01-15-2017, 03:56 PM
সৌন্দর্যের দ্বীপচর কুকরী-মুকরী
ভোলা: সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন, নির্মল
বাতাস, বাহারি ম্যানগ্রোভ বন, রাস্তার পাশে
সারি সারি গাছ, নারকেল বাগান, দৃষ্টির সীমানার
পুরোটা ফোকাস জুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ। আর এ অপরুপ
সৌন্দার্যের লীলাভূমি হল চর কুকরী-মুকরী।
ভোলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে মেঘনা নদীর মোহনায়
কুকরী-মুকরীর অবস্থান। চারিদিকে জলরাশিদ্বারা
বেষ্টিত প্রমত্তা মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ে পলি
জমতে জমতে এ দ্বীপটির জন্ম। সাগরের কোল ঘেষে
জন্ম নেওয়ায় কুকরী-মুকরীকে অনেকে স্বপ্নের দ্বীপ
হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটি বাংলাদেশের
অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, প্রায় ৭শ বছর
আগে এখানে ও মনপুরায় পর্তুগিজ জলদস্যূদের
আস্তানা ছিল। কিন্তু কোনো এক সময় এই চরটি
পানির তলে হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯১২ সালে
এই চরটি আবার জেগে ওঠে। পরে দেশ স্বাধীনের পর
১৯৭২ সালে কুকুরী-মুকুরী চরে বন সম্প্রসারণ
অধিদপ্তরকে বনায়ন করার নির্দেশ দেয়া হয়।
এরই পরিপেক্ষিতে ১৯৭৩ সালে বনায়ন শুরু হয়। তারই
ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সালের ১৪ মে বন বিভাগের
কাছে এক (সর্বশেষ সংশোধিত) প্রজ্ঞাপনে লিখিত
নির্দেশনা আসে, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জান-
মাল রক্ষায় ভোলায় কমপক্ষে ৩ লাখ ৬০ হাজার একর
জমিতে সংরক্ষিত শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বনায়ন
করতে হবে। এ সময় মূলত শ্বাসমূলীয় গাছের চারা
রোপণ করে বনায়ন শুরু করা হলেও পরে ক্রমে ক্রমে
যুক্ত হয় সুন্দরী, গেওয়া, পশুর প্রভৃতি গাছের চারা
রোপণ।
এছাড়াও গোটা এলাকায় বিপুল সংখ্যক কেওড়া
গাছসহ আরও বিভিন্ন ধরণের গাছের চারা রোপণ
করা হয়। মূলত বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এই সব
গাছ আর আশপাশের নারিকেল গাছ, বাঁশ ও বেত বন
মিলেই এখানে তৈরি হয়েছে আকর্ষণীয় একটি
ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল। বন বিভাগ ও
বিভিন্ন সূত্র জানায়, ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে
বর্তমানে কুকরী-মুকরী চরে বনায়নের পরিমাণ ৮৫৬৫
হেক্টর। যার মধ্যে বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম ২১৭
হেক্টর। বসতি ও কৃষি আবাদ আছে প্রায় ৪ হাজার
৮১০ হেক্টর।
চর কুকরী-মুকরীর বনে যেসব প্রাণী দেখা যায় তার
মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, বানর, উদবিড়াল, শিয়াল,
বন্য মহিষ-গরু, বন-বিড়াল, বন মোরগ, প্রভৃতি। আর
পাখি ও সরিসৃপ হিসেবে এই বনের অধিবাসীদের
মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বক, বন মোরগ,
শঙ্খচিল, মথুরা, কাঠময়ূর, কোয়েল, গুইসাঁপ, বেজি,
কচ্ছপসহ নানা ধরনের সাপ।
এদিকে কুকরী-মুকরীর শীতকালের চিত্র ভিন্ন
ধরনের। বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কলতানে
মুখরিত হয়ে উঠে এসব অঞ্চলের চারপাশ। অতিথি
পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলগুলো যেন নতুন রূপ ধারণ
করে। বিশেষজ্ঞদের মতে শীত মৌসুমে
বাংলাদেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি
আসে। এর মধ্যে সিংহ ভাগই ভোলায় অবস্থান করে।
