"অন্তিম ভালবাসা" - Printable Version +- Forums.Likebd.Com (http://forums.likebd.com) +-- Forum: বাংলা ফোরামস (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=228) +--- Forum: গল্প সমগ্র (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=14) +---- Forum: ভালোবাসার গল্প (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=45) +---- Thread: "অন্তিম ভালবাসা" (/showthread.php?tid=2033) |
"অন্তিম ভালবাসা" - Maghanath Das - 02-21-2017 বৃষ্টিস্নাত বিকেলে খাবার শেষে বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলো মেঘ।মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙ্গেই বেশ তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে ঝটপট তৈরি হয়ে নিলো। অতঃপর ঘরির দিকে তাকাতেই দেখে ৭:২২ বেজে গেছে। তাই আর দেড়ি নাহ করেই মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হন্ত দন্ত হয়ে ছুটতে লাঘলো মেঘ।ওকে যেতে হবে অনেক দূর যেতে হবে। আর তাই মেঘকে ৭:৪৫ এর ট্রেন টাও ধরতে হবে। স্টেশন টা মেঘের বাসা থেকে ৪০ মিনিটের পথ হবে।ইশ একটা সি এন জি ও পাওয়া যাচ্ছে নাহ। অবশেষ এ একটা রিকশা পেল। >দাদা একটু জলদি চালান তারা আছে। (মেঘ) >> ভাইজান চিন্তা কইরেন নাহ।ঠিক সময় মতো পৌছাইয়া যামু(রিকশাচালক) >ঠিক আছে দাদা।দেখে চালাইয়েন। (মেঘ) >>এতো চিন্তা করেন কেন? কিচ্ছু অইবো নাহ।ঢাকা শহরে আইজ ২৫ বছর ধইরা রিকশা চালাই। আমি আপনেরে সময়ের আগে পৌছাইয়া দিমুনি। (রিকশাচালক) ___কথাগুলা শুনে মেঘ একটু নিশ্চিন্ত হলো।বেশ শান্তি লাগছে মেঘের মনে।অনেকটা আনন্দও হচ্ছে।আজ ৩বছর পর মেঘ রাত্রীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে রাজশাহী।এই প্রথম সে রাত্রীকে দেখবে।এর আগে ওদের কখনো দেখা হয়নি।ফেইসবুকে ছবি দেখছে।কিন্তু বাস্তবে দেখার সৌভাগ্য হয়নি মেঘের। . ৭:৪৩ বাজে। হাতে আর মাত্র ২মিনিট বাকি। >দাদা জলদি করেন সময় নাই।(মেঘ) >> এইতো দাদা আইয়া পরছি আর একটু। (রিকশাচালক) . __অতঃপর মেঘ ভাড়া মিঠিয়ে বেশ সজোড়ে দৌড় লাগালো।কারন এতোক্ষন এ ট্রেন এর সিগ্নাল শুরু হয়ে গেছে।সব যাত্রিকে সিট গ্রহন করতে বলা হয়ে গেছে।কিন্তু মেঘ এখনো সিট পর্যন্ত আসতেই পারেনি।বেশ শক্তি নিয়ে ছুঠছে মেঘ। . হঠাৎ একটা ধাক্কা খেলো।দুঃখিত, দেখতে পাইনি বলে কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখল যার সাথে ধাক্কা খেল সে ছেলেটা হয়তো একটা পাগল। কিন্তু দেখে ভদ্র লোকের ছেলে বলেই মনে হলো।কারন পোশাক এ ধুলা বালি থাকলেও বেশ রক্ষণশীল বলেই মনে হলো।চেহারায় কিছু একটা মায়া আছে ছেলেটার।ছেলেটা কেমন বৃষ্টি বৃষ্টি বলে ডাকছে। . ___অতঃপর স্টেশন এর মানুষ বল্লো বিগতো ৫বছর ধরে এই ছেলেটা এখানে বৃষ্টিকে খুঁজছে।হয়তো বৃষ্টির জন্যই আজ ছেলেটার এই পাগল প্রায় অবস্থা।হঠাৎ ট্রেন এর হর্ন এ আমার ঘোড় কাটলো।বেশ ছুটে গিয়ে কামরায় উঠলাম।