01-17-2017, 08:02 PM
আজ থেকে প্রায় ৯৫ বছর আগে
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয়
সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর
মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্রিটেন
ও ফ্যান্সের মধ্যে একটি গোপন
চুক্তি হয়। সরকারিভাবে এটি ‘এশিয়া মাইনর’
চুক্তি নামে পরিচিত হলেও ‘সাইকস-পিকট’
চুক্তি নামেই তা বেশি পরিচিত। মাত্র এক
বছর স্থায়ী ওই চুক্তির কথা মানুষ ভুলে
গেলেও বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি
ওই গোপন চুক্তির কথাই আবার
বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
১৯১৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯১৬
সালের মে মাসে এটি একটি উপসংহারে
পৌঁছায়। এই গোপন চুক্তি ব্রিটেন ও
ফ্রান্সের মধ্যে হলেও এতে
রাশিয়ারও সম্মতি ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের
নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করার জন্য
ত্রিপক্ষীয় আঁতাতই ছিল এই চুক্তির মূল
লক্ষ্য। চুক্তির আওতায় তৎকালীন
উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীন আরব
প্রদেশগুলোর ভবিষ্যৎ ব্রিটিশ ও ফরাসি
নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে বিভক্ত হয়।
ব্রিটেনকে দেয়া হয় জর্ডান, দক্ষিণ
ইরাক, হাইফা ও এক্রের বন্দরসহ আরো
কিছু এলাকা যাতে তারা ভূমধ্যসাগর নিয়ন্ত্রণ
করতে পারে। অন্য দিকে ফ্রান্সকে
দক্ষিণপূর্ব তুরস্ক, উত্তর ইরাক, সিরিয়া ও
লেবাননের বরাদ্দ দেয়া হয়। আর
রাশিয়ার পাওয়ার কথা ছিল তুরস্কের
ইস্তাম্বুল, আর্মেনিয়া ও বিলায়েভ
অঞ্চল।
ফরাসি পক্ষে কূটনীতিক ফ্রাঙ্কোস
জর্জ পিকট ও ব্রিটেনের পক্ষে স্যার
মার্ক সাইকস নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে
সই করেন বলে এটির নামকরণ করা হয়
সাইকস-পিকট চুক্তি। চুক্তিতে রাশিয়ার
জারপন্থী সরকারের ভূমিকা ছিল
অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী
সময়ে ১৯১৭ সালের অক্টোবরে
রুশ বিপ্লবের পর বলশেভিকরা চুক্তিটি
প্রকাশ করে দেয়। এতে ব্রিটিশ ও
ফরাসিরা বিব্রত হয়। অন্য দিকে আরবরা
ইউরোপিয়ানদের গোপন আঁতাতের
খবরে হয়ে পড়ে আতঙ্কিত আর
তুর্কিরা হয় আনন্দিত।
মাত্র এক বছর স্থায়ী শতবর্ষ প্রাচীন
ওই চুক্তির কম্পন আজ আবার
মধ্যপ্রাচ্যে অনুভূত হচ্ছে। সিরিয়ায় রুশ
বিমান হামলা, ইরানের সাথে
পরাশক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তি, তুরস্কের
সাথে রাশিয়ার অবনতিশীল সম্পর্কÑ
এসব কিছুই যেন মধ্যপ্রাচ্যে
ইউরোপের নতুন আধিপত্য বিস্তারের
পটভূমি সৃষ্টি করছে। তবে প্রায় এক শ’
বছর আগে ইউরোপ যে ভুল
করেছিল এবার আর তা করবে না বলেই
মনে হয়। সে সময় তারা নিজেদের
চিবানোর ক্ষমতার বেশি মুখে পুরে
ফেলেছিল বলে তা গিলতে পারেনি।
তাই এবার সুযোগ পেলে আর সে ভুল
করবে না।
মধ্যপ্রাচ্যের ওপর ইউরোপ-
আমেরিকার লোলুপদৃষ্টি নতুন
কোনো বিষয় নয়। বহু আগে
থেকেই তারা ওই অঞ্চলের সম্পদ
কুক্ষিগত করার পাঁয়তারা করে চলেছে।
আগে তারা গোটা অঞ্চল দখল করে
নিতে চাইত। এখন কৌশল পাল্টিয়ে সামরিক
অভিযান, অর্থনৈতিক অবরোধ বা কথিত
চুক্তির নামে তারা মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদ
নিজেদের দখলে রাখতে চাইছে।
প্রায় শত বছর আগে সাইকস-পিকট চুক্তির
মাধ্যমে ব্রিটেন-ফ্রান্স ও রাশিয়া
মধ্যপ্রাচ্যকে ভাগ করে নেয়ার
চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু সে সময় তা
সফল হয়নি। কামাল আতাতুর্কের
নেতৃত্বে তুরস্ক সে সময়