তখন স্বপ্নের দ্বীপ কুকরী-মুকরীর চরে অতিথি
পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।
এছাড়া এখানকার সমুদ্র সৈকতটিও বেশ পরিচ্ছন্ন ও
নিরিবিলি। দেশের অন্যান্য পর্যটক কেন্দ্রগুলোর
তুলনায় কুকরী-মুকরীর চিত্র কিছুটা ভিন্ন ধরনের।
মাইলের পর মাইল বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যানভাস এ
দ্বীপকে সাজিয়েছে বিভিন্ন সমারোহে। যেখানে
জীবিত গাছের সংখ্যা ৯ কোটিরও বেশি।
এছাড়া দ্বীপটির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে একটি
খাল। খালটির নাম ভাড়ানি খাল। মেঘনার বিশাল
বুক থেকে বয়ে গিয়ে খালটি পড়েছে
বঙ্গোপসাগরে। এখানকার ধু-ধু বালিয়াড়ির ওপর
দাঁড়ালে সাগরের শোঁ শোঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই
শোনা যাবে না। স্থানীয় মানুষ এ স্পটটিকে বালুর
ধুম নামে ডাকে। একটু সামনে এগোলেই ঢাল চর। এর
পরই বঙ্গোপসাগর। এখানে উত্তাল ঢেউয়ের আছড়ে
পড়া দেখলেই মনে পড়ে যাবে কক্সবাজার কিংবা
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের কথা। এখানে দাঁড়িয়ে
সূর্যাস্ত কিংবা সূর্য ডোবার দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের
মুগ্ধ করবে।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে লঞ্চে সরাসরি
যেতে পারবেন ভোলা জেলার চরফ্যাশনে। নামবেন
বেতুয়া কিংবা গোঁসাইবাড়ি ঘাটে। সেখান থেকে
মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া
করে চর কচ্ছপিয়া। এরপর চর কচ্ছপিয়া ট্রলার ঘাট
হয়ে আবারও ইঞ্জিন নৌকায় বেশ খানিকটা জলপথ
পাড়ি দিয়ে পৌঁছানো যাবে চর কুকরী-মুকরীতে।
থাকতে পারেন ফরেস্ট রেঞ্জারের বাংলো
কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে।
ভোলা: সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন, নির্মল
বাতাস, বাহারি ম্যানগ্রোভ বন, রাস্তার পাশে
সারি সারি গাছ, নারকেল বাগান, দৃষ্টির সীমানার
পুরোটা ফোকাস জুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ। আর এ অপরুপ
সৌন্দার্যের লীলাভূমি হল চর কুকরী-মুকরী।
ভোলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে মেঘনা নদীর মোহনায়
কুকরী-মুকরীর অবস্থান। চারিদিকে জলরাশিদ্বারা
বেষ্টিত প্রমত্তা মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ে পলি
জমতে জমতে এ দ্বীপটির জন্ম। সাগরের কোল ঘেষে
জন্ম নেওয়ায় কুকরী-মুকরীকে অনেকে স্বপ্নের দ্বীপ
হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটি বাংলাদেশের
অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, প্রায় ৭শ বছর
আগে এখানে ও মনপুরায় পর্তুগিজ জলদস্যূদের
আস্তানা ছিল। কিন্তু কোনো এক সময় এই চরটি
পানির তলে হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯১২ সালে
এই চরটি আবার জেগে ওঠে। পরে দেশ স্বাধীনের পর
১৯৭২ সালে কুকুরী-মুকুরী চরে বন সম্প্রসারণ
অধিদপ্তরকে বনায়ন করার নির্দেশ দেয়া হয়।
এরই পরিপেক্ষিতে ১৯৭৩ সালে বনায়ন শুরু হয়। তারই
ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সালের ১৪ মে বন বিভাগের
কাছে এক (সর্বশেষ সংশোধিত) প্রজ্ঞাপনে লিখিত
নির্দেশনা আসে, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জান-
মাল রক্ষায় ভোলায় কমপক্ষে ৩ লাখ ৬০ হাজার একর
জমিতে সংরক্ষিত শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বনায়ন
করতে হবে। এ সময় মূলত শ্বাসমূলীয় গাছের চারা