বসে ভাবছি যে কি হয়েছিলো ছেলেটার জীবনে। . এটা ভাবতে ভাবতেই মেঘ ভাবনায় ডুবে গেলো।ঘোর কাটলো সেই নাম না জানা পাগল ছেলেটার আওয়াজে।ছেলেটা বৃষ্টি বলে চেঁচাচ্ছে।আর ছেলেটার তৃক্ষ দুই চোখ জোড়া বৃষ্টিকে খুঁজচ্ছে। . ___ কি আকাঙ্ক্ষা সেই চোখে।কতো গভীরতা যে আছে সেই চোখে তা না দেখলে বুঝানো যাবে নাহ। . অতঃপর ছেলেটার কাছে গিয়ে বল্ল- বৃষ্টিকে খুঁজছেন। বৃষ্টি কে হয় আপনার? . ____ অতঃপর ছেলেটা হু হু করে কেঁদে উঠলো।আর বলতে শুরু করলো নাম না জানা ছেলেটার আর বৃষ্টির ৫ বছর আগের সেই দিন গুলোর কথা।যেই সপ্ন দুজনে সাজিয়েছিলো তাদের দু'চোখে তাদের একটা ছোট্ট সংসারের।আমি শুধু নির্বাক শুনতে শুরু করলাম।আর ছেলেটা বলছে- . >এই! তুমি কি কাউকে লাভ করো? >>হুম। করি তো। >কাকে? বল না। (খুব অাগ্রহের সাথে) >>তুমিতো জানই। অামি কাকে ভালবাসি। >তবুওবল। >>নাহ্। তুমি বল। অার তুমি সেটা জানো। >কাকে? সুকন্যার রাজকুমার কে? >>হুমম। >কিন্তু সুকন্যার রাজকুমার তো শুধু সুকন্যাকেই লাভ করে। অন্যকাউকে কল্পনাও করতে পারেনা। >>না। অামার সুকন্যার রাজকুমার কেই চাই। তুমি সুকন্যাকে ভুলে যাও। >তা কি ভাবে? সুকন্যার রাজকুমার শুধুই সুকন্যাকে ভালবাসতে জানবে অন্য কাউকে নয়। তাকে সে কখনই ভুলতে পাররবে না। >>কেন? কেন পারবেনা? শুনি? >কারন সুকন্যাকে সে সীমাহীন ভালবাসে। পুরো পৃথিবী একদিক অার সুকন্যা অারেক দিক। >>অাহা। কত ঢংয়ের ভালবাসা। >দেখো। এটা মোটেই মজার কথা নয়। সিরিয়াস। >>হু হুম। অার। >সে সুকন্যাকে অনেক ভালবাসবে। সেখানে কোন স্বার্থ থাকবে না। থাকবে না অবিশ্বাসের ছিটেফোঁটা। শুধুই বিশ্বাসের বন্ধনে অাবদ্ধ থাকবে দুটি প্রাণ একই হৃদয়। সে অন্য কাউকে ভাবতেই পারবেনা সুকন্যাকে ছাড়া। >>তাই!? >হুমম। তাই।(মাথা নেড়ে) >>সত্যি তো? >হ্যা। তিন সত্যি। >>বিশ্বাসই হয়না।(অন্যদিকে তাকিয়ে অভিমানী সুরে) >দেখো। অাজ পর্যন্ত তোমাকে যা বলেছি সত্যি বলেছি। এবং এটুকু বলতে পারি অাজীবন তোমার সাথে সত্যি কথা বলে যেতে পারব। >>মনে থাকে যেন। >হুম >>তো! >তো কি? >>প্রোপজ করো। >কাকে?(ঢোক গিলে) >>তোমার সুকন্যাকে! তোমার বৃষ্টি নামের না দেখা সুকন্যাকে! >উরে! বাবা। অামি পারব না। অামার ভয় হয়। >>অাজিব! কিসের ভয়? >সুকন্যা যদি অামায় ছেড়ে কখনো চলে যায়? >না যাবে না। >>এর নিশ্চয়তা কি? অামার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে? >হুম পারব। খুব পারব। প্রোপজ করো। >দেখ। এটা অাবেগময় ভার্চুয়াল জগৎ। এখানে এখন কিছু সম্ভাব্য অাছে যেগুলো বাস্তবে অসম্ভব খুব কঠিন। তুমি ভেবে দেখ। >>দেখো। অামি তোমার সাথে যা বলছি সিরিয়াস। >তুমি তোমার অাবেগ দিয়ে নয়। পরিবার সমাজ মাথায় রেখে বল। অামার এটা প্রথম ভালবাসা হবে। অার এটাই শেষ ভালবাসায় রুপ দিতে পার তুমি অামার সুকন্যা হয়ে। ভেবে বল। পারবেতো অামার জন্য অপেক্ষা করতে যতদিনে না অামি সুকন্যার যোগ্য হয়ে উঠি? >>হুম। পারব। তুমি