Forums.Likebd.Com

Full Version: ব্লাক ম্যাজিক বা কালো যাদ
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
‘সব কাজ সবার দ্বারা সম্ভব না।’, তীব্র
আপত্তির সুরে বললেন আহসান
সাহেব। আহসান সাহেব তপুর বড় চাচা।
রাজশাহী শহরের একজন শিক্ষিত
সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। রাজশাহী কলেজের
ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। বিভিন্ন বিষয়
নিয়ে তিনি পড়াশুনা করেছেন কিন্তু একটা
বিষয় নিয়ে রীতিমত গবেষণা
করেছেন আর সে বিষয়টা হল ব্লাক
ম্যাজিক বা কালো যাদু। ব্লাক ম্যাজিকের
উপর তিনি প্রচুর পড়াশুনা করেছেন,
রাতের পর রাত কাটিয়েছেন শ্মশানঘাট
আর কবরস্থানে। এমনকি হাতে কলমে
ব্লাক ম্যাজিক শেখার জন্য তিনি বেশ
কিছুদিন কাটিয়ে এসেছেন আফ্রিকায়,
শিখেছেন সেখানকার ভয়ংকর সব
কালো বিদ্যা, যার আফ্রিকান স্থানীয় নাম
হল ভূডু। তপু আহসান সাহেবের ছোট
ভাইয়ের ছেলে। রাজশাহী
কলেজের ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয়
বর্ষের ছাত্র। প্রচণ্ড ভালবাসেন তিনি
তপুকে।
তপুর প্রত্যেকটা আব্দার তিনি পূরণ
করেন, কোন কিছুতেই না করেন না।
কিন্তু যখন তপু বলল, সে ব্লাক ম্যাজিক
শিখতে চায়, তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন,
তপুর পক্ষে এটা সম্ভব নয়। ‘কেন
সম্ভব না, তুমি পারলে আমি কেন পারব
না?’, বলল তপু। ‘দেখ তপু, ব্লাক ম্যাজিক
ছেলেখেলা না, পদে পদে এখানে
বিপদের আশঙ্কা থাকে।’ ‘থাকুক, তবুও
আমি শিখব।’ একগুঁয়ের মত জবাব দিল তপু।
‘আমি তোকে শিখাবো না’ বড় চাচাও কম
যাননা। ‘চাচা প্লিজ, আমি ঠিক পারব।
দেখো কোন বিপদ হবে না।’ ‘তপু,
তোকে আমি খুব ভালোভাবে চিনি,
তোর দ্বারা এসব সম্ভব না। প্রচণ্ড সাহস
লাগে এতে। সাহস না থাকলে ব্লাক
ম্যাজিকের প্রথম স্তরটাই পার হওয়া যায়
না।’ ‘কিন্তু আমি পারব। সাহস আমিও কম
রাখিনা।’ তীব্র জেদের সাথে উত্তর
দিল তপু। ‘হ্যা, জানি তোর সাহস কতদূর।
কদিন আগেও তো নিজের ছায়া
দেখে ভয় পাতিস।’ ‘সে তো বহুদিন
আগের কথা, তখন তো আমি
এক্কেবারে ছোট ছিলাম। ওসব কথা বাদ
দাওতো, তুমি শিখাবে কিনা বলো।’ ‘ না’
এক কথায় উত্তর দেন আহসান সাহেব।
‘চাচা প্লিজ, খালি একটা সুযোগ দাও।
দেখো, আমি ঠিক পারব। যদি না পারি,
তাহলে আর কখনও তোমাকে
জ্বালাবো না। শুধু একটা সুযোগ দাও।’
অনুনয় ঝরে পরল তপুর কন্ঠ থেকে।
‘ কিন্তু .......’ ‘প্লিজ চাচা, প্লিজ’ কিছুক্ষণ
চুপ করে কি যেন ভাবলেন আহসান
সাহেব। ‘ঠিক আছে, কিন্তু মনে রাখিস
একটাই মাত্র সুযোগ পাবি তুই। একটা
ছোট পরীক্ষা হবে, যদি উত্তীর্ণ না
হতে পারিস তাহলে আর কখনও ব্লাক
ম্যাজিকের নাম মুখেও আনতে পারবিনা,
ঠিক আছে?’ বললেন আহসান সাহেব।
‘রাজি,’ আনন্দে সব কটা দাঁত বের করে
হাসল তপু। ‘আজ পঁচিশ তারিখ। পরশুদিন
অর্থাৎ সাতাশ তারিখ অমাবস্যার রাত। পরশুদিন
ঠিক রাত বারটার সময় একটা মাটির হাড়ি, এক
সের আতপ চাল আর বিশটা দাঁতন নিয়ে
কাদেরগঞ্জ কবরস্থানের ভিতরে
ঢুকে যাবি। সোজা কিছুক্ষণ চলার পর
অনেক পুরনো একটা বটগাছ দেখতে
পাবি। বটগাছটার ডান পাশ দিয়ে একটা ছোট
রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তা দিয়ে
