আগে দশ টাকা দাও - Printable Version +- Forums.Likebd.Com (http://forums.likebd.com) +-- Forum: বাংলা ফোরামস (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=228) +--- Forum: গল্প সমগ্র (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=14) +---- Forum: ভালোবাসার গল্প (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=45) +---- Thread: আগে দশ টাকা দাও (/showthread.php?tid=2023) |
আগে দশ টাকা দাও - Maghanath Das - 02-21-2017 সকাল বেলা বাবার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। বাবাঃঅধরা মামনি এখনো উঠিস নি! বেলা হয়ে গেল তো। > উঠছি বাবা। ১০ মিনিটের মধ্যে মনে হয় ২০বার ডাক দিয়েছে। আজ বর পক্ষ আমাকে দেখতে আসছে। উফ! মাত্র পড়াশুনাটা শেষ করলাম আর এর মধ্যেই বিয়ে! বিয়ে মানেই বন্দি। আর এই মুহূর্তে আমার কোনো ইচ্ছে নেই বন্দি হবার। এতদিন স্বাধীনভাবে চলতে পারিনি। এখন একটু চলতে চাই কিন্তু তা আর হল না। ভেবেছিলাম নিজ পায়ে দাড়াব। জন্মের চার বছরের মাথায় মা মারা গিয়েছেন। কিন্তু বাবা কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেয় নি। বাবা বিয়েও করেনি। আমাকেই নিজের জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন এই বিশটি বছর। . ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছি। হাতে একখানা ছবি। আমার বরের। দেখতে তো ভালই মনে হচ্ছে। নাম শিবু। ব্যাংকে জব করে। বাবা মার সাথেই থাকে। ছোট একটা বোন আছে। শুনেছি মেয়েটি নাকি ভারি মিষ্টি। . সেজেগুজে নেমে পড়লাম ফারিয়ার বাসায় যাব বলে। ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। উঠে পড়লাম সিটি বাসে। খালি সিট দেখে বসে পড়লাম। . ~ ভাইয়া ওত। ওত। আল(র) কত ঘুমাবি। ভাবিকে দেখতে যাবি না? - যা ত এখান থেকে। ~ দালা(ড়া) আম্মুকে ডাকছি।...আম্মু ঠাস করে উঠে পড়ল শিবু। এতক্ষণ যে ডাকল সে হল তার একমাত্র ছোট্ট বোন জুই। বয়স মাত্র ৮। কিন্তু খুব পাকনা। সারাদিন জ্বালাতন করে শিবুকে। . - কি হইছে বল? ~ ভাবিকে দেখতে যাব। - তো যা মানা করছে কে? ~ আম্মু (চিতকার করে ডাক দিল) - আচ্ছা স্যরি তুই যা আমি রেডি হয়ে আসছি। ~ দুই মিনিট সময়। - আচ্ছা যা। . ফ্রেস হয়ে বের হল। আজ মেয়ে দেখতে যাবে তারা। শিবুএখনো মেয়ের ছবি দেখেনি। বাবা মার পছন্দই তার পছন্দ। . শিবু ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে পড়ল। অফিসের কাজে। মা বলল তাড়াতাড়ি আসতে। শিবু আচ্ছা বলে বেরিয়ে পড়ল। . বাসে বসে সুন্দর মনোরম দৃশ্য দেখছিলাম কিন্তু একজনের কথায় ফিরে তাকালাম। - হ্যালো আপনার যদি আপত্তি না থাকে তবে আমি কি এখানে বসতে পারি? ওমা একি! এ তো শিবুু । আমি থ খেয়ে গেলাম। কি বলব খুজেই পাচ্ছিলাম না। শুধু তাকিয়ে থাকলাম। - হ্যালো শুনতে পারছেন? আমি কি বসতে পারি? > জ্বি জ্বি হ্যা হ্যা ব.ব.বসেন। .শিবু বসে পড়ল। আর মনে মনে ভাবছে কি ব্যাপার এই মেয়ে তাকে দেখে এতো ঘাবড়ে গেল কেন! মানবতার খাতিরে শিবু জিজ্ঞেস করেই বসল। - আপনার কি কোনো সমস্যা আছে? মনে মনে ভাবলাম এই সুযোগে হবু বরের সাথে একটু দুষ্টুমি করা যাক। > আপনি কে? - আমি আরজু। এই... (সুযোগ দিল না) > তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আর একা ভেবে লাইন মারার চেষ্টা করবেন না। - খুব ভাল উপাধি দিলেন ধন্যবাদ বলেই শিবু অন্যদিকে ফিরে বসল। . বেশকিছু সময় কেটে গেল। কিন্তু শিবুু কোনো কথাই বলেনি। মোবাইল বের করে ফেসবুক চালাচ্ছে। আমি মনে মনে ভাবলাম আরেকটু দুষ্টামি করা যাক। . > কয়টা মেয়ের সাথে লাইন মারেন? - মানে? > চিল্লাবেন না। গলা আমারও আছে। আমি বললাম ফেবুতে কয়টা মেয়ের সাথে চ্যাটিং করেন। - তাতে আপনার কি? > তা বিয়ের পরই টের পাবা (বিড়বিড় করে) - কি বললেন? > না কিছু না। চালিয়ে যান। সময় তো আর বেশি নেই। - আপনি রহস্যময় কথাবার্তা বলছেন কেন?