05-12-2017, 12:30 AM
অভিনেতা ইরেশ যাকের- এই লেখা লিখতে বসার কয়েক ঘণ্টা আগে আমার দাঁত তোলা হয়েছে। দাঁতের অবস্থা খুব খারাপ।
সময়মতো যত্ন নেওয়া উচিত ছিল। নিইনি। এখন তার মাশুল দিচ্ছি। আপনারা সবাই দয়া করে দাঁতের যত্ন নেবেন। কারণ দাঁতের যন্ত্রণা মহাযন্ত্রণা। দাঁত তোলার যন্ত্রণা প্রায় সমান যন্ত্রণা।
তবে সে যন্ত্রণা যত বড়ই হোক না কেন, প্রেম ভাঙার যন্ত্রণার ধারেকাছে আসে না। কারণ, দাঁতের যন্ত্রণা কয়েক দিন থাকে, তারপর দন্তচিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়। তিনি এই যন্ত্রণার অবসান ঘটাতে সক্ষম হন। সবকিছু মিলিয়ে কয়েক সপ্তাহের ব্যাপার।
প্রেমভঙ্গের কোনো চিকিৎসক নেই। তাই সে যন্ত্রণার কোনো সহজ সমাধানও নেই। প্রেম ভাঙাটা আমার কাছে মাসের পর মাস, কিছু ক্ষেত্রে বছরের পর বছর প্রতিদিন দাঁতব্যথা ও দাঁত তোলার যন্ত্রণার মতো মনে হয়। মারাত্মক বেদনা।
আমরা যখন কোনো ধরনের মারাত্মক ব্যথা পাই, তখন মেজাজ-মর্জি খুব খারাপ থাকে। সবার ওপর রাগ ওঠে। যেমন এই মুহূর্তে আমার নিজেকে প্রচণ্ড একটা ঘুষি মারতে ইচ্ছে করছে। কেন আগে দাঁতের যত্ন নিলাম না। চিকিৎসকের ওপর রাগ লাগছে, মায়ের ওপর রাগ উঠছে। এ রকম দাঁতওয়ালা ছেলের জন্ম কেন দিলেন। কিন্তু আমি নিজেকেও ঘুষি মারছি না, চিকিৎসককেও গালি দিচ্ছি না, মাকেও বকা দিচ্ছি না, এমনকি আমার বিড়ালগুলোর সঙ্গেও যথাসাধ্য ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করছি।
রাগের মাথায় কখনোই কিছু করা উচিত না। বিশেষ করে যে রাগ প্রচণ্ড বেদনা থেকে আসে, সেই রাগের মাথায় কখনোই বেদনার প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত না, সে প্রতিক্রিয়া শারীরিক হোক, মৌখিক হোক অথবা মানসিক হোক।
প্রচণ্ড বেদনা থেকে রাগ হওয়া স্বাভাবিক। পৃথিবীর সব প্রাণীর বেদনা থেকে রাগ হয়। বাঘ সাধারণত মানুষখেকো হয়ে যায় বড় ধরনের ব্যথা পেলে। কিন্তু সেখানেই বাকি সব প্রাণী আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য। যে কারণে বান্ধবীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর তাকে পাঁচটা ঘুষি মারা অথবা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে নানা ধরনের অশ্লীলতা করা কোনো ধরনের গ্রহণযোগ্য আচরণের মধ্যে পড়ে না।
প্রেম ভেঙে গেলে প্রথম কাজ নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণে আনা এবং যতক্ষণ রাগ আছে, ততক্ষণ কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানো। নিজের প্রতি অথবা ভালোবাসার মানুষের প্রতি।
সবার রাগ এক রকম সময়ে কমে না। কারও রাগ কয়েক দিনের মধ্যে কমে যায়, কারও সপ্তাহখানেকের মধ্যে, কারও-বা রাগ কমতে আরও অনেক সময় লাগে। রাগ যখনই কমুক, সাধারণত রাগের পর শুরু হয় আসল বেদনা। সেই বেদনাটা খুবই বাজে ধরনের। রাগের আশ্রয় নেওয়া যায় না। চারদিকে একধরনের অসহ্য শূন্যতা ঘুরে বেড়ায়। নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। এ সময়ে নিজের প্রতি মমতা অনুভব করা খুব জরুরি। একজন মা যেভাবে সন্তানকে আগলে রাখেন, রক্ষা করেন, ক্ষমা করেন—সেভাবে নিজেকে ক্ষমা করতে হবে। নিজের জীবনের সব ভালো জিনিস মনে করতে হবে। জীবনকে একটা সহনীয় জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। মোটেই সহজ কাজ নয়। কিন্তু সব কঠিন কাজের মতোই এগুলো মারাত্মক জরুরি।