একেবারে সোজা চলে যাবি। সেই
রাস্তার একেবারে শেষ মাথায় দেখবি
অনেক পুরনো একটা ভাঙ্গা কবর
আছে। কবরটার পাশে একখণ্ড ফাঁকা মাঠ
আছে। ঐ মাঠের মাঝখানে ছোট
একটা চুলা খুঁড়বি, তারপর দাঁতন দিয়ে চুলাটায়
আগুন ধরিয়ে হাঁড়িতে চাল আর পানি দিয়ে
ভাত চড়িয়ে দিবি। চাল ফুটে ভাত না হওয়া
পর্যন্ত একটা করে দাঁতন দিয়ে চুলায়
জ্বাল দিতে থাকবি। ভাত হয়ে গেলে
হাঁড়িশুদ্ধ ভাত নিয়ে সোজা আমার কাছে
চলে আসবি। যদি এই কাজটা করতে পারিস
তাহলে আমি আর কোন বাঁধা দেবনা,
পরশু থেকেই তোর ব্লাক ম্যাজিকের
দীক্ষা শুরু হবে।’ বললেন আহসান
সাহেব।
‘ব্যাস এইটুকুই?’, একটু অবাকই হল তপু,
‘আমি তো ভেবেছিলাম খুব কঠিন
কোন পরীক্ষা হবে। ঠিক আছে চাচা,
ভেবে নাও আমি পরীক্ষায় পাশ করে
গেছি।’ ‘একটা ব্যাপারে তোকে সাবধান
করে দেই তপু, ভাত রান্না করার সময়
হয়তো আশেপাশে অনেক রকম
শব্দ শুনতে পাবি, হয়তো শুনবি কেউ
তোর নাম ধরে ডাকছে কিংবা কেউ
হয়তো সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে,
খবরদার সেই ডাকে সাড়া দিবিনা, খবরদার।
আসলে আমি নিজেও জানিনা ওখানে কি
ঘটবে, শুধু বলে রাখছি, সবসময় সাবধান
থাকবি’ সাবধান করলেন আহসান সাহেব।
চাচার দিকে তাকিয়ে থাকল তপু। ঠিক
বুঝতে পারল না, চাচা তাকে ভয়
দেখাচ্ছে না সত্যিই সাবধান করছে
তবে যাই হোক না কেন সে ভয়
পাবে না, এই পরীক্ষায় তাকে পাশ
করতেই হবে। সাতাশ তারিখ রাত পৌনে
এগারটা বাজতে না বাজতেই তপু
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে
কাদেরগঞ্জ কবরস্থানের
উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল।
তপুদের বাসা থেকে কাদেরগঞ্জ
কবরস্থানে রিকশায় যেতে সময় লাগে
প্রায় এক ঘন্টা।
ঠিক
পৌনে বারোটায় তপু কবরস্থানের
গেটে পৌঁছে গেল। এতক্ষণ প্রচণ্ড
আত্মবিশ্বাস থাকলেও, কবরস্থানের
ভয়াবহ নিস্তব্ধতা তপুর আত্মবিশ্বাসকে
অনেকটা দমিয়ে দিল। দুরুদুরু বুকে
কবরস্থানের গেটে আস্তে ধাক্কা
দিল তপু। প্রায় নিঃশব্দেই খুলে গেল
গেটটা। কোনদিকে না তাকিয়ে
সোজা সামনের দিকে হাটা দিল তপু। চাচার
নির্দেশমতো কিছুক্ষণ চলার পরে
অবশেষে ভাঙা কবরটার পাশের ফাঁকা
মাঠটা খুঁজে পেল। মাঠটার মাঝখানে
ছোট্ট একটা চুলা খুঁড়ল। এরপর চারটা দাঁতন
একসঙ্গে ধরিয়ে চুলায় আগুন জ্বালাল।
হাঁড়িতে চাল আর পানি দিয়ে চুলার উপর
চড়িয়ে দিল। এরপর একটা একটা করে
চুলায় দাঁতন দিতে থাকল তপু। সময় যেন
খুব ধীরে কাটতে লাগল। তেরটা দাঁতন
শেষ, ভাত ফুটতে আর খুব বেশি দেরি
নাই। কোথায় যেন একটা কুকুর
ডেকে উঠল। অকারণেই শরীরটা
একটু ছমছম করে উঠল তপুর। হঠাৎ
খেয়াল করল, ওর থেকে বড়জোর
সাত- আট হাত দূরে একজন মহিলা বসে
একটা চুলা খুঁড়ছে। কোলে একটা বাচচা।
ঘোমটা দিয়ে ঢেকে রাখার কারণে
মহিলার চেহারা দেখতে পারলনা তপু।
অবাক হয়ে তপু দেখল, ওই মহিলাটাও ঠিক
তারই মত করে দাঁতন দিয়ে চুলা জ্বালিয়ে
ভাত রাঁধতে লাগল। আশ্চর্য, পাশে যে
একজন লোক বসে আছে তা যেন
মহিলাটা দেখেইনি। আপন মনে একটা
একটা দাঁতন দিয়ে চুলায় জ্বাল দিতে থাকল।
তপু ঠিক বুঝতে পারেনা, ওই মহিলাও কি
তপুর মত কালো যাদু শিখতে চায়?
