বিয়ের পর থেকে এটা আমার কাছে আতঙ্কের মত! - Printable Version +- Forums.Likebd.Com (http://forums.likebd.com) +-- Forum: বাংলা ফোরামস (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=228) +--- Forum: দৈনন্দিন জীবন (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=34) +---- Forum: প্রশ্ন-উত্তর (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=122) +---- Thread: বিয়ের পর থেকে এটা আমার কাছে আতঙ্কের মত! (/showthread.php?tid=1959) |
বিয়ের পর থেকে এটা আমার কাছে আতঙ্কের মত! - Hasan - 02-20-2017 পাঠকের প্রশ্ন: আপু আসসালামুআলাইকুম! আমি গুছিয়ে বলতে পারিনা, প্লিজ একটু ধৈর্য্য ধরে পড়বেন। আমার বিয়ের বয়স পাঁচ বছর। দু সন্তান-মেয়ে তিন বছর, ছেলে ছয় মাস। আমি ব্যাংকে চাকরি করি, স্বামী ব্যবসা। আমাদের প্রেমের বিয়ে। সমবয়সী তাই বাড়ি থেকে মানবে না। নিজেরাই প্রথমে বিয়ে করি, পরে উপায় না দেখে দুই বাড়ি থেকে নতুন করে বিয়ে দেয়। ওদের অবস্থা বেশ ভাল, সম্মানী পরিবার, ওর মা আমরা যে স্কুলে পড়তাম,সেখানকার টিচার ছিলেন! বিয়ের পর দিন থেকেই আমার স্বামীর সাথে আমার সমস্যার শুরু,বিষয় পর্ণ দেখা। এখন পর্যন্ত এটা নিয়ে তার সাথে আমার যুদ্ধ! বিয়ের দুবছর পর আমার ব্যাংকে চাকরি হয়, পোস্টিং হয় বাড়ি থেকে অনেক দূরে। তারপর থেকেই আমি স্বামী সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন। অবশ্য আমার কোন সংসার নাই। আমার শ্বশুড় মারা গেছেন, শ্বাশুড়ী মা সংসারের সব। উনি খরচ চালান, ছেলে ব্যবসা করা স্বত্তেও সংসারের জন্য খরচ নেন না,ছোট ছেলে তো খুব আদরের, কোন বিষয়ে দ্বায়িত্ব নাই। আর তাই যা আয় হয় বাজে খরচ বেশী করে, তিন বেলা বাইরে খায়, যা মন চায় কেনে। বিয়ের পর থেকে আমার সব খরচ শ্বাশুড়ী মা বহন করেছেন, এমনকি আমার মেয়ের খরচও আমার চাকরি না হওয়া পর্যন্ত উনি বহন করতেন। আর তাই সব বিষয়ে তার ইচ্ছাতেই আমার সব করতে হত, নিজের ইচ্ছায় কিছু করতে পারতাম না। প্রচুর কথা শুনতে হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে,তখন ওটাই ছিল স্বাভাবিক। চাকরি করার পর থেকে আমি আমার, আমার সন্তান ও আমার ছোট বোনের পড়ার খরচ দেই। আর একটা কথা, আমি এখন আমার মায়ের বাড়ির কাছের ব্রাঞ্চে আছি, তাই এখন মায়ের বাড়িতে থাকি। আমার স্বামীর খারাপ দোষ হল দ্বায়িত্ব বলতে কোন ব্যাপার তার মধ্যে নেই। বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন দিন আমাকে বলেনি আমার কিছু লাগবে কিনা বা কোন জিনিস শখ করে কিনে দেয়নি/কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায়নি। আমার কোন প্রস্তুতি ছাড়াই দুটো সন্তান হয়ে গেছে। আশা ছিল বাচ্চাদের প্রতি অন্তত মায়া হবে, দ্বায়িত্ববোধ জন্মাবে, কিন্তু