দখলদারদের বিরুদ্ধে জোরালো
ভূমিকা রেখেছিল।
শতবর্ষ পরে এসে এখন
দখলদারিত্বের ধরন পাল্টে গেছে।
ইরানের কথাই ধরা যাক। সম্পদ ও
শক্তিতে বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ।
হুমকি-ধমকি দিয়ে একে বশে আনতে
না পেরে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর
অবরোধ আরোপ করে। ইরাক বা
আফগানিস্তানের মতো সামরিক অভিযান
চালিয়ে ইরানকে ‘শিক্ষা’ দিতে গেলে
খরচের ধকল সামাল দেয়া কঠিন হবে।
তাই ‘পরমাণু চুক্তি’র জন্য ইরানকে চাপ
দিতে থাকে ইউরোপ ও আমেরিকা,
ছলে বলে কৌশলে শেষ পর্যন্ত
ইরানকে একটি চুক্তিতে রাজি করায় তারা।
কয়েক মাস আগে সই হয় পরমাণু
নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি।
ওই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তেহরানের
কাছে মজুদ ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে
নিতে হবে। তার বদলে ইরানের ওপর
থেকে তুলে নেয়া হবে প্রায় এক
দশক ধরে জারি থাকা অর্থনৈতিক
নিষেধাজ্ঞা। এতে করে ইরান তার
ইচ্ছামতো বিশ্বের যেকোনো
দেশে তেল বিক্রি করতে পারবে।
চুক্তি অনুযায়ী ইরান তেল বিক্রি করতে
পারছে ঠিকই কিন্তু দাম অস্বাভাবিক কমে
যাওয়ায় লাভ পাচ্ছে না। অন্য দিকে তুলনায়
কম শক্তিশালী হলেও ইরানের কাছে
যে ইউরেনিয়ামের মজুদ ছিল তার মূল্য
প্রায় ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। চুক্তি
অনুযায়ী এর সবটুকুই এখন বলতে
গেলে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে।
সম্প্রতি একটি রুশ জাহাজে করে ওই
ইউরেনিয়াম অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে
নিয়েছে আমেরিকা। ফলে অদূর
ভবিষ্যতে ইরানের পক্ষে আর পরমাণু
অস্ত্র বানানো সম্ভব হবে না। অর্থাৎ
রাশিয়া আর আমেরিকা মিলে ইরানকে
‘খোঁড়া’ করে দিলো, ভেঙে দিলো
ইরানের ‘বিষদাঁত’।
আর এই কাজটা যে সফলভাবেই করা
গেছে গত সপ্তাহে তার ঘোষণা
দিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন
কেরি। তার ভাষায়, ‘প্রতিশ্রুতি রাখতে ইরান
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি
সম্পন্ন করেছে।’ আর যাদের
জাহাজে করে ওই ইউরেনিয়াম তেহরান
থেকে তুলে নেয়া হয়েছে সেই
রুশ পরমাণু সংস্থা ‘রোসাটম’-এর একজন
মুখপাত্র পরে ওই মার্কিন ঘোষণার
সত্যতা স্বীকার করেছেন। সাত বছর
ধরে ইরানকে বাগে আনতে চেষ্টা
চালিয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকা।
অবশেষে তারা সফল হয়েছে।
আমেরিকার আগামী প্রেসিডেন্ট
নির্বাচনের এক বছর আগে ইরানকে
পারমাণবিকভাবে দুর্বল করে দেয়াটা
ওবামা প্রশাসনের বিদেশনীতির একটি
বড় সাফল্য বলে মনে করছেন
কূটনীতিকেরা।
এবার আসা যাক মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি
গুরুত্বপূর্ণ দেশ সিরিয়ার কথায়।
দেশটিকে কব্জা করতে যেন
উঠেপড়ে লেগেছে পশ্চিমারা। রাশিয়া
চাইছে ক্ষমতাসীন আসাদ সরকারকে
বহাল রেখে সিরিয়ার সম্পদ হাতিয়ে
নিতে। এ জন্য তারা সেখানে সরাসরি
সামরিক অভিযানের মতো কঠিন ও
ব্যয়বহুল পথে পা বাড়াতেও পিছপা হয়নি।
সিরিয়ায় আইএস ঘাঁটিতে অভিযানের নামে
রাশিয়া যে সেখানে
সরকারবিরোধীদের দমন করছে তা
এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। রাশিয়ার
উদ্দেশ্য আসাদ সরকারকে রক্ষা
করতে পারলে পরবর্তীকালে তার
কাছ থেকে সব রকমের সুযোগ-
সুবিধা আদায় করা যাবে। অন্য দিকে
যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, ন্যাটোও সিরিয়ায়
আইএস দমনের কথা বলছে।
কিন্তু এই কথিত এই আইএস জঙ্গি কারা?
প্রচার করা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ
থেকে নাকি সদস্য সংগ্রহ করছে
আইএস। এসব সদস্যের মধ্যে বেশির
ভাগই সাধারণ তরুণ, ছাত্র। এমনকি মহিলারাও
নাকি যোগ দিচ্ছে আইএসে। প্রশ্ন
দেখা দিয়েছে, এসব সাধারণ তরুণ ও
মহিলারা কিভাবে আমেরিকা-রাশিয়ার
মদদপুষ্ট সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে
সমানতালে লড়াই করছে? কোথায়
তাদের অস্ত্রের উৎস, কোথায়
তাদের শক্তির ভাণ্ডার? অনেকে
ইতোমধ্যে বলতে শুরু করেছে
আইএস আসলে ইসরাইল ও আমেরিকারই
সৃষ্টি। তাদের অভিযোগ মধ্যপ্রাচ্যকে
খণ্ড-বিখণ্ড করে এর সব সম্পদ
কুক্ষিগত করার জন্য তারা ওই অঞ্চলে
আইএসের বীজ বপন করেছে।
এখন আইএস দমনের নামে চালাচ্ছে
মধ্যপ্রাচ্য দখলের পাঁয়তারা।
কে জানে এ জন্য পশ্চিমারা ভুলে যাওয়া
সাইকস-পিকট চুক্তির মতো নতুন
কোনো গোপন চুক্তির খসড়া তৈরি
করছে কি না?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয়
সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর
মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্রিটেন
ও ফ্যান্সের মধ্যে একটি গোপন
চুক্তি হয়। সরকারিভাবে এটি ‘এশিয়া মাইনর’
চুক্তি নামে পরিচিত হলেও ‘সাইকস-পিকট’
চুক্তি নামেই তা বেশি পরিচিত। মাত্র এক
বছর স্থায়ী ওই চুক্তির কথা মানুষ ভুলে
গেলেও বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি
ওই গোপন চুক্তির কথাই আবার
বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
১৯১৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯১৬
সালের মে মাসে এটি একটি উপসংহারে
পৌঁছায়। এই গোপন চুক্তি ব্রিটেন ও
ফ্রান্সের মধ্যে হলেও এতে
রাশিয়ারও সম্মতি ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের
নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করার জন্য
ত্রিপক্ষীয় আঁতাতই ছিল এই চুক্তির মূল
লক্ষ্য। চুক্তির আওতায় তৎকালীন
উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীন আরব
প্রদেশগুলোর ভবিষ্যৎ ব্রিটিশ ও ফরাসি
নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে বিভক্ত হয়।
ব্রিটেনকে দেয়া হয় জর্ডান, দক্ষিণ
ইরাক, হাইফা ও এক্রের বন্দরসহ আরো
কিছু এলাকা যাতে তারা ভূমধ্যসাগর নিয়ন্ত্রণ
করতে পারে। অন্য দিকে ফ্রান্সকে
দক্ষিণপূর্ব তুরস্ক, উত্তর ইরাক, সিরিয়া ও
লেবাননের বরাদ্দ দেয়া হয়। আর
রাশিয়ার পাওয়ার কথা ছিল তুরস্কের
ইস্তাম্বুল, আর্মেনিয়া ও বিলায়েভ
অঞ্চল।
ফরাসি পক্ষে কূটনীতিক ফ্রাঙ্কোস
জর্জ পিকট ও ব্রিটেনের পক্ষে স্যার
মার্ক সাইকস নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে
সই করেন বলে এটির নামকরণ করা হয়
সাইকস-পিকট চুক্তি। চুক্তিতে রাশিয়ার
জারপন্থী সরকারের ভূমিকা ছিল
অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী
সময়ে ১৯১৭ সালের অক্টোবরে
রুশ বিপ্লবের পর বলশেভিকরা চুক্তিটি
প্রকাশ করে দেয়। এতে ব্রিটিশ ও
ফরাসিরা বিব্রত হয়। অন্য দিকে আরবরা
ইউরোপিয়ানদের গোপন আঁতাতের
খবরে হয়ে পড়ে আতঙ্কিত আর
তুর্কিরা হয় আনন্দিত।
মাত্র এক বছর স্থায়ী শতবর্ষ প্রাচীন
ওই চুক্তির কম্পন আজ আবার
মধ্যপ্রাচ্যে অনুভূত হচ্ছে। সিরিয়ায় রুশ
বিমান হামলা, ইরানের সাথে
পরাশক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তি, তুরস্কের
সাথে রাশিয়ার অবনতিশীল সম্পর্কÑ
এসব কিছুই যেন মধ্যপ্রাচ্যে
ইউরোপের নতুন আধিপত্য বিস্তারের
পটভূমি সৃষ্টি করছে। তবে প্রায় এক শ’
বছর আগে ইউরোপ যে ভুল
করেছিল এবার আর তা করবে না বলেই
মনে হয়। সে সময় তারা নিজেদের
চিবানোর ক্ষমতার বেশি মুখে পুরে
ফেলেছিল বলে তা গিলতে পারেনি।
তাই এবার সুযোগ পেলে আর সে ভুল
করবে না।
মধ্যপ্রাচ্যের ওপর ইউরোপ-
আমেরিকার লোলুপদৃষ্টি নতুন
কোনো বিষয় নয়। বহু আগে
থেকেই তারা ওই অঞ্চলের সম্পদ
কুক্ষিগত করার পাঁয়তারা করে চলেছে।
আগে তারা গোটা অঞ্চল দখল করে
নিতে চাইত। এখন কৌশল পাল্টিয়ে সামরিক
অভিযান, অর্থনৈতিক অবরোধ বা কথিত
চুক্তির নামে তারা মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদ
নিজেদের দখলে রাখতে চাইছে।
প্রায় শত বছর আগে সাইকস-পিকট চুক্তির
মাধ্যমে ব্রিটেন-ফ্রান্স ও রাশিয়া
মধ্যপ্রাচ্যকে ভাগ করে নেয়ার
চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু সে সময় তা
সফল হয়নি। কামাল আতাতুর্কের
নেতৃত্বে তুরস্ক সে সময়
দখলদারদের বিরুদ্ধে জোরালো
ভূমিকা রেখেছিল।
শতবর্ষ পরে এসে এখন
দখলদারিত্বের ধরন পাল্টে গেছে।
ইরানের কথাই ধরা যাক। সম্পদ ও
শক্তিতে বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ।
হুমকি-ধমকি দিয়ে একে বশে আনতে
না পেরে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর
অবরোধ আরোপ করে। ইরাক বা
আফগানিস্তানের মতো সামরিক অভিযান
চালিয়ে ইরানকে ‘শিক্ষা’ দিতে গেলে
খরচের ধকল সামাল দেয়া কঠিন হবে।
তাই ‘পরমাণু চুক্তি’র জন্য ইরানকে চাপ
দিতে থাকে ইউরোপ ও আমেরিকা,
ছলে বলে কৌশলে শেষ পর্যন্ত
ইরানকে একটি চুক্তিতে রাজি করায় তারা।
কয়েক মাস আগে সই হয় পরমাণু
নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি।
ওই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তেহরানের
কাছে মজুদ ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে
নিতে হবে। তার বদলে ইরানের ওপর
থেকে তুলে নেয়া হবে প্রায় এক
দশক ধরে জারি থাকা অর্থনৈতিক
নিষেধাজ্ঞা। এতে করে ইরান তার
ইচ্ছামতো বিশ্বের যেকোনো
দেশে তেল বিক্রি করতে পারবে।
চুক্তি অনুযায়ী ইরান তেল বিক্রি করতে
পারছে ঠিকই কিন্তু দাম অস্বাভাবিক কমে
যাওয়ায় লাভ পাচ্ছে না। অন্য দিকে তুলনায়
কম শক্তিশালী হলেও ইরানের কাছে
যে ইউরেনিয়ামের মজুদ ছিল তার মূল্য
প্রায় ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। চুক্তি
অনুযায়ী এর সবটুকুই এখন বলতে
গেলে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে।
সম্প্রতি একটি রুশ জাহাজে করে ওই
ইউরেনিয়াম অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে
নিয়েছে আমেরিকা। ফলে অদূর
ভবিষ্যতে ইরানের পক্ষে আর পরমাণু
অস্ত্র বানানো সম্ভব হবে না। অর্থাৎ
রাশিয়া আর আমেরিকা মিলে ইরানকে
‘খোঁড়া’ করে দিলো, ভেঙে দিলো
ইরানের ‘বিষদাঁত’।
আর এই কাজটা যে সফলভাবেই করা
গেছে গত সপ্তাহে তার ঘোষণা
দিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন
কেরি। তার ভাষায়, ‘প্রতিশ্রুতি রাখতে ইরান
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি
সম্পন্ন করেছে।’ আর যাদের
জাহাজে করে ওই ইউরেনিয়াম তেহরান
থেকে তুলে নেয়া হয়েছে সেই
রুশ পরমাণু সংস্থা ‘রোসাটম’-এর একজন
মুখপাত্র পরে ওই মার্কিন ঘোষণার
সত্যতা স্বীকার করেছেন। সাত বছর
ধরে ইরানকে বাগে আনতে চেষ্টা
চালিয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকা।
অবশেষে তারা সফল হয়েছে।
আমেরিকার আগামী প্রেসিডেন্ট
নির্বাচনের এক বছর আগে ইরানকে
পারমাণবিকভাবে দুর্বল করে দেয়াটা
ওবামা প্রশাসনের বিদেশনীতির একটি
বড় সাফল্য বলে মনে করছেন
কূটনীতিকেরা।
এবার আসা যাক মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি
গুরুত্বপূর্ণ দেশ সিরিয়ার কথায়।
দেশটিকে কব্জা করতে যেন
উঠেপড়ে লেগেছে পশ্চিমারা। রাশিয়া
চাইছে ক্ষমতাসীন আসাদ সরকারকে
বহাল রেখে সিরিয়ার সম্পদ হাতিয়ে
নিতে। এ জন্য তারা সেখানে সরাসরি
সামরিক অভিযানের মতো কঠিন ও
ব্যয়বহুল পথে পা বাড়াতেও পিছপা হয়নি।
সিরিয়ায় আইএস ঘাঁটিতে অভিযানের নামে
রাশিয়া যে সেখানে
সরকারবিরোধীদের দমন করছে তা
এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। রাশিয়ার
উদ্দেশ্য আসাদ সরকারকে রক্ষা
করতে পারলে পরবর্তীকালে তার
কাছ থেকে সব রকমের সুযোগ-
সুবিধা আদায় করা যাবে। অন্য দিকে
যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, ন্যাটোও সিরিয়ায়
আইএস দমনের কথা বলছে।
কিন্তু এই কথিত এই আইএস জঙ্গি কারা?
প্রচার করা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ
থেকে নাকি সদস্য সংগ্রহ করছে
আইএস। এসব সদস্যের মধ্যে বেশির
ভাগই সাধারণ তরুণ, ছাত্র। এমনকি মহিলারাও
নাকি যোগ দিচ্ছে আইএসে। প্রশ্ন
দেখা দিয়েছে, এসব সাধারণ তরুণ ও
মহিলারা কিভাবে আমেরিকা-রাশিয়ার
মদদপুষ্ট সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে
সমানতালে লড়াই করছে? কোথায়
তাদের অস্ত্রের উৎস, কোথায়
তাদের শক্তির ভাণ্ডার? অনেকে
ইতোমধ্যে বলতে শুরু করেছে
আইএস আসলে ইসরাইল ও আমেরিকারই
সৃষ্টি। তাদের অভিযোগ মধ্যপ্রাচ্যকে
খণ্ড-বিখণ্ড করে এর সব সম্পদ
কুক্ষিগত করার জন্য তারা ওই অঞ্চলে
আইএসের বীজ বপন করেছে।
এখন আইএস দমনের নামে চালাচ্ছে
মধ্যপ্রাচ্য দখলের পাঁয়তারা।
কে জানে এ জন্য পশ্চিমারা ভুলে যাওয়া
সাইকস-পিকট চুক্তির মতো নতুন
কোনো গোপন চুক্তির খসড়া তৈরি
করছে কি না?