01-02-2018, 04:39 PM
'একটা গল্প হতে পারত'
প্রেক্ষাপট শীতের রাত, ৯টার মত বাজে। বাইরে
প্রচুর কুয়াশা।রাস্তায় মানুষজনের উপস্থিতি একদম-ই
নেই। এমনি এক রাতে জনৈক বন্ধুর ফোন।
রিসিভ করেই
-দোস্ত কই তুই?
-বাসায়, কেন?
-দোস্ত বিশাল সমস্যা
-কি সমস্যা?
-ফোনে বলা যাবে না
-তো ফোন দিয়েছিস কেন?
-আরে তুই নিচে নাম। তোর বাসার নিচে দাড়ায়
আছি।
-এত রাতে কি করিস?
-আরে নাম না! বিশাল সমস্যা দোস্ত।
বন্ধুর বিশাল সমস্যার সংক্ষিপ্ত ভয়াবহতার আচ
পেয়ে বাসার নিচে নামলাম। বন্ধুকে দেখেই প্রথমে
শক খাবার মত অবস্থা হল। যে ছেলে সামান্য পাশের
বাসায় গেলে ফেইস ওয়াশ দিয়ে দু'বার মুখ ধুয়ে,
ইস্ত্রি করা জামাকাপড় পড়ে বের হয় সে ছেলে
আজ জরাগ্রস্থ। ইস্ত্রি করা জামাকাপড় দূরে থাক,
শীতের রাতে নিজেকে কোনরকম বস্ত্রাবৃত করে
এসেছে । বুঝলাম সমস্যা সিরিয়াস।
জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে?
সে আহত গলায় বলল, 'রাগ করেছে!'
-তোর গার্ল-ফ্রেন্ড?
-তাছাড়া আর কে করবে?
-কি বলেছে সে?
-আর যোগাযোগ রাখবে না।
-কেন?
-আমি মজা করেই বলেছিলাম তোমাকে আর
ভালবাসি না
-ও আচ্ছা
-ও আচ্ছা মানে? সমস্যার সমাধান কি?
-বাসার সামনে গিয়ে কান ধরে উঠবস করবি দু'বার।
দেখবি সব ঠিকঠাক
-ওই কি কস? ছিঃ ছিঃ
-যা, বাড়ি যা তাহলে
-ও দোস্ত এমন করিস ক্যান? করব উঠবস।
-হুম, যা এখন বাড়ি যা
-কি বলিস দোস্ত? এখন-ই চল। কান ধরব!
-ওই এত রাতে! কি বলিস? সম্ভব না। কালকে!
জনৈক বন্ধু কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, 'প্লিজ চল না
আজকেই যাই। কাল গেলে দেরী হয়ে যাবে। চল না
দোস্ত!'
বুঝলাম কান না ধরলে ছেলের ঘুম হবে না রাতে।
অগত্যা যেতেই হল অত রাতে।
শীতের রাত , চারিদিকে ঘন কুয়াশা বৃষ্টির মত
পড়ছে। কুয়াশায় আবৃত একটা শহর। আমরা দাঁড়িয়ে
আছি আমার বন্ধুর গার্ল-ফ্রেন্ডের একদম বাসার
সামনে। চারতলা বাসার দু'তলায় তারা থাকে।দুতলার
বারান্দা থেকে রাস্তার পথচারীদের স্পষ্ট দেখতে
পাওয়া যায়।
তাকে বারবার ফোন দেওয়া হচ্ছে, সে রিসিভ করছে
না। ফোনের ডিসপ্লেতে পুনঃপুন ভেসে ওঠা 'no
answer' দেখে আমার মেজাজও কুয়াশাময় হতে লাগল।
অবশেষে ছত্রিশবার রিং হবার পর বালিকা ফোন
ধরল। ধরেই ধমকের সুরে বলল 'কি ব্যাপার? ফোন
দিয়েছ কেন? তোমাকে না ফোন দিতে নিষেধ
করেছি।'
বলেই ফোনটা কেটে দিল। এদিকে আমার বন্ধুর
অবস্থা শোচনীয় পর্যায় অনেক আগেই পার করে
ফেলে এখন বিপদসীমায় এসে ঠেকেছে।
মেয়েকে আবার ফোন লাগানো হল। চতুর্থবারে সে
ফোন রিসিভ করল। আমার বন্ধু কাঁদোকাঁদো গলায়
বলল, 'একটু বারান্দায় আসো না?'
