য করছিলাম। এখন আমার
অনেক কাজই ওর ভাল লাগে না। আমি ওর ভাল লাগা
নিয়ে কখনো প্রশ্ন তুলি না শুধু ওর সামনে ওই কাজটা
করা বাদ দিয়ে দেই। আরো বিভিন্ন কারণে
অকারণে বুঝতে পারছিলাম আমাদের সম্পর্কটা
প্রায় শেষ হওয়ার দিকে। তিনবার ফোন দিয়েও যখন
রিসিভ করলো না তখন ভাবলাম দুপুর হয়ে গেছে
খাওয়া দাওয়া করে হয়তো ঘুমাচ্ছে। বিকালে আবার
ফোন দিলাম রিসিভ হলো না। সন্ধার পর ফোন
দিলাম এখনো ফোন রিসিভ করলো না। ফেইসবুকে
ঢুকে দেখলাম অবন্তী নামের পাশে সবুজ বাতি
জ্বলজ্বল করে। ওকে নক করলাম কোন সাড়াশব্দ নাই
পরাপর দুই তিনটা ম্যাসেজ দিলাম। তারপর রিপ্লাই
আসলো তোর সমস্যা কী? আমি বললাম আমার কী
সমস্যা হবে? দিনভর ফোন দিতেছি রিসিভ করিস
নাই কেন? অবন্তী রিপ্লাই দিল এমনি দেই নাই তোর
কাছে কৈফিয়ত দিতে আমি রাজি নাই আর তোর
বাড়তি কথা আমার ভাল লাগে না। আমি ওর
রিপ্লাই দেখে অবাক হয়ে গেলাম। তারপর বললাম
আমি কারো কৈফিয়ত চাইতে ফোন দেই নাই। আজ
মার্ক শিট দিছে আপনার পয়েন্ট জানতে ফোন
দিছিলাম এই কথাও যে আপনার কাছে কৈফিয়ত হয়ে
যাবে জানাছিল না।বেস্ট ওফ লাক আপনাকে আর
কখনো ফোন দিব না। একটা কথা মনে রাখবেন মানুষ
চেঞ্জড হতে সময় লাগে না। অতঃপর আরেকটা
সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল। আমি জানতাম সম্পর্ক শেষ
হয়ে যাবে কিন্তু এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে
কল্পনাও করছিলাম না। আমি জানিনা কেন আমার
সাথে বারবার এমন হয়। তখন ক্লাস কেবল নাইনে
উঠছি আব্বু একটা দাখিল মাদ্রায় ভর্তি করে দিল।
মাদ্রাসায় হোস্টেল ছিল হোস্টেলে থাকম আমার
ক্লাসমেট এক বড় ভাইয়ের সাথে খুব ভাল সম্পর্ক
হয়ে গেল। উনি আমার থেকে বয়স বড় ছিল। উনি
হাফেজি পড়া শেষ করে তারপর মাদ্রাসায় পড়া শুরু
করছিল এজন্য উনার বয়স বেশী ছিল। আমি উনাকে
ভাই বলে ডাকতাম ক্লাসমেট হলেও অনেক শ্রদ্ধা
করতাম। উনিও আমাকে খুব স্নেহ করতেন। কিন্তু ওই
যে সময় আস্তে আস্তে উনার সাথেও সম্পর্ক শিথিল
হয়ে গেল। দুইটা বছর খুব কষ্টে পার করছিলাম। একই
সাথে পড়ে একই রুমে থাকার পরেও শিথিলতা আমার
দম বন্ধ হয়ে আসতো। মাদ্রাসার পড়া শেষ করে
কলেজে উঠলাম। কলেজে উঠে নতুন ফোন কিনলাম
একটা ফেসবুক আইডি খুললাম। ফেসবুকে হালকা
পাতলা লেখালেখি করার সুবাদে এক বিবাহিত বড়
আপুর সাথে সম্পর্ক হলো। আমার কোন বোন না
থাকায় উনাকে বড় বোনের মত শ্রদ্ধা করতাম। উনিও
আমাকে ছোট ভাইয়ের মতই স্নেহ করত কারণ উনার
কোন ভাই ছিল না। একপর্যায় এসে আমার কথা তার
ভালো লাগতো না আমার ব্যবহার তার ভাল লাগতো।
ফল সেই একই উনার সাথেও আস্তে আস্তে সম্পর্ক
শিথিল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত উনাকে ফেসবুক থেকে
ব্লোক করে দেই। উনার নাম্বার ডিলেট করে দেই
উনার আর উনার বেবির অনেক ছবি ছিল ছবি গুলাও
ডিলেট করে দেই। আজও আবার একই ঘটনার
পুনরাবৃত্তি।আরো একটা সম্পর্কের মৃত্যু। এই অবস্থায়
আমার কবিতার কিছু লাইন মনে পরছে।
বেশ ভালোইতো ছিলি, কী সুন্দরই না ছিল জীবনটা;
হাসি খুশিতেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো,
তবে কেন আবার দুঃখ টেনে আনলি?