কেন? নিজের কাজ ফেলে
সম্মোহনী দৃষ্টিতে মহিলার কাজ
দেখতে থাকে তপু। দেখতে
দেখতে মহিলার দাঁতন শেষ হয়ে
আসল।
চুলার চারদিকে হাত বুলাল কিন্তু
জ্বালানোর মত আর কিছু না পেয়ে
শেষে নিজের কোল থেকে
বাচচাটাকে তুলে নিয়ে চুলার ভিতরে
ছুড়ে মারল। নিজের চোখকে যেন
বিশ্বাস করতে পারছেনা তপু। আর একটু
হলেই চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিল এই
নৃশংস দৃশ্য দেখে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত
নিজেকে সামলে নিল। ওদিকে মহিলার
চুলার আগুন আবার প্রায় শেষ হয়ে
এসেছে। আবার মহিলাটা চুলার চারপাশে
জ্বালানীর জন্য হাত বুলাল, কিন্তু কিছুই
পেল না। হঠাৎ মহিলাটা খ্যাঁনখ্যাঁনে গলায়
বলে উঠল, “ দাঁতন পুড়ে শেষ হল, ভাত
ফুটল না। নিজের বাচচাটাকে পুড়িয়ে
ফেললাম, তাও ভাত হলনা। এইবার ওই
মিনসেটাকে পুড়িয়ে ভাত ফোটাবো,”
বলে একটানে নিজের ঘোমটাটা
খুলে ফেলে তপুর দিকে ঘুরে
তাকাল। মহিলাটা তপুর দিকে তাকাতেই
ভয়ের একটা শীতল শিহরন বয়ে গেল
তপুর শরীর বেয়ে। কোথায় মহিলা,
একটা পিশাচীনি ভয়ংকর চোখে তাকিয়ে
আছে তপুর দিকে। মুখ থেকে মাংস
পচে গলে পড়ছে, চোখের জায়গায়
দুটো শুন্য কোটর ভয়ংকর ভাবে
তাকিয়ে আছে তপুর দিকে। আবার
খ্যাঁনখ্যাঁনে কন্ঠে বলে উঠল
পিশাচীটা, “ আয়, আমার কাছে আয়। আয়
মিনসে, আজ তোকে দিয়েই আমার
সাধনা শেষ করব।”
বলে শাড়ির ভিতর থেকে একটা
লোমশ কুৎসিত হাত বের করে তপুর
দিকে বাড়িয়ে দিল পিশাচীটা। পরদিন।
কাদেরগঞ্জ কবরস্থানের গেটের
ঠিক সামনে এসে একটা গাড়ি থামল। গাড়ির
দরজা খুলে আহসান সাহেব বের হয়ে
আসলেন। কবরস্থানের গেট খুলে
সোজা পথ ধরে হেঁটে গেলেন।
বটগাছটার সামনে যেতেই দেখতে
পেলেন অচেতন তপুকে। একটু
হাসলেন তিনি। তপুকে ঘাড়ে করে
তুলে নিয়ে গাড়ির পিছনের সিটে
শুইয়ে দিলেন তারপর গাড়ি ছুটালেন
সোজা বাড়ির দিকে। ‘সব কাজ সবার দ্বারা
সম্ভব না।’, বিড়বিড় করে বলে উঠলেন
তিনি।