তার এতটা মায়াময় কন্ঠ আগে কখনো শুনি নি। ইচ্ছে
করছিল নিজেই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই।
অতঃপর জগতের অন্যান্য মেয়েদের মতই রাগ
অভিমান পর্ব হাল্কা করে মেয়ে বারান্দায় এসে
দাঁড়াল। বারান্দায় এসেই বড়সড় ধাক্কা খেল। তার
বাসার নিচে দাঁড়িয়ে দুটো মানুষ সাইজের গরু।
যাদের খেয়েদেয়ে কাজ করার মত কিছু নেই জন্য এই
হাড় কাঁপানো শীতে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। বন্ধুকে
ইশারা করলাম। সে কান ধরল, ফোন কানে লাগানোই
ছিল। কান ধরে ওঠাবসা করতে করতে বলল, 'তুমি
ক্ষমা না করলে আমি এরকম ওঠাবসা করতেই থাকব।'
মেয়ের বুঝতে কিছুটা সময় লাগল, কি চলছে। তারপর
ফিক করে হেসে দিল। এরপর হাসতে হাসতে গড়াগড়ি
খাবার মত অবস্থা। জগতের অন্যান্য প্রেমিকার মতই
সেও প্রেমিকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করল।
আমি পকেটে হাত দিলাম। ফোনটা বের করলাম।
নাহ! ফোন বা মেসেজ কিছুই নেই। কিছু মানুষ আশায়
বুক বেধে থাকে, জানে পূরণ হবে না সেগুলো। তবুও
হঠাত করে অসম্ভব কিছু একটা ঘটে যাবে এই আশায়
থাকে। ইনবক্সের শেষ মেসেজটা চেক করলাম। একদা
কেউ দিয়েছিল, 'তোমার সাথে আমার মিলছে না
তপু। এডজাজটমেন্ট আর ভালবাসা এক না। তুমি
তোমার মত কাউকে খুঁজে নিও। নিজের খেয়াল
রেখো। ভালো থেকো তপু।'
ভালো থাকা ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। কাউকে ভাল
থাকতে বলার অর্থ সে জীবন থেকে চলে যাচ্ছে।
কিছু স্মৃতি রেখে যাচ্ছে। রাত শেষে সেই
স্মৃতিগুলো ঘুম কেড়ে নিবে। 'ভালো থেকো' এই
ছোট্ট কথায় অনেক বড় সত্য লুকিয়ে আছে। ওপাশের
মানুষটা আর কখনো খোজ নিবে না। রাতে বাসার
বাইরে থাকলে অস্থির হবে না। সে একটা কথার
মাধ্যমেই অনেক দূরে চলে গেছে, অনেকটাই দূরে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেধা। সে হাসছে। কান ধরে
দাঁড়িয়ে নিলয়। সে বোকা বোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে
আছে। পাশে দাঁড়িয়ে আমি যার বাম পাশে বিশাল
শূন্যতা সৃষ্টিকারী মানুষটা একবার কান ধরার
অভাবেই চলে গেছে। হয়ত সে আজ একটা মেসেজ
দিত, 'এত রাতে বাইরে কি কর? বাসায় যাও।'
কুয়াশায় আবৃত একটা শহর। ঘুমিয়ে অধিকাংশ
নগরবাসী। ল্যাম্পপোস্ট-এর মৃদু আলোয় একটা অস্পষ্ট
অবয়ব ভেসে ওঠে। সে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে....
.
