Forums.Likebd.Com
হাজার কোটি টাকা আদায়ে ৭২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা - Printable Version

+- Forums.Likebd.Com (http://forums.likebd.com)
+-- Forum: বাংলা ফোরামস (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=228)
+--- Forum: খবরা-খবর (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=110)
+---- Forum: দেশের খবর (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=115)
+---- Thread: হাজার কোটি টাকা আদায়ে ৭২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা (/showthread.php?tid=1042)



হাজার কোটি টাকা আদায়ে ৭২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা - Hasan - 01-23-2017

হাজার কোটি টাকা আদায়ে ৭২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
অ-অঅ+
মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য আমদানি করে শুল্ক ফাঁকি, বন্ডেড ওয়্যার হাউসের সুবিধা নিয়ে পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রি, টাকা পাচারসহ আরো কিছু অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে অনেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তদন্তে এমন ২১২ প্রতিষ্ঠানের ৭২৬ পরিচালককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে এক হাজার ৪৩ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। এনবিআর ওই সব অনিয়মের টাকা পরিশোধের জন্য ব্যবসায়ীদের বারবার তাগাদা দিলেও তাঁরা গা করেননি। সর্বশেষ তাঁদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করা হয়েছে। গোটা পরিস্থিতি এনবিআর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, এর আগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে একাধিকবার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পাওনা আদায়ে ব্যাংক হিসাব তলব, জব্দ, বন্দরে আটকে থাকা মালামাল বিক্রি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে বিক্রির উদ্যোগ নেয় এনবিআর। এত কিছুর পরও ৭২৬ ব্যক্তির কাছ থেকে পাওনা আদায় করা যায়নি। সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে সম্প্রতি বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের অধীন পরিচালিত বিশেষ আদালতে মামলা (সার্টিফিকেট) করেছে রাজস্ব বোর্ড। এ মামলা নিষ্পত্তিকালীন সময়েই সরকারের পাওনা পরিশোধ না করলে বা মামলা নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা না করলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং অভিযুক্তদের আটক করা যাবে। সার্টিফিকেট মামলায় পওনা আদায়ের পাশাপাশি সাত বছরের জেল প্রদানের বিধানও রয়েছে। এনবিআর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

সম্প্রতি এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ১৭ সদস্যের টাস্কফোর্স প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে ২১২ প্রতিষ্ঠানের ৭২৬ পরিচালকের আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন গত বছরের ১৫ নভেম্বর এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের কাছে জমা দেওয়া হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে সম্প্রতি এ প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, অর্থ, স্বরাষ্ট্র, আইন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এনবিআর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে ৭২৬ ব্যক্তির নাম, বাবার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, অস্থায়ী ঠিকানা, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নাম, ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর, মামলা-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ আছে। কাস্টসম বা শুল্ক আইনের ২০২ ধারা এবং চলমান ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) আইনের বিশেষ ধারায় সার্টিফিকেট মামলা করার বিধান আছে। যে জেলা প্রশাসকের অধীন অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সে জেলা প্রশাসকের অধীন বিশেষ আদালতে ওই ব্যক্তির নামে সার্টিফিকেট মামলা করা হয়েছে। এখানে আর্থিক অনিয়মের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি যথাসময়ে হাজির না হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তাঁদের আটক করা যাবে। পাওনা আদায়ের পাশাপাশি এ আদালতের বিচারে সর্বোচ্চ সাত বছরের জেলেরও বিধান রয়েছে। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট মামলা দ্রুততম সময়ে নিষ্পতিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রসাশককে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বড় অঙ্কের অর্থ আটকে আছে অভিযুক্তদের কাছে। এনবিআর শুল্ক আইনানুসারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও সরকারের পাওনা আদায় হয়নি। ফলে মামলা করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতির গতিশীলতার স্বার্থে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ে এ অর্থ আদায় প্রয়োজন। ’