তা হয়নি। বাচ্চাদের প্রতি তাঁর নূন্যতম আকর্ষন নেই। ছেলে হওয়ার পর পুরা ছুটিটা শ্বশুড় বাড়ি ছিলাম,তখন থেকেই তার আচরণে আমি হতাশ। ও আমি থাকা স্বত্তেও পর্ন দেখতো। অবশ্য আমার সামনে না,ওর দোকান এ বসে ওসব দেখতো। আমি ওর আইডি পাসওয়ার্ড জেনে ফেলেছিলাম, তাই চেক করতাম ইউটিউবে কী দেখে! আর আমার ধারণা ও টাকার প্রতি খুব দূর্বল ,যে কয়টা মাস ওখানে ছিলাম বেতন হওয়া মাত্র টাকা নিত। আমি অবশ্য জোর করে টাকা পরে ফেরত নিতাম,কারণ বাচ্চাদের সব আমাকে দেখতে হয়। ওর এই স্বভাবটার জন্য শ্বশুড় বাড়িতে ট্রান্সফার নিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়না, কারণ ওর মা রিটায়ার করছেন। আমি গেলে এখন আমাকেই সংসারের হাল ধরতে হবে। আমার শ্বাশুড়ি ছেলেকে কিছুতেই এসব দ্বায়িত্ব দিতে চান না, শুধু বলবেন- ও আগে ভাল করে ব্যবসা দাঁড় করাক। অথচ ছেলে ঠিকই রাজ্যের ফালতু খরচ করে,তারপরও। এখন সব মিলিয়ে আমি হতাশ,আমার কোন ভবিষ্যত আমি দেখতে পারছিনা। ও কোন দ্বায়িত্ব বহন করেনা,তার উপর পর্ন দেখতে খুব পছন্দ করে। বিয়ের পরের দিন থেকে এটা জানার পর এটা আমার কাছে আতঙ্কের মত,আমি খুব ঘৃণা করি এটাকে। দু বাচ্চার বাবা হয়ে কেউ যদি এই আচরণ করে, আমি কী করবো? গত দু সপ্তাহ ধরে তার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করি না, তাকেও না করছি যোগাযোগ করতে। তাকে এত করে এত বার অনুরোধ করছি এটা ছাড়তে, কথা দেয় বাচ্চার মাথায় হাত দিয়ে যে আর দেখবেনা, কিন্তু ঠিকই দেখে! সেও আর যোগাযোগ করেনা। আমি বুঝতে পারছি না, আমি কী করবো? দু বাচ্চার মখের দিকে তাকিয়ে এই পর্ণের সাথে সমঝোতা করে সব ইচ্ছা ত্যাগ করে সংসারের বোঝা একা টানবো নাকি সব শেষ করে দিব? তার আর একটা খারাপ দিক,তার সাথে আমার যে বিষয়ে যে কথাই হোক, ওর মাকে তা অবশ্যই বলবে এবং ওর মার সামনে আমার দোষ তুলে ধরে রাগারাগি করে,নিজ থেকে আগের পুরাতন দোষ তুলেও উনার সামনে আমাকে ছোট করে প্রায়ই। ফলে শ্বাশুড়ি মাও যে কোন বিষয়ে আমাকে কটু কথা খুব ভদ্র ভাবে প্রায়ই বলেন! আমার কাছে শ্বশুড় বাড়ি আতঙ্কের মত, শ্বাশুড়িকে যমের মত ভয় পাই। উনি যা বলেন,চুপচাপ শুনে যাই। আমি আর পারছিনা। আমি কী করবো, শেষ করবো সম্পর্কটা? আমি ওকে ভালোবাসি, কিন্তু ওর পর্ন দেখার অভ্যাস,আমাকে ছোট করার অভ্যাস মানতে পারিনা। প্রশ্নটি আমাদের ফেসবুক পেজে করেছেন : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চাকরিজীবী মা। চাইলে আপনিও যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের কাছে। আর নিজের নাম গোপন রাখতে চাইলে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন পেজের ইনবক্সে, সঙ্গে লিখে দিতে হবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। স্বাস্থ্য হোক বা সৌন্দর্য, খেলা