পাঠকের প্রশ্ন: আপু, সালাম নিবেন।
আমিও একটি পারিবারিক সমস্যায় আছি। আমার স্ত্রীর সাথে বিয়ের পর থেকেই সমস্যায় আছি। বিয়ের বয়স ৩ বছর ৫ মাস। একটি ২১ মাসের ছেলে সন্তান আছে। বিয়ের পর ৬ মাসের সময় স্ত্রী আমাদের বাড়ি থেকে চলে যায়। ১৮ মাস পর আমাদের বাড়িতে আসে বিভিন্ন কথা নিয়ে। বিভিন্ন অজুহাত নিয়ে সংসারে অশান্তি করে। আমাকে বিন্দুমাত্র বুঝতে চায়না।
আবারো সে চলে গেছে। অনেক অনেক সমস্যা করে আমার সাথে। আমি সরকারি চাকরি করি। আমি স্ত্রীকে ছাড়তে চাই। কীভাবে করব, আমি সেজন্য সাহায্যপ্রার্থী।
প্রশ্নটি আমাদের ফেসবুক পেজে করেছেন : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভদ্রলোক।
চাইলে আপনিও যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের কাছে। আর নিজের নাম গোপন রাখতে চাইলে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন পেজের ইনবক্সে, সঙ্গে লিখে দিতে হবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
স্বাস্থ্য হোক বা সৌন্দর্য, খেলা হোক বা সিনেমা, দাম্পত্য বা প্রেম, অফিসের সমস্যা কিংবা আইনি, বিজ্ঞান হোক বা রাজনীতি, স্কুল-কলেজ হোক বা সামাজিক ও পারিবারিক কোনো সমস্যা। যে কোনো সমস্যা লিখে জানান আমাদের। আপনার হয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবো আমরা।
আপনার প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর।
আপনার জন্যই অপেক্ষায় আছি আমরা।
পরামর্শ : ওয়ালাইকুম আলাম, ভাই।
দেখুন ভাই, খুব সহজেই বলে ফেলা যায় যে “তালাক চাই”। কিন্তু তালাক জিনিসটা আসলে কী, সেটা মন দিয়ে ভেবে দেখেছেন তো? তালাক এমন একটা ক্ষত ভাইয়া, যেটা আজীবন বুকের মাঝে রয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, কারো সাথে যদি জীবন সুখের না হয়, তাহলে সমঝোতা করে জীবন কাটিয়ে দেয়াও অন্যায়। একটাই জীবন, সেটা সুখে ও সমৃদ্ধিতে বাঁচা উচিত। তবে ভাইয়া, তালাক চাওয়ার আগে কয়েকটি জিনিস আপনার অবশ্যই ভেবে দেখবেন।
আপনি লিখেছেন যে বিয়ের ৬ মাস পর স্ত্রী শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে যায়। আপনি কেবল স্ত্রীর চলে যাওয়াটাই দেখলেন, মেয়েটি কেন সংসার ছেড়ে চড়ে গেলো সেইটা ভেবেছেন কী? দেখুন, একটা মেয়ে নিজের সবকিছু ছেড়ে একজন পুরুষের সাথে সংসার করতে আসে, নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে তার সমস্যা হওয়াটা কিন্তু খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশের শ্বশুরবাড়িতে মেয়েরা এই সাহায্য পায় না। স্বামী তো করেই না, শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও না। আপনার নিজের পরিবারের মানুষ আপনার কাছে ভালো, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটু নিরপেক্ষ হয়ে ভাবুন তো, আসলেই কি সবটুকুন স্ত্রীর দোষ? আপনি বা আপনার পরিবারের কি কোনই দোষ নেই?
