আজব ভালবাসা - Printable Version +- Forums.Likebd.Com (http://forums.likebd.com) +-- Forum: বাংলা ফোরামস (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=228) +--- Forum: গল্প সমগ্র (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=14) +---- Forum: ভালোবাসার গল্প (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=45) +---- Thread: আজব ভালবাসা (/showthread.php?tid=2040) |
আজব ভালবাসা - Maghanath Das - 02-21-2017 -- তুমি নিজেকে কি মনে করো বলো তো। দুই মাস পিছনে ঘুরে এখন একা পেয়ে প্রপোজ করে দিলে। তুমি কি ভাবছো এতেই আমি রাজি হয়ে যাবো। -- তাহলে? -- আমি কেন বলব? পারলে বুঝে নাও। -- তার মানে........... -- আরে গাধা পারলে আমাকে পটিয়ে দেখাও। -- তোমাকে পটানো তো আমার বা হাতের কাজ। (অনেক ভাব নিয়ে বললাম) -- কেন তোমার ডান হাত নেই বুঝি? -- ওই তা না, আমার সবই আছে। আমি বলতে চেয়েছি তোমাকে পটানো কোন বেপারই না। -- চেষ্টা করে দেখতে পারো কিন্তু কোন লাভ হবে না। -- পটাতে তো পারবো কিন্তু পটে গেলে তো আর বলবে না যে তুমি পটে গেছো? -- ওই শুনো এই রিধিমা কখনো মিথ্যা বলে না। -- তাই নাকি -- হুমমম -- ওকে তাহলে দেখো একদিন ঠিকই তোমাকে পটিয়ে নিবো। -- আশায় রইলাম। বলেই রিধিমা চলে গেল। ৪ মাস আগে ওরা আমাদের এলাকায় ভাড়া এসে ছিলো। আর ওরে দেখেই মনে লাড্ডু ফুটতে শুরু করেছিল। প্রথম ওরে দেখেই ইয়া লম্বা একটা ক্রাশ খেয়ে ছিলাম। এরপর যখন ওর বেপারে আস্তে আস্তে খুজ খবর নিয়ে জানতে পারি তখন ওর উপর ক্রাশেই পরিমানটা বাড়তে থাকে। কি যে কমু ওর বেপারে, যা বলব তাতেই কম হয়ে যাবে। এখন রিধিমা অনার্সে ১ম বর্ষে পড়ে। আর এস এস সি এবং এইচ এস সি তে গোল্ডেন এ+ পেয়েছিল। বর্তমানের ক্লাসের ফ্রাস্ট গার্ল এবং ভার্সিটির কাবাডি টিমের ক্যাপ্টেন। বলা যায় ও একটু হিটলার টাইপের যা আমার পছন্দের। আমি পাপন তবে ডাক নামের অভাব নেই। লেখাপড়া শেষ করে এখন এলাকার ছোটদের সাথে রাস্তায় ক্রিকেট খেলে সময় পার করি। আর মাঝে মাঝে চাকরী খুজতে ঘুরাঘুরি করি। ওরে যখন প্রথম দেখি তখন আমি রাস্তায় ক্রিকেট খেলতে ছিলাম আর ও দুইতলায় দাড়িয়ে ছিলো। ওরে দিকে তাকিয়ে ছিলাম প্রথম দেখায় আর বল এসে লেগে ছিলো আমার মুখে। আহা কি যে মজার লাগছি, যার লাগে সেই বুঝে। সত্যি বলতে কখনো প্রেম ট্রেম করি নি তো তাই হয়ত ওর পিছনে পরেছি। একবার প্রাইমারী স্কুলে এক মেয়েরে প্রপোজ করে ছিলাম । তারপর সেটা আমার গার্ডিয়ান ডেকে আমার নামে বিচার দিয়ে শেষ হয়। তাই আর কখনো মেয়েদের সাথে প্রেম করার কথা ভাবি নি। তবে এখন রিধিমাকে দেখে মনে প্রেমের ইচ্ছা জাগছে। ওদের বাড়িটা আমাদের দুই বাড়ির