Forums.Likebd.Com

Full Version: সাইকেল
You're currently viewing a stripped down version of our content. View the full version with proper formatting.
সাইকেল

সফলতা অর্জন অত সহজ নয়।  এটা কখনোই প্রার্থনাতে আসে না, কখনোই কারো সাহায্যতে আসে না। আমার জীবনের প্রতিটা পাতায় আপনি পাবেন একটুখানি সফলতা অর্জন এর জন্য প্রতি মুহূর্তের সংগ্রাম। সাইকেল চড়া সাধারণ জীবন, গলিপথ থেকে রাজপথে চলছি খানাখন্দে পরেছে আঁকা বাঁকা পথ পেরিয়ে, দেরিতে হলেও পৌঁছেছি জীবনের গন্তব্যে । তবু এবার মুম্বাই যখন এলাম তখন জীবনের কাছে একটা নতুন চ্যালেঞ্জ। জীবন যদি আপনার ইচ্ছা মত চলতো তাহলে জীবন থাকতো না।ঐ সাইকেল এর মতো হয়ে যেতো, যেমন খুশি চালাও, তেমন ই চলবে। একটুখানি ভুল করতেই বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে হলো আমাকে। আমি আন্ধেরি থেকে বেলাপুর আসতে একটা ক্যাফ ভাড়া করতেই পারতাম। কিন্তু পয়সা বাঁচাতে এলাম বাসে। ছেনতাই হয়ে গেল আমার সাইট ব্যাগ। মোবাইল, দরকারি কাগজ পত্র, টাকা পয়সা গেলো, কিন্তু সবচেয়ে খারাপ হলো আমার চাকুরী জনিং ও আটকে গেল। খাওয়া দাওয়া থাকা সব অফিসের। তবু অস্থিরতা কাজ করছিল নিজের মধ্যে। ছয় সাত মাস কাজ নেই করোনা আবহাওয়ার জন্য। বাড়িতে থাকলে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে মন ভালো হতো। সাইকেল টা কোলকাতা আমার ভালো সাথি। কম দামি হলেও নির্ভরযোগ্য ঠিক স্কুল ফ্রেন্ডদের মতো।

মুম্বাই কিছুদিনের জন্য থাকতে হবে। একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সাথে কথা বললাম, কাজ করলে, কিছু টাকা চলে আসবে। জোগাড় করলাম সাইকেল ও একটা। পৌঁছে গেলাম একটা প্রাইভেট পার্টিতে। ফ্রিতে মদ পান আর কিছু পয়সা পাবো। বিনিময়ে চিকেন কাবাব করতে হবে আমাকে। হঠাৎ "ওর" সাথে দেখা। পরে জানতে পারলাম পার্টিটা 'ও"ই থ্রো করছে। সুযোগ পেয়ে বেশ ভালোই অপমান করলো ও আমায়। আমি চুপচাপ শুনে গেলাম। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। আমাদের জীবনটা গাড়ির চাকা র মতো। বড়লোকদের গাড়িগুলো চালাই আমরা সব ধুলো কাঁদা মেখে, পৌঁছে দিই ওদের গন্তব্য , তবে এর জন্য কোনো কৃতিত্ব আমরা দাবি করি না। আমি কখনোই দাবি করি নি, ওর সফলতাতে আমার অবদান আছে বলে । তবু কেন আমাকে দেখে "ও" রেগে যায় জানি না। আমি অনেক টা দূরে চলে গেছি ওর থেকে। ওর আমার জীবনের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে।একটা সাইকেল আর রেল গাড়ীর মতো পার্থক্য বলতে পারো।ওর সাথে আমার আলাপ একটু কাঁচা বয়সে।ও রূপালী পর্দায় কাজ শুরু করছে। আর আমি স্ক্রিপ্ট আর গান লিখে ঘোরাঘুরি করছি স্টুডিও পাড়ায়।হাসি পায় আজ  ভাবলেও এই বলিউড হাজির হয়েছিলাম অনেক স্বপ্ন নিয়ে। যাইহোক রেলগাড়ি লোহার চাকা, ইস্পাত কঠিন পথ হলেও গন্তব্য ঠিক পৌঁছে যায় কারণ গন্তব্য ঠিক থাকে, পথটা স্বাধীন না হলেও বড় নিবাপদ ও নিয়ন্ত্রিত। সাইকেল খান খন্দ রাস্তায় যেতে পারে স্বাধীন ভাবে  কিন্তু হঠাৎ করে পথ বদলে ফলতে পারে বিপদ দেখলে। তাই সাইকেল এর বেশী দূরে যাওয়া হয় না। আমি স্বপ্নের সাথে আপোষ করে নিয়েছিলাম মাঝপথেই। বলতে পারেন মাঝ পথে সাইকেল টাওয়ার পাঞ্চার হয়ে গেছিলো আরকি। তবে মুম্বাই তো আমাকে হতাশ করেনি। সফলতা দিয়েছে যে টুকু আমার যোগ্যতা।


