Forums.Likebd.Com

Full Version: পবিত্র হজে আরাফাতের খুতবায় যা বললেন খতিব শায়খ ড. আবদুর রহমান সুদাইস।
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
সৌদি আরবের মক্কায় ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরায় পবিত্র হজ সম্পন্ন হয়েছে। ধবধবে সাদা ইহরাম কাপড় পরা প্রায় ১৫ লাখ মুসল্লি সেখানে জোহর ও আসরের নামাজ এক আজানে দুই ইকামতে আদায় করেন।

আজ খুতবা পাঠ করেন নতুন গ্র্যান্ড মুফতি খতিব শায়খ ড. আবদুর রহমান সুদাইস। খুতবার বাংলা অনুবাদ করেছেন মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও বাংলা অনুবাদক মহিউদ্দীন ফারুকী।

মহিউদ্দীন ফারুকী বলেন, খতিব শায়খ ড. আবদুর রহমান সুদাইস হামদ ও সানা এবং দরুদ পাঠের পর বলেন, ‘আমি সবাইকে তাকওয়া অর্জনের অসিয়ত করছি। হে মুসলিম জাতি, আল্লাহ তায়ালা সারা বিশ্ববাসীর জন্য অসংখ্য নবী পাঠিয়েছেন। তাঁরা মানুষকে সঠিক সরল পথ দেখিয়েছেন। সর্বশেষে আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে পাঠিয়েছেন। তিনি আল্লাহর নির্দেশে মানুষকে হেদায়েতের পথ দেখিয়েছেন।’

খুতবায় বলা হয়, সম্মানিত হাজি সাহেবগণ, এই মাঠেই আমাদের নবী দাঁড়িয়েছেন। ইসলামের মূল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। জাহিলিয়াতের সব খারাপ বিষয়গুলোকে মিটিয়ে দিয়েছেন। মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। মানুষকে অন্ধকার ও অজ্ঞতা থেকে আলো ও জ্ঞানের দিকে আহ্বান জানিয়েছেন। নারীর প্রতি সহানুভূতি এবং তাদের সব অধিকারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলেছেন। এ ক্ষেত্রে সবাইকেই সতর্ক থাকতে বলেছেন।

হে মুসলিম নেতৃবৃন্দ, সারা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে একটু সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। এ বিষয় নিয়ে প্রয়োজনে আলোচনায় বসতে হবে। মসজিদে আকসাকে মুক্ত করতে হবে।

হে মুসলিম তরুণ, বর্তমানে সারা বিশ্বে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তা হলো সন্ত্রাসবাদ। অনেক তরুণ ইসলামের মূল শিক্ষা ভুলে ভিন্ন স্থান থেকে ইসলাম শিখছে। বিভিন্নভাবে বিভীষিকা ও উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে। অযথাই মানুষকে কাফের বলে দিচ্ছে।

হে তরুণ, তোমরাই জাতির মেরুদণ্ড। অতএব, তোমরা সতর্ক হও। অন্যকে যেকোনো কিছুতেই কাফের বলা থেকে বিরত থাকো। যে কোনো বিষয় তোমরা আলেমদের কাছ থেকে গ্রহণ করো। তোমাদের কাছে অনেক প্রত্যাশা। তোমরা সুন্দর আদর্শ গ্রহণ করো। নিজেকে বিনির্মাণ করো।

হে অভিভাবক ও মুরুব্বিগণ, চরিত্র প্রধান এক সম্পদ। ইসলাম এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। পরিবারের সবার চরিত্র বিনির্মাণের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষত বর্তমানে যে চারিত্রিক যুদ্ধ সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। প্রত্যেক সদস্যের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

হে ওলামায়ে কেরাম, আপনারা সবাই রাসুলের উত্তরসূরি। আপনারা মানুষকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত না করে কোরআন সুন্নাহর প্রতি উদ্বুদ্ধ করুন। মানুষকে সঠিক বিষয়টি শিক্ষা দিন।

হে ইসলামের দায়ী ও আহ্বায়কগণ, আপনারা মানুষের প্রতি সহজ করুন। দলাদলি মুক্ত থাকুন। ইসলামের মূল বিষয়গুলোর দিকে ডাকুন। মানুষের প্রতি দয়া করুন, রহমত করুন।

হে মিডিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, আপনারা সতর্ক হোন। মানুষের চারিত্রিক বিষয়ে গুরুত্ব দিন। ইসলামের শিক্ষা ও দীক্ষা প্রচার করুন।

হে হাজি সাহেববৃন্দ, আপনারা শুকরিয়া আদায় করুন। আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে হজের জন্য কবুল করেছেন। এই আরাফাত অবস্থানের তওফিক দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের জন্য যারা এই ব্যবস্থা করেছেন, তাদের জন্য দোয়া করুন। বিশেষ করে খাদেমুল হারামাই মালিক সালমানের জন্য। এবং যারা সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

হে বায়তুল্লাহর হাজি সাহেবগণ, আপনারা আরাফায় অধিক পরিমাণে দোয়া করুন। আরাফাহর দোয়া সবচেয়ে উত্তম দোয়া। এদিন আল্লাহ তায়ালা গর্ব করেন। অধিক পরিমাণে মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এখানে জোহর আসর কসর করে জমা করুন। দোয়ায় লিপ্ত থাকুন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া করতে থাকুন। এরপর শান্তভাবে মুজদালিফার দিকে রওনা হোন। সেখানে পৌঁছে মাগরিব, এশা এক আজানে দুই ইকামতে আদায় করুন। এরপর জামারায় পাথর নিক্ষেপের জন্য যেতে থাকুন। কোরবানি করুন। মাথা চেঁচে বা ছেটে হালাল হোন। এভাবে হজের কার্যক্রম সমাপ্ত করুন।

এরপর দোয়ার মাধ্যমে শায়খ খুতবা সমাপ্ত করেন।

মধ্যখানে শায়খ বলেন, যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করাও আমাদের প্রয়োজন, দীর্ঘ ৩৫ বছর এই মিম্বরে দাঁড়িয়ে শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ খুতবা দিয়েছেন, মানুষকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, নসিহত করেছেন। অসুস্থতার কারণে তিনি আজ খুতবা দিতে সক্ষম হননি। তাঁর জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইলমে, হায়াতে বরকত দান করুন। তাঁকে সুস্থতা দান করুন।