------সাকিব রাদ
post: হেমন্তে বর্ষায় আমি
প্রেক্ষাপট শীতের রাত, ৯টার মত বাজে। বাইরে
প্রচুর কুয়াশা।রাস্তায় মানুষজনের উপস্থিতি একদম-ই
নেই। এমনি এক রাতে জনৈক বন্ধুর ফোন।
রিসিভ করেই
-দোস্ত কই তুই?
-বাসায়, কেন?
-দোস্ত বিশাল সমস্যা
-কি সমস্যা?
-ফোনে বলা যাবে না
-তো ফোন দিয়েছিস কেন?
-আরে তুই নিচে নাম। তোর বাসার নিচে দাড়ায়
আছি।
-এত রাতে কি করিস?
-আরে নাম না! বিশাল সমস্যা দোস্ত।
বন্ধুর বিশাল সমস্যার সংক্ষিপ্ত ভয়াবহতার আচ
পেয়ে বাসার নিচে নামলাম। বন্ধুকে দেখেই প্রথমে
শক খাবার মত অবস্থা হল। যে ছেলে সামান্য পাশের
বাসায় গেলে ফেইস ওয়াশ দিয়ে দু'বার মুখ ধুয়ে,
ইস্ত্রি করা জামাকাপড় পড়ে বের হয় সে ছেলে
আজ জরাগ্রস্থ। ইস্ত্রি করা জামাকাপড় দূরে থাক,
শীতের রাতে নিজেকে কোনরকম বস্ত্রাবৃত করে
এসেছে । বুঝলাম সমস্যা সিরিয়াস।
জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে?
সে আহত গলায় বলল, 'রাগ করেছে!'
-তোর গার্ল-ফ্রেন্ড?
-তাছাড়া আর কে করবে?
-কি বলেছে সে?
-আর যোগাযোগ রাখবে না।
-কেন?
-আমি মজা করেই বলেছিলাম তোমাকে আর
ভালবাসি না
-ও আচ্ছা
-ও আচ্ছা মানে? সমস্যার সমাধান কি?
-বাসার সামনে গিয়ে কান ধরে উঠবস করবি দু'বার।
দেখবি সব ঠিকঠাক
-ওই কি কস? ছিঃ ছিঃ
-যা, বাড়ি যা তাহলে
-ও দোস্ত এমন করিস ক্যান? করব উঠবস।
-হুম, যা এখন বাড়ি যা
-কি বলিস দোস্ত? এখন-ই চল। কান ধরব!
-ওই এত রাতে! কি বলিস? সম্ভব না। কালকে!
জনৈক বন্ধু কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, 'প্লিজ চল না
আজকেই যাই। কাল গেলে দেরী হয়ে যাবে। চল না
দোস্ত!'
বুঝলাম কান না ধরলে ছেলের ঘুম হবে না রাতে।
অগত্যা যেতেই হল অত রাতে।
শীতের রাত , চারিদিকে ঘন কুয়াশা বৃষ্টির মত
পড়ছে। কুয়াশায় আবৃত একটা শহর। আমরা দাঁড়িয়ে
আছি আমার বন্ধুর গার্ল-ফ্রেন্ডের একদম বাসার
সামনে। চারতলা বাসার দু'তলায় তারা থাকে।দুতলার
বারান্দা থেকে রাস্তার পথচারীদের স্পষ্ট দেখতে
পাওয়া যায়।
তাকে বারবার ফোন দেওয়া হচ্ছে, সে রিসিভ করছে
না। ফোনের ডিসপ্লেতে পুনঃপুন ভেসে ওঠা 'no
answer' দেখে আমার মেজাজও কুয়াশাময় হতে লাগল।
অবশেষে ছত্রিশবার রিং হবার পর বালিকা ফোন
ধরল। ধরেই ধমকের সুরে বলল 'কি ব্যাপার? ফোন
দিয়েছ কেন? তোমাকে না ফোন দিতে নিষেধ
করেছি।'
বলেই ফোনটা কেটে দিল। এদিকে আমার বন্ধুর
অবস্থা শোচনীয় পর্যায় অনেক আগেই পার করে
ফেলে এখন বিপদসীমায় এসে ঠেকেছে।
মেয়েকে আবার ফোন লাগানো হল। চতুর্থবারে সে
ফোন রিসিভ করল। আমার বন্ধু কাঁদোকাঁদো গলায়
বলল, 'একটু বারান্দায় আসো না?'