আবার কেন গড়তে গেলি?
জানিতিসতো আবার ভেঙে যাবে,
তবে কেন গড়ার কারিগর হতে গিয়েছিলি?
তুই জানিস না? তোর মত অভাগার কপালে গড়ার
লিখন নাই।
তবে কেন বার বার একই ভুল করিস?
আসলেই এই গড়ার ভাগ্যটা আমার নাই। সৃষ্টিকর্তা
আমার ভাগ্যে গড়ার লিখন লিখে নাই হয়তো। নাইলে
বারবার কেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
.
বাস্তব জীবনে খেয়াল করলে দেখা যায় কিছু মানুষ
সবার সাথেই খুব সহজেই মিশে যায়।এই মানুষ গুলা
জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই ধারাবাহিক ভালে
সফলতা লাভ করে।প্রতিটা কাজই এরা খুব সুন্দরভাবে
কোনপ্রকার বাধা ছাড়াই করে ফেলতে পারে।
পৃথিবীতে এই শ্রেণীর মানুষ গুলা খুবই ভাগ্যবান।
আরেক শ্রেণীর মানুষ আছে এরা কিছুটা লাজুক
প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই শ্রেণীর মানুষ খুব সহজেই
কারো সাথে মিশতে পারে না।খুব আস্তে আস্তে
এরা মানুষের সাথে মিশে। সাড়া জীবনে এরা অল্প
কিছু মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। এই সম্পর্ক
গুলার দাম এদের কাছে অনেক বেশী থাকে। কিন্তু
সম্পর্কের ধারাবাহিতা এরা ধরে রাখতে পারে না
একটা সময় সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। শুধু সম্পর্কের
ক্ষেত্রে না জীবনের কোন কাজেই এরা
ধারাবাহিক সফলতা লাভ করতে পারে না। আস্তে
আস্তে কোন কাজের সফলতা লাভ করলেও কিছুদিন
পর সফলতা হারিয়ে ফেলে। এরাই পৃথিবীর সবচেয়ে
অভাগা। আমি নিজেই মনে হয় এই দলের একজন। কারণ
আমার বৈশিষ্ট্য এই দলের সাথে মিলে যায়। একদম
শেষ শ্রেণীর মানুষগুলা একরোখা প্রকৃতির হয়ে
থাকে। এরা নিজেরা যা মনে করে তাই করে থাকে।
পৃথিবীর সব মানুষ যদি এদের বিপক্ষে যায় তবুও এরা
এদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে যায় না।এরাই
পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের অন্তর্ভুক্ত কারণ
কারো কটু কথায় এদের কিছু আসে যায় না।
(৪)
অবন্তীকে ম্যাসেজটা দিয়েই ফেসবুক থেকে বের
হয়ে আসলাম। আমি জানি আমার ম্যাসেজ সিন হবে
কিন্তু কোন রিপ্লাই আসবে না। আর এও জানি আমার
সাথে সম্পর্ক রাখা না রাখা নিয়ে ওর কোন মাথা
ব্যথা নাই।বরং ও আরো ভাল থাকবে আমার কৈফত
আর বাড়তি কথা ওকে শুনতে হবে না। ফেসবুক থেকে
বের হওয়ার পরই এশার আজান দিলো। আজকে আর
নামাজ পড়তে ইচ্ছা করলো না। মুবাইল চর্যে দিয়ে
লেপ টেনে শুয়ে পরলাম। মা নামাজ পড়ে খাওয়ার
জন্য ডাকলে মাকে বলে দিলাম আমার ক্ষুধা নাই।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে ক্লাসে গেলাম।
দেখলাম অবন্তীও ক্লাসে এসেছে। কেউ কারো
সাথে কথা বললাম না। আমি আমার ক্লাসমেটদের
সাথে হাসি ঠাট্টা করে স্বাভাবিক ভাবেই দিনটা
পার করে দিলাম।কাউকে বুঝতে দিলাম না আমাদের
মাঝে কী হইছে। আমাদের বিচ্ছেদের একমাস কেটে
গেলো কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বললাম না।
এখন আমি আগের মত ক্লাস করি না। ক্লাসে এসে
