গল্প: লাভগ্রাফ - Printable Version +- Forums.Likebd.Com (http://forums.likebd.com) +-- Forum: বাংলা ফোরামস (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=228) +--- Forum: গল্প সমগ্র (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=14) +---- Forum: ভালোবাসার গল্প (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=45) +---- Thread: গল্প: লাভগ্রাফ (/showthread.php?tid=2146) |
গল্প: লাভগ্রাফ - Hasan - 02-22-2017 হ্যান্ডি ক্যাম টা নীলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভাবছি, নীলাকে ছেড়ে চলে যাবো নাকি আপন করে নিয়ে যাবো। কারন এ দুই অপশনের কোনটাই সহজ নয়। . আমি আর ভাবি ট্রেনে বসে আছি। যাচ্ছি ভাবির বাপের বাড়ি। ভাবি উত্ফুল্ল মনে বসে আছে, কিন্তু আমি অনেক নার্ভাস ফিল করছি। ভাবির ভাইয়ের বিয়ে। ভাইয়া হঠাত্ করেই অফিসের কাজে দেশের বাইরে গেলো। আর আমাকে বলে গেলো যেন ভাবির সাথে বিয়েটা খেয়ে আসি। আমি না বললেও কোন লাভ হয়নি। আমার না যাওয়ার জন্য যথেষ্ট কারন আছে, কিন্তু কোনটাই ভাইয়াকে বলার মত নয়। কারন, ওখানে গেলেই নীলার সাথে দেখা হবে। আর আমি সেটা চাইছি না। কিন্তু আমার আর নীলার ব্যাপার টা কেউ জানেনা, আর আমি কাউকে জানাতেও চাইনা। তাই কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। আর নার্ভাস ফিল করছি এই কারনে যে, নীলার সাথে যখন আবার আমার দেখা হবে, কি বলব ওকে? . প্রায় ১ বছর আগে ভাবির সাথে এখানে বেড়াতে আসি। তখন নীলাকে দেখি। মেয়েটাকে ভালো ও লাগে, কিন্তু ভয়ের কারনে ওকে কিছু বলা হয় না। তার কিছূদিন পর হঠাত্ একদিন নীলাকে রাজশাহীতে দেখি। শুরু হয় ওকে ফলো করা। আমার চাচাতো বোন নীলার সাথে পড়তো। তাই নীলা সম্বন্ধে ওর থেকে মোটামুটি ইনফরমেশন পেয়ে যাই। সাথে ফোন নাম্বারটাও। . শুরু হয় নীলাকে ফলো করা। কোথাও ঘুরতে গেলে, শপিংয়ে গেলে, অথবা অন্য যেখানেই যাক না কেন, আমি ওর পিছনেই আছি। সুযোগ বুঝে নীলাকে একদিন প্রপোজ করে ফেলি। কিন্তু নীলা বলে যে, ওর পক্ষে রিলেশনে জড়ানো সম্ভব নয়। আমিও ছেড়ে দেবার পাত্র নই, লেগেই থাকি ওর পিছে। মাঝখানে ওকে কয়েকদিন দেখতে না পেয়ে ওকে ফোন দিই। ফোনটা পিক হওয়া মাত্রই আমি বলি, "নীলা তুমি কোথায়? কয়েকদিন থেকে তোমাকে দেখি না।" উত্তরে একটা ছেলে মানুষের কন্ঠ ভেসে আসে। জানতে চায় আমি কে? আমি কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিই। . কয়েকদিন পর নীলা আসে। আমাকে দেখতে পেয়ে কাছে এসে আমাকে দুইটা থাপ্পড় মারে। আর বলে, আমার জন্য নাকি ও ওর ফ্যামিলীর কাছে খারাপ হয়ে গেছে। কারন সেদিন আমার কলটা ওর বাবা ধরেছিলো। আরও বলে, আমি যদি আর কোনদিন ওর ওর পিছু নিই, তাহলে ও আত্মহত্মা করবে। সেদিন থেকে আমি ওর পিছু ছেড়ে দিই। . কয়েকদিন পর নীলার ফোন আসে, বলে, আমার সাথে দেখা করবে। আমিও রাজি হয়ে যায়। কিন্তু সেদিন নীলা আসেনি। রাগ করে ফোনটা ভেঙে ফেলি, সাথে নীলার পিছুও ছেড়ে