02-26-2017, 03:40 PM
ভালোবাসার গরুর রচনা ভালোবাসা একটি গৃহপালিত বস্তু। এর সব কিছুতেই দুটি দুটি। এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেওয়ার জন্য ভালোবাসার দুটি কান আছে। তবে সারা দিন দুজন একসঙ্গে হাঁটাচলা করে বিধায় এর পা আছে চারটি। ভালোবাসার একটি অদৃশ্য লেজ আছে। যাবতীয় নিন্দুক মশা-মাছি তাড়াতে সেই লেজের জুড়ি নেই। তথাপি ভালোবাসাটাকে বিশ্বাসের খুঁটিতে বেঁধে রাখতেই হয়। তা না হলে দড়ি ছিঁড়ে ভালোবাসা ছুটে গিয়ে কার ক্ষেতের ধান খেয়ে ফেলবে তার ঠিক নেই। অর্থনীতিতে ভালোবাসার অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। সারা দুনিয়ায় কোটি কোটি টাকার ফুল আর চকোলেট কেনাবেচা হয় এই ভালোবাসার কারণে। এর আগাগোড়া সব কিছুই বেচা যায়। ভালোবাসার ডেটিং-ডেটিং খেলায় অনেক টাকা আয় করে নেন চটপটি, ফুচকা, উপহার, ফুল ও টক টাইম বিক্রেতারা। ভালোবাসার গভীরে গেলে বিক্রি হয় গয়নাগাটি, শাড়ি, কসমেটিকস। আরো গভীরে গেলে বিক্রি হয় ডায়াপার, বেবি অয়েল, বেবি ফুড, খেলনা ইত্যাদি। ভালোবাসার জন্য ভালো একটা গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগওয়ালা গোয়ালঘরও লাগে। সেখানে গাই ও গরুর মতো স্বামী-স্ত্রী নিরাপদে বাঁধা থাকে। গরুকুলের মাঝে কেউ কেউ ষাঁড় হওয়ার চেষ্টা চালালেও অনেককে বলদ হতে হয়। বলদ দিয়ে খুব ভালো হালচাষ হয়। বলদ একটি উপকারী প্রাণী। আবার কোরবানির ঈদে এদের কদরও থাকে বেশি। ভালোবাসার সঙ্গে গরুর সম্পর্ক বহুকালের। প্রেম হারানো মানুষকে আমরা বেচারা গরু বলি। মানে গোবেচারা। আবার প্রেম বেশি গাঢ় হলে একে অন্যকে ও-গো, হ্যাঁ-গো বলে ডাকতে শোনা যায়। প্রেমের ডাকের সব কিছুতেই গো একটি অত্যাবশ্যকীয় শব্দ। (উদাহরণ : কোথায় যাচ্ছ গো…এমন করো না গো)। আবার প্রেমের উল্টোটা ঘটলেও গরুর সাহায্য নিতে হয়। ভালোবাসার এক পক্ষ প্রবল রেগে গেলে অন্য পক্ষকে চিৎকার করে বলে, ‘জাস্ট গো!’ ভালোবাসায় রাগারাগি বা হিংসা-বিদ্বেষ নেই। যেটা আছে সেটা হলো অভিমান ওরফে গোসসা। আর সেই গোসসা ভাঙাতেও দেখা যায় প্রেমিক-প্রেমিকারা একে অন্যকে লাল গোলাপ দিচ্ছে। একমাত্র গরু হারালেই লোকে বউকে ভুল করে মা ডেকে ফেলে (প্রবাদ : গরু হারালে এমনই হয় মা)। আবার ঘর ভেঙেছে এমন গরু ওরফে স্বামী অন্য কারো স্ত্রীকে দেখলেও ভয় পায়। এখান থেকেই প্রবাদ এসেছে, ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়। ভালোবাসা কী খায়? উত্তর : ঘাস। পার্কে গেলে আমরা দেখতে পাব দুজনই একটা একটা করে ঘাসের ডগা ছেঁড়ে। এরপর দাঁত দিয়ে কুটি কুটি করে সেই ঘাসে কামড় দেয়। এ ছাড়া আরো কিছু কারণে ভালোবাসা খাদ্যাভাব দূর করতে সক্ষম। কারণ ভালোবাসাবাসির সময় খিদা লাগে কম। নাওয়ার কথা না ভুললেও খাওয়ার কথা ভুলে অনেকে। আবার ফোনে কথা বলতে বলতেও বেলা গড়িয়ে যায়। ভালোবাসা হারিয়ে গেলে লোকে সেটাকে আবার গরুখোঁজা খোঁজে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই আর ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যায় না। ভালোবাসার উপকারিতা অনেক। তবে গরুর মতো এটাকেও যদি কৃত্রিম উপকরণ ও নানা উপহার সামগ্রী দিয়ে মোটাতাজাকরণের চেষ্টা করা হয়, তবে আখেরে ফল সুস্বাদু হয় না। এতে ভালোবাসা অকালে মারাও যেতে পারে। আর এ জন্য যারা ঘন ঘন কৃত্রিম প্রেম প্রদর্শন করে ভালোবাসা দ্রুত মোটাতাজা করতে চায়, তাদের সঙ্গ পরিত্যাগ করাই উত্তম। প্রবাদে আছে দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য মন অনেক ভালো।