Forums.Likebd.Com

Full Version: ঘুষ লাগেই, তবু মেলে না ক্ষতিপূরণের চেক - দৈনিক কালের কণ্ঠ
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
আধুনিক ঢাকার জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এ কাজে জমি অধিগ্রহণের জন্য অনেকের শেষ ঠিকানাটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ জন্য তাদের যৎসামান্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে সেটা নিয়ে চলছে নানা দুর্নীতি আর হয়রানি। ঘুষ দিয়েও ঢাকা ডিসি অফিসের এলএ (ভূমি অধিগ্রহণ) শাখা থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাস্তুহারারা অর্থকষ্টে পথে পথে ঘুরছে। কিছুদিন আগেও তাদের বাড়ি-গাড়ি ছিল আর এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনোমতে জীবন যাপন করছেন—এমন ঘটনাও রয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ ঠিকমতো বাসা ভাড়াও দিতে পারছেন না। নাখালপাড়ার একজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, অর্থের অভাবে সন্তানের জন্য দুধও কিনতে পারছেন না।

বৃহস্পতিবার দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘ঢাকা ডিসি অফিসের এলএ শাখা, ঘুষ লাগেই, তবু মেলে না ক্ষতিপূরণের চেক’ শিরোনামে প্রকাশিত এক সংবাদে জনানো হয়েছে এ তথ্য।



রসুলবাগ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত নাদির উদ্দিন বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে হয়তো ঢাকার চেহারা পাল্টে যাবে। কিন্তু আমাদের মতো যাদের বাড়িঘর অধিগ্রহণ করে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে, তাদের ভাগ্যে কী আছে? তারা তো ডিসি অফিসে ঘুরে ঘুরে জুতার তলা ক্ষয় করেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছে না। সরকার এলএ শাখায় ক্ষতিপূরণের এক হাজার ২০০ কোটি টাকা মজুদ রাখলেও কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার খেয়াল-খুশির কারণে সেটা আমরা পাচ্ছি না। নানা অজুহাতে তাঁরা সে টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের দিচ্ছেন না। ’



কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে বেশ কয়েকটি চক্র ডিসি অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর সহযোগিতায় বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত বিলের ওপর আপত্তি দিচ্ছে। তারা একটি সাদা কাগজের ওপর সেই আপত্তির আবেদন করছে, যার অধিকাংশই ভুয়া ওয়ারিশ কিংবা জাল মালিক। আর সেটা এডিসি এলএর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শাখায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের টাকা পেতে আরো দেরি হচ্ছে। ৬ ও ৭ ধারার নোটিশের পরও দুর্নীতিবাজরা আদালতে কোনো রকমে একটি মোকদ্দমা দিয়ে একটি নম্বর ফেলে ডিসি অফিসে গিয়ে আপত্তি দিচ্ছে, যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের হয়রানি আরো বেড়ে যায়।



এসব আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি করে সঠিক ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে বিল দেওয়ার পরিবর্তে হয়রানি করা হচ্ছে। তা ছাড়া এসব আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় ডিসি অফিসের দুর্নীতিবাজ চক্র সুযোগ গ্রহণ করছে। যাদের ফাইলে আপত্তি পড়ছে তাদের নানাভাবে বোঝানো হচ্ছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ না দিলে সে আপত্তি নিষ্পত্তি হবে না। আর সেটা না হলে ক্ষতিপূরণের বিল পেতে বছরের পর বছর ঘুরতে হবে। এ কারণে অনেকে নিরুপায় হয়ে দুর্নীতিবাজদের হাতে মোটা অঙ্কের ঘুষ তুলে দিচ্ছে।



ডিসি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কোনো রকম দলিলপত্র, পর্চা, হালনাগদ নামজারি কিংবা খাজনার রসিদ ছাড়া এডিসি এলএতে সাদা কাগজে আপত্তি গ্রহণ করা যায় না। কারণ এর ফলে সেখানে একটি আপত্তি কেস সৃষ্টি হয়, যার মাধ্যমে নোটিশ জারি করে দুই পক্ষকে তলব করে বেশ সময়ক্ষেপণ হয়। তাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেউ আপত্তি দিলে তার কাছে সে জমির হালনাগাদ মালিকানার কাগজপত্র দাবি করা উচিত। তা না হলে সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীর আবেদন গ্রহণ করা উচিত নয়। হালনাগাদ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জালিয়াতির অভিযোগ করা যেতে পারে।



একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত বছরের শেষের দিকে ক্ষতিগ্রস্তদের ৯০টি চেক দেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ঢাকার এডিসি এলএ আবদুল্লাহ আল মামুন ৫৩টি চেক বিতরণ করে বলেন, আগামী সপ্তাহে অবশিষ্ট চেকগুলো বিতরণ করা হবে। কিন্তু অদ্যাবধি তা বিতরণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি চেকগুলো পুনরায় যাচাই-বাছাই করে উপস্থাপনের কথা বলেন। এভাবে কালক্ষেপণ করে করে চেক হস্তান্তর কাজ আটকে রাখা হচ্ছে।