Forums.Likebd.Com

Full Version: লাল জুতা
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
ক্যারেন খুব গরিব একটি মেয়ে। তার জুতা নেই, সে খালি পায়ে হাঁটে। একদিন এক মহিলা তাকে রাস্তায় অসহায়ের মতো পড়ে থাকতে দেখে। ক্যারেনকে দেখে তার খুব মায়া হলো। তিনি ক্যারেনকে দত্তক নিয়ে নিলেন। তারপর তাকে সুন্দর একজোড়া লাল জুতা কিনে দিলেন।



আরো একটু বড় হলে ক্যারেন তার প্রিয় লাল জুতাজোড়া পরে গির্জায় যেতে চায়।



গির্জায় গিয়ে উপাসনার সময় ক্যারেন শুধু তার লাল জুতা নিয়েই ভাবে। উপাসনা শেষে পালক মহিলাটি তখন ক্যারেনকে ধমকের স্বরে বলেন যে, ক্যারেন একজন উঠতি বয়সী খ্রিস্টান, গির্জায় জুতা পরে যাওয়া তার ঠিক নয়।



পরবর্তী রোববারেও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ক্যারেন তার লাল জুতা পরে নেয়। এবারো উপাসনাকালীন পুরো সময়টা ক্যারেন তাকে দেখতে কেমন লাগে শুধু সেসব নিয়েই ভাবে। তারপর গির্জা থেকে বের হয়ে আসার সময় তার জুতাগুলো যেন নিজেরাই নাচতে শুরু করে দিল ।



ক্যারেন ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বাড়ি ফিরছিল। গাড়ির ভেতর ক্যারেন একজন বয়স্ক মহিলাকে খুব নির্দয়ভাবে লাথি মারলে গাড়োয়ান তার পা থেকে জুতাজোড়া খুলে ফেলে। বয়স্ক মহিলাটি অসুস্থ হয়ে যায়। তখন অসুস্থ মহিলাটির সেবা করা ক্যারেনেরই দায়িত্ব, কিন্তু সে তা না করে একটি বল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একজন বয়স্ক রোগীর সেবা করার কথা ভুলে গিয়ে ক্যারেন আবার তার জুতাজোড়া পরে নাচতে চায়। ক্যারেন নাচতে শুরু করলে এবার যেন তার জুতাগুলো আপনাআপনি জীবন্ত হয়ে ওঠে। তারা নাচতে নাচতে ক্যারেনকে একটি অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়। ভয়ে সে তার পা থেকে জুতা খুলে ফেলার চেষ্টা করে কিন্তু জুতাগুলো তার পায়ের সঙ্গে পুরোপুরি আটকে যায়। সে মাঠে ও ঝোপে, বৃষ্টিতে ও রোদে বহুদিন ধরে নাচতে থাকে।



সমাধিক্ষেত্রের ভেতরে নাচার সময় সে একটি পরী দেখতে পায়। পরীটি তাকে বলে যে, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাকে নেচে যেতে হবে এবং সে নাচতে থাকবে যখন তার শরীরে শুধু হাড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না তখনো।



ক্যারেন তার পায়ের চামড়া বিদীর্ণ হয়ে রক্তাক্ত না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়, মরুভূমি ও কাটার ঝোপঝাড়ে অবিরাম নেচে যায়।



সে অবশেষে একজন জল্লাদের কাছে এসে তার পা কেটে দেয়ার অনুরোধ জানায়, যেন সে এই নির্মম যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়।



জল্লাদ ক্যারেনের ইচ্ছা অনুয়ায়ী কাজটি করল। কিন্তু তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন পায়ের সঙ্গে জুতাগুলো তখনো নেচে চলছিল।



ক্যারেন জল্লাদের হাতে চুমু দেয়, যে হাত দিয়ে লোকটি ক্যারেনের পা কেটে দিয়েছিল। লোকটি তাকে কাঠের তৈরি ছোট পা ও একজোড়া ক্রাচ বানিয়ে দিল।



ক্যারেন এখন তার ভুলের অনুতাপ করতে গির্জায় যেতে চায়। কিন্তু যখনই সে গির্জায় যায়, তখনই তার লাল জুতাজোড়া এসে হাজির হয় তার সামনে। তারপর গির্জার দরজার সামনে নাচতে থাকে তারা, যাতে ক্যারেন ভেতরে ঢুকতে না পারে।



ক্যারেন ঘরে এসে কান্নায় চোখ ভাসায়। অবশেষে একদিন পরীটি আবার তার কাছে আসে। সে ক্যারেনের কান্না ও ভুলের অনুতাপ দেখে তার ছোট কক্ষটিকে একটি গির্জা বানিয়ে দেয়, যাতে সে প্রার্থনা করতে পারে। ক্যারেন এতটাই খুশি হয় যে একসময় তার হৃদয় গলে যায়। তারপর সে মারা যায়।