তবু প্রতারক পুরুষকেই ভালবাসি - Printable Version +- Forums.Likebd.Com (http://forums.likebd.com) +-- Forum: বাংলা ফোরামস (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=228) +--- Forum: গল্প সমগ্র (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=14) +---- Forum: ভালোবাসার গল্প (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=45) +---- Thread: তবু প্রতারক পুরুষকেই ভালবাসি (/showthread.php?tid=2032) |
তবু প্রতারক পুরুষকেই ভালবাসি - Maghanath Das - 02-21-2017 ---স্যার আমি অবন্তি ফাস্ট ইয়ার নিউ| ***ওকে ,ভালভাবে ক্লাশ করোএকদম ফাকি দিবে না|এখন কি তোমার ক্লাশ নেই?এখানে কি করছো? --- একচুয়াল্যি স্যার আমি আপনার জন্য ই এখানে এসেছি| ****মানে? ---মানে স্যার আমার এখন ক্লাশ নেই( আমতা আমতা সুরে) *** তবে লাইব্রেরীতে যাও| ---স্যার একটা কথা ছিল| *** হ্যা বলো ( অবন্তীর দিকে তাকিয়ে বল্লো) ---( অবন্তী হাতের পেছনে লুকিয়ে রাখা গোলাপটি স্যারের সামনে ধরে বল্লো) এটা আপনার জন্য স্যার|| একটু মনে মনে হোচট খেলো আশিক স্যার|তারপর ইতস্তত ভংগিতে বল্লো *** ফুল কেনো? --- আমাদের গাছের প্রথম গোলাপটি আপনাকে দিতে চেয়েছি তাই|| ***ওকে ধন্যবাদ,তবে আশা করি এমন কাজ আর করবে না,কারন ক্যাম্পাসে আমি কোন ছাত্রীর কাছ থেকে ফুল নিতে পারি না|আশা করি কথাটি তুমি বুঝতে পেরেছো| কথাটি বলেই আশিক স্যার অবন্তীকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো| ছোটবেলা থেকেই ভীষন জেদী আর একরোখা|রাগলে এখনো গাল দুটি লাল হয়ে যায়|খুব অপমান বোধ হচ্ছিল নিজের কাছে,তবু কিছুই করার ছিল না| সেই দিন রাগটা বেস হজম করে যায় অবন্তী|কারন স্কুল ছেড়ে কলেজে পা দেবার পরই প্রথম দেখায় আশিক স্যারকে ওর ভাল লেগে যায়|যেখানে হাজার ছেলে অবন্তীকে পছন্দ করে,সেখানে কাউকে পাত্তা না দিয়ে তার মনে স্যার কে ধরেছে| কি আর করা কচি মনে যা ধরে তাই সই|দিন দিন স্যারের জন্য পাগলামী বেড়েই যাচ্ছে| স্যার ইংলিশ সাহিত্যের টিচার,তাই তাকে ইংলিশ গল্প পড়ানোর ভার দেয়া হলো কলেজ থেকে|ইয়াং,স্মার্ট কথা বলার অসাধারন ভংগীমা,যে কেউ তার প্রেমে পরে যাবে|ক্লাশ নেবার সময় তার ভেতরে আরো বেসি পার্সোনালিটি ভর করে| বেসি দিন হয়নি কলেজে জয়েন করছে|মাস ছয় হবে,এর মাঝে অনেকেই তাকে বিরক্ত করেছে তবে অবন্তীর মত এমন ক্রেজি কেউ ছিল না|অবন্তীর ক্লাশের বান্ধবীরে এটা নিয়ে বেস মজা করতো| অবন্তী মাঝে মাঝে নিজের ক্লাশ রেখে আশিক স্যারের অন্য ক্লাশের রুমের সামনে থেকে যাওয়া আসা করত| সেদিন ক্লাশে আশিক স্যার বিখ্যাত গল্প জিম আর ডেলা পড়াচ্ছেন|ভালবাসার ডেফিনেশন বুঝাচ্ছেন| এমন সময় অবন্তী হাত তুল্লো|স্যার তার লেকচার থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো, *** কোন প্রশ্ন? --- ( অবন্তী দাড়িয়ে বল্লো ) লাভ ইউ *** হোয়াট?