দিই। . মাস দুয়েক হয়ে গেলো, নীলার সাথে দেখা নাই। কথাবার্তাও নাই। আজকে ভাবির সাথে ওদের গ্রামে যাচ্ছি বিয়ে খেতে। আর এটাই ভাবছি, দেখা হলে দুজনের রিয়েকশনটা কেমন হবে। রীতিমত বিয়ে বাড়ির গেটে পৌছে গেছি। অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে গেট টাকে। লাইটিং ব্যবস্থাটাও অনেক সুন্দর হয়েছে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের যেন আনন্দের শেষ নেই। কমিউনিটি সেন্টার নামক আনন্দগ্রাসের ব্যবস্থার কারনে এই দৃশ্য গুলো শহরে আর দেখা যায় না। ভাবির ব্যাগ থেকে হ্যান্ডি ক্যাম টা বের করে শুরুতেই কয়েকটা ফটো তুলে নিলাম। . এদিক ওদিক উঁকি মারলাম, কিন্তু নীলাকে কোথাও দেখলাম না। রাত টা স্বস্তির মধ্য দিয়েই পার হল। সকালে নাস্তা করে এদিক ওদিক হাঁটছি আর ফটো তুলছি। গ্রামটা যথেষ্ট সুন্দর। বিশেষ করে বাচ্চাদের লাফালাফি আর ছোটাছুটির দৃশ্য। পিক তোলার জন্য পোজ দিতেও বলতে হচ্ছে না। সবমিলিয়ে ভালোই লাগছে। হঠাত্ চোখজোড়া আমার আটকে গেলো। একটা মেয়ে বাচ্চাগুলোর সাথে দৌড়াদৌড়ি করছে। আমি মুখটা ঘুরিয়ে উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। কারন এটা আর কেউ নয়, নীলা। হঠাত্ একটা ছেলে ভাইয়া ভাইয়া বলে দৌড়ে এসে বলল, ভাইয়া! আপুর কয়েকটা ফটো তুলে দেন। কি করব বুঝতে পারছি না। ধুর ছাই, যা হয় হবে, মুখটা ঘুরিয়ে নীলার দিকে তাকালাম। নীলা দৌড় দিয়ে কাছে এসে বলে, প্লিজ প্লিজ আমাদের কয়েকটা ফটো তুলেন। আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, -না মানে, আমি আসলে..। আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, -আমি নীলা, এই পাড়াতেই থাকি। আপনি? -জ্বী, আমি ফাহমি, -বিয়ে খেতে এসেছেন তাইতো? ওকে আমাদের কয়েকটা পিক তুলে দেন। আমি অবাক হচ্ছি, নীলা আমার সাথে এরকম বিহেভ করছে করছে কেনো? নীলা কি আমার সাথে অভিনয় করছে? ধুর! পুরা কনফিউজড। . নীলা ছোট ছোট বাচ্চা গুলোকে দুইদিকে নিয়ে দাড়ালো। আমি ফটো তুলার জন্য রেডি হলাম। ক্যামেরার গ্লাস দিয়ে নীলার মুখটা ওর পাশে দাড়িয়ে থাকা বাচ্চাদের মত মাসুম দেখাচ্ছে। দেখে মনেই হচ্ছে না যে, আমার মত কোন ছেলেকে ৪-৫ মাস পিছে পিছে ঘুরিয়ে পরে খালি হাতে ফিরিয়েছে। অনেক কয়েকটা ফটো তুললাম। নীলা আমার পাশে এসে দাড়িয়ে ফটো গুলো দেখছে আর হাসছে । আমি ওর মুখের মায়াভরা সেই হাসিটার দিকে তাকিয়ে আছি। . ওখান থেকে তাড়াতাড়ি করে চলে আসি। আমার মাথাটা কেমন যেন করছে। আমাকে জানতে হবে যে, নীলার কি কিছু হয়েছে? নাকি ও এমনিতেই এরকম করছে। একটা পিচ্চিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম, নীলার কিছু হয়েছে নাকি? -জ্বী, ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। -মাথা খারাপ হয়ে গেছে মানে? -মাথা খারাপ মানে মাথা খারাপ। আর ঐ,.....