শেষ থেকে শুরু - Printable Version +- Forums.Likebd.Com (http://forums.likebd.com) +-- Forum: বাংলা ফোরামস (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=228) +--- Forum: গল্প সমগ্র (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=14) +---- Forum: জীবনের গল্প (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=44) +---- Thread: শেষ থেকে শুরু (/showthread.php?tid=2145) |
শেষ থেকে শুরু - Hasan - 02-22-2017 শেষ থেকে শুরু - - কোন মতেই আজ ঘুমাতে পারছিনা , কেন যানি চোখ থেকে অঝরে পানি পড়ছে আজ, খুব মনে পরছে ভালবাসার মানুষ গুলোকে। বাবা মা আর আবির কে। - আবির হলো অামার বেঁচে থাকার একমাত্র ভালোবাসার মানুষ, কারন অামার বাবা মা কেও বেঁচে নেই, অনেক আগেই তারা আকাশের তারা হয়ে গেছে। অামি অামার মামার বাড়ি থেকে মানুষ হয়েছি, মা বাবার পরে আবিরকে সব থেকে বেশি ভালবাসি । অাবির হলো অামার বয়ফ্রেন্ড, - আবির হলো সেই পাগলটা যে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসতো অামায়, অামার সাথে কথা না বলতে পারলে কাঁন্না শুরু করতো। অামার খাওয়ার কথা না বলা পর্যন্ত অাবির খেতো না, যতক্ষন তাকে আদর করে সোনা বাবু ঘুমাও না বলতাম সে কখনোই ঘুমাতো না। সে পুরোপুরি ঘুমানো পর্যন্ত ফোন কাটা চলবে না। পাগলটা ঘুমাইলে তার ঘুমান্ত নিশ্বাস শুনে, তাকে আলতো করে আদর করতে হতো তার পর ফোন কাটা হতো। অার এমন টা না হলে পাগল টা একদম ঘুমাতো না। - এই তো কিছু দিন আগের কথা, ওর সাথে কথা বলতে বলতে মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়, সেই রাতে অাবির অার ঘুমাই নি সারা রাত বসে কাটিয়েছে। পরের দিন সকালে জরুরি তলব দেখা করতে হবে, সকালে তাড়াতাড়ি করে দেখা করতে চলে গেলাম, দেখা করতে গিয়ে দেখি তার চোখ দুটো পুরো লাল। অামি রেগে গিয়ে বললাম, সারা রাত কি চুরি করতে গিয়েছিলে ঘুমাওনি যে, চোখটা লাল বানিয়েছো কেন?, - অাবির কোন কথা বলছিলো না, পাগলটা শুধু বললো তোমার কোলে একটু মাথা রেখে ঘুমাতে দিবে প্লিজ। ছোট বাবুর মতো করে আবদার টা করছিলো , অনেক কিউট লাগে যখন ও এমন করে কিছু চায়, অামিও তখন বললাম হ্যাঁ রাখো। - অাবির যখন কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।অামি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম , আর ভাবলাম ওর মুখটা এতো মায়া দ্বারা সৃষ্টি করেছে বিধাতা কি করে, মনে মনে ভাবছিলাম , এই মানুষটা যদি কখনো বদলে যায় তাহলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা বেকার হয়ে যাবে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চোখের কোন থেকে পানি গড়ে কখন যে ওর কপালে পড়লো বুঝতে পারিনি। - হঠাৎ করে উঠে বসে পড়লো আবির, দুই হাত দিয়ে অামার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো ,কি হয়েছে কাঁদছো কেনো তুমি। অামি কিছু বলতে পাচ্ছিলাম না। শুধু বললাম , আমার হাতটা কখনো ছাড়বে না তো?? আমি সত্যিই তোমায় ছাড়া অসম্পূর্ন। আবির তখন অামার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো, এই পাগলী আমি যে তোমাই ছাড়া অচল তুমি বুঝো না। লতা যেমন বৃেক্ষর উপর নির্রভরশীল আমি ঠিক তেমনি তোমার উপর, বৃক্ষ যখন লতাকে ছেড়ে দিলে লতার অস্তিত্ত্ব খুজে পাওয়া যায়না,তেমনি তুমি কখনো আমায় ছেড়ে