Forums.Likebd.Com

Full Version: প্রেমবতী সে
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
প্রেমবতী সে,
.
.
দরজার ফাক দিয়ে একঝলক মেয়েটিকে দেখে নিলাম।
মেয়েটির এই অবস্থা দেখে আমার মনের মাঝে কেমন
জানি করে।ঠিক যেমন কেমন কেমন।দরজার কোণে
দারিয়ে মেয়েটির ইচ্ছা শক্তি আমাকে প্রানবন্ত করে
তোলে।বিছানা গত হওয়া সত্ত্বেও মেয়েটির ঝাপটে
উঠে পরার ইচ্ছা শক্তি আমাকে তার প্রতি মনোনিবেশ
করাতে বাধ্য করে।হা মেয়েটি অচল,বিছানা গত তবে
হাত পা নড়াতে পারে।একটা এক্সিডেন্টে তার এমন হয়ে
যাই।শুধু কোন মতে হাত পা নড়াতে পারে মাত্র।
.
ক্যাম্পাস লাইফের শেষ দিকে এসেই মেয়েটির সাথে
আমার দেখা।তখন থেকেই মেয়েটিকে আমার ভাল লাগত।
এখনো লাগেনা তা নয়।মেয়েটির অসহায়ত্বের দোহায়
দিয়ে তাকে তো আর ফেলে দিতে পারিনা।হাজার
হলেও আমার শেষ অনুভুতি চুরি করা মেয়েটিই যে এই
মেয়েটি।পুরো ক্যাম্পাস জুরে ছিল মেয়েটির
আনাগোনা।আমার মনের মাঝে ততদিনে সে জুরে
নিয়েছে অপার অসিম ভালবাসার জাইগা।চুরি করেছিল
আমার মনের সমস্ত ভালবাসা।এরপর থেকে কেমনে
কেমনে জানি বন্ধুত্ব,তারপর ভালবাসা হয়ে গেল।আর
শেষ প্রনয় হিসেবে হয়ে গেল বিয়ে।কিন্তু ভালবাসার এই
দিন গুলি আমাদের মাঝে বিলিন করে দিল মেয়েটির
এক্সিডেন্ট।তবুও আমি তার বিছানাগত দিনে আমি
তাকে ছেড়ে দেইনি,ছেড়ে যাইনি।ছেড়ে দেওয়া যে
পাপ,মনের অনুভুতিগুলা যে তাকেই চাই আমার আপন
সত্বায়।
.
এক বন্ধুর মাধ্যমে বিদেশ ফেরত এক মহিলা ডাক্টারের
সাথে কথা বললাম আজকে।যদিও সেটা ফোনে।বন্ধুর
কেমন জানি চেনা।আমি আমার বউয়ের সব কথা খুলে
বললাম।উনি বলল নিয়ে যেতে তার চেম্বারে।আমিও
তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রেখে দিলাম।
.
হুইল চেয়ারে বসে আছে আমার উনি।মানে আমার বউ।
আমার মনহরিণি।কিভাবে যেন মিটমিট করে আমার দিকে
বার বার তাকাচ্ছে।সেই চোখে কত ভালবাসা,কত
আকুতি।আমি স্পস্ট দেখতে পাই ওই চোখের আকুতির শেষ
কথাগুলা।তার চোখ বলে,তার অনুভুতি বলে সে আমার
পাশে হাটতে চাই অপার সম্ভাবনায়।আমি তার হাত
চেপে ধরি।বিশ্বাসের হাত।যে হাত তাকে তার কস্টের
সময়েও ছেড়ে যাবেনা।ছেড়ে দিবেনা।
.