সময় বেশি নেই মানে কি? > বললাম তো কিছু না। - হুম। ভাল . কিছুক্ষণ পর টিকিট কাটতে আসছে বাস সহকারী। ভাবলাম এবার উদারতার প্রমাণ নেয়া যাক। > একটা হেল্প করবেন? - জ্বি বলুন > আমি ভুলবশত ব্যাগ আনতে ভুলে গেছি। যদি ভাড়াটা দিয়ে দিতেন। প্লিজ (একটু মায়াবী দৃষ্টিতে তাকালাম) - বাহ! খুব ভাল কথা। তাড়াহুড়ো করে বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার জন্য টাকা আনতে ভুলে যাবেন আপনি। আর ভাড়া দিব আমি? রাগে মাথা ঝিমঝিম করছে। > এই যে মিস্টার আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই। বেশি কথা বললে ঘুষি কিল এখনই খাবেন। - আমারো হাতপা আছে। > কি! আপনি একটি অসহায় কিউট মেয়ের গায়ে হাত তুলবেন? - আমি তো কোনো কিউট মেয়ে দেখছি না। > চোখের সামনেই তো বসে আছে শিবু অট্টহাসি দিল। আপনি আর কিউট! হাহাহা! কিউট শব্দটার অপমান করা হলো। . মনেমনে ইচ্ছে করছে এখনই নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে দেই। কিন্তু তা আর করলাম না। চুপ করে বসে রইলাম। . হঠাৎ চোখে কি যেন পড়ল। তাই চোখ মুছতে লাগলাম। তা দেখে শিবু মনে করল আমি কাদছি। - হ্যালো,মিস I'm sorry. প্লিজ কান্নাকাটি করিয়েন না। এবার ইচ্ছে করে নাটকীয় কান্না শুরু করলাম। > আপনি আমাকে অপমান করেছেন। - কখন? > এই যে একটু আগে বললেন আমি কিউট না। - আরে আমি দুষ্টামি করছিলাম। আপনি তো কিউটের ডিব্বা। > অপরিচিত মেয়ের প্রসংশা করতে লজ্জা লাগে না? - আজব মেয়ে তো। প্রসংশা করলেও দোষ না করলেও দোষ। কন্টাক্টারঃ টিকিট টিকিট শিবু দুজনেরই টিকিট ভাড়া দিয়ে দিল। . অবশেষে আমি আমার গন্তব্য স্থান চলে আসল। > আচ্ছা যাই ভাল থাকিয়েন। - হুম। আপনিও। . মনে মনে হাসতে লাগলাম। . বিকালে শিবু তার পরিবারের সাথে চলে এল। আমি মনে মনে ভাবছি আর হাসছি আমাকে দেখার পর শিবুর পরিস্থিতি কেমন হবে? . ছোট্ট ননদটা এসেই বলল ভাবি কই? সবাই তার কথায় হাসি দিল। ও চলে এল আমার রুমে। ~ তুমিই কি আমার ভাবি! > কি মনে হয়? ~ হুম (গম্ভীর ভাব) হতে পার। দেখতে তো ভালই। > এদিকে এসো। ওর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে আরজু সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিলাম। আমার ডাক পড়ল। . চায়ের ট্রে নিয়ে হাজির হলাম। শিবুর দিকে তাকিয়ে দুষ্টু ভরা হাসি দিলাম। আমাকে দেখে শিবু থ খেয়ে গেল। হা করেই আছে। শ্বাশুড়ী আম্মার ডাকে হুশ ফিরল তার। . বিয়ে সম্পন্ন। বাসর ঘরে আমি বসে আছি আর ভাবছি ও এসে হয়তো সেদিনের কথা জিজ্ঞেস করবে। ওহ! ও এসে গেছে। উঠে যেয়ে পা ধরে সালাম করতে গেলাম। ধরে ফেলল। আর বলল, আগে আমার সেদিনের বাস ভাড়ার দশ টাকা দাও। এমন কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম। > আজকাল ১০টাকা কেউ খুজে নাকি? দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর দুজনেই অট্টহাসি দিলাম। হাসি যেন টিকে থাকে। অন্তত কাল।। |