গেলে আমার অস্তিত্ত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। কথাটা শুনে অাবির কে জরিয়ে ধরে বললাম আল্লাহ ছাড়া কেউ জেনো আমাদের আলাদা করতে না পারে, - কিন্তু আজ সেই পাগলটাই অামাকে ভুলে কি করে থাকতে পারে ভাবতেই বুকের ভিতরটা কেঁপে কান্না অাসে, অাবিরের কি হয়েছে ও অামার সাথে কেন এমনটা করছে কিছুই বুঝতে পারছি না। কিছু বললে বলে অফিসের কাজের খুব চাপ তাই ফোন করতে পারেনা, - সত্যিই কি এতোটা ব্যস্তো থাকে আবির, যে দিনে ঘন্টায় একবার ফোন করতো,সে এখন দিনে একটি বারোও ফোন করতে পারে না, এখন একটি বার এস এম এস করেও জিজ্ঞেস করে না , তুমি খেয়েছো কিনা, এখন কি এতোটাই টায়াড থাকে যে রাতে ঘুমনোর আগে একটি বার ও বলতে পারে না, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো আমি ঠিক আছি। না আর পাচ্ছিনা এই ভাবে কষ্টটা সহ্য করতে।তাই এই সম্পর্কটা শেষ করতে হবে, কথাটা মনে হতেই বুকের ভিতরটা কেপে উঠলো অামার ,একি ভাবছি অামি , এটা কি করে সম্ভব? হঠাৎ ফজরের আযানের ধ্বনি, একি সারা রাত শেষ হলো কখন বুঝতেই পারলাম না। - বিছানা ছেড়ে ওযু করে নামায এ বসলাম, মুনাজাতে শুধু একটাই জিনিস চাইলাম বিধাতার কাছে, আমার আগের আবিরকে ফিরিয়ে দাও, আর কিছুই চাইনা, অাবির ছাড়া যে অামার এখন আর কেও নেই, সবাই কে তো তুমি তোমার কাছে নিয়ে গেছো ওকে অন্তর্ত আমায় দাও। - সকাল ১০ টা বেজে গেলো হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো আবির ফোন করেছে , রিসিভ করে হ্যালো বললাম অাবির শুধু বললো ১১ টার মধ্যে আমি ঠিক সময় চলে আসবো।সব সময় যেখানে দেখা করি সেখানে। তুমিও ঠিক সময় মতো চলে এসো। এই বলে ফোনটা রেখে দিলো, - অামি রেডি হবার জন্য আলমারিটা খুললাম, কি পড়বো বুঝতে পারছিনা, শুধু কাঁন্না পাচ্ছে একটি কথা মনে হতেই আজ ওর সাথে তার সম্পর্কের শেষ দিন। হঠাৎ লাল ড্রেসটা চোখে পড়লো, কিছু দিন আগে এই ড্রেসটা পড়ে দেখা করতে গিয়ে ছিলাম, তখন অাবির বলছিলো তোমায় বউ এর মতো লাগছে খুব লজ্জা পেয়ে ছিলাম কথাটা শুনে, হঠাৎ খুব জোড়ে ঝড় শুরু হয়েছিলো এতো জোড়ে জোড়ে বাজ পড়ছিলো অামি ভয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম। অাবির তখন বললো, বউ বললাম লজ্জা পেলে এখন জড়িয়ে ধরলে লজ্জা পাচ্ছো না বুঝি। তখনি অাবিরকে ছেড়ে মাথাটা নিচু করে রাখলাম ।অার অাবির অমাকে রাগানোর জন্য বার বার বলছিলো, তোমাকে অনেক কিউট লাগছে, তাই লোভ সামলাইতে না পেরে ঝড়ের দোহাই দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম ওকে । - হঠাৎ আবার অাবিরের ফোন , সে বললো আমি এসে গেছি তুমি কোথায়। অামি বললাম এইতো ঘর থেকে বের হচ্ছি , এই বলে ফোন রেখে দেই, তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে একটা রিক্সা নিয়ে পার্কের গেটে এসে নামলাম, ভিতরে গিয়ে দেখি আবির দাঁড়িয়ে আছে। - অাবিরের কাছে এসে অামি অবাক হয়ে যাই , একি অামার দেওয়া টি শার্ট টা পড়ে এসেছে সে, রিলেশনের প্রথম বছরে ওকে গিফট করে ছিলাম ,কতবার পড়তে বলেছি কিন্তু অাবির পড়েনি যদি নষ্ট হয়ে যায় এই ভয়ে। তার পর আমাদের রিলেশনের ২য় বছরে, অনেক জোর করে পড়িয়েছিলাম টি শার্ট টি। সত্যিই ওকে সেই দিন অনেক সুন্দর লাগছিলো,অামি দুষ্টুমি করে বলে ছিলাম তোমার গালে ওটা কি গো। অাবির গালে হাত দিয়ে বলে কোই কিছু নাই