পরেই। ওরা যখন এলাকায় আসে এর ১ মাসের মাঝেই ওদের সাথে সম্পর্ক ভাল করে নেই। প্রথমবার নিজের ইচ্ছায় ওদের বাড়িতে বল ফেলে দিয়ে নিজেই বল আনতে যাই। আর ওদের সামনে অন্য মানুষের নাম বলে নিজে ওদের কাছে ভাল হয়ে যাই। এভাবে অনেক কারনেই ওদের সাথে সম্পর্ক টা মোটামোটি ভাল করে নেই। কিন্তু আজ যখন ওরে প্রপোজ করলাম, ও তো রেগে মেগে শেষ। কি আর করব এবার দেখি ওরে পটাতে পারি কি না। সকালে মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম........... -- ওই পাপন উঠ না। -- কি করব আম্মু এতো সকালে। -- যা ছাদে গিয়ে গাছ গুলো তে পানি দিয়ে আয়। তুই না হয় ফ্রেশ না হয়ে থাকতে পারিস। কিন্তু গাছ গুলো কে তো পরিষ্কার করে রাখ। -- কাজের কথা বললে নাকি অপমান করলে। -- যা ভাবতে পারস, যা এবার ছাদে যা। আর কি করব এই ঘুম চোখে নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। গাছের আগাছা ছাটাই করে গাছে পানি দিচ্ছি। এমন সময় পাশের ছাদ থেকে এক মেয়ের ডাক শুনলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি এতো মিতু, আমাদের প্রতিবেশী। -- শুভ সকাল পাপন ভাইয়া। -- শুভ সকাল ২ -- এতো সকালে আপনি ছাদে কি করছেন? -- চাঁদে যাওয়ার জন্য একটা বড় মই বানাচ্ছি। -- মানে? -- দেখতেই পারছ গাছে পানি দিচ্ছি তবুও এই প্রশ্ন করার কি হলো? -- ওকে বাদ দেন, আপনার সাথে আমার একটু দরকার ছিলো। -- কি দরকার? -- আজ আমার সাথে একটু শপিং এ যেতে হবে। তবে ভয় পাইয়েন না, আপনার পকেট কাটব না। -- কখন তবে আম্মু না বললে আমি যেতে পারব না। -- ১০টায়। আমি আন্টিকে রাজি করিয়ে নিবো। -- ওকে যাও তাহলে রেডি হয়ে আসো। সকালের নাস্তা করতে বসেছিলাম। আমাকে খেতে না দিয়ে জোর করেই নিয়ে আসলো। আজ নাকি বাইরে নাস্তা করাবে। মিতুর আজ হঠাৎ কি হলো, এমন ব্যবহার তো আগে করে নি। তবে রিধিমা যদি আজ কোন মতে মিতুর সাথে দেখে তাহলে আমার কি জানি করে। কি আর করবে, ওরে তো এখনো পটাতে পারি নি। তাছাড়া ও তো আমাকে ভালবাসেই না। মিতুর সাথে শপিং শেষ করে ১২টার পরে সকালের নাস্তা করে বাড়ি আসলাম। ফ্রেশ হয়ে একটু শুয়ে রইলাম হঠাৎ রুমে মা আসলো......... -- পাপন তোর বাবা একটু আগে ফোন দিছিলো। -- কেন? -- কাল সকালে তোর বাবার বন্ধু কোম্পানিতে যাবি। ওই খানে তোর চাকরীর ব্যবস্থা করছে। কাল ১০ টার দিকে শুধু দেখা করতে যেতে বলেছে। -- ওকে কিন্তু ঠিকানাটা? --রাতে তোর বাবা বাড়িতে আসলে জেনে নিস। -- ওকে। রাতে আব্বুর থেকে বসে ডিনার করার সময় ঠিকানাটা জেনে নিলাম। খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে শুয়ে বই পরছিলাম। হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো....... -- কে বলছেন? -- তোমার যম.......