( রাগে স্যার তখন লাল হয়ে গেছেন) --- না মানে স্যার আই লাভ ইউ কাকে বলা যায়? মানে সাহিত্যে এ বিষয়ে কোন সুনির্দিস্ট ব্যাখা আছে কি না তা জানতে চাচ্ছিলাম| ওর প্রশ্নে ক্লাশের মধ্যে হাসিড় বন্যা বয়ে গেলো|পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য স্যার বল্লেন *** ক্লাশের বাইরে গিয়ে দাড়াও| --- স্যার ,আমি এমন কি করেছি? ***তোমাকে যা বলেছি তাই করবে,আর আমার ক্লাশ শেষে টিচার্স রুমে দেখা করবে| প্রথমে অবন্তী ব্যাপারটি তেমন পাত্তা দেয়নি|কিন্তু স্যারের মুড দেখে ও ভয় পেয়ে গেলো|এর পর ক্লাশের বাইরে দাড়িয়ে রইল,ক্লাশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত| টিচার্স রুমে এক কোনে দাড়িয়ে ছিল অবন্তী|স্যার বল্লেন**** আমি নেক্সট টাইম তোমার প্যারেন্টস কে ডেকে আনব এখানে| ---সরি স্যার ,আমি আপনাকে ছোট করতে চগেলো|প্লিজ প্লিজ স্যার এমন আর হবে না| *** এবার যেতে পারো| আর হ্যা টিচার হিসেবে যত টুকু দরকার ঠিক তত টুকু ই করবে আশা করি| রুম থেকে বেরিয়ে যাবার সময় অবন্তী স্যারের দিকে তাকিয়ে মুখ ভ্যাংচি মেরে বেরিয়ে গেলো| ইদানিং স্যারের ফোনে অনেক কল আসে|স্যার যখন ই রিসিভ করে ও পাশ থেকে কেউ কথা বলে না| ওই ঘটনার পরের সপ্তাহের ঘটনা,স্যার ক্লাশ নিচ্ছেনপাশের রুমে|মোবাইল ফোনটা স্যারের পকেটে|তার ফোনে মেসেজ এলো,চেক করতেই তাতে লেখা---শার্ট টিতে একদম মানায়নি তোমাকে,তুমি সব সময় হালকা কালার শার্ট পড়বে| স্যার ফোন রেখে দিয়ে তার মত ক্লাশ নিতে থাকলেন| রাতের বেলা মেসেজ এলো--- কাল তুমি বেবি পিংক শার্ট টা পড়বে| স্যারের মেসেজ দেখে বুঝতে বাকি রইলো না যে,কে মেসেজ পাঠাচ্ছে| ক্লাশে ঢুকবে ঠিক এমন সময় ,স্যার সামনে এসে দাড়ালেন, *** তোমার ব্যাগ চেক করব,ব্যাগ দেখাও| --- ওকে লেটস চেক,বলেই ব্যাগটা ওপেন করে মুখের সামনে ধরলো অবন্তী| *** তোমার ফোন দেখাও আমাকে! --- খুব কড়া ভাবে স্যারের দিকে তাকিয়ে বল্লো,স্যার আমি ফোন ইউজ করি না|বিলিভ না হলে ব্যাগটা আপনার কাছে রেখে দিন|এই বলে ব্যাগটু ধপাস করে হাত দিয়ে মেঝেতে ফেলে অবন্তী চলে গেলো| আসলে ফোনটা অবন্তী তার শরীরের অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখেছিল| হাসতে হাসতে অবন্তী