নিজেকে ক্ষমা করতে পারলে আগামীর পরিকল্পনা করতে হবে। রাগ ও গভীর বেদনা পার হয়ে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে কোথায় ভুল করেছিলাম এবং ভবিষ্যতে কীভাবে এই ভুল এড়ানো যায়। আমি আশা করছি যে আমার দাঁতের ক্ষত একদিন ঠিক হবে। সেটা ঠিক হওয়ার পর আমি যদি আবার ‘যেই কে সেই’ হয়ে যাই, তাহলে আর লাভ কী হলো।
দাঁতটা ভালো করে মাজতে হবে, কয়েক মাস পরপর চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আরও কত কী! প্রেমের বা জীবনের সিদ্ধান্তগুলো আরও কঠিন। তাই আরও কঠিনভাবে তার ওপর মনোনিবেশ করাটাই বাঞ্ছনীয়।
প্রেম ভাঙার পর তিন ধাপ। রাগ, বেদনা ও আগামীর পরিকল্পনা। এই তিন ধাপেই দুটো বিষয় খুব জরুরি। অন্য কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া আর ভালো মানুষের আশপাশে থাকা। যে রকম দাঁত তোলার পর আমি এই লেখাটা লিখছি আর কিছুক্ষণ পরপর আমার সম্পাদককে কারণে-অকারণে ফোন করে জ্বালাচ্ছি।
আসলে প্রেম ভাঙার যন্ত্রণা কোনো সহজ বিষয় নয়। তবে নিজের শান্তি ও সভ্যতা বজায় রাখতে এই যন্ত্রণার সঠিক মোকাবিলা করতে হবে। নিজেকে ভালোবাসার জন্য, অন্যকে ভালোবাসার জন্য।
সময়মতো যত্ন নেওয়া উচিত ছিল। নিইনি। এখন তার মাশুল দিচ্ছি। আপনারা সবাই দয়া করে দাঁতের যত্ন নেবেন। কারণ দাঁতের যন্ত্রণা মহাযন্ত্রণা। দাঁত তোলার যন্ত্রণা প্রায় সমান যন্ত্রণা।
তবে সে যন্ত্রণা যত বড়ই হোক না কেন, প্রেম ভাঙার যন্ত্রণার ধারেকাছে আসে না। কারণ, দাঁতের যন্ত্রণা কয়েক দিন থাকে, তারপর দন্তচিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়। তিনি এই যন্ত্রণার অবসান ঘটাতে সক্ষম হন। সবকিছু মিলিয়ে কয়েক সপ্তাহের ব্যাপার।
প্রেমভঙ্গের কোনো চিকিৎসক নেই। তাই সে যন্ত্রণার কোনো সহজ সমাধানও নেই। প্রেম ভাঙাটা আমার কাছে মাসের পর মাস, কিছু ক্ষেত্রে বছরের পর বছর প্রতিদিন দাঁতব্যথা ও দাঁত তোলার যন্ত্রণার মতো মনে হয়। মারাত্মক বেদনা।
আমরা যখন কোনো ধরনের মারাত্মক ব্যথা পাই, তখন মেজাজ-মর্জি খুব খারাপ থাকে। সবার ওপর রাগ ওঠে। যেমন এই মুহূর্তে আমার নিজেকে প্রচণ্ড একটা ঘুষি মারতে ইচ্ছে করছে। কেন আগে দাঁতের যত্ন নিলাম না। চিকিৎসকের ওপর রাগ লাগছে, মায়ের ওপর রাগ উঠছে। এ রকম দাঁতওয়ালা ছেলের জন্ম কেন দিলেন। কিন্তু আমি নিজেকেও ঘুষি মারছি না, চিকিৎসককেও গালি দিচ্ছি না, মাকেও বকা দিচ্ছি না, এমনকি আমার বিড়ালগুলোর সঙ্গেও যথাসাধ্য ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করছি।