অবন্তীকে দেখলেই কেমন খারাপ লাগতে শুরু করে।
আগে কী সুন্দর হাসি ঠাট্টা করতাম কথা বলতাম
কিন্তু এখন? ওর দিকে তাকালেই অটোমেটিক মন
খারাপ হয়ে যায় এজন্য ক্লাস করা বাদ দিলাম।
আমি বুঝতে পারলাম আমাকে স্থান ত্যাগ করতে
হবে। স্থান ত্যাগ করা ছাড়া অতীত ভুলা একেবারেই
সম্ভব না। আমি শুধু গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস গুলা করতে
লাগলাম। বাসায় এসে প্রচুর পরিমাণ স্টাডি শুরু
করলাম যেভাবেই হোক এবার ভাল রেজাল্ট করতে
হবে। ভাল রেজাল্ট করে ট্রান্সফার নিতে হবে।
দেখতে দেখতে একবছর কেটে গেলো তৃতীয় বর্ষের
পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিলো আমি আরো ভাল
প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। এবার সবগুলা পরীক্ষাই
অটোমেটিক ভালো হয়ে গেলো। পরীক্ষা দিয়ে
বাড়িতেই সময় কাটিয়ে দিলাম। আজ তৃতীয় বর্ষের
রেজাল্ট দিবে এই প্রথম ভার্সিটির রেজাল্ট নিয়ে
আমার খুব টেনশন হচ্ছে জানি পাশ করব।কিন্তু ভাল
রেজাল্ট নিয়ে খুব টেনশন হচ্ছে। দুরুদুরু বুকে
ভার্সিটিতে গেলাম ১২টার পর রেজাল্ট দিলো।
রেজাল্ট দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি
এমন রেজাল্ট করতে পারি। আমি আমাদের
ডিপার্টমেন্টে পঞ্চম স্থান লাভ করছি। নিজের
কাছে অনেক খুশি লাগছে অনেকদিন পর প্রাণখুলে
হাসলাম। রেজাল্ট পাওয়ার পর আমাদের
ডিপার্টমেন্টের সহকারী বিভাগীয় প্রধান স্যারের
কাছে গেলাম। এই স্যারের সাথে আমার ভাল
সম্পর্ক স্যার আমার এক চাচার ক্লাসমেট ছিল সেই
সুবাদে স্যারের সাথে আমার পরিচয় হয়। স্যারে
কাছে গিয়ে বললাম স্যার ট্রান্সফার নিবো। স্যার
আমার কথা শুনে বলল কী বলো? তোমার বাসা
এখানে তারপর আছে মাত্র এক বছর এখন ট্রান্সফার
দিয়ে কী করবা? আমি বললাম স্যার গাজীপুর একটা
কম্পানিতে চাকরী পাইছি। ওখানে চাকরী করব
অতদূর চাকরী করে এখানে এসেতো ক্লাস করা সম্ভব
না প্লিজ স্যার কিছু একটা করেন।স্যার কিছুক্ষণ
ভাবলো তারপর বলল বাসায় বলছো? আমি বললাম
জ্বী স্যার বাসায় অনেক আগেই বলছি বাসা থেকে
সবাই রাজি।স্যার বলল আচ্ছা তুমি মার্ক শিট আর
একটা দরখাস্ত নিয়ে কাল আমার সাথে দেখা করো
আমি বিভাগীয় প্রধান স্যারের সাথে কথা বলব।
স্যারকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্যারের রুম থেকে
বেরিয়ে আসলাম। স্যারের রুম থেকে বের হয়ে
কেরানী চাচার রুমে আসলাম। জিজ্ঞাসা করলাম
মার্কশিট কবে দিবে? চাচা বলল ফারুক স্যারের
কাছে মার্কশিট।চাচার রুম থেকে বের হয়ে চলে
আসলাম ফারুক স্যারের রুমে। সালাম দিয়ে স্যারের
রুমে ঢুকলাম তারপর স্যারের কাছে মার্কশিট
চাইলাম স্যার আমার মার্কশিট বের করে আমার
দিকে তাকিয়ে বলল এত ভাল রেজাল্ট করলি কী
করে? আমি বললাম ট্রান্সফার নেওয়ার জন্য।স্যার
আমার কথা শুনে বলল মানে? স্যার ট্রান্সফার
নিবো। স্যার বলল ট্রান্সফার নিবি কেন? স্যারকে
আগের স্যারকে বলা কথার পুনরাবৃত্তি করলাম। স্যার
মার্কশিট দিয়ে দিলো মার্কশিট নিয়ে স্যারের রুম
থেকে চলে আসলাম।
.
