Welcome ! HomeForums
Login Register

Forums Home| Sms Zone
ওয়েবসাইট তৈরি করতে ক্লিক করুন
Write New Thread

Forums.Likebd.Com > বাংলা ফোরামস > গল্প সমগ্র > জীবনের গল্প v
1 2 Next »
> [গল্প] তিতির

[গল্প] তিতির

Facebook Twitter Googleplus Pint Views: 1008
Thread Rating:
0 Vote(s) - 0 Average 1 2 3 4 5
(01-02-2018, 04:42 PM ) width= Abir [ 0 ]
শ্রাবনের মুসল ধারা বৃষ্টিতে যখন প্রথম দিন
ক্যাম্পাসে গিয়ে আমার ডিপার্টমেন্ট এর সামনে
দাঁড়িয়ে আশপাশ ঘুরে নিজের ডিপারমেন্টকেই
খুজতেছিলাম সেদিনি প্রথম তিতির কে দেখি ।
জিজ্ঞাসা করার যখন কাউকেই পাচ্ছিলাম না ।
তখনি ছাতা মাথায় দিয়ে আসা মেয়েটাকে দেখে
জিজ্ঞাসা করি
-এই যে আপু শুনছেন সিভিল ডিপার্টমেন্ট টা কোন
দিকে?
এমন ভাব করে তাকিয়েছিল যেন তাকে জিজ্ঞাসা
করা হয়েছে আপনার বাবার নানার দাদির নাম কি ?
-মাথা টা তুলে সোজা ১২০ ডিগ্রি উপরে তাকান
আপনার ডিপার্টমেন্ট পেয়ে যাবেন , হাদারাম ।
.
মাথা তুলে যখন উপরে তাকিয়ে দেখি গোটা গোটা
অক্ষরে লেখা “সিভিল” তখন নিজেকে হাদারাম
ভাবা ছাড়া উপায় ছিল না ।
এর পর আরেকবার অবাক হয়েছিলাম যখন তাকে
আমার নিজের ডিপারমেন্ট দেখি , গোলগাল একটা
চশমা পরে বইয়ের দিকে এমন ভাবে তাকিয়েছিল
যেন বইয়ের পৃষ্ঠায় আলিফ লায়লা/হাতিম বা
অন্যকিছু হচ্ছে ।
জানিনা তখন বয়স কত ছিল হবে হয়ত আট নয়ত দশ হবে
শুক্রবার করে আলিফ লায়লা হতো, তখন সবাই বেশ
মনযোগ দিয়ে দেখত । আমদের গ্রামে মোটে তিন
থেকে চারটা টিভি ছিল । আমার মা বেশ ভক্ত ছিল
,শুরু হওয়ার আগে মা আমকে নিয়ে সবার প্রথমে বসে
পড়ত ,যেহেতু টিভিটা আমার মামার ছিল তাই
সবাইকে উক্ত্যক্ত করার অধিকার শুধুমাত্র আমার
ছিল ।
এই মেয়েরও মনে হয় এরকম অভ্যাস ছিল ,তাই এত
মনযোগ । একবার ভাবলাম গিয়ে জিজ্ঞাসা করব
কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলাম প্রথমেই যে রুপ দেখেছি
এবার আর সেটা দেখতে চাচ্ছি না ।
বই থেকে মাথা না তুলেই যখন আমাকে বলছে
-কি সমস্যা ?
-কই কিছু না তো , না মানে বলছিলাম আপনি কি
প্রথম বর্ষ?
-না চতুর্থ বর্ষে পড়ি , ঘুরতে আসছি এখানে ।
- ও আচ্ছা সরি আপু ।
_ হাদারাম, আমি প্রথম বর্ষ ।
-তাহলে মিথ্যে বললেন কেন?
