***কালো মেয়ের ভালোবাসা*** - Printable Version +- Forums.Likebd.Com (http://forums.likebd.com) +-- Forum: বাংলা ফোরামস (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=228) +--- Forum: গল্প সমগ্র (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=14) +---- Forum: ভালোবাসার গল্প (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=45) +---- Thread: ***কালো মেয়ের ভালোবাসা*** (/showthread.php?tid=2048) |
***কালো মেয়ের ভালোবাসা*** - Maghanath Das - 02-21-2017 . ভার্সিটি ক্লাস শেষ, সবাই বাইরে বাসায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে.. দুষ্ট আর ফাজিল হিসেবে পুরো ক্লাসে বিখ্যাত ছিলাম,,সবাই ই সেটা জানতো। ফাজলামো করে ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে রুপার সামনে গিয়ে বললাম.. “তোকে আজ দারুণ লাগছে” কথাটা এমনভাবে বললাম যে আসলে কাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলছি সেটা বুঝার উপায় নেই.. রুপার পাশে রুপার বেস্ট ফ্রেন্ড মারিয়া দাড়িয়ে আছে.. রুপার সামনে গিয়ে যে কেউ যদি এমন মন্তব্য করে তবে সেটা চোখ বুঝে বলে দেওয়া যাবে রুপাকে বলা হয়েছে… তবে কথার ধরণ টা যেহেতু অন্যরকম ছিল তাই মারিয়া ভেবে নিতে পারে মারিয়া কে বলেছি… মারিয়া কিছুটা লজ্জাবতি হয়ে মুচকি হাসি দিল.. আমি মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম, “ঐ পেত্নী তোকে দারুন লাগছে বলিনি,পেত্নীর মত চেহারা তোকে কি কখনও দারুণ লাগতে পারে নাকি” কথাটা শুনেই মারিয়া মাথা নীচু করে কিছুটা দূরে গিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রইল.. রুপা বলল, “তুই সবসময় এমন ফাজলামো করিস আকাশ ভাল লাগে না..যা ভাগ এখান থেকে"। . রুপা মারিয়ার পাশে গিয়ে দাড়াল মারিয়ার মতো কালো বর্ণের মেয়েটা রুপার মত সুন্দরীর বেস্ট ফ্রেন্ড… আসলে এমনটাই হয়,বেশির ভাগ সুন্দরীর বেস্ট ফ্রেন্ড মারিয়ার মত মেয়েরাই হয়… আসলে মারিয়াকে আমার অনেক ভাল লাগে,কিন্তু সেটা কখনও প্রকাশ করিনি.. কেন ভাল লাগে এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সত্যিই অনেক কঠিন.. তবে আমার মনে হয় ওর বোকা বোকা মায়াবী চেহারা আর হাসিটার জন্যই ওকে ভাল লাগে… অবশ্য ক্লাসের অন্য কেউই কখনও ওর হাসি কিংবা ওর বোকা চোখ ছলছল করা চেহারাটার দিকে লক্ষ্য করেনি,করলে হয়ত ওরাও প্রেমে পড়ে যেত… আসলে সুন্দরীদের ময়দামাখা চেহারা আর তাদের কাষ্ঠ হাসি দেখতেই ব্যস্ত থাকে সবাই,তার আড়ালে মারিয়ার ভূবন ভুলানো হাসি দেখার সময় কোথায় ওদের…. আমার ব্যাপারটা আলাদা, মারিয়াকে ভাল লেগেছে ওরিয়েনটেশন ক্লাসের দিন থেকে.. ঐদিন ও আমার পাশে বসে ছিল, কেন জানি বারবার আড়চোখে ওর দিকে তাকাচ্ছিলাম.. আমি যে ওর দিকে তাকাচ্ছি আছি সেটা ও বুঝতে পারল আর বলল, “আমি দেখতে অনেক বাজে তাই বলে এভাবে দেখবেন না” ওর ঐদিনের কথাটার পর থেকে ওকে পেত্নী বলে ডাকি, মেয়েটা আমাকে অনেক পছন্দ করে,,অনেক চায় যা আমি বুঝতে পারি কিন্তু কখনও মারিয়া সেটা মুখ ফুটে বলে না কারণ এমনিতে ওকে অনেক অপমান করে বেড়াই,যদি কিছু বলে তবে হয়ত আরো কষ্ট হবে.. ওকে কষ্ট দিতে ভাল লাগে কারণ একমাত্র কষ্ট পেলেই ওর বোকা বোকা ছলছল চোখ দুটো দেখতে পারি.. . ক্লাসে অন্যসবার থেকে মারিয়া আমার সাথেই বেশি কথা বলে, তাই ওকে বেশি কষ্ট দেই.. এতকিছুর পরও ও মুখ ফুটে বলেনা কষ্ট পেয়েছি… রুপা অবশ্য ঝাড়ি মারে তবে মারিয়ার সামনে পারে না.. ইতির সামনে বললে মারিয়া বাধা দেয়… মারিয়া ওর বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, ক্লাসে বেশি সময় মারিয়া একাই থাকে.. তাই ক্লাসের ফাকে আমিই ওকে সময় দেই.. আসলে ঠিক সময় দেই না ওকে কষ্ট দেই… . পরদিন ক্লাসে, মারিয়ার আজ বোধহয় মন খারাপ..