সাইকেল আমার জীবনের সংগ্রাম প্রথম বন্ধু , মাধ্যমিক পাশ করতে বাবা কষ্ট করে সাইকেল কিনে দিয়েছিল । কাক ভোরে উঠে খবরের কাগজ দিয়ে, দুধ দিয়ে, তখন পড়াশুনা খরচ জুগিয়েছে এই সাইকেল। অসময়ের বন্ধু সাইকেল তাই একে আজো আমি ছাড়িনি।সাইকেল নিয়ে গ্যেস্ট হাউজ পথ ফিরতে যাবার সময় দেখি লম্বা গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকার জ্বলজ্বল করছে ওর রূপ। এখনও রূপকথার মতো কন্ঠস্বর। বললো লিফট দিতে হবে ওর বাংলো অবধি। যুক্তি তর্ক অনেক করতে পারতাম। কিন্তু কিছু বলার আগেই সাইকেল সামনের রডে বসে পরলো ও। বললো" গাড়িটাকে ফলো করো কথা আছে অনেক।"
সাইকেল নিয়ে অনেক কবিতা আছে বাংলাতে কখনো বৈরাগী কখনো প্রেমের প্রতীক রক গানে বেপরোয়া। সাইকেল কিন্তু আমার কাছে শুধু কবিতা মতো, কিংবা কিশোরী মতো শুধু চুপচাপ চলতে থাকে। দুইহাতের মাঝখানে ওর শরীর, না চাইলেও পা ছুঁয়ে যাচ্ছে ওর শরীর কে। কেমন একটা অস্বস্তি। শ্বাস প্রশ্বাস যেনো ছুঁতে চাইছে ওকে।সাইকেল সামনে বসে প্রেমিকার চুলে গন্ধটা সব যুবকের মনেই স্বপ্নের জাল বোনে। কিন্তু এ বয়সে কোনো স্বপ্ন দেখেতে আর পারছি না আমি। বাংলোর সামনে আসতেই , আমার মনে হলো ও যেনো ও সফলতাটাই আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাইছে। অপ্রয়োজনেই "ও" বেলটা ক্রিং ক্রিং করে বাজালো । এই বেল বাজিয়ে একটা সময় ওকে জানান দিতাম আমি এসেছি। পুরোনো ব্যাথা গুলো খুঁচিয়ে দিতেই হয়তো হাজির ও আমার জীবনে।ওর হাত মুঠো তে নিলো আমার হাতটা। যেনো চলন্ত সাইকেলে একটা ব্রেক দিয়ে দিলো "ও"। সাইকেলের গতি, গাড়ির গতি এক নয় সেটাই বোঝাতে হবে ওকে আমায় আজ।
আসলে পৃথিবীতে সবকিছু তো এক থাকে না। আমি ও বদলে গেছি এই সাইকেলটার মতো। জানেন আসলে কথাটা সাইকেল নয়, বাইসাইকেল। দুইটো চাকার যান সাইকেল, সবকিছু ব্যালেন্স করে চলতে হয়, আমাদের জীবনটা চালতে গেলে। ঠিক সাইকেল চালানোর মতো কঠিন জীবনটাও। আমার জীবনটাও বদলেছি সময়ের সাথে সাথে, যেমন সাইকেল টা বদলেছে নিজেকে।প্রথম দিকের সাইকেলের দুই চাকা সমান ছিলো না।১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম দুই চাকা সমান পর্যায়ে নিয়ে আসা হয় এবং চেইন ও টায়ার সংযুক্ত করা হয়। আমার সংসার সাইকেল টাও আমার হাতে। বড়ো স্বপ্ন আমার নেই, সহজ সরল সাইকেল এর মতো জীবন  ধীর গতিতে চলতে থাকবো, পথ আলোকিত হোক বা না হোক। যান যটকে এরিয়ে যেতে আমরা জানি , আসলে আমরা জানি বেশি আকাংক্ষা জীবনটা কিভাবে জটিল করে।
অসাধারণ ??