- কখনো দেখেছো , সিনিয়র আপু প্রথম বর্ষের
ক্লাসে বসে থাকে ।
সেই প্রথম দিন তুমি করে ডেকেছিল এর পর থেকে তুই
ছাড়া একটা কথাও বলেনি ।
প্রত্যেক দিন আমাকে জ্বালানো যেন তার ওয়াজিব
হয়ে গেছিল । আমার পাশের চেয়ার টাতে যখন এসে
বলত “ কি খবর হাদারাম “ কেমন আছিস? আমার চশমা
খুলে নিয়ে ওর টা আমাকে পরিয়ে দিত তখন আমি
কুয়াশাচ্ছন আকাশের মত দেখতাম এটা নিয়ে তার
কি হাসি ঠিক ছোট বাচ্চাদের যেমন খেলনা কিনে
দিলে খুশি হয় তেমনটা । কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে
যখন ফোন চাপতাম তখন কোথা থেকে যেন একটা
চিপসের প্যাকেট নিয়ে এসে আমাকে বলবে নে খা
সকালে তো কিছু খাস নি । যখন হাতে নিতাম তখন
দেখতাম হয় নুডুলস নয়ত খিচুড়ী । আমাকে বোকা
বানিয়ে খুব খুশি হতো তিতির ।
- হাদারামের মত তাকিয়ে আছিস কেন? আমি জানি
তুই খাস নি । নে শেষ কর । তোর মুখ দেখলেই এম্নেই
বুঝা যায় যে তুই খাস নি ।
.
ভাবি একবার জিজ্ঞাসা করব আর কেউ তো
বোঝেনা তুই কেন বুঝিস? তোকে এত কেন বুঝতে হয়
আমার ব্যাপারে জানিস না আমি হাদারাম? কিন্তু
হয়ে ওঠেনা ।
পুরো ক্যাম্পাসের সবাই যখন আমার বেশ ভুষা
দেখলে ক্ষ্যাত ছাড়া কিছুই বলেনা । সেখানে
তিতিরের মত ভালো একটা বন্ধু । যেন বানোরের
গলায় মুক্তোর মালার মতো লাগে । তিতির কে
মাঝে মাঝে আমার বড্ড অচেনা লাগে মেয়েটা
কিসের যেন একটা বিষন্নতায় ভোগে । দেখা যাবে
মাঝরাতে ফোন দিয়ে বলবে
-আচ্ছা তোর জ্যোৎস্না ভালো লাগে ? মাঝ রাতে
উঠে ছাদে হাত দুটো মুক্ত পাখির মতো মেলে দিয়ে
হিম শীতল বাতাস অনুভব করতে ইচ্ছে করে ?
আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনে যেতাম আর
ভাবতাম এত সুন্দর ভঙিমায় মেয়েটা কিভাবে কথা
বলতে পারে । আমি কেন পারিনা? একবার একটা
কাব্য রচনা করে নিয়ে গেছিলাম , পড়ে মেয়েটা
কি হাসি মনে হচ্ছিল অক্সিজেনের বদলে লাফিং
গ্যাস শুষে নিয়েছে ।
*
বৃষ্টিতে ভিজলে মেয়টার জ্বর আসা যেন
বাধত্যামুলক হয়ে দাড়িয়েছিল , কিভাবে যেন বুঝেও
যেত যে আজ বৃষ্টি আসবে আর সেদিনি ইচ্ছে করে
ছাতা টা রেখে আসতো । পরেরদিন যখন আমি ছাতা
নিয়ে আসি সেদিন বৃষ্টির কোন পাত্তা পাওয়া যেত
না । এজন্যই তিতির হয়ত আমাকে হাদারাম বলে ।
বৃষ্টির হিমশীতল পানির ছোয়ায় যখন কাপতাম তখন
তিতির কে দেখতাম মেয়েটা অবলিলায় দুহাত মেলে
আকাশের কান্না কে আলিঙ্গন করছে ।
-শোন না তপু? বৃষ্টির কনা গুলো যখন আমাকে ছুয়ে
যায় তখন আমাকে কি বলে জানিস? “ মুছে দিয়ে
যাচ্ছি আমার বিশুদ্ধতায় তোমার উচ্ছিষ্ট অনুভুতি
গুলো , যা তোমাকে তোমার মনের অগোচরে
খরোস্রতা এনে দেয় “
আমি মোটা ফ্রেমের ঝাপসা চশমা টা একটু উপরে
ঠেলে মুখটা বৃত্যের আকার নিয়ে তার দিকে
তাকিয়ে কথা গুলোর মানে খুজতাম । ও তখন আমার
দিকে তাকিয়ে হাসে ,হাসিটা অনেক তৃপ্তির ।
- কিরে পানির স্বাদ নেয়ার চেষ্টা করছিস নাকি?
জানিস বৃষ্টি আমার এত পছন্দ কেন ?
- কেন?