কিন্তু সকাল থেকে ওকে মন খারাপ করার মত কিছুই বলিনি.. ওর পাশে গিয়ে বসলাম, -কিরে তোর মন খারাপ? কি হইছে রে? -কিছুনা এমনি.. -বুজলি আমি খুব টেনশানে আছি.. -কেন? -তোকে নিয়ে.. (অনেকটা অবাক হয়ে তাকাল আমার দিকে) -আসলে তোর বিয়ে নিয়ে,তোর যেই পেত্নীর মত চেহারা তোকে কে বিয়ে করবে রে? (ও চুপ করে আছে) -রাগ করিস না আমার কথায় কিন্তু লজিক আছে… ব্যাগটা নিয়ে চোখটা লুকিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল.. এটা দেখে খুব খারাপ লাগল কারণ আজ পর্যন্ত ওকে যত বড় অপমান করেছি তাতে কখনও ও কাঁদে নি, শুধু চোখ দুটো ছলছল করতে দেখেছি.. কিন্তু আজ ও কাঁদল.. আমিও ক্লাস থেকে বের হলাম, কলেজ থেকে বের হলাম ততক্ষণে ও রিক্সায় উঠে গেছে.. চলন্ত রিক্সায় উঠে পড়লাম,মারিয়া কিছু বলল না এমনকি আমার দিকেও তাকাল না… মারিয়ার চোখ দিয়ে একটানা পানি পড়েই যাচ্ছে, কি বলব বুঝতে পারছি না, সরি বলা আবশ্যক কিন্তু শুধু সরি কি ওর কষ্ট কমাতে পারবে?? -বলছিলাম যে কাঁদছিস কেন? চুপচাপ কেঁদেই চলেছে, একবার ভাবলাম চোখের পানি মুছে দেই.. তারপর ভাবলাম ওকে কাঁদতে দেখেনি কখনও আজ দেখি … কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর মারিয়া বলতে লাগলো.... -যেদিন তুই আমার দিকে তাকিয়ে ছিলি,সেদিন থেকে তোকে খুব ভাল লাগত,কখন যে তোকে ভালবেসে ফেলেছি জানিনা..আর তাই তোর বাজে কথাগুলো শুনে খারাপ লাগলেও চুপ করে থাকতাম…তোর সব কথাগুলোকে ভালবেসে ফেলেছিলাম,আমি জানি দেখতে আমি মোটেও ভাল না,কালো দেখতে..কিন্তু কেউ কোনদিন আমাকে তোর মত এভাবে আমি দেখতে খারাপ এটা বলেনি… বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে তাই হয়ত বলেনি.. কিন্তু আমার গোপনে কে কি বলত তা জানতাম,তুই একমাত্র ছিলি যে গোপনে বলত না আমার সামনেই বলত… একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল আবার বলতে শুরু করল, -সারাদিন এটা ওটা করে সময় পার করে দিতাম,কিন্তু রাতটা কি করে পার হত নিজেই জানিনা.. রুমের দরজা বন্ধ করে সবার বলা কথাগুলো ভাবতাম আর কাঁদতে থাকতাম, কতরাত আব্বু দরজার সামনে দাড়িয়ে থেকেছে আমার জন্য,শুধু আমাকে খাওয়াবে বলে..কিন্তু দরজা খুলিনি জানি কষ্ট পেয়েছে.. কিন্তু আমার চোখের পানি দেখলে হয়ত আরো বেশি কষ্ট পেত… আয়নায় নিজেকে দেখলে মাঝে মাঝে অভিশাপ দিতাম নিজেকে, আর যিনি আমাকে বানিয়েছেন তাকে প্রশ্ন করতাম আমাকে কেন কালো বানিয়েছে? ইদানিং মরতে ইচ্ছা করে খুব, আর যখন তুই বিয়ের কথা বললি তখন ভেবেই নিয়েছিলাম বেঁচে থাকব না…কিন্তু এখন মত পাল্টিয়েছি,আমিতো বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ওনাদের নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব,কি দরকার আমার ভবিষ্যত সংসার নিয়ে ভেবে… আমার পরিবারটাই আমার কাছে সব আর যদি তুই………..,.. আর কিছু বলল না, -এটা কি হল?তোর যদি এই প্ল্যান হয় তবে আমি স্বপ্নের বউ,ছেলে মেয়ে,নাতি নাতনি পাব কই? (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে) -আরে তুই যদি আমায় বিয়ে না করিস তবে আমার স্বপ্নের বউটাকে পাব কই? (ওর শুকিয়ে যাওয়া চোখে আবার পানি জমেছে) -আচ্ছা দেখ ক্লাসে সব মেয়েগুলা মোটামুটি সুন্দরী,তুই ছাড়া…তো সবাই যেহেতু সুন্দরী সবার একটা কমন নাম হচ্ছে ‘পরী’..আর তুই আনকমন তাই তোর নাম ‘পেত্নী’.. এখন তুই বল আমার বউটা কি সবার থেকে আনকমন হবে না?? এটা শুনে ও হেসে দেয়।কান্না আর হাসি দুটা মিলিয়ে মারিয়াকে আমার কাছে তখন অপ্সরীর মতই লাগছে… মারিয়া তখন হেসে শুধু একটা কথাই বলল, “পেত্নীর ফাজিল জামাই".......... মোরাল:-কালো মেয়েদের ভালোবাসুন,এদের মনে কোন ছলনা থাকে না,এরা ধোকাঁ দিতে জানে না।জানে মন থেকে ভালোবাসতে,আপন করে নিতে।কালো মেয়েটার মনে কোন কালি থাকে না।কালো বলে তাকে কষ্ট দিবেন না,অপমান করবেন না,যদি পারেন তাহলে তার পাশে দাড়ান,তাকে উৎসাহ দিন,তার ভালোবাসা মেনে নিন।সর্বশেষ একটা কথাই বলবো কালো আছে বলেই সুন্দরের এত মূল্য।সুতরাং তাকে কালো না বলে নিজের মনে জমে থাকা কালিটা ও নিজের চিন্তা-ভাবনা ও দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন...। |