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সুকৌশলে আর্থিক অনিয়ম করেও অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। সম্প্রতি এনবিআরের সাঁড়াশি অভিযানে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি চিহ্নিত হয়েছে। শুধু চিহ্নিত করেই এনবিআর থেমে থাকছে না, পাওনা আদায়েও কঠোর অবস্থানে গেছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান কালের কণ্ঠকে বলেন, টাস্কফোর্স গঠন করে আর্থিক অনিয়মে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে পাওনা পরিশোধে সময় দেওয়া হয়। ব্যাংক হিসাব জব্দ, ওই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা সম্পদ বা বন্দরে আটক মালামাল বিক্রি করে পাওনা আদায়ে চেষ্টা করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ ব্যর্থ হওয়ার পরই শুল্ক আইনের ২০২ ধারায় সার্টিফিকেট মামলা করা হয়েছে।

মইনুল খান বলেন, শুল্ক আইনে এনবিআরের পাওনা আদায়ের চূড়ান্ত ধাপ হলো সার্টিফিকেট মামলা। বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের আধীন পরিচালিত আদালতে এসব মামলা নিষ্পতি হবে। এখানে পাওনার পরিমাণ বাড়ানো বা কমানোর আইনি সুযোগ নই। শুধু আদায় করতে কঠোর সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করা হবে।

এনবিআরের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, এনবিআরের টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা নিয়মিত তদন্তের অংশ হিসেবে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেন। তদন্তকালে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি, কাঁচামাল ব্যবহারে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা আরো বিস্তারিত তদন্তে ২১২ প্রতিষ্ঠান যে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে ব্যবসা করেছে, যে বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি করেছে সেসব ব্যাংক ও বন্দর থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে তথ্যও নিয়েছেন। বিদেশে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কী পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কতটা পণ্য কোন তারিখে আমদানি করেছে এবং তার কতটা কারখানায় ব্যবহার করে কী পরিমাণ পণ্য উত্পাদন করেছে, কোন তারিখে কী পরিমাণ অর্থের পণ্য রপ্তানি করেছে, এর বিনিময়ে কী পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেছে—এসব তথ্য-প্রমাণ তদন্তকালে টাস্কফোর্স বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখে। সব তথ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করে আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি নিশ্চিত হয় এনবিআর।