- বৃষ্টি এর শুদ্ধতায় আমার চোখের নোনতা কষ্ট টার
স্বাদ পালটে দেয় । তার মিষ্টাতার কাছে আমার
নোনতা অনুভুতি গুলো সুখের স্বাদ দিয়ে চলে যায় ।
.
তিতিরের কথার মানে খুজতে গিয়ে যখন গুলিয়ে
ফেলি নিজেকে তখন ভাবি মেয়েটা এত কঠিন কথা
কিভাবে বলে?
শহর থেকে কয়েক কিলো পরেই একটা সবুজ মাঠ ছোট
একটা নদী বয়ে গেছে আর মাঠের চারপাশ দিয়ে
শুভ্রতায় ভরে গেছে কাশফুল । এখানে তিতির আর
আমি প্রায় আসি তিতিরের নাকি অনেক পছন্দের
জায়গা । খোলা আকাশের নিচে সে মুক্ত পাখির মত
দাপিয়ে বেড়ায় । শুভ্রতায় ভরা একটা কাশফুল
ছিড়ে যখন দখিনা হাওয়ায় সে ফুলের শুভ্রতা উড়িয়ে
দেয় আমি তখন চাতক পাখির মত চেয়ে দেখি ।
কৃষ্ণচুড়া তার পছন্দের ফুল বড় মাঠটার পশ্চিমে একটা
কৃষ্ণচুড়ার গাছ আছে , মগডালে পাখির বাসার মতো
দুটো থোকায় ফুল ধরেছে । আমাকে বলত
-তুই গাছে উঠতে পারিস?
- না কখনো উঠিনি যদি পা পিছলে পড়ে যাই ?
- ভিতুর ডিম ,যা এখান থেকে ।
মুখ ভার করে যখন নদীর পাড়ে বসে ঢেউয়ের নৃত্য
দেখত আমি পিছন থেকে বলতাম তিতির? দুমড়ে
মুচড়ে যাওয়া কৃষ্ণচুড়া কেউ তোকে দিলে তুই রাগ
করবি? আর তাতে যদি দু ফোটা ঘামের গন্ধ লেগে
যায়? নাকি রাগ করে ফেলে দিবি ।
তিতির আমার দিকে তাকিয়ে ভূত দেখার মত
চমকাতো , অবশ্য গাছে চড়তে গিয়ে আমি ভূতের
থেকে কোন অংশে কম হইনি শার্টের বোতাম দুইটা
ছিড়ে গেছে কোনুই কেটে রক্ত বের হচ্ছে
- কি করেছিস তুই এসব ? তোকে গাছে চড়তে বলেছে
কে হাদারাম? দুমড়ানো কেন তুই যদি আমাকে
শুকিয়ে যাওয়া দুটো পাপড়ি এনে দিস । আমি
সযত্নে তুলে রেখে দিবো ।
আচ্ছা তোর ছোটবেলার সব জিনিস কি আছে?
-না তো , তবে কয়েকটা আছে ।
-কেন আছে জানিস? সেগুলো তোর অতি প্রিয় ।
কারন মানুষ তার অতি প্রিয় জিনিস কে যেকোন
মুল্যে তার কাছে রাখতে চায় । এই দুমড়ানো ফুলটাও
ঠিক একি রকম আমার কাছে।
*
ডায়েরী খুলে যখন তিতিরের হাসি মাখা মুখটা
দেখতাম , সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যেত ।
অনেক ছোট বেলা থেকে ডায়েরী লিখতাম বেশ
কয়েকটা ডায়েরী হারিয়েও ফেলেছি শেষ সম্বল
এটাই ।
যখন তিতির কে নিয়ে ভাবি , খুব সুন্দর করে কাব্য
লিখতে ইচ্ছে করে ,কিন্তু কি করব? দেখ! আমি
একফোটাও কাব্য রচনা করতে পারিনা । আসলে
কাব্য জিনিসটাই আমার ভালো লাগেনা কবিতা
আমি বুঝিনা হয়ত সে ভাষা অতীব গভীর বলে । স্কুল
লাইফে পড়া অবস্থায় একজন শিক্ষিকা ছিলেন
যিনি বাংলা পড়াতেন বলতেন ‘তপু একশব্দে একটা
মানুষের দুর্নাম ও সুনাম করো তো “
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে ওনার দিকে বলতাম আমি
পারবো না ।
উনি একগাল হেসে বলতো “ ভয়ংকর সুন্দর “
যখন জিজ্ঞাসা করতাম কিভাবে কি হলো এই শব্দ
দ্বারা ?
