Forums.Likebd.Com

Full Version: পাঠকের প্রশ্ন: মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ কী সত্যিই বিষে পরিণত হয়?
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
পাঠকের প্রশ্ন: প্রায়ই দেখা যায় মেয়াদ উত্তীর্ণ বা মেয়াদবিহীন ওষুধ নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করে থাকেন যে, ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এগুলো বিষে পরিণত হয়ে যায়। আর এই মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খেলে শারীরিক অনেক ক্ষতি হয়, এমনকি একজনের মৃত্যুও ঘটে যেতে পারে। তাই ওষুধ কেনার সময়ে আমরা মেয়াদ আছে কী না তা দেখে নিই। আমার প্রশ্ন হলো, ওষুধের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে আসলেই কী তা বিষে পরিণত হয়ে যায়? এছাড়াও ওষুধ সংরক্ষণের সঠিক উপায় কী?

প্রশ্নটি আমাদের ফেসবুক পেজে করেছেন: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন।

চাইলে আপনিও যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের কাছে। আর নিজের নাম গোপন রাখতে চাইলে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন পেজের ইনবক্সে, সঙ্গে লিখে দিতে হবে ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’।

স্বাস্থ্য হোক বা সৌন্দর্য, খেলা হোক বা সিনেমা, দাম্পত্য বা প্রেম, অফিসের সমস্যা কিংবা আইনি সমস্যা , বিজ্ঞান হোক বা রাজনীতি, স্কুল-কলেজ হোক বা সামাজিক ও পারিবারিক কোনো সমস্যা, যেকোনো সমস্যা লিখে জানান আমাদের।

আপনার প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর। আপনার জন্যই অপেক্ষায় আছি আমরা।
বিশেষজ্ঞের উত্তর: মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিষে পরিণত হয়ে যায় এই কথাটি একেবারেই অযৌক্তিক। কেননা মেয়াদ উত্তীর্ণের সাথে বিষের কোনো সম্পর্কই নেই। বড়জোর ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, তবে কখনই বিষে পরিণত হয় না।

সাধারণভাবে ওষুধের মেয়াদ দেয়া হয় এজন্য যে, কোম্পানিগুলো যেন জানায়, এই সময়ের মধ্যে ওষুধের পূর্ণ কার্যকারিতা পাওয়া যাবে। এরপর কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা যায় মেয়াদের তারিখ পার হয়ে যাওয়ার পরও ওষুধের দীর্ঘদিন কার্যকারিতা থাকে। বেশিরভাগ ওষুধ মেয়াদ শেষের ৫-৬ এমনকি ১২ বছর পরও ৯০-১০০ % কার্যকরী থাকে।

আমেরিকার ডিফেন্স চালিত গবেষণাতে কিছু ওষুধ ১৫ বছর পরও কার্যকর রয়েছে। তবে পূর্বের তুলনায় ওষুধের কার্যকারিতা কিছুটা কমে এসেছে। এ গবেষণায় প্রায় ১০০ % ওষুধেরই ক্ষতিকর কোনো পরিবর্তন পাওয়া যায়নি। শুধু সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়নি এমন টেট্রাসাইক্লিন আর শিরায় দেবার এন্টিবায়োটিক, ইনসুলিন দীর্ঘদিন পর কিছু প্রতিক্রিয়া দেখায়। আধুনিক ফর্মুলার ওষুধ প্রায় সম্পূর্ণ নিরাপদ পাওয়া গেছে। তাই মেয়াদ শেষ হলেই ওষুধ বিষ হয়ে যায় বা কাজ করে না এটা ঠিক না।

ওষুধে মেয়াদ দেয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়িক কিছু পলিসি কাজ করে। বর্তমানে নতুন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন ফর্মুলা আসছে। পুরাতন ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হলে নতুন ওষুধ আর বিক্রি হবে না ফলে ব্যবসায়িক অনেক ক্ষতি হবে। এজন্য মেয়াদের একটি তারিখ বসানো হয়ে থাকে। অন্যদিকে, ওষুধ সংরক্ষণ করার সঠিক নিয়ম আছে যা অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে সে নিয়ম অনুসরণ করে ওষুধ সংরক্ষণ করে না। সঠিক সংরক্ষণের অভাবে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায়, এর ফলে কোম্পানির সুনাম নষ্ট হয়। আর এ কারণেও ওষুধের গায়ে মেয়াদের একটি তারিখ বসানো হয় যাতে সঠিকভাবে সংরক্ষিত না হলেও ঐ নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত ওষুধের কার্যকারিতা ঠিক থাকে।

তাই মেয়াদ শেষ হওয়া ওষুধ নিয়ে অহেতুক ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। বাতাসের অসংস্পর্শে সঠিক তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করলে দীর্ঘদিন তা ভালো থাকে। ওষুধের গায়ে বাতাস, আলো, পানি, তাপ লাগলেই এর কেমিক্যাল উপাদান পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং ক্ষতিকর জীবাণু বাসা বাধে। এমতাবস্থায় ওষুধের মেয়াদ থাকলেও এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।

এছাড়া কিছু ওষুধ যেমন নাইট্রোগ্লিসারিন, ডিগক্সিন, OCP, চোখের ড্রপ, তরল ওষুধসমূহ দ্রুত কার্যকারিতা হারায়, তাই এগুলোর প্যাকেট কাটা মাত্রই ব্যবহার করুন। ধন্যবাদ

পরামর্শ দিয়েছেন :

ডা: তৌহিদ হোসেন রোমেল

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।