Forums.Likebd.Com

Full Version: [দেখা হয় নাই] ঘুরে আসুন বাঙালির স্বাধীনতার স্মৃতির ধারক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
একদিকে গোলাগুলি হছে, ওদিকে কাউকে পাক-
সেনারা ধরে নিয়ে যাচ্ছে, লাশ পড়ে আছে
রাস্তায় কিংবা ভাষণ দিচ্ছেন শেরেবাংলা এ কে
ফজলুল হক কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধ নামটা চিন্তা করলেই আমাদের মাথায়
আসে এসব কিছু। আর এখনো আমরা হতবিহ্বল হয়ে
পড়ি যখনই দেখি মুক্তিযুদ্ধের কোনো স্মৃতিচিহ্ন।
১৯৭১ সালের পর যাঁদের জন্ম তাঁরা কেউই
মুক্তিযুদ্ধের সেই নৃশংসতা দেখেননি। তাঁদের জন্য
ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সেগুনবাগিচায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ
জাদুঘর। এই জাদুঘর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে শুধু স্মরণ
করিয়ে দেওয়ার জন্যই প্রতিষ্ঠা হয়নি, প্রতিষ্ঠা
হয়েছে সংরক্ষণের জন্যও।
১৯৯৬-এর ২২ মার্চ আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা,
ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের
এই প্রয়াস ব্যাপক মানুষের সমর্থন ও সহায়তায় ধন্য
হয়েছে। বর্তমানে জাদুঘরের সীমিত পরিসরে প্রায়
১৪০০ স্মারক প্রদর্শিত হলেও সংগ্রহভাণ্ডারে জমা
হয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি স্মারক। এখানে স্থান
পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র, বই, আলোকচিত্র,
চলচ্চিত্র, তথ্য, স্মৃতি সংরক্ষণসহ মুক্তিযুদ্ধের
যাবতীয় অর্জন। এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ও
দলিলপত্রাদি সযত্নে সংরক্ষণ করা।
জাদুঘরের প্রবেশ পথেই রয়েছে শিখা চিরন্তন।
প্রবেশপথে দেখা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে
রাব্বির ব্যবহৃত গাড়ি। জাদুঘরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানসহ তৎকালীন বাংলার নেতাকর্মীদের
স্মৃতিস্মারক ও ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র। এ ছাড়া
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রয়েছে গ্রন্থাগার ও তথ্যভাণ্ডার
এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল সেন্টার। ছয়টি গ্যালারিতে
রয়েছে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস।
আর এর প্রবেশ ফটকেই বড় করে ইংরেজিতে লেখা
রয়েছে ‘HALL OF HONOUR’.
প্রথম গ্যালারিতে বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি,
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকে শুরু করে
স্বাধীনতার জন্য বাঙালিদের চিরচেনা সংগ্রামের
পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
দ্বিতীয় গ্যালারিটি সাজানো হয়েছে মূলত
পাকিস্তানি শাসনামল থেকে শুরু করে ৭০-এর
সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত ইতিহাসকে কেন্দ্র করে।
তৃতীয় গ্যালারিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর
রহমানের ৭ই মার্চের সেই মুক্তির আহ্বান আর
ভাষণের ছবি ও ঘোষণাপত্র। এ ছাড়া ছবি, পেপার
কাটিং এবং অন্যান্য তথ্যাদির মাধ্যমে
মুক্তিযুদ্ধের আগে তৎকালীন ছাত্র-জনতার গণ-
আন্দোলন, পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংসতা ও
গণহত্যা, লাখ লাখ শরণার্থীর দুর্গতির চিত্রও
রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের চতুর্থ গ্যালারিতে আছে
অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রিসভা ও প্রশাসনের বিভিন্ন
জিনিসপত্র ও দলিলাদি। তা ছাড়া যুদ্ধকালীন
বিভিন্ন দুর্লভ ফটোগ্রাফ এবং কয়েকজন বিশিষ্ট
বাঙালির ব্যবহৃত জিনিস রয়েছে এই গ্যালারিতে।
চতুর্থ থেকে পঞ্চম গ্যালারিতে যেতে পড়বে একটি
ব্যালকনি। এতে আছে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত
বাংলাদেশের বিশাল মানচিত্র। সেক্টর কমান্ডার
এবং আঞ্চলিক বাহিনীর প্রধান যোদ্ধাদের ছবি
এবং বিস্তারিত বিবরণ ও স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন
পতাকা দেখা যায় এখানে। আরো আছে তৎকালীন
দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশের
স্বাধীনতা যুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিবেদন। প্রবাসী
বাংলাদেশিদের স্বাধীনতার সপক্ষে প্রচারিত
পুস্তিকা ও প্রচারণার দলিল। তবে সবচেয়ে
আকর্ষণীয় হয়ে ফুটে রয়েছে কিছু কিছু দুর্লভ
ফটোগ্রাফ।
jadu2.jpg
পঞ্চম গ্যালারিটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সবচেয়ে বড়
কক্ষ। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত এলএমজি, রাইফেল
পিস্তল, অ্যান্টি ট্যাংক মাইন, পাকিস্তানি ঘাঁটি
থেকে প্রাপ্ত সেনাবাহিনীর উচ্চতর অফিসারের
পদক, মর্টার শেল, ট্যাংক বিধ্বংসী রাইফেল,
পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত অস্ত্রশস্ত্র সাজিয়ে
রাখা হয়েছে এই গ্যালারিতে।
ষষ্ঠ গ্যালারিতে আছে মিরপুর মুসলিমবাজার ও
জল্লাদখানা বধ্যভূমি থেকে উদ্ধার করা কঙ্কাল,
শহীদদের ব্যবহৃত বস্তুসামগ্রী, চিঠি, ডায়েরি,
পরাজিত পাকবাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্রের
নমুনা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর
ক্ষয়ক্ষতির রাষ্ট্রীয় দলিল, সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবি
ও তাঁদের যুদ্ধের বিবরণী ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে
পড়ে থাকা বুদ্ধিজীবীদের লাশের ছবি।
কীভাবে যাবেন
শাহবাগের কিংবা মৎস্য ভবন থেকে রিকশায় করে
সহজেই যেতে পারবেন সেগুনবাগিচায়। অথবা
প্রেসক্লাব থেকেও রিকশা নিয়ে যেতে পারেন
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। ভাড়া পড়বে ২৫-৩০ টাকা।
বোববার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল ৯টা
থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে জাদুঘরটি।
তবে শীতকালে সকাল ১০টা থেকে দর্শনার্থীদের
জন্য খোলা হয় জাদুঘর। টিকেট মাত্র পাঁচ টাকা।