-দেখ আমরা যখন এই শব্দ টা বলি তখন আমরা ভাবি
তার অনেক সুনাম গাইছি বা সেও এটাই ভেবে নেয়
যে তুমি তার অনেক সুনাম গাইছ কিন্তু বাস্তবিক
ভাবে তুমি তার সুনাম এবং দুর্নাম দুটোই করছ ।
কিভাবে বুঝতে পারোনি তো? আমরা যখন বিভৎস
কোন জিনিস দেখলে কি বলি? ‘কি ভয়ংকর’ আর যখন
অপরুপ জিনিস দেখি তখন কি বলি? ‘বাহ কি সুন্দর’ ।
বুঝেছ এবার?
*
তিতির কে নিয়ে লিখতে বসলে যেন শব্দের জোয়ার
ভেসে যায় কথার ফোয়ারা সৃষ্টি হয় । কলম যেন
থামতেই চায় না । যত দেখি ততই নতুন লাগে ভাবি
একবার গিয়ে বলি “ আচ্ছা তুই একটা উপন্যাস অথবা
একটা অনেক বড় গল্প কিংবা একটা নদী কেন হস নি?
তাহলে হয়ত এতদিনে পড়ে নয়ত সাতরিয়ে পার হয়ে
যেতাম । কিন্তু বলা হয়ে ওঠে না ।
গ্রীষ্ম কেটে যায় বর্ষা যায় ফাল্গুন ও চলে যায়
তবুও আমার বলা হয়ে ওঠেনা “তিতির আমি তোকে
ভালোবাসি”
সময় যেতে থাকে আমার ভেতরের আকুলতা বাড়তে
থাকে তার আঙুল ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে
কুয়াসায় মোড়ানো সকালে খালি পায়ে শিশির
ভেজা ঘাসের উপর হাত ধরে হাটতে ।
যখন সেমিস্টার ছুটি শেষে সবার মুখে যুদ্ধ জয় করার
মত হাসি আসে তখন তিতিরের মুখের হাসিটা
মিলিয়ে যায় সেই প্রথম বর্ষ থেকে আজ পর্যন্ত ।
উত্তর পাইনি যতবার জিজ্ঞাসা করেছি সে আমাকে
এড়িয়ে গেছে ।
-তিতির?
- তোর বাসায় যেতে ভালো লাগেনা তাই না?
ক্যাম্পাসেও তো কারো সাথে খুব একটা মিসতে
দেখিনা । কেন এমন ? আচ্ছা আমাদের বাসায়
যাবি?
- হা হা পাগল? তোর মায়ের ঝাটার বাড়ি খাবো?
আর আমাকে নিয়ে গেলে তোকেও বাড়ি ছাড়া হতে
হবে । তখন কই থাকবি গাছতলায়?
- হুম গাছতলায় থাকবো , খড় দিয়ে একটা কুড়েঘর
বানাবো দক্ষিনে আর পুর্ব দিকে দুটো জানালা
রেখে দিবো । একটা দিয়ে দখিনা বাতাস আর একটা
দিয়ে চাদের আলো ঢুকবে ।
- হইছে স্যার এবার কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে
আসেন , আমার বাস চলে এসেছে । উঠাই দিবেন?
নাকি আমাকেই তুলতে হবে?
-তুলে দিচ্ছি । আচ্ছা তপু আমাদের যদি আর দেখা
না হয় কখনো? জানিস কেন আমার বাড়ি যেতে
ইচ্ছে করেনা? আমার মা না আমাকে প্রচন্ড
ভালোবাসে রে! আমি যে এতবড় একটা মেয়ে তবুও
আমার গায়ে আমার মায়ের হাত তুলতে একটুও বাধে
না জানিস? বাসায় গেলে আমাকে একবারের জন্য
জিজ্ঞাসা করেনা কেমন আছিস মা? উল্টো এখান
থেকে গিয়ে রাতে তার হাত পা টিপে দিতে হয় ।
জানিস ওনার ভালোবাসার কত চিহ্ন আমার শরীরে
আছে? কত জায়গা কেটে আর ছিড়ে গেছে । আমি
যখন কাদি তখন আমার মা মনে হয় খুশি হয় তার
ঠোটের কোনে একটা বাকা হাসি থাকে । জানিস?