রোপণ করে বনায়ন শুরু করা হলেও পরে ক্রমে ক্রমে
যুক্ত হয় সুন্দরী, গেওয়া, পশুর প্রভৃতি গাছের চারা
রোপণ।
এছাড়াও গোটা এলাকায় বিপুল সংখ্যক কেওড়া
গাছসহ আরও বিভিন্ন ধরণের গাছের চারা রোপণ
করা হয়। মূলত বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এই সব
গাছ আর আশপাশের নারিকেল গাছ, বাঁশ ও বেত বন
মিলেই এখানে তৈরি হয়েছে আকর্ষণীয় একটি
ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল। বন বিভাগ ও
বিভিন্ন সূত্র জানায়, ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে
বর্তমানে কুকরী-মুকরী চরে বনায়নের পরিমাণ ৮৫৬৫
হেক্টর। যার মধ্যে বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম ২১৭
হেক্টর। বসতি ও কৃষি আবাদ আছে প্রায় ৪ হাজার
৮১০ হেক্টর।
চর কুকরী-মুকরীর বনে যেসব প্রাণী দেখা যায় তার
মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, বানর, উদবিড়াল, শিয়াল,
বন্য মহিষ-গরু, বন-বিড়াল, বন মোরগ, প্রভৃতি। আর
পাখি ও সরিসৃপ হিসেবে এই বনের অধিবাসীদের
মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বক, বন মোরগ,
শঙ্খচিল, মথুরা, কাঠময়ূর, কোয়েল, গুইসাঁপ, বেজি,
কচ্ছপসহ নানা ধরনের সাপ।
এদিকে কুকরী-মুকরীর শীতকালের চিত্র ভিন্ন
ধরনের। বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কলতানে
মুখরিত হয়ে উঠে এসব অঞ্চলের চারপাশ। অতিথি
পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলগুলো যেন নতুন রূপ ধারণ
করে। বিশেষজ্ঞদের মতে শীত মৌসুমে
বাংলাদেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি
আসে। এর মধ্যে সিংহ ভাগই ভোলায় অবস্থান করে।
তখন স্বপ্নের দ্বীপ কুকরী-মুকরীর চরে অতিথি
পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।
এছাড়া এখানকার সমুদ্র সৈকতটিও বেশ পরিচ্ছন্ন ও
নিরিবিলি। দেশের অন্যান্য পর্যটক কেন্দ্রগুলোর
তুলনায় কুকরী-মুকরীর চিত্র কিছুটা ভিন্ন ধরনের।
মাইলের পর মাইল বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যানভাস এ
দ্বীপকে সাজিয়েছে বিভিন্ন সমারোহে। যেখানে
জীবিত গাছের সংখ্যা ৯ কোটিরও বেশি।
এছাড়া দ্বীপটির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে একটি
খাল। খালটির নাম ভাড়ানি খাল। মেঘনার বিশাল
বুক থেকে বয়ে গিয়ে খালটি পড়েছে
বঙ্গোপসাগরে। এখানকার ধু-ধু বালিয়াড়ির ওপর
দাঁড়ালে সাগরের শোঁ শোঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই
শোনা যাবে না। স্থানীয় মানুষ এ স্পটটিকে বালুর
ধুম নামে ডাকে। একটু সামনে এগোলেই ঢাল চর। এর
পরই বঙ্গোপসাগর। এখানে উত্তাল ঢেউয়ের আছড়ে
পড়া দেখলেই মনে পড়ে যাবে কক্সবাজার কিংবা
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের কথা। এখানে দাঁড়িয়ে
সূর্যাস্ত কিংবা সূর্য ডোবার দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের
মুগ্ধ করবে।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে লঞ্চে সরাসরি
যেতে পারবেন ভোলা জেলার চরফ্যাশনে। নামবেন
বেতুয়া কিংবা গোঁসাইবাড়ি ঘাটে। সেখান থেকে
মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া
করে চর কচ্ছপিয়া। এরপর চর কচ্ছপিয়া ট্রলার ঘাট
হয়ে আবারও ইঞ্জিন নৌকায় বেশ খানিকটা জলপথ
পাড়ি দিয়ে পৌঁছানো যাবে চর কুকরী-মুকরীতে।
থাকতে পারেন ফরেস্ট রেঞ্জারের বাংলো
কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে।