Forums.Likebd.Com
গল্পঃ পবিত্র ভালোবাসা - Printable Version

+- Forums.Likebd.Com (http://forums.likebd.com)
+-- Forum: বাংলা ফোরামস (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=228)
+--- Forum: গল্প সমগ্র (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=14)
+---- Forum: জীবনের গল্প (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=44)
+---- Thread: গল্পঃ পবিত্র ভালোবাসা (/showthread.php?tid=2347)



গল্পঃ পবিত্র ভালোবাসা - Hasan - 02-24-2017

গল্পঃ """পবিত্র ভালোবাসা""'

- বউ! বউ! ও বউ!
(তাওহীদ এভাবে একটু থেমে থেমে ডাক
দেয়)
রান্নাঘর থেকে নরম সুরে ফারাহ বলে
- কী!
আবার একটু থেমে থেমে ডাক দেয়
- বউ! বউ! ও বউ!
রুটি গরম করতে করতে একবার তার দিকে তাকিয়ে
একটু রাগে বলে
- কী হয়েছে?
বউ এর এরকম রাগ দেখে মিটমিট করে হেসে
তারপর আবারও একটু থেমে থেমে ডাক দেয়
- বউ! বউ! ও বউ!
আবারও এরকম ডাক শুনে একটা কঠিন রাগী লুক
নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে তারপর চরম রাগে বলে
.
- আরে কী হয়েছে বলবেন তো!
ভাব নিয়ে বলে
- কাছে না আসলে বলব কিভাবে?
- ও তাই?
- হুম
- তা কি এমন কথা?
- কানাকানি ছাড়া বলা যাবে না।
- কি এমন মহা কথা! হু?(ভেংচি দিয়ে)
- যাও তোমাকে বলব
না।
- ওলে আমার স্বামী-টা কি অভিমান করে।
- এভাবে বল না আমার সরম করে।
- তাই নাকি?(মুচকি হেসে)
- হুম
- আচ্ছা এখন বলেন তো দেখি
- আমি না তোমাকে ভালোবাসি
- এভাবে না বললে চলে না?
- আচ্ছা আর বলব না।(মন খারাপ করে)
- রাগ করেছেন!
- না আমার রাগ নেই(গাল ফুলিয়ে)
- তাই?
- হুম
- তাহলে গাল ফুলিয়েছে
কে?
- জানি না।
- ও বাবা! এত অভিমান?
- না আমার অভিমানও নেই
- তাই?
- হুম
- উম্মা
- ছি ছি এটা কি করলে? আমার গালটাতে লিপস্টিক
ভড়িয়ে দিলে?
- বেশ করেছি; আমি আমার স্বামীকে দিয়েছি
অন্য কাউকে দিয়েছি?
- না আপনি আপনার বরকেই দিয়েছেন।(জড়িয়ে
ধরে)
- হুম(মুচকি হাসি দিয়ে)

আজ ফারাহর একটা বিশেষ দিন।তাওহীদের মনে
আছে কি না সেটাই জানতে চেয়েছিল।কিন্তু ফারাহ
ঐ কথাটা বলার আগেই তাওহীদ এভাবে বলে কথা
কাটিয়ে দেয়।
.
ফারাহ রান্না ঘরে তাওহীদের জন্য নাস্তা তৈরি করার
সময় কথাটা বলতে চেয়েছিল।কিন্তু তাওহীদ
সুযোগটা তাকে আর দেয়নি। তারপর নাস্তা করে
- ময়না পাখি আজ তাহলে আসি!
কথাটা বলেই বাসা থেকে বের হয়ে পড়ে। ফারাহ
বলে
.
- আসেন আমার প্রিয় পাখি।
তাওহীদ ফারাহকে ময়না পাখি বলে ডাকে আর ফারাহ
তাকে প্রিয় পাখি বলে ডাকে।প্রতিদিন বাসা থেকে
বের হলেই এভাবে বলে বের হয়।

তাওহীদ অফিসে চলে যেতে থাকে, ফারাহ
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে তার চলে যাওয়া
দেখতে থাকে।মনে মনে তাওহীদের
ভালোবাসার বলার ধরণটা আবার মনে হতেই মুচকি
হেসে ফেলে।
প্রতিদিনেই কোন না কোন সময়ে কোন না
কোন নতুন নিয়মে ভালোবাসি কথাটা তাকে
বলবেই।
হঠাৎ তার মনে পড়ে কি বলতে চেয়েছিল, কিন্তু
কিভাবে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারল না।এখন তার
নিজের উপরেই নিজের রাগ উঠতেছে।তার
থেকে বেশী তাওহীদের উপর তার রাগ
উঠতেছে।
.
প্রায় সময় তাওহীদ এরকম করে।ফারাহ বিশেষ কিছু
বলতে আসলেই; তাওহীদ কিভাবে যে বোঝে
যায়, সে বুঝতে পারে না।তারপর কিভাবে যে কথা
ঘুরিয়ে ফেলে এটাও বুঝতে পারে না।তখন সে
যেরকম আচরণ করে ফারাহ ও ঠিক ঐরকম
আচরণেই করে।
কিন্তু তাওহীদের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে কেন
তার মতই আচরণ করে ফারাহ নিজেও তা জানে না।তার
মাথাটাকে এমন ভাবেই ওয়াশ করল, সে যে কি
বলতে চেয়েছিল এখন তার মনে পরল।

তারপর রাগে কটমট করতে করতে তাওহীদকে
ফোন দিতে থাকে।কিন্তু তার ফোন আর বাজে
না।কারণ তার ফোন বন্ধ এই কথাটা এক মহিলা
বলতেছে।তাওহীদের এমন বজ্জাদ গীরি কাজ
দেখে, ফারাহর রাগ আরও বাড়তে থাকে।এখন কি
করবে ভেবে পাচ্ছে না, কি করলে রাগ কমবে
সেটাও বুঝতে পারছে না।
.
তাওহীদ গাড়ি দিয়ে অফিসে যেতে থাকে।আর
ফারাহ রাগে কি কি করবে সেটা ভেবে নিজে
নিজেই মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে।ফারাহকে রাগালে
তার অনেক ভালো লাগে।তারপর ফারাহ যখন তাকে
গালি-গালাজ করে তখনও তার অনেক ভাল লাগে।সে
কিছুই বলে না, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে সব শুনে।
যখন বেশী বলতে থাকে তখন কাছে টেনে
কপালে ভালবাসার পরশ এঁকে তাকে চুপ করিয়ে
দিবে।

তাওহীদের সাথে ফারাহর পারিবারিক ভাবেই বিয়ে
হয়।তাওহীদ পড়াশুনা শেষ করে চাকরিতে পা দিতেই
তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়।তার কোন কথায় তার বাবা-মা
শুনেনি।আর ফারাহকে লেখা-পড়া অবস্থাতেই বিয়ে
দিয়ে দেয়।
ফারাহ চেয়েছিল পড়া-শুনা শেষ করে চাকরি করবে
তারপর বিয়ে করবে।কিন্তু তার বাবা-মা ও তার কথা
মানেনি।তাই বাবা-মার কথা রাখতে গিয়ে বিয়ে করতে
হয়।
তাদের বিয়ের বয়স এখনো এক বছর হয়নি।

তারপর ফারাহ কিছুক্ষণ পর পর তাওহীদকে ফোন
দিয়েই যায়।তাওহীদের সাথে ঝগড়া করার জন্য।
কিন্তু তার ফোন একবারও খোলা পায়নি।তাই রাগে-
অভিমানে কিছু না খেয়ে কাঁদতে কাঁদতেই সারাটা দিন
পার করে।মনে মনে ঠিক করে রাখে তাওহীদ
আসলে কোন কথা বলবে না, আর এটাই হবে তার
শাস্তি।কারণ তাওহীদ ফারাহর মিষ্টি কন্ঠ-টা না শুনে
থাকতে পারে না।
.
অফিসে আসার পর থেকেই তাওহীদের কোন
কিছুই ভালো লাগছে না।কারণ ফারাহর সাথে কথা
বলতে পারছে না।সে ইচ্ছা করেই কথা বলছে না।
কিন্তু কথা না বলে থাকতেও পারছে না।বার বার শুধু
ফারাহর কথা মনে পরছে, তার কন্ঠ-ঠা বার বার কানে
ভেসে আসছে।সারাটাদিন আনমনা ও ছটপট করতে
করতেই অফিসের টাইমটা পার করে।তারপর শপিং এর
উদ্দেশ্যে মার্কেটে যেতে থাকে।

আজ পহেলা ফাল্গুন।আর এই ফাল্গুনকে ঘিরে
প্রকৃতির সাথে ছেলে-মেয়ে ও নর-নারী
সকলে মিলে নতুন রুপে সেজে ওঠে।তাওহীদ
মার্কেটে আসতে থাকে, আর বসন্তে মেতে
ওঠা মানুষদেরকে দেখতে থাকে।দেখতে
দেখতে তখন তার মনেও বসন্তের রঙ জেগে
ওঠে।
.
ফারাহর জন্য একটা বাসন্তী কালালের শাড়ি কিনে।
শাড়ির সাথে মিল করে কানের দোল কিনে, হাতের
চুড়ি কিনে, পায়ের নূপুরও কিনে।আবার বাসায় ফিরার
পথে বসন্তের মালা কিনে, গোলাপ ফুল কিনে,
তারপর বাসায় ফিরতে থাকে।সে চিন্তা করতে থাকে,
ফারাহ কি রেগে থাকবে! নাকি অভিমান করে থাকবে!
বাসায় যাওয়ার পর কি তার সাথে কথা বলবে! নাকি রাগে-
অভিমানে চুপ করে থাকবে!

দরজার কাছে এসে কলিং বেল বাজিয়ে জুরে
জুরে ডাকতে থাকে
- ফারাহ! ফারাহ! ও ‌ফারাহ! কোথায় গেলে? তাড়াতাড়ি
এসে দেখে যাও! তোমার জন্য কি এনেছি।
ফারাহ গম্ভীর মুখে এসে দরজা খুলে।তারপর
চুপচাপ দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
.
তাওহীদ ফারাহর দিকে তাকিয়ে দেখে, তার মুখ-টা
শুকিয়ে গেছে, চোখ গুলো ফুলে লাল হয়ে
আছে।এই দৃশ্যটা দেখে তার হৃদয়টা কেঁদে
ওঠে।এখন নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী
মনে করছে।তাওহীদ কিছু বলতে যাবে তখনেই
ফারাহ রুমে চলে যায়।তাকে কথা বলার সুযোগ
দেয়নি।
.
মনে মনে তাওহীদ বলে, মনে হচ্ছে কঠিন
অভিমান করে আছে।কোন কিছু বললেও কাজ
হবে না, রাগ দেখাতে গেলেও উল্টা যেকোন
কিছু করে বসতে পারে।এখন যে কোন উপায়ে
রাগ ভাংগাতে পারলেই হলো।
.
তারপর ফারাহর সামনে শাড়িটা ধরে বলে
- ফারাহ শাড়িটা পড়ে এসো তো!
এমন ভাবে কথাটা বলে যেন তাদের মাঝে কিছুই
হয়নি।ফারাহ রাগী লুকে তাকিয়ে শাড়িটা নিয়ে বসে
থাকে।
তাওহীদ আবার বলে
- কি হল বসে আছ কেন? শাড়িটা পড়ে এসো।
.
ফারাহ একটা রাগী লুক নিয়ে শাড়ি পড়তে চলে যায়।
তার রাগে গা জ্বলতে থাকে। মনে মনে বলে,
আজ আমার জন্মদিন অতছ এখন পর্যন্ত আমাকে
উইশ করল না, আবার আদর ভালোবাসা দেখাতে
আসছে।এমন একটা ভাব নিছে যেন উনার কিছুই
মনে নাই।আমি বুঝি না! সব বুঝি।তারপর শাড়িটা পড়ে মুখ
টা কালো করে খাটে এসে বসে।
.
তাওহীদ একটা চিঁরোনী দিয়ে ফারাহর চুল ঠিক
করতে থাকে।ফারাহ কিছু বলতে গিয়েও বলতে
পারল না, সরতে গিয়েও সরতে পারল না।তার মনের
মাঝে একটা ভাল লাগা কাজ করতে থাকে।
চুল ঠিক করার পর মাথায় তেলও দিয়ে দেয়।ফারাহ শুধু
অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।তারপর কানের
দোল, হাতের চুড়ি, নাকের নূলক ও বসন্তের মালা
পড়িয়ে দেয়।তারপর পায়ের নূপুর টাও পড়িয়ে
দেয়।ফারাহ বাদ্য মেয়ের মত তার কথা মেনে
যেতে থাকে।নিজেকে আয়নায় দেখতে থাকে
মনের মাঝে এক আনন্দ অনুভব করতে থাকে ও
নিজেকে বসন্ত কুমারী মনে করতে থাকে।তখন
তার মনের মাঝে একটা সুখ ও শান্তি অনুভব করতে
থাকে।
.
ফারাহকে ঠিকমত সাজুগুজু করিয়ে বলে
- ফারাহ চোখ বন্ধ করে পাশের রুমে আসো।
ফারাহর চোখ বন্ধ করে তাওহীদ পাশের রুমে
নিয়ে যেতে থাকে।ফারাহ শাড়ি পড়ার সময়
জন্মদিনের কেক ও মোমবাতি সাজিয়ে রাখে।
মোমবাতি জ্বালিয়ে বলে
- ফারাহ চোখ খোল
ফারাহ চোখ খুলতেই তাওহীদ বলে
- শুভ জন্মদিন ফারাহ
- I love you Farah আমি তোমাকে ভালোবাসি
হঠাৎ এরকম উইশ ও প্রপোজে ফারাহ মুগ্ধ নয়নে
তার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর ফারাহ তাওহীদকে
জড়িয়ে ধরে বলে
- I love you too আমি ও আপনাকে ভালোবাসি।
তখন তার চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে
পড়ে।তাওহীদ জল টা মুছে বলে।
.
- কি ভেবেছিলে! তোমার জন্মদিনের কথা আমি
ভুলে গেছি? তা কি করে হয়?
আবার তাওহীদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে
ফেলে।সে যে রাগ করেছিল, অভিমান করেছিল,
সেটা ভুলে যায়।তারপর মোমবাতি নিভিয়ে কেক
কাটে।ফারাহ তাওহীদকে খাইয়ে দেয়।তাওহীদ
ফারাহকে খাইয়ে দেয়।হঠাৎ দূরে গিয়ে অভিমানী
সুরে বলে
- আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই।আপনি বড্ড
বাজে, পাজি ও সয়তান ছেলে।আপনি আমাকে
এভাবে কষ্ট দিয়ে কি মজা পান? কি সুখ পান বলেন?
তাওহীদ ধরতে চায় কিন্তু ফারাহ তাকে দূরে
ঠেলে দেয়।তখন তাওহীদ বলে
.
- এই যে দেখ কান ধরেছি আর কখনো
তোমাকে কষ্ট দিব না।
- সত্যি!
- সত্যি।
তারপর ফারাহকে জড়িয়ে ধরে বলে
- চল রান্না ঘরে যায়।সারাদিন তো কিছু খাওয়া হয়নি কিছু
খেয়ে নেয়।তাওহীদ নিজ হাতে ভাত তরকারি রেডি
করে ফারাহকে খাইয়ে দেয়।ফারাহ ও তাকে খাইয়ে
দেয়।
ফারাহ খেতে থাকে আর আনন্দে চোখ
থেকে অশ্রু ঝরাতে থাকে।কারণ তাওহীদের মত
যে এমন স্বামী পেয়েছে।তখন তাওহীদ
বলে, এই পাগলি কাঁদছ কেন? ফারাহ কিছু বলে না, শুধু
তাকে ধরে সুখের কান্না করতে থাকে। কেমন লাগলো
জানাবেন কিন্তু
written by love hin balok