যে ডাক্তারটাকে দেখছেন, উনি নীলা আপুর চিকিত্সা করছেন। এটুকু বলেই পিচ্চিটা দৌড়ে চলে গেলো। এরকম উত্তর আমি মোটেও আশা করিনি। নীলার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? নাহ, আমাকে ভালো করে জানতে হবে। . কোট পড়া লোকটাকে আমি চিনি। রাত্রেই পরিচয় হয়েছে। ডা. আবির। নীলার চাচাতো ভাই। দূর থেকে দেখেই একটা লম্বা সালাম দিয়ে বলল, কি ব্যাপার ফাহমি ভাই? আমাদের গ্রামটা কেমন দেখলেন? -আমিও সালামের জওয়াব টা লম্বা করে দিয়ে বললাম, একা একা কি দেখব ভাই? সাথে করে ঘুরে দেখালেই তো পারেন। -ও... এই ব্যপার! আচ্ছা চলুন, ঘুরে দেখাচ্ছি। দুজনে হেঁটে হেঁটে গল্প করছি, আর গ্রামের অপরুপ সৌন্দর্য অবলোকন করছি। সুযোগ বুঝে ওকে বলে ফেললাম যে, নীলার কি হয়েছে? . বেচারা আমার দিকে কিছুটা আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে নিলো। হয়তবা ভাবছে এটা আমার জানার কি দরকার? ওর চুপ থাকা দেখে আমি আবারো জানতে চাইলাম। আমার বুক পকেটে থাকা কলমটা ও হাতে নিয়ে বলতে শুরু করল... নীলা ওর স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। - কখন? কিভাবে? -নীলার বড় ভাই নাই। আমাকেই বড় ভাই মনে করে। আমিও ওকে নিজের বোনের মত দেখি। নীলা ওর সবকথা আমার সাথে শেয়ার করে। ভালোমন্দ যেটাই বলি, ও সেটাই মেনে নেয়। কয়েকমাস আগে আমাকে বলে, একটা ছেলে ওর পিছে ঘুর ঘুর করে। নীলাকে নাকি প্রপোজ ও করে। আমি ওকে বলি এসব থেকে দূরে থেকে মন দিয়ে পড়ালেখা করতে। মাঝখানে অনেক লম্বা সময় ও আমাকে এ নিয়ে তেমন কিছুই বলেনি। মাঝখানে একদিন ছেলেটা ওকে ফোন করে, আর ফোনটা নীলার বাবা ধরে। নীলার ফোনে ছেলের কল আসায় ওর বাবা খুব রেগে যায়। নীলাকে অনেক বকাঝকাও করে। তারপর নীলা ছেলেটাকে একটু কঠোর ভাবে বলে যে, সে যেন ওর পিছু না নেয়। ছেলেটাও নীলার পিছু ছেড়ে দেয়। প্রায় মাসখানেক পর নীলা আমাকে বলে ও নাকি ছেলেটার সাথে দেখা করতে চায়। জানতে চেয়েছিলাম, কেন দেখা করবি? ও বলেছিলো দেখা করে আসার পর বলব। আমিও ওকে আর তেমন কিছু বলিনি। তারপর ও একদিন ছেলেটার সাথে দেখা করতে যায়। ছেলেটার সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় এক্সিডেন্ট করে। তারপর নীলা ওর পূর্বের সবকিছু ভূলে যায়। তারপর এভাবেই চলছে। চিকিত্সার দায়িত্বটা আমি নিজেই নিয়েছি। অনেকখানি এগিয়েছি, আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি নীলার এই সমস্যাটা দূর হয়ে যাবে। আর ওর পূর্বের স্মৃতি শক্তি আবার ফিরে আসবে। আরো দু চার কথা বলে ডা. আবিরের কাছ থেকে চলে এলাম। . নীলার ব্যাপারটা আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে। সেই ছেলেটা তো আমিই। নীলা তো আমাকেই দেখা করতে বলেছিলো। নীলা তাহলে এক্সিডেন্টের কারনেই দেখা করতে আসতে পারেনি? কিন্তু, নীলা আমাকে সেদিন দেখা করতে বলেছিলো কেনো? নীলা কি আমার প্রোপোজাল এক্সেপ্ট করত? নাকি অন্যকিছু? . বিয়ে বাড়িতে আমার ভাবটা এমন হয়েছে, যেন ওয়েডিং ফটোগ্রাফারের দায়িত্বটা আমাকেই দেওয়া হয়েছে। সারাদিন শুধু ভিডিও করা আর ফটো তুলতেই ব্যস্ত। যত দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দি