( একটা মেয়ে কন্ঠ) -- সরি মেডাম রং নাম্বার। এখনো বিয়ে হয় নি, বিয়ের আগে কেন তুলে নিতে চান এই অবলা শিশুটাকে। -- ওই চুপ করো তো, আমি রিধিমা.... --জানতাম...... -- কচু জানতে? -- হুমমম এবার বলো আমার নাম্বার পাইলে কই থেকে। -- সকালে তোমার বাড়ি এসে তোমার আম্মুর থেকে নিয়ে গেছি। -- কিন্তু আম্মু তো আমাকে কিছুই বলে নি। -- আমিই না করেছিলাম। -- ওকে এবার বলো হঠাৎ আমাকে কি দরকারে মনে পরল। -- কেন বিরক্ত করছি? -- বেশি না বুঝে দরকারটা বলো। -- কাল সকালে আমাকে নিয়ে একটু শপিং এ যেতে হবে। -- কী??(অনেক অবাক হয়ে, ও কি আমাদের দেখছে নাকি) -- যা শুনলে। -- কিন্তু আমি তো কাল সকালে যেতে পারব না। একটু দরকারি কাজ আছে। -- পারবে না তো ..... -- না -- পারবে না তো.... -- না -- সত্যি পারবে না তো....( গলায় কান্না কান্না ভাব) -- আরে না। -- ও তুমি থাকো তোমার মিতুকে নিয়ে..... ( মনে হয় কান্না করেই দিছে) বলেই ফোনটা কেটে দিলো। তারপর আমি ফোন ব্যাক করলাম কিন্তু ওর মোবাইল বন্ধ আসছে। ও কি আমাদের দেখেছে, আর দেখলেই এমন করার কি হলো। আর এই মেয়েরা না আজব পাবলিক। ওরা যে কখন কি যায় এটা কেউ বুঝে না। ওদের মন ফ্যানের থেকেও জোরে ঘুরে। কেমনে যে পরিবর্তন হয় এটা কোন মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব না। সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করছি। হঠাৎ রিধিমা সরাসরি আমাদের বাড়িতে আগমন.... -- আরে তুমি? -- কেন মিতু আসার কথা ছিল বুঝি? -- না না তবে...... -- তবে কিছু না আমি আন্টিরর সাথে দেখা করতে এসেছি। -- আরে রিধিমা কখন আসলে। (আম্মু চলে আসলো) -- হুমম বাধ্য হয়ে আসতে হলো। -- কি হয়েছে রে মা......(এমন ভাবে ডাকে মনে হয় নিজের বউ মা) -- একটা বিচার দিতে আসছি? -- কি বলো? -- আপনার ছেলে আমার সাথে ১ বছর ধরে প্রেম করে কাল রাতে ফোন দিয়ে ব্রেকআে করতে চায়। কিন্তু আমি যে ওরে কত ভালবাসি এটা ও বুঝলো না। এবার যা করবেন আপনিই করেন। ওই মেয়ের কথা শুনে তো আমি অবাক। আমার মুখে মাত্র ডিম দিয়েছিলাম, এটাও বার হয়ে গেছে। ১ বছর ধরে নাকি প্রেম করি। মাত্র ৪ মাস হলো আমি তাদের চিনি। রিধিমা বলে ছিলো ওরে পটাতে কিন্তু ও আজ এটা কি করলো...... -- পাপন এই গুলো কি সত্যি...? -- জানি না। আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। -- ওকে যা কোন মতে খাওয়া রেখেই দৌড়ে বাড়ি থেকে বার হলাম। কিন্তু রিধিমা মায়ের সাথে কি যেন নিয়ে কথা বলছে। নয়ত আর কি কি বিচার জানি দিতাছে। প্রায় ২ ঘন্টা খুজার পরে অফিসে গেলাম। যেহেতু শুধু ঠিকানা জানি তাই খুজে পেতে একটু লেট হয়ে গেল। তারপর পারমিশন নিয়ে সোজা বসের রুমে গেলাম.... -- আসতে পারি