বাকি সবাই আমাকে বলে উনি তোর সৎ মা , কিন্তু
আমি আজো বিশ্বাস করি উনি আমার মা । আচ্ছা তুই
বল মা তো মা ই হয় না ? মায়েদের কখনো ভাগ হয়?
মায়েদের কি আলাদা নাম হয় বল? আমাকে একটা
কথা দিবি? আমি যদি কখনো হারিয়ে যাই আমাকে
খুজিস না আচ্ছা?
.
কথাগুলো যখন তিতির বলছিলো তখন আমি মাথা নিচু
করে শুনছিলাম আসলেই তো মায়েদের কোন ভাগ হয়
না তাহলে কেন আজ এরকম বৈসম্য?
আচ্ছা ও হারিয়ে যাবে মানে ? কোথায় হারাবে?
এবার তো ফাইনাল পরীক্ষা হলো এরপর শুধু রেজাল্ট
আর কাগজপত্র নিতে আসতে হবে , আমি ভাবছি না
কারন তিতির আমাকে ফোন দিবে জানি, ভাবিনি
আমার ধারনা ভুল করে দিবে তিতির বাসায় যাওয়ার
পর আজ পর্যন্ত ওকটা ফোন পাইনি উল্টো আমি ফোন
দিয়ে ফোন বন্ধ পেয়েছি । বাসার ঠিকানা পর্যন্ত
আমাকে জানতে দেয়নি ক্যাম্পাসেও যোগাযোগ
করে কিছু পাইনি , কোনভাবে শুধু শহরের নাম টা
জানি কিন্তু অতবড় শহরে তো একটা মানুষকে খোজা
মানে খড়ের গাদায় সুচ খোজার মত অবস্থা ।
ইন্টারভিউ এর জন্য একটা ডাক পেয়েছি মায়ের
মুখের দিকে তাকিয়ে যেতে হচ্ছে। এদিকে আমার
ডায়েরি আর চিঠিটা খুজে পাচ্ছিনা যেটা সবসময়
আমার বুক পকেটে থাকতো । হয়ত রুম্মেটদের বই
খাতার সাথে চলে গেছে । আচ্ছা তিতির তো আমার
বাড়ির ঠিকানা এমন কি মায়ের নাম্বার পর্যন্ত
জানতো তার কি উচিত ছিল না ফোন দেয়া ?
*
তিতির মেয়েটা অদ্ভুদ ভাবে মিশে গেছে আমার
সাথে আমি যত চাই ভুলে থাকতে , উনি যেন ইচ্ছে
করেই আমাকে মনে করিয়ে দেয় । রোজ সকালে ঘুম
থেকে উঠে একটা ব্যাগ আর কিছু ফাইল পত্র কাধে
ঝুলিয়ে , লোকাল বাসের আমজনতার সাথে বাক যুদ্ধ
করতে করতে অফিস যাওয়া-আসা হাপিয়ে
উঠতেছিলাম আস্তে আস্তে । মনে হচ্ছিল সব ছেড়ে
বনবাসে চলে যাই । কিন্তু মায়ের দিকে তাকিয়ে
কিছু বলতেও পারছিলাম না করতেও পারছিলাম না ।
এভাবেই চলছিল ,হাপিয়ে উঠেছিলাম তবুও ভাগ্যের
খেলা বলে মেনে নিয়েছিলাম ।
*
আজ বাস পাইনি হেটেই রওনা দিয়েছিলাম রাস্তার
ধার থেকে এক ঠোঙা বাদাম কিনে রাস্তায় পড়ে
থাকা ক্যান টাকে ফুটবল বানিয়ে বাউণ্ডুলেদের মত
হাটছিলাম । ল্যাম্পপোষ্টের হলদে আলোয়
নিজেকে বড্ড অচেনা লাগছিল । মনে হচ্ছে আমার
আমিকে সেই কবেই হারিয়ে ফেলেছি এখন যা আছে
তা শুধুই খোলস । একটা মানুষ যে এভাবে আরেকটা
মানুষ এর উপর প্রভাব ফেলতে পারে তিতির আমার
জীবনে না আসলে জানতাম না । রাতের এই নিকশ
আধার আমার অনুভুতি গুলোতে আলো ফুটতে দেয় না ।
হাটতে হাটতে কখন বাড়ির কাছে এসে পড়েছি
খেয়াল নেই
ছোট একটা বাড়ি কয়েকটা ঘর ফুলের গাছ , আর
ইলেক্ট্রিক খাম্বার মত একটা শুকিয়ে যাওয়া গাছ ।
গাছটা কাটা হয়না, মা বলে এটা নাকি দাদা তার
নিজের হাতে লাগিয়েছিল এটাই তার শেষ স্মৃতি ।