রিসিপশনে বসে থাকা মেয়েটি আমার নাম ধরে ডাক
দিল।আমি আমার বউকে রেখে আগে ডাক্টারের সাথে
দেখা করতে গেলাম।আমি ঢুকতে গিয়ে আটকে গেলাম।
আমি কাকে দেখছি?এত অনেক আগের সেই নিলাশা।যে
কোন এক সময় আমাকে সপ্ন দেখিয়েছিল।সেই এসএসসি
পাশ করা বয়স থেকে সে আমাকে সপ্ন দেখিয়েছিল।
থাকগে ওসব কথা।অতিত অতিতই।শুধুই প্যারা।আমি ওসব
ভাবতে চাইনা।আমার সব কিছুই এখন আমার বউ।
.
আমি দরজার সামনে দাড়িয়ে নিলাশাকে বললাম,
--ম্যাম আসব?
.
নিলাশা আমাকে দেখে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো।
আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে বসতে বলল।আমি বসে
তার দিকে তাকালাম।অনেক দিন পর আবার দেখা।মনের
মাঝে অনেক দিন পর আবার অতিতের কিছুটা ব্যাথা।তবুও
কেন জানি ভাবতে ইচ্ছা করছে নাহ।আমি নিলাশাকে
বললাম,
--ম্যাম আসলে আমি আমার বউয়ের বিষয়ে তো আপনাকে
সবই বলেছি।আজকে নিয়েও এসেছি।এখন কি করা যাই
বলুন তো?
.
নিলাশা চেয়ার থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে
দাড়ালো।আমি মাথা নিচ করে ফেললাম।চাইনা আমি ওই
মেয়েটির দিকে তাকাতে।যে আমার কথা না ভেবে
পাড়ি জমিয়েছিল দুর দেশে।যে অন্য কাউকে
ভালবেসেছিল তার কথা আমার ভাবনাতে আনাও যে
পাপ,অন্যায়।নিলাশা আমাকে বলল,
--তোমাদের দুইজন কেই আমি দেখেছি সিসিটিভি
ক্যামেরায়।তাই ফ্রি হয়েই তোমার সিরিয়াল করালাম।
আচ্ছা দিহান কি পাচ্ছো ওই অচল মেয়েটির মাঝে?কেন
তাকে নিয়ে এখনো পরে আছ?
.
আমি নিলাশার কথার হাবভাব বুঝতে চেস্টা করলাম।এত
বছর পরেও তার সার্থপর গিরি যাইনি।আমি নিলাশার
দিকে তাকালাম।কিছুটা অন্যরকম ভাবে।নিলাশা আমার
দিকে তাকালো।আমি নিলাশাকে বললাম,
--সার্থপরই থেকে গেলে সারাজীবন দেখছি।আমার
বউয়ের জাইগাই তুমি থাকলে কি আমি তোমাকে ছেড়ে
দিতাম?দিতাম নাহ।আমি ভালবাসি আমার বউকে।আমার
আপন সত্বা ভেবেই আমার পাশে নিয়েছি তাকে।হাজার
হলেও সে তোমার মত সার্থপরগিরী করেনি আমার সাথে।
.
নিলাশা আমার কথাতে কস্ট পেল কিনা জানিনা তবে
চেয়ারে আহত অবস্থায় বসে পরল।আমার হাত ধরে ফেলল।
আমি হাত ছাড়াতে গেলাম কিন্তু সে আরো জোরে
চেপে ধরল।আমি এবার ছাড়িয়েই নিলাম।নিলাশা
আমাকে বলল,
--সার্থপর কিনা জানিনা তবে তোমাকে আমার এখন
চাই।তুমি তাকে ছেড়ে দাও।আমি আর তুমি খুব ভালবাসায়
দিন কাটাবো।
.
আমি নিলাশার কথাতে অবাক হয়নি।বিন্দুমাত্র অবাক
হয়নি।আমি জানি এই মেয়ে সার্থ ছাড়া কিছুই ভাবেনা।
ইতিমধ্যে রিসিপশনে বসে থাকা মেয়েটি আমাকে
ডেকে গেল।আমার বউ নাকি আমাকে না পেয়ে কেমন
করছে।আমি উঠে দাড়ালাম।নিলাশার দিকে তাকিয়ে
ওকে বললাম,
--কি করে ওকে ছেড়ে দিব বল?যে মেয়ে আমার জন্যে
তার বাবা মায়ের ঘর ছেড়েছে তাকে ছেড়ে দিব?যে
মেয়ে আমাকে বাচাতে গিয়ে নিজে গাড়ির নিচে
পরেছে তাকে ছেড়ে দিব?আমি তোমার মত এতটাও
সার্থপর নয় নিলাশা।
.