স্যার.. -- হুমম আসো, বসো পাপন। -- ধন্যবাদ স্যার। -- আজ বিয়ের দিন কাজে আসার কি দরকার ছিলো। আমি তো তোমার বাবার বন্ধু। তাই তুমি আমার ছেলের মতই। আজ বিয়ে করো, আর ১ সপ্তাহ ছুটি তোমার। তুমি এখন যাও আমি রাতে দাওয়াতে আসবো। -- ওকে ( অবাক হয়ে) একি হলো রে বাবা আমার বিয়ে আর আমি জানি না। উল্টা এইসব কি হচ্ছে। বাড়ি থেকে আসলাম ২ ঘন্টা হলো, এর মাঝে আমার বিয়েও ঠিক হয়ে গেল। আর আমি কিছুই জানি না। আজ একটা প্রবাদ বাক্য মনে পরছে " যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়াপরশির ঘুম নাই " আমি আর লেট না করে বাড়ি পৌছে গেলাম। কিন্তু বাড়িতে এতো লোক কেন। -- আম্মু কি হচ্ছে এইসব? -- আজ তোর বিয়ে.... -- কিন্তু? -- কোন কিন্তু নেই, যা ছাদে যা। সব কিছুর উত্তর পারি। -- মানে? -- যা ছাদে যা কি আর করার তাই ছাদেই গেলাম। আরে এতো রিধিমা দাড়িয়ে আছে....... -- পাপন যদি চাও এই বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারো। (রিধিমা বলল তবে অন্য দিকে তাকিয়ে) -- তুমি বুঝলে কি ভাবে যে আমি আসছি। -- এইসব তুমি বুঝবে না কারন তুমি তো আমাকে ভাল বাসো না। --...............(শুধু ওরে দেখছি) -- যদি চাও মিতুর সাথে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারি? -- তাই করো.... -- আচ্ছা? ও কান্না করে দিলো আর চলে যেতে লাগলো। তাই আমি ওর হাতটা ধরে নিলাম...... -- এই... --.......... (শুধু কাদছে) -- রাগ হয়েছে আমার উপর....... -- আমি কে তোমার উপর রাগ করার? -- যদি বলি আমার সব.. -- তাহলে মিতু তোমার কে? -- তোমার সতিন। -- কী বললে? -- ভালবাসি তো পাগলী শুধু তোরেই.... -- চাপা কম মারো। ভালই যদি বাসো তাহলে পটাতে আসো নি কেন? -- পটিয়েছি তো তবে একটু ভিন্ন স্টাইলে? -- কিভাবে? -- শাহরুখ খান তার এক ছবিতে বলে ছিলো " তুমি যত মেয়ের কাছে যাবে, মেয়ে তত তোমার থেকে দূরে যাবে। আর যদি তুমি ওর থেকে দূরে যাও তাহলে ও তোমার দূরে যাওয়ার কারন জানতে তোমার কাছে আসবে। " -- তাই না.... -- হুমমম তাই। ( অন্য দিকে তাকিয়ে) -- কখনো না, তোমার সাথে এমন হয়ে গেছে বলে এখন শাহরুখের ডায়লগ বলে ভাব নিতেছো। -- ওই দেখ আমি ভাব নেই না। আর যদি বলো ভাব নেই তাহলে ভাব এটা আনার একটু বেশিই আছে। -- ওরে আমার ভাবওয়ালারে যাও তোমার সাথে কথা নাই.. রিধিমা রেগে গিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো..... -- ওই রাগ করলে? -- হুমম -- রাগ করে না টুনটুনি, কিনে দিবো ঝুনঝুনি কে বলেছে তুমি বোকা, তুমি একটা তেলাপোকা। -- কি বললে.. বলেই মারতে শুরু করলো। আর ভালবাসার এক মিষ্টি পথ চলার শুরু হলো। আর হা মার খাই বলে হাসবেন না, আপনাদের সবাইকে বিয়ের দাওয়াত রইলো |