তো, অামি তখন বললাম, আজব আমি দেখছি তো ওই তো কি যেন লেগে অাছে গালে, দেখি কাছে আসো ভাল করে দেখি। যখন ও কাছে এসে ছিলো, অামি বললাম চোখ বন্ধ করো, ও চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে অালতো করে গালে একটা কিস দিয়ে দোঁড়ে পালিয়ে চলে এসে ছিলাম, অাবির অনেক বার পিছু থেকে ডাকছিলো কিন্তু লজ্জায় পিছনে ফিরেও দেখি নাই। ওইদিনের পর আর কোন দিন ওকে এই টি শার্ট টা পড়াতে পারেনি । কিন্তু আজ হঠাৎ কেন পড়লো, সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই জন্য, কথাটা ভাবতে ভাবতে ওর সামনে গিয়ে এসে দাঁড়ালাম অনেক দিন পর দেখছি অাবির কে । - আজও অনেক সুন্দর লাগছে ওকে কিন্তু খুব শুকিয়ে গেয়েছে ও, আমি কেন জানি ওকে দেখে ওর প্রতি দুর্রবল হয়ে পরছি, কেন যানি ওকে বলতে ইচ্ছা করছে চলোনা আবার নতুন করে শুরু করি। হঠাৎ আমি উহু বলে উঠলাম,সাথে সাথে অাবির বললো, কি হলো অধরা,অামি তখন বললাম, কি যেন পড়েছে চোখে তাকাতে পাচ্ছিনা, কোই দেখি দেখি বলে দেখতে লাগলো আবির, কতো দিন পর আবির আমার এতো কাছে আসলো আমি ওর শরিরের গন্ধটা অনুভব করতে পাচ্ছি, অামার খুব ইচ্ছে করছে ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলতে ভালবাসি খুব ভালবাসি। - এই যে দেখো, তোমার চোখের পাপড়ি চোখের ভিতরে পড়ে ছিলো, অামি বললাম, ও অাচ্ছা এইটা, সে বললো হু এইটা, অামি তখন বললাম, আচ্ছা আবির চোখের পাপড়ি পড়লে নাকি সেই পাপড়ি হাতের তালুতে রেখে মনের ইচ্ছা বলে ফু দিলে নাকি সেই ইচ্ছাটা আল্লাহর কাছে উরে চলে যাই, আর সেই ইচ্ছাটা নাকি আল্লাহ পূর্ন করে, সে বললো যানিনা , তবে দিয়ে দেখো, হয়তো সত্যিও হতে পারে, - অামি চোখ বন্ধ করে ফু দিলাম আর আল্লাহর কাছে বললাম , বিধাতা আজকের এই দিনটা শেষ দিন না করে শুরু করার দিন করে দাও। ফু ফু ফু ফু? - সে বললো, এই কি করছো তুমি,আমায় ফু দিচ্ছো কেন? অামি চোখ খুলে আবিরের হাতটা ধরে শুধু বললাম, আবির আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা প্লিজ আমায় ছেড়ে যেওনা। আমায় সারা দিনে একবার ফোন দিও, রাতে ঘুমানোর আগে একবার বলো আমি ঘুমাচ্ছি তুমিও ঘুমাও। খাবার সময় হলে একবার একটু কষ্ট করে ফোনটা করে বলো খেয়েছো তো? প্রতি স্পতাহে আমায় নিয়ে ঘুরতে হবেনা মাসে একবার তোমায় দেখার জন্য সুযোগ দিও। একসাথে এতকথা বলে কাঁদতে শুরু করলাম, - আবির বললো পাগলি আমি কি কখনো তোমায় বলেছি আমি তোমায় ছেড়ে যাব?? আমি আগেও তোমায় যতটা ভালবাসতাম আজ ও ততটাই ভালবাসি - হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো আবির চোখ রাঙ্গিয়ে বললো দেখেন বাজ পরলে কিন্তু আমায় জড়িয়ে ধরবেন না বউ এর নিষেধ আছে হু,। আমি বললাম, ওকে ধরবোনা তো কি হইছে আমার অন্যের বরকে ধরতে বয়েই গেছে, গালটা ভেঙ্গচিয়ে। ওমনি বড় একটা বাজ পড়লো আমি দৌড়ে আবিরকে জড়িয়ে ধরলাম, সে বললো, এই যে মিস ললনা একটু ছাড়বেন অন্যের বরকে এমন করে ধরতে নেই ওকে,অমি তখন বললাম, এইযে শুনুন আমি মিসেস আবির আর যাকে ধরেছি সে মিঃ আবির মাই হবু হাজবেন্ট ওকে দিস ইস মাই প্রোপাটি ওকে। অাবির বললো, ওকে মেডাম ওকে, আমি আপনার প্রোপাটি আর কারো না, খুশি তো এই বার, অামি তখন হাসতে হাসতে বললাম, খুব খুব খুব খুশি এই দেখেন হাসছি হি হি হি হি হি। ................................ Writer ->#ইসরাত_জাহান_রাখি |