রাগের মাথায় কখনোই কিছু করা উচিত না। বিশেষ করে যে রাগ প্রচণ্ড বেদনা থেকে আসে, সেই রাগের মাথায় কখনোই বেদনার প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত না, সে প্রতিক্রিয়া শারীরিক হোক, মৌখিক হোক অথবা মানসিক হোক।
প্রচণ্ড বেদনা থেকে রাগ হওয়া স্বাভাবিক। পৃথিবীর সব প্রাণীর বেদনা থেকে রাগ হয়। বাঘ সাধারণত মানুষখেকো হয়ে যায় বড় ধরনের ব্যথা পেলে। কিন্তু সেখানেই বাকি সব প্রাণী আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য। যে কারণে বান্ধবীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর তাকে পাঁচটা ঘুষি মারা অথবা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে নানা ধরনের অশ্লীলতা করা কোনো ধরনের গ্রহণযোগ্য আচরণের মধ্যে পড়ে না।
প্রেম ভেঙে গেলে প্রথম কাজ নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণে আনা এবং যতক্ষণ রাগ আছে, ততক্ষণ কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানো। নিজের প্রতি অথবা ভালোবাসার মানুষের প্রতি।
সবার রাগ এক রকম সময়ে কমে না। কারও রাগ কয়েক দিনের মধ্যে কমে যায়, কারও সপ্তাহখানেকের মধ্যে, কারও-বা রাগ কমতে আরও অনেক সময় লাগে। রাগ যখনই কমুক, সাধারণত রাগের পর শুরু হয় আসল বেদনা। সেই বেদনাটা খুবই বাজে ধরনের। রাগের আশ্রয় নেওয়া যায় না। চারদিকে একধরনের অসহ্য শূন্যতা ঘুরে বেড়ায়। নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। এ সময়ে নিজের প্রতি মমতা অনুভব করা খুব জরুরি। একজন মা যেভাবে সন্তানকে আগলে রাখেন, রক্ষা করেন, ক্ষমা করেন—সেভাবে নিজেকে ক্ষমা করতে হবে। নিজের জীবনের সব ভালো জিনিস মনে করতে হবে। জীবনকে একটা সহনীয় জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। মোটেই সহজ কাজ নয়। কিন্তু সব কঠিন কাজের মতোই এগুলো মারাত্মক জরুরি।
নিজেকে ক্ষমা করতে পারলে আগামীর পরিকল্পনা করতে হবে। রাগ ও গভীর বেদনা পার হয়ে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে কোথায় ভুল করেছিলাম এবং ভবিষ্যতে কীভাবে এই ভুল এড়ানো যায়। আমি আশা করছি যে আমার দাঁতের ক্ষত একদিন ঠিক হবে। সেটা ঠিক হওয়ার পর আমি যদি আবার ‘যেই কে সেই’ হয়ে যাই, তাহলে আর লাভ কী হলো।
দাঁতটা ভালো করে মাজতে হবে, কয়েক মাস পরপর চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আরও কত কী! প্রেমের বা জীবনের সিদ্ধান্তগুলো আরও কঠিন। তাই আরও কঠিনভাবে তার ওপর মনোনিবেশ করাটাই বাঞ্ছনীয়।
প্রেম ভাঙার পর তিন ধাপ। রাগ, বেদনা ও আগামীর পরিকল্পনা। এই তিন ধাপেই দুটো বিষয় খুব জরুরি। অন্য কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া আর ভালো মানুষের আশপাশে থাকা। যে রকম দাঁত তোলার পর আমি এই লেখাটা লিখছি আর কিছুক্ষণ পরপর আমার সম্পাদককে কারণে-অকারণে ফোন করে জ্বালাচ্ছি।
আসলে প্রেম ভাঙার যন্ত্রণা কোনো সহজ বিষয় নয়। তবে নিজের শান্তি ও সভ্যতা বজায় রাখতে এই যন্ত্রণার সঠিক মোকাবিলা করতে হবে। নিজেকে ভালোবাসার জন্য, অন্যকে ভালোবাসার জন্য।