হোক বা সিনেমা, দাম্পত্য বা প্রেম, অফিসের সমস্যা কিংবা আইনি, বিজ্ঞান হোক বা রাজনীতি, স্কুল-কলেজ হোক বা সামাজিক ও পারিবারিক কোনো সমস্যা। যে কোনো সমস্যা লিখে জানান আমাদের। আপনার হয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবো আমরা। আপনার প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর। আপনার জন্যই অপেক্ষায় আছি আমরা। RE: বিয়ের পর থেকে এটা আমার কাছে আতঙ্কের মত! - Hasan - 02-20-2017 উত্তর পরামর্শ:ওয়ালাইকুম সালাম, আপু। ভালবাসা! আপু, আমরা মানুষেরা প্রায়ই গুলিয়ে ফেলি জীবনের সম্পর্কগুলোকে। প্রায়ই ভুল অনুভবকে ভালবাসা ধরে নিই, ভুল মানুষকে ভালোবাসার পাত্র হিসেবে ধরে নিই। আর ফলাফল? কেবলই কষ্ট আর যন্ত্রণা নিজের মনের মাঝে। আমরা প্রায় সবাই প্রেম ও ভালোবাসার মাঝে পার্থক্যটা করে উঠতে পারি না। আর এই কারণেই প্রেমে ব্যর্থতা মেনে নিতে পারি না অনেকেই। প্রেম কোন চিরকালের জিনিস নয়। প্রেমের সম্পর্ক ভাঙতে পারে, প্রেমের রূপ বদল হতে পারে, একটা মানুষ বারবার প্রেমে পড়তে পারে। কোন কোন প্রেম ভালোবাসায় রূপ নিতে পারে, কিন্তু সব প্রেমের সম্পর্কই যে ভালবাসা হয়ে উঠবে এটা কিন্তু জরুরী নয়! তাহলে ভালবাসা কী? আর কী করে বুঝবো যে এটাই ভালবাসা? উত্তরটি কিন্তু ভীষণ সহজ! যে সম্পর্কটি আপনার মনের মাঝে হাজার হাজার ওয়াটের আলো জ্বেলে দেয়, সেটাই ভালবাসা। যে সম্পর্কটি আপনার জীবনের প্রতিটি ইঞ্চি আলোকিত করে তোলে, সেটাই ভালবাসা। যে সম্পর্কটি আপনাকে আরও উন্নত, আরও সফল, আরও ভালো একজন মানুষ বানিয়ে ফেলে আপনার অজান্তেই- সেটাই ভালবাসা! যে সম্পর্কটি আপনাকে ভীষণ ভাবে অনুপ্রাণিত করে নিজের যোগ্যতার চাইতেও দারুণ একটা কিছু হয়ে ওঠার জন্য, সেটাই ভালবাসা। যে সম্পর্কটি আপনার ভেতরের সব অস্থিরতাগুলোকে শান্ত করে আপনাকে ধৈর্যশীল আর সুখী মানুষ বানিয়ে দিতে পারে, সেটাই ভালবাসা! এখন আপনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, আপু- আপনার এই বৈবাহিক সম্পর্ক কি আপনাকে সুখী করেছে? বা আপনাদের দুজনকেই কি সুখী করেছে? বিয়ের ৫ বছর পর আপনার কি মনে হয় জীবনের এই পর্যায়ে আপনি এখন সুখী ও সন্তুষ্ট মানুষ? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, আপনার স্বামীই যদি আপনার জীবনের সত্যিকারের ভালবাসা হয়ে থাকে, তাহলে আরও একবার চেষ্টা করে দেখুন মানিয়ে চলার। উত্তর যদি “না” হয়, তাহলে অযথা এই সম্পর্কের ঘানি টেনে কোন লাভ নেই! যে সম্পর্ক এত বছরেও আপানাকে সুখ-শান্তি দিতে পারেনি, সেটা ভবিষ্যতেও দেবে এমন আশা করাটা বোকামি। সন্তান তো আপনার একার নয়, তাহলে সন্তানের সব দায় আপনি একা নেবেন কেন? অন্যদিকে আপনি ও আপনার সন্তান তো নিজের উপার্জনেই চলছেন। তাহলে আর ভয়ের কী আছে! ছেলেকে বেশি আহ্লাদ করে মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ বানিয়ে রাখা যে কেবল ছেলের ভবিষ্যৎই নষ্ট করে, আমি জানি না কেন আপনার শাশুড়ি মা সেটা বুঝতে পারছেন না। যাই হোক, একটা জিনিস জানবেন- সংসার করতে গেলে কেবল প্রেম জরুরী নয়, প্রেমের সাথে আরও অনেক কিছুই জরুরী। কিছু না ভেবেচিন্তে হুট করে আবেগের মাথায় বিয়ের সম্পর্কে জড়ানো মানে স্বেচ্ছায় ডেকে নিজের সর্বনাশ করে ফেলা। এই ভুলটি আপনি একবার করেছেন, নিজের সিদ্ধান্তে নিজের জীবনে একটা বিপর্যয় ডেকে এনেছেন। তাই এইবার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নিজের মা-বাবা বা মুরুব্বীদের সাথে একটা আলোচনা অবশ্যই করবেন। তাঁরা যেটাকে ভালো মনে করে পরামর্শ দেবেন, সেটা ঠাণ্ডা মাথায় বিবেচনা করবেন। যেহেতু আপনি স্বামীকে ভালোবাসেন বলছেন, সেহেতু স্বামীকে আপনার কাছে নিয়ে এসে নতুন করে আবার জীবনটা শুরু করা যায় কিনা সেটাও বিবেচনা করবেন। যদিও আমার মনে হয় না সেটা সম্ভব হবে, শাশুড়ি মা যেহেতু বিধবা সেটা পারবেন না করতে। স্বামীও আসবে না। আর পর্ন? এই জিনিসটির প্রতি আসক্তি যেহেতু আপনার বোঝানোতে যায়নি, এটার জন্য পেশাদার হেল্প নিতে পারেন। একজন সাইকোলজিসট বা কাউন্সিলারের কাছে স্বামীকে নিয়ে যান সম্ভব হলে, একইসাথে আপনিও তাঁকে বেশি বেশি সময় দিন। তাকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিন যে তিনি এটা চালিয়ে গেলে আপনি অতি অবশ্যই তাঁকে ডিভোর্স করবেন। মানুষ মাত্রই পরিবর্তিত হতে পারে। শেষ একবার চেষ্টা করে দেখুন, হয়তো তার পরিবর্তন আসতে পারে। যদি না আসে, তিনি নিজেকে সংশোধন না করেন, তাহলে নিশ্চিত হয়ে যাবেন যে তার জীবনে আপনার মূল্য নেই। সেক্ষেত্রে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে সেটা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। একটা তীব্র ঘৃণার নোংরা জিনিসের সাথে সমঝোতা করে তো জীবন পার করা যায় না! আর হ্যাঁ আপু, আপাতত তিনি হয়তো যোগাযোগ করছেন না আপনার সাথে। কিন্তু আমার মনে হয় কিছুটা সময় পার হলে হয়তো যোগাযোগ করবেন। যদি তিনি নিজে থেকে যোগাযোগ করেন সম্পর্ক রক্ষার জন্য, কেবল তখনই আপনি শেষ চেষ্টা করবেন। এর আগে নয়! যদি স্বামী নিজ থেকে যোগাযোগ করেন, বুঝবেন যে তাঁর মাঝে ন্যূনতম ভালবাসা স্ত্রী-সন্তানের জন্য আছে। তিনি আপনাদের মিস করছেন। সেক্ষেত্রে স্বামীকে শর্ত দেবেন যে পর্ন দেখা ছাড়া ও নতুন করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে জীবনটা সুন্দর করে গোছানোর জন্য। যদি তিনি আপনাদেরকে ভালোবেসে থাকেন, তিনি কাজটি করবেন। যদি না করেন, অতীত ছেড়ে সুন্দর একটা ভবিষ্যতের দিকে তিনি পা না বাড়ান, জানবেন যে এই ভদ্রলোকের সাথে আসলেই আপনি সুখী হতে পারবেন না। পরামর্শ দিয়েছেন- রুমানা বৈশাখী কথাসাহিত্যিক |