বাড়ি এসে মাকে বললাম গাজীপুর একটা
কম্পানিতে চাকরী পাইছি ওখানে চলে যাব। মা
বলল কবে চাকরী পাইলি কিভাবে পাইলি? যাবি
কবে? আমি বললাম মা হাসিব চাকরী ঠিক করে
দিছে আর আজকে আমাকে বলছে।কয়েকদিন পরেই
চলে যাবো। মা জানতো হাসিব আমার বাল্যবন্ধু ও
গাজীপুর ন্যাশনাল ভার্সিটিতে পড়ে আর চাকরী
করে। মা হাসিবের কথা শুনে কিছু বলল না। মা অন্য
রুমে চলে গেলে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে এসে
হাসিবকে ফোন দিলাম। হাসিবকে সবকিছু খুলে
বললাম ওকে বকে দিলাম আমি ট্রান্সফার নিয়ে
গাজীপুর ন্যাশনাল ভার্সিটিতে আসছি। আমার
ট্রান্সফারের কথা শুনে হাসিব খুব খুশি হলো।
(৪)
সকালে ঘুম থেকে উঠে ভার্সিটিতে গেলাম।
কম্পিউটারের দোকান থেকে দরখাস্ত লিখে
সহকারী বিভাগীয় প্রধান স্যারের কাছে গেলাম
স্যার প্রয়োজনীয় কাগজ রেখে বলল কাল পরশু
আসো। বুঝতেই পারছো ট্রান্সফার বলে কথা। আমি
বললাম জ্বী স্যার আমি তাহলে আজকে আসি। স্যার
কয়েকদিনের কাজ দুইদিনেই করে দিলো। আজ
শেষবারের মত ভার্সিটিতে আসলাম স্যার আমাকে
সাথে করে অধ্যক্ষ স্যারের রুমে ঢুকলো।
ট্রান্সফারের সব কাগজ অধ্যক্ষ স্যার সাইন করে
দেওয়ার পর অধ্যক্ষ স্যারের রুম থেকে বের হয়ে
আসলাম। সহকারী বিভাগীয় প্রধান স্যার বলল
ভালো করে পড়ো যাওয়ার সময় বন্ধুদের সাথে দেখা
করে বিদায় নিও। আমি কোন কথা বললাম না আমার
চোখদুটো লাল হয়ে গেছে মাথা নাড়িয়ে স্যারের
কথায় সম্মতি জানিয়ে বললাম স্যার আমি আসি
আমার জন্য দোয়া করবেন।ভার্সিটির গেটের কাছে
এসে দেখলাম অবন্তী আমাদের ব্যাচমেট একছেলের
সাথে হেসে হেসে কথা বলছে আর ফুচকা খাচ্ছে।
আমি দূর থেকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম মনে
মনে ভাবলাম ও হয়তো ওর মর কাউকে পাইছে। হঠাৎ
করেই অবন্তীর চোখ পড়লো আমার দিকে। আমার
দিকে তাকানোর পরেই ওর মুখের হাসি বন্ধ হয়ে
গেলো। ও হয়তো আমাকে এভাবে আশা করেনি। ওর
সাথে চোখাচোখি হতেই আমি চোখ নামিয়ে
ট্রান্সফার সার্টিফিকেটের দিকে তাকিয়ে একটা
রিক্সা ডেকে রিক্সায় উঠে বসলাম।কারো কাছেই
বললাম না আমি ট্রান্সফার নিয়েছি। কারণ শেষবার
বিদায়ের সময় কাউকে বলতে হয়। একা একাই বিদায়
নিয়ে চলে আসতে হয়। আজ একবছর অবন্তীর সাথে
আমার কথা হয়না অথচ ওই একদিন বলেছিল আমিতো
তোর লাইফের ফার্স্ট মেয়ে বন্ধু ভার্সিটির পড়া
শেষ হয়ে গেলে আমাকে ভুলে যাবি? ভুলে গেলে
তোর বাড়ি চলে যাবো। ওইদিন আমি বলতে
চাইছিলাম এই কথা যারা বলে তারাই সবার আগেগে
ভুলে যায়। কিন্তু ওর মন খারাপ হবে ভেবে বলা
হয়নি। তাছাড়া আমি জানি ও কথাটা আবেগের
বশেই বলেছিল। এখন হয়তো ওর মনেই নেই ও কোনদিন
ওরকম কথা বলেছিল।আমি চাইলে আবার অবন্তীর