দরজায় বেল বাজাতে ইচ্ছে করেনা তাই ঠক ঠক
আওয়াজ করলাম । ছোটবোন বেরিয়ে দরজা খুলে
দিলো , পিচ্চিটাকে আজ যেন একটু বেশিই খুশি
লাগছিল । ব্যাগটা রেখেই ছাদে গেলাম
পিচ্চিটাকে কফি পাঠাতে বললাম ।
ছাদে কয়েকটা গাছ আছে চাদের মৃদ্যু আলোতে
এদের বেশ মায়াবি মনে হয় । চাঁদ টাকে আজ একটু বড়
মনে হচ্ছে , ঠিক যেমন দোকানদারগুলো মাঝে মাঝে
বলে “ নাও বাবা আজ একটু বেশিই দিলাম”
কাচের চুড়ির টুং টাং শব্দে ধ্যান ভেংগে গেল
ভাবলাম ছোট বোন হয়ত ্চুড়ি পরেছে । পিছনে না
ঘুরেই বললাম রেখে যা ।
“আচ্ছা প্রেমিক-প্রেমিকাদের তুমি বাদ দিয়ে তুই
করে বলা যায় না? তাজা গোলাপ না দিয়ে সদ্য
ঝড়ে পড়া একগুচ্ছ কৃষ্ণচুড়া দিয়ে বলা যায় না
ভালোবাসি ? কিংবা প্রাইমারি স্কুলে
থাকাকালিন বইয়ের ভাজে থাকা জংলি ফুল দিয়ে
বলা যায় না ভালোবাসি? কিংবা স্কুলের পিছনে
থাকা শিমুলের ফুল দিয়ে বলত । আমিও বলব
ভালোবাসি কিন্তু বাকিদের মত তাজা গোলাপ
দিয়ে নয় , শ্রভতায় ভরা কাশবনের একগুচ্ছ কাশফুল
দিয়ে যখন সুর্য তার আলো নিভিয়ে গোধুলী বয়ে
আনবে তখন । যখন পশ্চিম আকাশ রক্তিম আভায়
ছেয়ে যাবে । আমি বলতে চাই “ শুনছিস ? আলো তো
নিভে গেল আমি আবার আলো হয়ে আসতে চাই তোর
জীবনে , এভাবে রক্তিম আকাশ নয় নীল আকাশ হতে
চাই , জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তোর হাতে হাত
রাখতে চাই দিবি?”
-কি হাদারাম ? ডায়েরী আর বুক পকেটের চিঠিটা
খুইয়ে এখন বুঝি দেবদাস ?
ভাবিনি এই শব্দ টা আবার কখনো শুনতে পাবো, ও
যখন চিঠিটা পড়তে শুরু করল আমি পিছু ঘুরে
অবলিলায় তাকিয়ে ছিলাম সেই গোল চশমা ,
চিবুকে ঘাম , মুখে স্নিগ্ধতা । অভিমানের পাহাড়
যেন এক নিমিশে গলিয়ে দিয়েছিল তারা মায়া
ভরা চাহনীতে । মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মুখটা উল্টো
দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম ।
-মুখ ঘুরিয়ে নিলি কেন? কনের সাজে ভালো লাগছে
না? কাজী সাহেব কে শাশুড়ীমা আসতে বলে
দিয়েছে । জানিস ? সেদিন যখন ফিরে যাই ফোনটা
পথেই চুরি হয়েছিল । নতুন ফোন আমাকে কিনে
দেয়নি । বাসার কারো ফোন আমাকে ছুতেও দিতো
না । মায়ের উপর দিয়ে বাবা কথা বলতে পারেনা ,
গৃহবন্দী করে রেখেছিল আমাকে । মায়ের
দুরসম্পর্কের কোন এক আত্মীয় ৪৫ উর্ধ্ব বয়সের এক
লোকের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছিল লোকটার
আগের একটা বউ ছিল ,বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছে ।
আমি শুধু একটা বন্দি ঘরে বসে নিজের চোখের জল
বিসর্জন দিতাম ।
আজ আমার বিয়ে ছিল , বাবার উপর দায়িত্ব দেয়া
হয় আমাকে পার্লারে থেকে সাজিয়ে আনার জন্য ।
আজকে আমি সেই ছোটবেলার হারিয়ে যাওয়া
