Forums.Likebd.Com

Full Version: প্রেমপত্র!
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
প্রথম পাওয়া প্রেমপত্রটা সবার ভয়ে তালগাছের কোঠরে লুকিয়ে রেখেছিলাম। মাঝেমধ্যে খুব তাড়াতাড়ি স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতাম। আবার স্কুল ছুটির পর অলসতার বাহানায় দেরিতে বাড়িতে ফেরার সময় আড়চোখে দেখে আসতাম খুব যতনে লুকানো সেই চিঠি। পথে বুনে যেতাম স্বপ্ন।



লুকিয়ে কোঠর থেকে চিঠিটা বের করে ব্রিজের নিচে ঝোপের আড়ালে বসে কতবার যে পড়েছি, তার হিসাব হয়তো আজ করতে পারব না। কী মধুর মধুর শব্দের গাঁথুনিতে লেখা ছিল সেই ছন্দময় চিঠিটা। আজও মনে আছে তার প্রতিটি শব্দ।



একদিন গণিত বইয়ের পাতা ওল্টাতেই চোখে পড়ল চৌকোনা খামে মোড়ানো যত্ন করে রাখা একটি চিঠি। অতি সাবধানে, লুকিয়ে চিঠিটা হাতে নিতেই নিজের মধ্যে একটা মৃদু ঝাঁকুনি অনুভব করলাম। আজও মাঝেমধ্যে একাকিত্বে সেই ঝাঁকুনিতে নিজের অতীতে ফিরে যাই। মনে পড়ে সেই ছোট্ট বয়সে হৃদয়ের গভীরে বেড়ে ওঠা নিষ্পাপ প্রেম আর সেই অপরূপ মুখখানা।



দুরন্ত কৈশোরের প্রেম আজও কারণে-অকারণে জাগ্রত হয়।

বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠার সেই সুদ-কষা অঙ্কটা আজও মনে পড়ে।



এখনো সুদ-কষা অঙ্ক করতে গেলে মনে পড়ে সেই প্রথম পাওয়া নিষ্পাপ সম্মোহনী আবেগের প্রেমপত্রের কথা।



একজীবনে একটা অঙ্ক কতবার যে মেলালাম। কিন্তু সেই প্রথম ১০-এ ১০ পাওয়ার মতো অনুভূতি আর কখনো হয়নি।



বাড়ির সবার ভয়ে চেপে গিয়েছিলাম সব অনুভূতি। মনের ভেতর জেগে ওঠা সেই চিঠির উত্তর কোনো দিন প্রাণ পায়নি।



এত বছর পর তাই তো ‘ভিতু’ কথাটা বারবার কানে বাজে। মনে হয় এখনো সে বলে,

‘আমি কি চলে যাব, নাকি বলবে কিছু তুমি?’



সবার ভয়ে সেই দিন আবেগ লুকাতে গিয়ে কবে যে আবেগহীন হয়ে গেছি, বুঝতে পারিনি। ইট-কাঠ নগরীর নিষ্প্রাণ সময়গুলো আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় আমার দুরন্ত, আবেগঘন কৈশোরে। যেখানে আমি ছিলাম নিজের কাছে স্বাধীন।



কিছুদিন আগে বাড়ি গিয়েছিলাম। চলার পথে চোখে পড়ল একসময়কার আমার সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন সেই তালগাছ আর ব্রিজের নিচে ঝোপের পাশটা। গাছটা এখন আকাশ ছুঁবে ছুঁবে ভাব। ঝোপটা আজ আর নেই। সেখানে এখন বড় বড় গাছ আসন গেড়েছে। কিন্তু আমি তো সেই আগের স্মৃতিতেই পড়ে আছি। যতবার অঙ্কটা করতে যাই, ফলাফল মিলে যায়। কিন্তু সেই দিনের সেই অবুঝ মনের অঙ্কটা আজও মেলাতে পারিনি। আর হয়তো পারব না।



জানি না আজ সে কোথায় আছে, কেমন আছে? যেখানে থাকো ভালো থেকো। পারলে ক্ষমা করে দিয়ো। যে প্রেম অঙ্কুরোদ্গমের পর আলো-বাতাস এবং পরিচর্যার অভাবে আর প্রাণ পায়নি, সেই প্রেম ভুলে যেয়ো। নতুবা অপেক্ষায় থেকো, কোনো এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় অথবা শিশির স্নাত ভোরে দেখা হবে, প্রাণ পাবে নিষ্কণ্ট, নিষ্কলুষ প্রেম।