সাথে আমার সম্পর্ক কনটিনিউ করতে পারতাম। কিন্তু
আমি চাইনি এক ডানায় পাখি উড়াতে উড়াতে
ক্লান্ত হয়ে যেতে। আমি চাইনি একপক্ষীয় ভাবে
সম্পর্ক এগিয়ে নিতে। তাছাড়া আমি দেখতে
চাইছিলাম ও আগে থেকে এসে আমার সাথে কথা
বলে কিনা কিন্তু আমার ধারণা ছিল ভুল। আমি যদি
আবার ওর সাথে কথা বললাত তাহলে আমাদের
সম্পর্কটা ডাষ্টবিনে ছুড়ে ফেলা হতো। নতুন কেনা
গায়ের শার্ট কিনলে সেই শার্ট খুব ভালো লাগে।
শার্ট পরে কোথাও গেলে অনেকেই প্রশংসা করে
তখন নিজের কাছে খুব ভাল লাগে। কিন্তু কিছুদিনপর
শার্ট পুরাতন হয়ে গেলে তখন সেই শার্ট আর ভালো
না। একসময় শার্ট ডাষ্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিয়ে
আবার নতুন শার্ট কেনা হয়। শার্টের মতোই আমাদের
সম্পর্ক ছুড়ে ফেলা হতো। ছুড়ে ফেলার আগেই আমি
নিজে থেকেই সরে গেছি।
.
বাসায় এসে ব্যাগ নিয়ে মায়ের কাছে বলে গাজী
পুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ষ্টেশন থেকে বাসে
উঠালাম এক ঘন্টা পর বাস ফেরিঘাটে চলে আসলো।
ফেরি চলতে শুরু করলে আমি বাস থেকে নেমে এসে
ফেরির এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ালাম।পকেট থেকে
মুবাইল বের করে মুবাইলের সীম খুলে পদ্মা নদীতে
ভাসিয়ে দিলাম।নতুন সীল ওপেন করে কয়েকজন
বাল্যবন্ধুকে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিলাম এটা
আমার নতুন নম্বর এখন থেকে এটায় এক্টিভ থাকবো।
ম্যাসেজ পাঠানো শেষ হলে ফেসবুকে ঢুকে আইডি
ডিলেট করে দিলাম চৌদ্দ দিন পর আইডি ডিলেট
হয়ে যাবে। মনে মনে বললাম দ্যা চ্যাপ্টার ইজ
ক্লোজড যেমনটা কোন কেস শেষ হওয়ার পর জজ
সাহেব বলে দ্যা কেস ইজ ক্লোজড।মনে মনে
প্রতিজ্ঞা করলাম আর কোন দিন কোন সম্পর্ক করব
না।যতদিন না আমার টাইপের কোন মানুষ পাই। প্রায়
৪৫ মিনিট পর পাটরিয়া ঘাটে এসে পৌঁছালাম।বাস
আবার চলতে শুরু করলো। আমি বাইরে তাকিয়ে
বাইরের প্রকৃতি দেখতে লাগলাম আজকে বাইরের
প্রকৃতি অন্য দিনের চেয়ে ভাল লাগলো। পকেটে
থাকা ফোনটা বেজে উঠলো ফোন বের দেখলাম
হাসিব ফোন করছে। ফোন রিসিভ করেতেই বলল কত
দূর? আমি বললাম কেবল নদীপার করে রাস্তায় উঠছি
। ও বলল আচ্ছা তাইলে আয় আর গাজীপুর আসার পর
আমার ফোন দিস। আমি আচ্ছা বলে ফোন রেখে
দিলাম। আমার পরিবার ছাড়া পৃথিবী এই একটা
মানুষই আছে যে আমাকে অনেক ভালবাসে। আমার
জন্য ওর গায়ের রক্ত দিতেও কোন দিন দ্বিধাবোধ
করবে না। আসলে ও সবার সাথেই খুব তাড়াতাড়ি
মিশতে পারে সবাই ওকে খুব ভালোবাসে। সবচেয়ে
বড় কথা ও ত্যাগ করতে পারে। আমি ওর কাছ থেকেই
ত্যাগ করা শিখেছি। আমি ওর কাছ থেকেই শিখেছি
ত্যাগ করতে না পারলে কোন সম্পর্ক গভীর হয় না। ও
এই জিনিসটা খুব ভালো পারে বলেই সবার সাথে