তার এতটা মায়াময় কন্ঠ আগে কখনো শুনি নি। ইচ্ছে
করছিল নিজেই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই।
অতঃপর জগতের অন্যান্য মেয়েদের মতই রাগ
অভিমান পর্ব হাল্কা করে মেয়ে বারান্দায় এসে
দাঁড়াল। বারান্দায় এসেই বড়সড় ধাক্কা খেল। তার
বাসার নিচে দাঁড়িয়ে দুটো মানুষ সাইজের গরু।
যাদের খেয়েদেয়ে কাজ করার মত কিছু নেই জন্য এই
হাড় কাঁপানো শীতে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। বন্ধুকে
ইশারা করলাম। সে কান ধরল, ফোন কানে লাগানোই
ছিল। কান ধরে ওঠাবসা করতে করতে বলল, 'তুমি
ক্ষমা না করলে আমি এরকম ওঠাবসা করতেই থাকব।'
মেয়ের বুঝতে কিছুটা সময় লাগল, কি চলছে। তারপর
ফিক করে হেসে দিল। এরপর হাসতে হাসতে গড়াগড়ি
খাবার মত অবস্থা। জগতের অন্যান্য প্রেমিকার মতই
সেও প্রেমিকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করল।
আমি পকেটে হাত দিলাম। ফোনটা বের করলাম।
নাহ! ফোন বা মেসেজ কিছুই নেই। কিছু মানুষ আশায়
বুক বেধে থাকে, জানে পূরণ হবে না সেগুলো। তবুও
হঠাত করে অসম্ভব কিছু একটা ঘটে যাবে এই আশায়
থাকে। ইনবক্সের শেষ মেসেজটা চেক করলাম। একদা
কেউ দিয়েছিল, 'তোমার সাথে আমার মিলছে না
তপু। এডজাজটমেন্ট আর ভালবাসা এক না। তুমি
তোমার মত কাউকে খুঁজে নিও। নিজের খেয়াল
রেখো। ভালো থেকো তপু।'
ভালো থাকা ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। কাউকে ভাল
থাকতে বলার অর্থ সে জীবন থেকে চলে যাচ্ছে।
কিছু স্মৃতি রেখে যাচ্ছে। রাত শেষে সেই
স্মৃতিগুলো ঘুম কেড়ে নিবে। 'ভালো থেকো' এই
ছোট্ট কথায় অনেক বড় সত্য লুকিয়ে আছে। ওপাশের
মানুষটা আর কখনো খোজ নিবে না। রাতে বাসার
বাইরে থাকলে অস্থির হবে না। সে একটা কথার
মাধ্যমেই অনেক দূরে চলে গেছে, অনেকটাই দূরে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেধা। সে হাসছে। কান ধরে
দাঁড়িয়ে নিলয়। সে বোকা বোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে
আছে। পাশে দাঁড়িয়ে আমি যার বাম পাশে বিশাল
শূন্যতা সৃষ্টিকারী মানুষটা একবার কান ধরার
অভাবেই চলে গেছে। হয়ত সে আজ একটা মেসেজ
দিত, 'এত রাতে বাইরে কি কর? বাসায় যাও।'
কুয়াশায় আবৃত একটা শহর। ঘুমিয়ে অধিকাংশ
নগরবাসী। ল্যাম্পপোস্ট-এর মৃদু আলোয় একটা অস্পষ্ট
অবয়ব ভেসে ওঠে। সে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে....
.
------সাকিব রাদ
post: হেমন্তে বর্ষায় আমি