হেটে যাচ্ছে কিন্তু হাতে তার ফোন| তখনি মেসেজ দিলো, লাভ ইউ টু মাচ|এত রং দেখিয়োনা খুন হয়ে যাবো| স্যার কিছু ধরতে পারলেন না|সেদিন ক্লাসে ঢুকতেই ব্লাক বোর্ডে লেখা দেখে থমকে দাড়ায় আশিক স্যার|ওখানে লেখা আছে, আশিক = প্রেমিক | এবার স্যার দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, সবাই কি জানো আমার নাম? সবাই এক সাথে উত্তর দিলো,জ্বী স্যার| ***আচ্ছা টিচারদের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধা কি তোমরা দিতে জানো না? কে লিখেছে এটা? ---অবন্তী দাড়িয়ে বল্লো , স্যার আমি লিখিনি| ওই দিন স্যার ক্লাস নেননি আর|অবন্তীকে ও কিছু বলেননি| এর মাঝেই কলেজে মোটামুটি সাড়া পড়ে গেছে যে আশিক স্যারকে ফাস্ট ইয়ারের কোন স্টুডেন্ট ডিস্টার্ব করে|এ নিয়ে বেশ মজা করে অন্য টিচার মহল|তবে এ নিয়ে বেস বিব্রত আশিক স্যার|| তবে অবন্তী ও ছেড়ে দেবার মত ছিল না|অনেক ভাবে আশিক স্যারকে বিরক্ত করেছে|তাকে বুঝাতে চেয়েছে যে ,অবন্তী তাকে চায়|কিন্তু স্যার একটি বারের জন্যও প্রশ্রয় দেয়নি অবন্তীকে|তবে যথেস্ট পারসোনিটি থাকার কারনেই হয়ত পেরেছে|অথবা ক্যারিয়ারের শুরুতেই কোন স্ক্যান্ডেলে নিজেকে জড়াতে চাননি| যাই হোক ,সে দিন দেখলাম অবন্তীর খুব মন খারাপ|কারন একটা উড়ো খবর ছড়িয়ে গেছে যে , আশিক স্যার বদলি হয়ে ঢাকা চলে যাচ্ছেন| শিওর হবার জন্য,ছুটে যায় টিচারস রুমে|দেখে স্যার নেই| লাইব্রেরি তে শুনতে পায় আজ রাতেই স্যার ঢাকা যাচ্ছেন| অবন্তী স্যারের মোবাইলে কল দেয়|কিন্তু পায়নি| হয়ত নাম্বারটি বদলে ফেলেছে|এবার অবন্তী স্যার যেখানে থাকেন ওখানে যায়|দেখে স্যার রুমে নেই|বাইরে কোথাও গিয়েছেন,তাই ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করেন স্যার ফেরা পর্যন্ত|লাভ হলো না স্যারের সাথে দেখা হয়নি| বাসায় গিয়ে ব্যাগে দু একটি কাপড় গুছিয়ে নেয়|কারন বাসায় তার লেখা পড়ায় বেস ডিস্টার্ব হচ্ছে তাই কয়েক টা দিন এক বান্ধুবীর সাথে হোস্টেলে থাকবে|এই বলে বাসা থেকে চলে যায়| রাত দশটায় বাস ছেড়ে যাবে ঢাকার উদ্দ্যেশে|আশিক স্যারের সিট টি ঠিক জানালার পাশে|স্যার উঠে বসে তার কিছু সময় পরই বাস ছেড়ে দেয়|পাশের ছিটে এক মহিলা বোরখা পরে জড় শড় হয়ে বসে আছে|রাতটি মোটামুটি ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেন স্যার| সকাল ছয়টায় বাস ঢাকা এসে থামে,স্যার নেমে দাড়ালেন এমন সময় পাশের ছিটে বসা মহিলা বোরখা পরা উনি স্যারের হাতটি ধরে ফেলে|স্যার অবাক হয়ে বল্লেন, কি হয়েছে? কোন সমস্যা? ---হ্যা না মানে .. *** কে আপনি?