Forums.Likebd.Com

Full Version: যে কারণে ৪০ বছর এই গ্রামে বসেনি বিয়ের আসর!
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
আমি কুড়ি বছর আগে কন্যাসন্তানের জননী হয়েছিলাম। আমার সন্তানকে কেউ হত্যা করার সাহস দেখায়নি ঠিকই, কিন্তু পরিবারের লোকের চাপে আমি আমার বাচ্চাকে ঠিকমতো লালন-পালন করতে পারিনি। পরিণামে ক্ষুধার তাড়নায় মেয়েটি শৈশবেই মারা যায়। ভারতে পুত্রসন্তানের অনুপাতে কন্যাসন্তানের সংখ্যা যথাযথ রাখার জন্য সরকার আইন করে গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ বন্ধ করেছে বেশ কয়েক বছর হল।



কিন্তু তা সত্তেও চোরাগোপ্তা গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ এবং কন্যাভ্রূণ হত্যা হয়েই চলেছে। এই ভাবে নাগাড়ে কন্যাভ্রূণ হত্যা এবং কন্যাসন্তানের প্রতি বিরূপ আচরণের পরিণাম যে কী মারাত্মক হতে পারে তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে সম্প্রতি সংবাদের শিরোনাম হয়েছে মধ্যপ্রদেশের গুমারা গ্রাম। এই গ্রামে চল্লিশ বছর পরে কোনও বিয়ের আসর বসছে ২০১৭-র ডিসেম্বরে।



গুমারা গ্রামে দীর্ঘ দিন ধরেই মেয়েদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে আসা হচ্ছে। মেয়ে বয়স্থ হলে তার বিয়ে দিতে হবে। আর বিয়ে মানেই মোটা অঙ্কের যৌতুক। সেই কারণে কন্যাসন্তানকে বোঝা বলেই মনে করে গ্রামের অধিকাংশ পরিবার। কোনও মহিলা গর্ভবতী হলেই আইন ভেঙে গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করানো হয়। যদি দেখা যায়, গর্ভের ভ্রূণ কন্যাসন্তানের, তা হলে হয় গর্ভেই তাকে মেরে ফেলা হয়, নতুবা জন্মের পরে তাকে হত্যা করা হয়। এটাই এই অঞ্চলের রীতি।



ফলে এই নৃশংসতা নিয়ে কখনও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কেউ কোনও অভিযোগও জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি।



কন্যাসন্তানের জন্মের পরে তামাক ও দুধ দিয়ে তাকে হত্যা করার রীতি প্রচলিত রয়েছে গ্রামে। এ ছাড়াও নানা অদ্ভুত কৌশলে কন্যাসন্তানদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলা হয়ে থাকে। এক সর্বভারতীয় সংবাদপত্রের সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে গ্রামের এক মহিলা জানান, আমি কুড়ি বছর আগে কন্যাসন্তানের জননী হয়েছিলাম। আমার সন্তানকে কেউ হত্যা করার সাহস দেখায়নি ঠিকই, কিন্তু পরিবারের লোকের চাপে আমি আমার বাচ্চাকে ঠিকমতো লালন-পালন করতে পারিনি। পরিণামে ক্ষুধার তাড়নায় মেয়েটি শৈশবেই মারা যায়।



দীর্ঘ চল্লিশ বছরে গ্রামের কোনও মেয়ে বিয়ের বয়সে পৌঁছয়নি। গ্রামের ছেলেরা পাত্রীর গ্রামে গিয়ে বিয়ে করেছে।



ফলত প্রায় চল্লিশ বছর হয়ে গেল, গুমারায় বসেনি কোনও বিয়ের আসর। কিন্তু এ বার গ্রামের মেয়ে ১৮ বছর বয়সি আরতি গুজার বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছে আগামী ডিসেম্বর মাসে। ওই সময়েই গ্রামের আর এক কন্যা, রচনা গুজারেরও বিয়ে স্থির হয়ে রয়েছে।



আরতির বিয়ে হওয়ার কথা ছিল এই বছরের মার্চ মাসেই। কিন্তু বোর্ডের পরীক্ষার কারণে সেই বিয়ে পিছিয়ে যায়। আরতির বিয়ে নিয়ে গ্রামের কচিকাঁচা এবং মহিলারা রীতিমতো উত্তেজিত। এক দল প্রবীণ অবশ্য বিয়ে নিয়ে ততটা উৎসাহিত নন, যতটা এই বিয়ের খবর সংবাদমাধ্যমের চোখের আড়ালে রাখতে। তাঁদের বক্তব্য, গ্রামের বদনাম করার লক্ষ্যেই তাঁদের গ্রামের গুপ্ত খবর কেউ বা কারা সংবাদমাধ্যমের কানে তুলেছে।