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, এআইটি গার্মেন্টস লিমিটেডের পরিচালক তানভির হায়দার, ইমরান, ওয়ালিউল হামিদ আজিজের নামে সার্টিফিকেট মামলা হয়েছে। একইভাবে সার্টিফিকেট মামলা হয়েছে এন এম কে ফ্যাশন লিমিটেডের আবদুল ওয়াহেদ খান, বিলকিস সুলতানা, এ কে এম কাউসার খান, আর এম একসেসরিজ লিমিটেডের পরিচালক এ কে এম মঞ্জুরুর রহমান, শাহের বানু (মানিকা), দেশ লংকা লিমিটেডের নূর ই তানজিয়া সারওয়ার, গোলাম সরওয়ার মিলন, ডেনিম গার্মেন্টস লিমিটেডের আবু মুসা, ইকবাল হোসেন, সারওয়ার আলম, রামধনু গার্মেন্টস লিমিটেডের সুলতান হাফিজুর রহমান, আহমেদ ফজলুর রহমান, বেলাল ইসান বেকুই, এস এম আরিফ, জেম অ্যাপারেলস লিমিটেডের এ এম চৌধুরী, রেহানা কাজী, কাজী খালেদ পারভেজ, সি এইচ কবীর, সেলিনা বানু, রোমিও গামেন্টস (প্রাইভেট) লিমিটেডের আফরোজা খান, ফারহাত আযম, সুরাইয়া আহমেদ, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, ইউনিস্টার সোয়েটার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের আলহাজ আহমেদ শাফি, মানোজ কুমার বড়ুয়া, শকিনারা বেগম, আরশাদুল শাফি, মোরশেদুল শাফি, সৈয়দা সায়েমা আহমেদ, ইরফান বিন শাফি, মোরশেদা আকতার, খোরশেদা খানম, জান্নাতুল শাফি, খোরশেদুল শাফিসহ ২১২ প্রতিষ্ঠানের ৭২৬ ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২১২ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি উৎসাহিত করতে সরকার বিভিন্ন সুবিধা দিয়েছে। কারখানায় পণ্য উত্পাদনে শুল্ক না দিয়ে কাঁচামাল আমদানি, যা বন্ড সুবিধা নামে পরিচিত। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যাংকে এলসি খোলা এবং বন্দরে আমদানি-রপ্তানিকৃত পণ্য খালাস বা জাহাজে ওঠানোর সুবিধাও পায় এসব প্রতিষ্ঠান। এত সব সুবিধা নিয়েও ৭২৬ পরিচালক নিজস্ব ২১২ প্রতিষ্ঠানের নামে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করেছেন। তাঁরা এক হাজার ৪৩ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার অর্থ পাচার করেছেন, যা তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর পাওনা আদায়ে এনবিআর তত্পর হয়। সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করেননি ৭২৬ অভিযুক্ত। বিভিন্ন ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়ে এঁদের নামে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়। এনবিআর থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়ে অভিযুক্তদের একক বা যৌথ নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এফডিআর, যেকোনো মেয়াদি আমানতের হিসাব, যেকোনো ধরনের বা মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড, ভল্ট, সঞ্চয় পত্র বা যেকোনো সেভিংস ইন্সট্রুমেন্ট হিসাব-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ২১২ প্রতিষ্ঠানের ৭২৬ পরিচালক কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করেন। অথচ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন ব্যংকে নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের বা নিজের নামে ন্যূনতম কিছু অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন, যা সরকারের পাওনার অতি সামান্য। এ পরিস্থিতিতে ওই সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে সব লেনদেন স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরপর এনবিআর এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নামে বন্দরে আটকে থাকা পণ্যের খোঁজ করে। আমদানি পণ্যের একটি চালানও এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বন্দরে পাওয়া যায়নি। শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানে জড়িতরা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আমদানিকৃত পণ্য ছাড়িয়ে নেয় বলেও প্রমাণ মেলে। অর্থ আদায়ের এ ধাপেও এনবিআর পাওনা আদায় করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের সন্ধান করে এনবিআর। অনেক প্রতিষ্ঠানের সম্পদের খোঁজ পেলেও তা বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হয়নি। অন্য অংশীদাররা মামলা করায় পুরো বিষয়টি ঝুলে যায়। তবে অনেকের নামেই দেশে সামান্য কিছু সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়। তবে প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের পরিবারের সদস্যদের নামে বড় অঙ্কের সম্পদ আছে। এসব সম্পদের প্রকৃত মালিক প্রতিষ্ঠানের ৭২৬ পরিচালক। এসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে বিক্রির আইনি অধিকার এনবিআরের নেই বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।