আপনি লিখেছেন যে ১৮ মাস পর স্ত্রী নানান রকম কথা নিয়ে ফিরেছে। অর্থাৎ সে কিন্তু ফিরেছে! তারমানে সে সংসার চায়। এই নানান রকম কথা কি কোন শর্ত ছিল? যেমন আপনি অমুক কাজটা করলে বা অমুক কথা দিলে সে সংসার করতে আসবে? এতকিছুর পরও আপনাদের একটি সন্তান হয়েছে, এর মানে তো এটাই যে স্ত্রী আপনার সাথেই ছিল এবং আপনার বাচ্চার মাও হয়েছে। তবে এক তরফা তাকে কেন দোষ দিচ্ছেন ভাই? আপনি লিখেছেন, স্ত্রী আপনাকে বোঝে না। কিন্তু আপনি কি স্ত্রীকে বোঝেন? আপনি কি কখনো নিজের পরিবারের কথা শোনা বাদ দিয়ে স্ত্রীর কষ্টটা বুঝতে চেষ্টা করেছেন? আপনি যদি নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে স্ত্রীর মনের কথা বুঝতে না পারেন, তাহলে কীভাবে আশা করেন ভাই যে স্ত্রী আপনার মনের কষ্ট বুঝবে? দাম্পত্য পারস্পরিক সমঝোতার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, ভাই। কেবল স্ত্রী বুঝবে, স্ত্রী মানিয়ে নেবে এটা ভাবা কিন্তু অন্যায়।
এবার আসি আপনি কী করবেন সেই প্রসঙ্গে। আপনি কী করবেন আমি জানি না, কিন্তু আমি যা করতাম, সেটা আপনাকে বুঝিয়ে বলি। প্রথমেই ভাই, কিছুক্ষণের জন্য নিজের স্বার্থ বা পরিবারের জন্য অন্ধ ভালবাসা ত্যাগ করে স্ত্রীর দিক থেকে ভাবুন। ভেবে দেখুন যে আসলেই তিনি কেন এত সমস্যা করছেন। প্রয়োজনে তার সাথে কথা বলুন। যদি স্ত্রীরই দোষ হয়ে থাকে, তাহলে তাকে সরাসরিই বলুন যে আপনি আর এভাবে পারছেন না। স্ত্রী যদি নিজেকে পরিবর্তন করতে না পারে, তাহলে আপনি তালাক চান। তালাকের কথা শুনলে স্ত্রীর হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরে ব্যাপারটি শুধরে নেয়ার চেষ্টা করবেন।
কিন্তু যদি স্ত্রীর ভুল না হয়ে থাকে, কিংবা আপনি যদি দেখেন যে স্ত্রী ও আপনার পরিবার সমান সমান দায়ী, তাহলে আমি মনে করি তালাকের সিদ্ধান্ত নিলে ভুল করবেন। পরিবার অন্যায় করলে কি আমরা পরিবারকে ছেড়ে দিই? তাহলে স্ত্রীর অন্যায় করলে স্ত্রীকে কেন ছাড়বেন? বরং শেষ একটা চেষ্টা করুন তাকে পরিস্থিতি বোঝানোর। স্ত্রী তো আপনার সন্তানের মা-ও। এটাও ভেবে দেখুন যে তালাকের পর সন্তান কিন্তু স্ত্রীর কাছেই থাকবে। এত ছোট সন্তানকে আদালত কিন্তু আপনার কাছে দেবে না। স্ত্রীকে ডিভোর্স করার অর্থ কিন্তু এটাও যে সন্তান থেকে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যাওয়া।
আরেকটা জিনিস ভাই, শেষ পর্যন্ত যদি ডিভোর্সটাই আপনার চাওয়া হয়ে থাকে, তাহলে সরাসরি স্ত্রীর সাথে কথা বলুন। বিয়ে যেমন দুজনের সিদ্ধান্ত, ডিভোর্সও তেমনই দুজনেরই সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত দুজন মিলেই নেয়া উচিত। যদি শেষ পর্যন্ত ডিভোর্স নিতে সম্মত হন, তাহলে পরিবারের মুরুব্বীদের সাথে কথা বলুন এবং একজন ভালো উকিলের সাথে আলোচনা করুন। কারণ ডিভোর্সের পর দেনমোহর ও বাচ্চার ভরন পোষণ দেয়া নিয়ে অনেক আইনি ব্যাপারের মাঝ দিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে একজন উকিলই আপনাকে সবচাইতে বেশি সাহায্য করতে পারবেন। তাছাড়া আপনি সরকারী চাকুরে, স্ত্রী কেস করলে আপনার জীবনে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে, তাই একজন উকিলের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়। আর ডিভোর্স হলে সেটা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে হওয়াই ভালো। সেক্ষেত্রে কেস বা আদালতের টানাটানির হাত থেকে বেঁচে যাবেন।
ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে সিদ্ধান্ত নিন, ভাই। ধৈর্য হারা হবেন না। যা করবেন সবদিক ভেবেচিন্তে করবেন, তাহলে ভালো থাকবেন জীবনে।
পরামর্শ দিয়েছেন-
রুমানা বৈশাখী
সাহিত্যিক