মিশতে পারে।পৃথিবীর কোন মানুষই পরিপূর্ণতা নিয়ে
জন্ম গ্রহণ করতে পারে না। কোন মানুষের একদিক না
একদিক কম থাকবেই এটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত মানুষ
চাইলেও এই কমতি গুলা পূরণ করতে পারবে না।
ছেলেটা দেখতে রাজপুত্রের মত পড়ালেখায় ফার্স্ট
কিন্তু একটা ছক্কা মারতে পারে না। ছেলেটা
দেখতে মোটেই ভাল না পড়ালেখা করে না কিন্তু
বিশাল বিশাল ছক্কা হাকায় চোখ ধাঁধানো গোল
করে। মেয়েটা পড়ালেখায় ভাল দেখতে শুনতেও
একেবারে খারাপ বা কিন্তু মেয়েটার হাতের লেখা
মোটেই ভাল না।অনেক চেষ্টা করেও হাতের লেখা
ভাল করতে পারে না। মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দরী
হাতের লেখা খুবই ভাল কিন্তু পড়া মুখস্থ রাখতে
পারে না। সাড়াদিন চেষ্টা করার পরেও একটা লাইন
মুখস্থ করতে পারে না। এতে মেয়েটার কোন দোষ
নেই এটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সৃষ্টিকর্তা ওকে এই
দিকটা দেই নাই। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও দুজন দুজনের
জন্য পারফেক্ট হবেন এমন কোন কথা নাই। কেউ
কারো জন্য পারফেক্ট হয়ে আসে না নিজেদের
পারফেক্ট করে নিতে হয় একে অপরের মাঝে ত্যাগ
বৃদ্ধি করে।যেকোনো একজনের খারাপ একটা দিক
থাকতেই পারে এটাই স্বাভাবিক। এই খারাপ দিকটা
যদি মানিয়ে নিতে না পারা যায় যদি সেক্রিফাইজ
না করা যায় তাহলে সম্পর্ক কখনো গভীর হয় না।
.
আমার পাশে বসা ভাইটি তার মুবাল বের করে
রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা চালু করে দিল। ভালই
লাগছিল শুনতে,
কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও?
তারি রথ নিত্য উধাও।
জাগিছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন
চক্রে পিষ্ট আধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন।
ওগো বন্ধু,
সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল
তুলে নিল দ্রুতরথে
দু’সাহসী ভ্রমনের পথে
তোমা হতে বহু দূরে।
মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে
পার হয়ে আসিলাম
আজি নব প্রভাতের শিখর চুড়ায়;
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
আমার পুরানো নাম।
ফিরিবার পথ নাহি;
দূর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায়।
হে বন্ধু বিদায়।
এই পর্যন্ত শোনার পর মোবাইল বন্ধ করে পকেটে
রেখে দিল। আমার মুখ দিয়েও বের হয়ে গেল "হে বন্ধু
বিদায়"।
চোখের পাতা দুটো ভাড়ি হয়ে আসছে। কাল রাতে
একটু ঘুমাতে পারিনি এপিঠ ও পিঠ করেই রাত
কাটিয়ে দিয়েছি। চোখ বুঝে মাথাটা বাসের সিটে
এলিয়ে দিলাম গাজীপুর এখনো বহু দূর।
.
লেখাঃহৃদয়হীন প্রাণী
Post: হেমন্তে বর্ষায় আমি