অামার উপর সেই অাস্থা রাখতে পার। >ঠিক অাছে। বাকিটা তোমার উপর ছেড়ে দিলাম। >>ওক্কে বাবু। এবার তো তোমার সুকন্যাকে প্রোপজ করতে পার। নাকি? >হুমম। বাবুনি করছি। >>হুম (কোমড়ে হাত রেখে) এবার জোনাক কলেজের কালো রংয়ের ব্যাগ থেকে সুকন্যার প্রিয় কালো গোলাপ নিয়ে হাটু গেড়ে প্রোপজ করলো। >বৃষ্টি। তুমি অামার সুকন্যা হবে? যাকে নিয়ে অামি পৃথিবীটাকে বানাব স্বপ্নের রংমহল। তুমি কি ভোর বেলার পাখি হয়ে অামাকে ঘুম থেকে জাগানোর দায়িত্ব নিবে। সকালের নাস্তা অামিই তৈরি করব। তুমি শুধু খাইয়ে দিবে। অামিও তোমায় খাইয়ে দিব। অফিসে যাবার অাগে কালো স্যুটের উপর লাল টাইটা বাঁধতে বাঁধতে নানা অাদেশ নিষেধ উপদেশ অার বকা দেওয়ার দায়িত্ব তুমি নিবে। অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলে অনেক অভিমান করে বকা দেওয়ার দায়িত্ব নিবে। তারপর অামি রান্নার পর তুমি শুধু টেবিল খাবার সাজিয়ে বসে থাকবে। এরপর খাবার শেষে ছাদে অামার বুকে মাথা রেখে জ্যোৎস্না বিলাসের সাথে মধ্যরাতে অাইস- ক্রিম এর বাচ্চামি অাবদারের দায়িত্ব নিবে। এরপর মশারী টা তুমি টাঙিয়ে অামার ঘুমের কোলবালিশ হবার দায়িত্ব নিতে পারবে তুমি? তুমি অামার সুকন্যা হবে? অামি বিনিময়ে একবুক ভালবাসা তোমার জন্য রেখে দিব। হবে তুমি অামার সুকন্যা? একসাথে জোনাক এতগুলো বলে যেখানে বৃষ্টি কথা বলার সুযোগই পেল না। এবার পেয়ে বলল... >>ওটাই তো এখনো বলো নি। >অাবার কোনটা? >>I Love You! তো বলনি >শুধু I Love You বললেই ভালবাসা হয়ে যায়? অামি তো তোমাকে ভাল বাসি। >>এই তো এবার হয়েছে Mr.JB। হাত থেকে ফুলটা নিয়ে বলল বৃষ্টি। অাজ থেকে অামি তোমার সুকন্যা। অামিও তোমাকে ভালবাসি সীমাহীন জোনাক। . . এসব কথা বিড়বিড় করে বলতে বলতে প্লাটফরমে বসে ডুকরে কেঁদে উঠলো চুল বড় উসকো খুসকো ময়লা জমে সোনালী রং হয়ে যাওয়া নাম নাজানা মধ্যবয়সী একটা যুবক। ও হ্যা। তার নামটা মাত্রই জানতে পারল মেঘ "জোনাক" নামের একটা পিচ্চি হৃদয়হীন পঁচা ছেলে। অজত্ন অবহেলায় বোধ হয় জোনাক নামের ছেলেটা এমন হয়েছে এমনটাই ভাবল মেঘ। না হয় সুকন্যা প্রথম দেখায় জোনাক নামের পাগলটাকে পিচ্চি বলেছিল। . হ্যা। সময়ের ব্যবধানে অপেক্ষার প্রহর ফুরোবার অাগে জোনাক তার সুকন্যার যোগ্য হয়ে ওঠার অাগেই অন্য কারোর সুকন্যা হয়ে যায়। তারই ব্যাথায় ব্যাথিত হয়ে অাজে জোনাক ছেলেটা প্লাটফরমের সুকন্যার পাগল। এবং প্রতিদিন এখানে বসে পাগলের মতো খুজে বেড়ায় "বৃষ্টি"নামের সুকন্যাকে।কেননা এখানেই সুকন্যার সাথে তার প্রথম দেখা আর এখান থেকেই সুকন্যার চির বিদায় হয়েছিলো জোনাকের জীবনে। তাই আজো জোনাক এখানেই অপেক্ষা করে সুকন্যার জন্য। . যা হোক। ট্রেনটা এসে গেছে। মেঘ কেও পারি দিতে হবে রাত্রী নামের কোন এক না দেখা সুকন্যার যোগ্য হতে। সবাই মেঘের জন্য দুয়া করবেন যেন মেঘ তার "রাত্রী"র কাছে সুযোগ্য রাজকুমার হয়ে ফিরে অাসতে পারে। |