Forums.Likebd.Com

Full Version: সাংস্কৃতিক আগ্রাসন
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
একটি দেশের সংস্কৃতি সেই জাতির পরিচয় বহন
করে। জাতিগতভাবে বাংলাদেশের একটি নিজস্ব
সংস্কৃতি আছে। সেটাই আমাদের পরিচয়। কিন্তু
ভিনদেশীয় সংস্কৃতি আমাদের ওপর এতবেশি প্রভাব
বিস্তার করছে যে আমরা কখনো কখনো যেন ঐ
সংস্কৃতির দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি। আমাদের
জাতীয় জীবনে মূল্যবোধের অবক্ষয়েরও এটি অন্যতম
কারণ।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে
অনুষ্ঠিত হলো ট্রাইনেশন বিগ শো। এতে পারফর্ম
করতে ভারত থেকে এসেছিল এক শ পঞ্চাশ সদস্যের
একটি টিম। সংস্কৃতি বিনিময়ের নামে ভারতের
সংস্কৃতি এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এই সাংস্কৃতিক
আগ্রাসন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর
হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিকে ধ্বংসের মুখে
ঠেলে দেবে একথা সহজেই বলা যায়।
আমাদের দেশে চল্লিশটির মতো ভারতীয় চ্যানেল
দেখানো হয়। এর মধ্যে ত্রিশটি চ্যানেলের ভাষাই
হিন্দি। এসব চ্যানেলে আমাদের শিশুরাও হিন্দিতে
ডাবিং করা কার্টুন দেখে। এছাড়াও ভারতীয়রা
তাদের সনাতন ধর্মের বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনিও
কার্টুনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে শিশু-কিশোরদের
মধ্যে। এখনকার শিশুদের সবচেয়ে প্রিয় টেলিভিশন
অনুষ্ঠান 'ডোরেমন'। এই কার্টুনটি দেখে আমাদের
কোমলমতি শিশুরা কী শিখছে? তারা শিখছে যে,
কী করে অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে নিজের
কৃতিত্ব জাহির করা যায় এবং অল্প পরিশ্রমে কী
করে নাম-যশ কামানো যায়। আর সেই নাম-যশ দ্বারা
কীভাবে ভালো লাগার মানুষকে আকৃষ্ট করা যায়।
.
হিন্দি চ্যানেলগুলোর প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে।
বিউটি পার্লার তথা সৌন্দর্যশিল্পেও এর প্রভাব
লক্ষ করার মতো। হিন্দি সিরিয়াল ও নায়িকাদের
মতো ফিগারের প্রতি এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি
হয়েছে সমাজে। স্লিম হওয়ার জন্য অনেকে না
খেয়ে থাকে, বমি করে পাকস্থলি খালি রাখে,
চোয়ালকে তার দিয়ে বেঁধে রাখে এবং মেদ বের
করে ফেলে। এছাড়াও মেয়েদের দাঁত, ত্বক ও নখের
সৌন্দর্য বর্ধনে বিউটি পার্লারে চলছে নানা
কসরত্। এসবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণে চলছে নানা
ধরনের প্রচারণাও। তবে বাস্তবতা হলো অন্ধ অনুকরণ
ও অবৈজ্ঞানিক চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই
হিতে-বিপরীত ফল লক্ষ করা যায়।
তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ আজ আকাশ সংস্কৃতির
প্রভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ওপার থেকে
অপসংস্কৃতির বিষবাষ্প ছড়িয়ে প্রজন্মের
মস্তিষ্ককে কালচারাল কলোনি বানানো হচ্ছে।
আর এর প্রভাব পড়ছে আমাদের জাতীয় জীবনে।
দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য আমরা জাতীয়ভাবে এর
কোনো প্রতিকার করতে পারছি না। বিশ্বায়নের
এই যুগে আমরা একে অপরের সংস্কৃতি জানবো
—সেটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু আমাদের মৌলিক
চেতনাকে নস্যাত্ করে এমন সংস্কৃতি ধারণ করা হবে
আত্মঘাতী সিদ্ধাস্ত।