এনবিআরের তদন্তে দেখা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই অল্প সময়ের ব্যবধানে বিদেশে গমন করেছেন। এসব ব্যক্তির অনেকের বিদেশে ব্যবসা আছে। পরিবারের সদস্যদের অধিকাংশই বিদেশে বসবাস করে। বড় অঙ্কের ব্যবসা করেও এসব ব্যক্তির নামে দেশের ব্যাংকে নগদ অর্থ গচ্ছিত না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে ব্যবসার লাভের অর্থ কোথায় রাখা আছে। এ বিষয়ে অভিযুক্তরা গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতে পারেননি। তথ্য-প্রমাণ যাচাই করে বলা যায়, দেশের মধ্যে অনিয়ম করে ব্যবসায় অর্জিত অর্থ কৌশলে পাচার করেছেন। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় আরো বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বন্ড সুবিধা পাওয়ার অন্যতম শর্ত থাকে আমদানিকৃত কাঁচামাল নিজস্ব বন্ডেড ওয়্যার হাউসে মজুদ রেখে পর্যায়ক্রমে সবটুকুই কারখানার উত্পাদনে ব্যবহার করতে হবে। শুল্ক না দিয়ে আমদানি করা কাঁচামাল কোনোভাবেই খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। কতটা পণ্য রপ্তানি করতে হবে, রপ্তানিকৃত পণ্য উত্পাদনে কতটা কাঁচামাল ব্যবহার করতে হবে, এর মূল্য কত—এসব ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দেওয়া যাবে না। ২১২ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং শুল্কমুক্ত পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করে এসব শর্ত ভঙ্গ করেছে। রেজিস্টার খাতা যাচাই করে পণ্য আমদানির সঙ্গে ব্যবহারের অসামঞ্জস্য রয়েছে। ব্যাংকে এলসি খুলে যে পরিমাণ কাঁচামাল আমদানির কথা বলে বিদেশে অর্থ পাঠানো হয়েছে তার চেয়ে কম পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়েছে। অনেক সময় আদৌ কোনো পণ্য আমদানি করেনি অথচ ব্যাংকে এলসি খুলে অর্থ পাঠিয়ে দিয়েছে। অনেক সময় কম দামি পণ্য আমদানি করেও মূল্য হিসেবে বেশি দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়েছে। এভাবে ৭২৬ পরিচালক কৌশলে নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছেন। আবার যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়েছে তার চেয়ে কম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বন্ডেড ওয়্যার হাউসে প্রবেশ করানো হয়েছে। আমদানিকৃত পণ্য বন্দর থেকে সরাসরি খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার যে পরিমাণ পণ্য বন্ডেড ওয়্যার হাউসে প্রবেশ করানোর তথ্য পাওয়া গেছে তার চেয়ে অনেক কম পরিমাণ পণ্য কারখানায় উত্পাদনে ব্যবহার করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যার হাউসে মজুদ রেখে সুবিধামতো সময়ে খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন। কোনো পণ্য কারখানায় না এনেও বন্দর থেকে সরাসরি খোলাবাজারে নিয়ে গিয়েও বিক্রি প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ২১২ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিই তৈরি পোশাক শিল্পের প্রতিষ্ঠান। এভাবে একদিকে তাঁরা অর্থপাচারের মতো জঘন্য অপরাধ করেছেন। অন্যদিকে কারখানায় ব্যবহার না করে খোলাবাজারে বিক্রি করে বন্ড সুবিধার শর্ত ভঙ্গ করেছেন। এ দুই দুর্নীতির মাধ্যমে ২১২ প্রতিষ্ঠানের ৭২৬ পরিচালক এক হাজার ৪৩ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আর্থিক অনিয়ম করেছেন।

প্রসঙ্গত, শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পে যেসব কাঁচামাল শুল্কমুক্তভাবে বন্ড সুবিধায় আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে তার অধিকাংশই স্থানীয় শিল্পে উত্পাদন করা হয়। দেশি কাগজ শিল্প সব সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে এসব পণ্য সরবরাহে স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিতেও সক্ষম। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ন্যূনতম দর নির্ধারণ করছেন এসব পণ্যের। অন্যদিকে কারখানায় ব্যবহারের কথা বলে শুল্ক না দিয়ে পণ্য আমদানি করে ৭২৬ পরিচালক কারখানায় ব্যবহার না করে বা নামমাত্র ব্যবহার করে কম দামে বিক্রি করছেন। আর এভাবে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় স্থানীয় শিল্প নিঃস্ব হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতি করে অভিযুক্তরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিলেও তা দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ না করে পাচার করে দিয়েছেন। অর্থপাচার করে এই অভিযুক্তরা দেশের অর্থনীতিতে সর্বনাশ ডেকে আনছেন।

এনবিআরের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ৭২৬ পরিচালক ২১২ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে কৌশলে অর্থপাচার করেছেন। এ ক্ষেত্রে এসব ব্যাংকের অসাধু ব্যক্তিরা অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ বা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে। আবার বন্দর থেকেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা একইভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে সহযোগিতা করেছেন। এসব সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক এবং এনবিআর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব তথ্য আরো বিস্তারিত তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দেওয়া প্রয়োজন।