আমি আর দাড়ালাম নাহ।উঠে এলাম ওর চেম্বার থেকে।
একটা মেয়ে হয়ে কেমনে পারে অন্য একটা মেয়ের ঘর নস্ট
করার কথা বলতে?আসলে সার্থপর মেয়েগুলা সব পারে।
আমি বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি আমার পাগলী বউটা
আমার দিকে তাকি আছে।ছোট্ট করে একটা হাসি দিল
আমাকে দেখে।পাশে গিয়ে দাড়াতেই আমাকে বলল,
--কি বলল ডাক্তার?আমি জানিতো এসব মিছে।তুমি
অযথায় এসব কর দিহান।আর আমি এই ভাবেই ভাল আছি
বুঝলে?
.
আমি নিলাশার হুইল চেয়ার আস্তে আস্তে এগোতে
লাগলাম।এই মেয়ে এই অবস্থায় থেকেও আমাকে শান্তনা
দিচ্ছে।অথচ এটা আমার দেওয়ার কথা।আমি আমার বউকে
বললাম,
--এই ভাবেই ভাল আছ কেমনে তুমি?এটাকে ভাল থাকা
বলে??
.
আমার পাগলী বউটা আমার এক হাতে হাত দিল।কি নরম
সে হাত।এই হাতের স্পর্শ পাওয়ার জন্যে হলেও আমাকে
তার পাশে থাকা লাগবে।আমাকে সে বলল,
--বাহ রে!এই ভাবেই আছি বলেইতো প্রতিদিন তোমার
কোলে চড়তে পারি।তোমার হাতে খেতে পারি।তোমার
বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে পারি।ভাল থাকলে কি এত কিছু
পেতাম??
.
আমি এই মেয়ের সাথে কোন কালেই যুক্তিতে পারতাম
নাহ।আর এখনতো পারিইনা।এই অনুভুতি চুরি করা মেয়েটি
আমার বার বার হারিয়ে দেই।আমি পারি সত্বেও ওর
কাছে হার মানি।এই হার মানাতেই আমি ভালবাসা খুজে
পাই,ভালবাসা খুজে নেই।আমি ওকে বললাম,
--বাহ রে পাগলী বউ আমার।এত ভালবাসা কোথায় রাখ
বুঝিনা।
.
বউটা আমাকে ইশারা দিয়ে মাথাটা একটু নিচে নামাতে
বলল।আমি নিচে নামাতেই আমার নাকটা ডলা দিয়ে
বলল,
--এই ছেলে তোমাকে এত কিছু বুঝতে হবেনা বুঝলে।
আমাকে শুধুই ভালবাসবা তুমি।
.
আমি মেয়েটিকে আর কিছু বললাম নাহ।এই মেয়েটির সব
হারালেও সে যে আমার থেকে এই ভাবেই ভালবাসা
আদায় করে নিবে তা আমি নিশ্চিত।আমি যে আমার
অনুভুতি চুরি করা আর প্রেমবতী এই মেয়েটিকে অসীম
ভালবাসি তা আমার মুখে বলতে হয়না।কাধে হাতের
স্পর্শ বা দিন শেষে রাত্রে বুকের ঠাইতেই সে বুঝে নেই
আমার অন্তরের একটুকরো মাংসের ভেতরে লুকিয়ে থাকা
ভালবাসাকে।আমি গভীর রাত্রে আকাশের দিকে
তাকিয়ে আনমনে হেসে হেসেই বলতে পারি,
আমি ভাল আছি।এই মেয়েটিকে পাশে নিয়েই ভাল
আছি।
.
.
Muhaimenul Rony