বাবাকে ফিরে পেয়েছিলাম , যে আমাকে বুকে
নিয়ে ঘুম পাড়াতো , আমি কাদলে যার মুখে
শ্রাবনের নিকশ কালো মেঘ বাসা বাধত । সে বাবা
আমাকে আজ বলেছে তিতির ? যা তোর আকাশের
অন্ধকার কাটিয়ে নতুন আলোর সুযোগ করে দিলাম
চলে যা মা এই নরক থেকে , ভুলেও এই পথে আসবিনা
আর । আমি বাবার কানে কানে বলেছি “ কয়েকদিন
পর এসো তোমার জামাইয়ের মুখদর্শন করে যেও ,
আমি সেখানেই যাবো যেখান থেকে আমার আলোর
অধ্যায় শুরু হবে । তোদের বাড়ির ট ঠিকানাটা
বাবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে এসেছি ।
আচ্ছা আমাকে একগুচ্ছ নীল চুড়ি দিবি ? তাহলে
তোর বউ হবো নাহলে আড়ি !
-পয়সা নেই জনাবা , বইয়ের পাতায় দু তিনটে জংলি
ফুলের পাপড়ি আছে চলবে?
-না দৌড়োবে জনাব ।
.
বেলী গাছটায় ফুল ফুটেছে গন্ধে মম করছে চারপাশ
আজ হয়ত তারাও জেনে গেছে তিতির আমার কাছে
আসবে , রাতের তারাগুলো বেশ উজ্জ্বল হয়ত প্রমান
হিসেবে থেকে যাবে । রাত গভীর হবে অশ্রু বিসর্জন
হয়ত এক সময় থেমে যাবে , দুজনের অট্টোহাসির
প্রতিধ্বনি ফিরে আসবে সামনের রঙচটা বিল্ডিং
থেকে আমিও বলব ভালোবাসি ।
.
লিখা : Toufiq hasan(cloudy sky)
post: হেমন্তে বর্ষায় আমি
Quote
« Next Oldest | Next Newest »

You must Login for comment or Register here
Share Link
Link :
HTML Link:
BBcode Link:

Tag:

তিতির free net tips, তিতির Tips and Trick, তিতির Free download, তিতির jokes koutuk, তিতির hasir golpo, Funny golpo story 2015 2016 207, তিতির New tips, তিতির all Golpo story fun jokes,তিতির wapka wml xhtml code css

Possibly Related Threads…
  [গল্প] রিফাত ও সামিয়া অসাধারন গল্প
  বন্ধুত্ব
  আমি আর বলবো না তুমি ভালবাস আমাকে
  [গল্প] অতৃপ্ত মন
  [গল্প] মহাকাল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এক অশ্বথ বৃক্ষ! (কোন গল্প নয় । একটা অনুভূতি)
  [গল্প] ভর-দুপুর
  গল্প : সাদা-কালো
  [গল্প] গন্তব্যহীন
  [জানা ও অজানা] ‘অশালীন’ পোশাক পরায় ফের সমালোচনায় দীপিকা
  গল্পঃ স্মৃতির অনুভূতি


  • Subscribe to this thread


EasyMenu
Create Post:
Forum Jump:
Main Category
Bangla Sms বাংলা এসএমএস
English Sms বিজ্ঞান-ও-প্রযুক্তি
ইসলামের কথা খবরা-খবর
বিনোদন ডেস্ক খেলাধুলার খবর
দৈনন্দিন জীবন টিপস এবং ট্রিক
রিভিউ সমগ গল্প সমগ্র
কবিতা সমগ্র অপরেটর নিউজ
বিশেষ আয়োজন গানের কথা
অন্যান্য ও মজা বাংলা কৌতুক
জানা ও অজানা পড়াশোনা
চাকুরির বিজ্ঞপ্তি Web-Development
Return to Top Forums.Likebd.com :: Bangladesh First Forums and Community Place
Switch to Desktop Version
Back To : Likebd.com