পৃথিবীকে গিলে খাবে লোহিত দানব - Printable Version +- Forums.Likebd.Com (http://forums.likebd.com) +-- Forum: বাংলা ফোরামস (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=228) +--- Forum: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=13) +---- Forum: বিজ্ঞান জগৎ (http://forums.likebd.com/forumdisplay.php?fid=38) +---- Thread: পৃথিবীকে গিলে খাবে লোহিত দানব (/showthread.php?tid=423) |
পৃথিবীকে গিলে খাবে লোহিত দানব - Hasan - 01-14-2017 লোহিত দানব বা রেড জায়ান্ট আসলে প্রবীণ নক্ষত্র। এরা জীবনের শেষ সীমার কাছে পৌঁছে গেছে। এখন চলছে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। মহাবিশ্ব সৃষ্টির গোড়ার দিকে পুরো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিল মহাজাগতিক মেঘ। হাইড্রোজেনের মেঘ। সেসব মেঘ মহাকর্ষ বলের আকর্ষণের প্রভাবে প্রথমে পুঞ্জিভূত হতে শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে শুরু করে। ফলে পুঞ্জিভূত হাইড্রোজনের ঘনত্ব এবং তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। একসময় তাপমাত্রা এমন অবস্থায় আসে, যখন এর প্রভাবে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসগুলো পরস্পর যুক্ত হতে শুরু করে। এভাবে দুটো হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে হিলিয়াম নিউক্লিয়াস তৈরি হয়। এভাবে হাইড্রোজেন পুঞ্জিভূত হয়ে তৈরি করে ফেলে বিরাট বিরাট সব নক্ষত্র। নিউক্লিয়ার ফিউশনের ফলে গ্যাস নিউক্লিয়াসগুলো যুক্ত হওয়ার সময় বিরটা পরিমাণ তাপশক্তি নির্গত হয়। এভাবেই জন্ম হয় পূর্ণাঙ্গ একটা নক্ষত্রের। একটা নক্ষত্র কতকাল জ্বলবে,তা নির্ভর করে নক্ষত্রের ভেতরকার হাইড্রোজেনের মোট পরিমাণের ওপর। শুধু হাইড্রোজেনই নক্ষত্রের জন্মকালের সঙ্গী,তখন যে নক্ষত্রের ভেতর হাইড্রোজেন যত বেশি,তার ভরও ততো বেশি। এক কথায় হিসাবটা দাঁড়াচ্ছে-নক্ষত্রের ভরের ওপর নির্ভর করছে সে কতকাল জ্বলবে। সুর্যের কথাই ধরা যাক, এর বয়স মোটামুটি ৫০০ কোটি বছর। জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের ধারণা, সূর্যের জন্মকালে যে পরিমাণ হাইড্রোজেন এর ভেতর পুঞ্জিভূত হয়েছিল, স্বভাবিক প্রজ্জ্বলনে তা নিঃশেষ হতে এক হাজার কোটি বছর সময় লাগবে। বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখেছেন, কোনো নক্ষত্রের ভর যদি সূর্যের ভরের তিনগুণ হয়, তাহলে সেই নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের মাত্র দুই কোটি বছরেই ফুরিয়ে যাবে। কারণ ভর বেশি হলে মহাকর্ষীয় শক্তিও বেড়ে যায়। ফলে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হাইড্রোজেনের ওপর আরো বেশি মাত্রায় চাপ পড়ে। তাই হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসগুলো দ্রুত পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়। সেই অনুপাতে তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায় প্রচণ্ডভাবে। সেকারণে হাইড্রোজেনের জ্বলন চলে খুবই দ্রুত তালে। ধরা যাক, একটা বেলুনে বাতাস ভরা হচ্ছে। বাতাসে চাপে বেলুনটা ফুলে উঠতে শুরু করবে। সাধারণ বেলুন সংকুচিত অবস্থায় থাকে। বাতাসের চাপে সেই সংকুচিত অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। যতক্ষণ ভেতরে বাতাস থাকে ততক্ষণ বেলুন ফুলে থাকে। বাতাস বের করে নিলে সেটা আবার সংকুচিত হয়ে যায়। ঠিক এমন ঘটনাই ঘটে নক্ষত্রেরও জীবনে। মহাকর্ষ টানে হাইড্রোজেনের মেঘ পুঞ্জীভূত হয়ে সৃষ্টি করে নক্ষত্র। নতুন সেই নক্ষত্রের ভেতরে হাউড্রোজেনগুলো পরস্পরকে মহাকর্ষ বল দ্বারা আকর্ষণ করে। ফলে নক্ষত্রের ভেতরের হাইড্রোজেনগুলোর সংকুচিত হওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। আবার মহাকর্ষী বলের চাপে তার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের গ্যাস প্রচণ্ডভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায় সেই অনুপাতে। শুরু হয় হাইড্রোজেনের জ্বলন বা ফিউশন। ফিউশনকালে সৃষ্টি হয় আরো শক্তি। বেলুনের বাতাসের মত সেই শক্তিই নক্ষত্রকে ফুলিয়ে রাখে। এই অবস্থায় মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যেমন নক্ষত্রকে সংকুচিত করার চেষ্টা করে। তার সঙ্গে পাল্লা দেয় ফিউশনের কারণে উৎপন্ন শক্তি। সেই শক্তি সংকোচনে বাধা দিয়ে ঠিক রাখে নক্ষত্রের স্বাভাবিক আয়তন। এভাবে নিয়মিত জ্বলনের কারণে একসময় নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হাইড্রোজেন প্রায় ফুরিয়ে আসে। অন্যদিকে হাইড্রোজেন সংযোজিত হয়ে সৃষ্টি করে হিলিয়াম। হাইড্রোজেন ফুরানোর পর নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় অঞ্চল আবার সংকুচিত হতে থাকে। সংকোচনের কারণে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এর প্রভাবে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পাশের অঞ্চল সম্প্রসারিত হয়। কেন্দ্রীয় অঞ্চলের কেন্দ্রে থাকে অবশিষ্ট হাইড্রোজেন আর বাইরে হিলিয়ামের স্তর। প্রচণ্ড সংকোচনের দরুণ কেন্দ্রীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। সেই উত্তাপের প্রভাবে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বহিরাবরণটা প্রসারিত হতে থাকে। প্রসারণের কারণে নক্ষত্র তাপমাত্রা অনেকটাই খুইয়ে ফেলে। তাই এর উজ্জ্বলতা অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়। তাই ওই নক্ষত্রটাকে আর উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো দেখায় না। দেখায় টকটকে লাল। জ্যোতির্বিদরা মনে করেন, সূর্যের ভাগ্যেও জুটবে লোহিত দানবের দশা। এখন সূর্যের বাইরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৫ হাজার ৮০০ ডিগ্রি কেলভিন। লোহিত দানবে পরিণত হলে এই তাপমাত্রা কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার ডিগ্রি কেলভিনে। ব্যাসার্ধ বেড়ে হবে এখনকার ব্যাসার্ধের ১০০ গুণ। ওই অবস্থায় সূর্য গ্রাস করবে বুধ গ্রহকে। এরপর একসময় হিলিয়াম সংযোজনের দরুন সূর্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চল নিঃশেষিত হতে থাকবে। তখন এর বহির্পৃষ্ঠের আয়তন আরো যাবে বেড়ে। ধীরে ধীরে ধেয়ে আসবে পৃথিবীর দিকে। একসময় পৃথিবীকেও গিলে খাবে সূর্যের পরবর্তি রূপ লোহিত দানব। তথ্যসূত্রঃ দ্য ফার্স্ট থ্রি মিনিটস – স্টিভেন ওয়েনবার্ অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইমস – স্টিফেন হকি মহাকাশে কী ঘটছে – আব্দুল্লাহ আল মুতি |