ভয়েজটা চেনা চেনা লাগছে|| উত্তরে কিছু বল্লো না মহিলাটা| স্যার কিছু সময় চুপ থেকে বল্লো ** ওহ সীট অবন্তী?তুমি? মুখটা খোল দেখি,বলেই মুখের কাপড় সরাতে লাগলো| আচমকা অবন্তী স্যারের গলা জড়িয়ে ধরে কেদে ফেল্লেন,--- স্যার আমি পারব না আপনাকে ভুলে থাকতে|প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না প্লিজ| স্যার তখন ওর হাত সরাতে গিয়ে ও থেমে গেলেন|চুপ হয়ে দাড়িয়ে রইলেন|তারপর ওর হাত ধরে পাশের একটি রেস্তোরায় নিয়ে গিয়ে বসালেন|স্যার দেখেছেন ও সারা রাত কিছু খায়নি| তাই দুজনে মিলে নাস্তা করলেন|ওকে একদম হার্ট করে কথা বলেনি|বেস কিছু সময় নিলেন|এবার ওর কাছ থেকে ওর বাসার ফোন নাম্বার নিলেন|আর ওনার কলেজে জানালেন যে,ওনার আজ আসা হবে না| কি হতে যাচ্ছে তা কিন্তু অবন্তী জানে না|তবে অবনী বেস আশাবাদী ছিল,যে স্যার তাকে এখন আর ফেরাবেন না|অবন্তী কে রেখে স্যার একবার ওয়াশ রুমে গেলেন|ফিরে এসে বল্লেন --- অবন্তী তুমি এখন ফিরে যাবে লক্ষী মেয়ের মত|এরপর আমার সব কাজ সেরে আমি আসব তোমাকে নিতে| অবন্তী বল্লো, স্যার না গেলে হয় না?এই বলেই কান্না করতে শুরু করলো| স্যার তখন ওর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বল্লো,একদম পাগলামি করো না,এখানে আমার নিজের ই থাকার জায়গা নেই,তোমাকে কই রাখবো! বেটার আমি সব গুছিয়ে তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো| অনেক বোঝানোর পরে অবন্তী রাজী হয়|আসলে ওই সময় স্যার খারাপ ব্যাবহার করলে,অবন্তী উল্টা পাল্টা কিছু করতে পারতো|কারন যে মেয়ে মাত্র ক দিনের চেনা মানুষের জন্য নিজের ঘর ছাড়তে পারে ,সে ইমোশনালি অনেক কিছুই করতে পারে| যখন অবন্তীর বাবা মা ওকে নিতে বাস স্ট্যান্ড এসে পৌছায়,তখন দুপুর দুইটা|ওরা একটা মাইক্রো বাসে করে আসে| ফিরে যাবার সময়,অবন্তী আশিক স্যার কে জড়িয়ে ধরে কাদে| তখন স্যার বল্লেন, যাও তুমি ভেবোনা আমি খুব শীঘ্রই নিতে আসবো| দশ বছর পরে,অবন্তী আজো আশিক স্যারকে খুজে বেড়ায়,ফেসবুকের পাতায় আবার কখনো কখনো আশে পাশের মানুষ গুলোর ভীড়ে|কিন্তু ওর প্রতীক্ষা আর শেষ হয়না| শুনেছি,ফিরে আসার পরে অবন্তীকে জোড় করে বিয়ে দেয় ওর ফ্যামিলি|এক বছরের মাথায়,অবন্তী বাবার ঘরে চলে আসে| বেসিক্যল্যি অবন্তী মেনে নিতে পারেনি স্বাভাবিক ভাবে|আর পুরুষ মানেই প্রতারক ওর কাছে|ইমোশনাল্লি ব্লাক মেইল করতে এরা বেস পটু|তবুও ভালবাসে,বার বার ভালবাসে| ভালবাসাতো হয়না মনের বিপরীতে|তবে একতরফা হয়|যার স্বাদ যে নিয়েছে শুধু মাত্র সেই জানে|| |