করছি, তার মধ্যে নীলার দুষ্টামি ভরা হাসিটাই বেশি। এখানে আমাকে একা থাকতে হচ্ছে না। কমবেশি সবসময় নীলা আমার সঙ্গেই থাকছে। নীলার স্মৃতি শক্তিটা হারানোতে আমার বেশ উপকারই হয়েছে। অন্তত নীলার সাথে কিছুটা সময় তো কাটাতে পারছি। অবশ্য আমি নীলার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না। নীলা কিছুতেই আমার পিছু ছাড়ছে না। আমাকে যে ভালো লাগছে না, তা কিন্তু নয়। নীলার থেকে দূরে থাকতে চাইছি এ কারনে, যাতে আমি আবার ওর মায়ায় জড়িয়ে না পড়ি। কিন্তু তা কি সম্ভব? যে হাসিটা একবার দেখেই মায়ায় জড়িয়ে পড়েছিলাম, সেই হাসিটা বারবার দেখে কি করে মায়ায় না জড়িয়ে থাকা যায়? . বিয়েটা যথাযথভাবে সম্পূর্ণ হলো। এবার যাবার পালা। কিন্তু এখান থেকে যেতে আমার মোটেও ইচ্ছে করছে না। আমি যে আবারো নীলার মায়ায় জড়িয়ে পড়েছি। . ভাবছি, ভাবিকে নীলার কথাটা বলি। কিন্তু কি হবে? ডাক্তার বলল, নীলার স্মৃতি আবার ফিরে আসবে। ভাবিকে বললে হয়ত নীলার সাথে আমার সম্পর্ক টা মেনে নিবে। কিন্তু নীলা? নীলার স্মৃতি ফিরে আসলে নীলা যদি বলে, আমি ওর দূর্বলতার সুযোগ নিয়েছি। তখন কি বলব নীলাকে? এই ভাবনায় আমাকে সারাটা রাত নির্ঘুম কাটাতে হলো। . সকালে সবার থেকে বিদায় নিয়ে, ডা. আবিরের কাছ থেকেও বিদায় চাইলাম। ও বলল, কিছু একটা ছেড়ে যাচ্ছেন। এই বলে আমার বুকপকেট থেকে নেয়া কলমটা আমার বুকপকেটে রেখে দিলো। নীলার কাছে গেলাম, বিদায় বলার সময় ওর চোখের কোনটায় জমে থাকা অশ্রুফোটা দেখতে পেলাম। জানিনা এটার কারন টা কি? ক্যামেরাটা নীলাকে দিয়ে বললাম, স্মৃতি হিসেবে রেখে দিও। . নীলার হাতে ক্যামেরা টা দিয়ে ভাবছি, আপন করে নিয়ে গেলেই তো পারি। ছেড়ে যাচ্ছি কেনো? কিন্তূ নাহ, কোনটাই আমার জন্য সহজ নয়। হাসিমুখে বাই বলে মুখটা ঘুরিয়ে চলে যেতে লাগলাম। নাহ, এগোতে পারছিনা। হাতটা কেউ ধরে নিয়েছে। ঘুরে দেখি নীলার মুষ্টির মধ্যে আমার হাত। নীলা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, আপনি কি সত্যিই চলে যাচ্ছেন? আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম। নীলা আবার বলতে লাগল.. যে ছেলেটা সবসময় আমার পিছে পড়ে থাকত, কত অপমানের পরও আমার পিছু ছাড়তে চায়নি। সে ছেলেটা আজ আমাকে এভাবে একা রেখে চলে যাচ্ছে? আমি এবার যথেষ্ট অবাক হয়ে বললাম, তুমি এসব জানলে কি করে? তুমি তো স্মৃতি..........। নীলা আবার বলতে লাগলো, এই বিয়ের কয়েকদিন আগেই আমি সুস্থ হয়ে উঠি। আর সুস্থ হয়েই জানতে পারলাম, তুমি এই বিয়েতে আসছো। তাই আমি অসুস্থ থাকার নাটক করি। ভেবেছিলাম, আমার এই অবস্থা দেখে হয়ত তুমি আমাকে কোনভাবে আপন করে নিয়ে যাবে। কিন্তু তুমি............। -আমি কি? পাগলিটা আর কিছু না বলে আমার বুকে ঠাঁই নিলো। আমি পাগলিটার কপালে এক টুকরো লাভগ্রাফ এঁকে দিয়ে খুব শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলাম...... . . writter: অগোছালো হৃদয় (Nafis Intehab fahmi) |