Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

[গল্প] গন্তব্যহীন

Googleplus Pint
#1
চারপাশে গোধুলীর আলো ছড়াবে। পাখিরাও নীরে
ফিরতে শুরু করবে। চারদিকে সবকিছু গুছিয়ে নেয়ার এক
নিষ্প্রাণ কর্মব্যস্ততা। সে তো বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে
সময়ের কাজ। কিন্তু এই মুহুর্তে এখনও বেলা গড়িয়ে দুপুর
হয়নি। চারপাশটা বড্ড কোলাহুলে। এতকিছুর মধ্য থেকেও
নিজের মধ্যে কেমন এক থমথমে ভাব বিরাজ করছে।
গোসল সেরে প্যান্ট শার্ট পড়ে নিলাম। প্যান্ট টা একটু
বেশিই পুরাতন হয়ে গেছে বটে। তবে শার্টটা সেটা
সামলিয়ে নিচ্ছে। নীল রংয়ের এ শার্টটা অরিনেরই দেয়া।
অরিন সবসময় বলতো ওর সাথে এ শার্টটা পড়ে একদিন
দেখা করি। ইচ্ছে করেই করিনি কখনো। প্রতিবার বলার
পরেও যখন আমি এমনটা করতাম তখন ও খানিকটা মন খারাপ
করতো। মাঝে মাঝে রেগে যেতো। অথচ আজ নিজ
থেকেই পড়ে যাচ্ছি। ওকে একবারও বলতে হয়নি।
গেট দিয়ে ঢুকতেই টের পেলাম আয়োজন অনেক
বড়। একটু দূর থেকেই অরিনের কাজিন অর্জিতা আমায়
দেখে এগিয়ে আসলো। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে
মেয়েটা বেশ চিন্তিত। আমি একটু হাসলাম।
- আপনি এত দেরী কেন করলেন? সেই কখন থেকে
অপেক্ষায় আছি।
- এতবড় একটা ব্যাপার। সবকিছু গুছিয়ে আসবো তো। তা তুমি
কেন অপেক্ষা করছ?
আমার কথায় অর্জিতা চুপ করে গেল। তারপর আস্তে
আস্তে বলল, বুবুকে একবার শেষ দেখা দেখবেন না?
আমি কেবল একটু মুচকি হাসলাম। চোখ ছলছল করে
আসছে। কিন্তু না। এটুকুতেই এইভাবে ডিস্কোয়ালিফাইড
হওয়া চলবেনা। এখনও অনেক দেরী।
- শেষ দেখা কেন হবে? জীবন গতিশীল। হয়তো এর
গতিপথের কোনো এক কক্ষপথে খানিক সময়ের জন্য
আবারও দেখা হয়ে যাবে দুজনার।
তিনবছর রিলেশনের পর সেদিন অরিন যখন বলল ওকে
আবারও দেখতে এসেছিল। ছেলে স্কয়ার কোম্পানিতে
ভালো একটা জব করে তখনই আমি বুঝে গেছিলাম এবার
অরিন আর কোনো বাহানা দিয়েই বিয়ে আটকাতে
পারবেনা।
ওর চোখে মুখে আকুতি। হয়তো বলার চেষ্টা করছে
আমরা কি কিছুই করতে পারবোনা! আরো ভালো করে
বলতে গেলে তুমি কি কিছুই করতে পারবেনা? তাহলে
মুচকি হেসে আমারও উত্তর হতো আমার পক্ষে কিছুই করা
সম্ভব নয়। সেটা তোমারও জানা।
চাইলেই ভালোবেসে পালিয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু সুখে থাকা
যায়না। চাইলেই পালিয়ে যাওয়া যায় কিন্তু জীবনে স্বপ্নের
মত সফলতা হয়তো আসেনা।
বুবু আমাকে বলছিল আপনি আসলে আপনাকে যেন একবার
নিয়ে যাই ওকে দেখতে। কি জানি! হয়তো ওকেই
আপনাকে দেখাতে।
- আসুন আমার সাথে
- আমার না খুব খিদে পেয়েছে। আমি বরং একটু খেয়ে
নেই। না না। একটু কেন! এতবড় আয়োজন। পেট ভরেই
খেয়ে নিই কি বলো!
অর্জিতা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো
- আপনি এখন!
- আমি আসতে এমনিতেই দেরী। বরযাত্রী আসার সময়
হয়ে যাচ্ছে। পরে খাওয়ার সুযোগ নাও পেতে পারি। তাছাড়া
খিদে বেশি পেয়ে গেলে আমি আবার খেতে পারিনা।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও অর্জিতা একটা হাসি দিল।
অর্জিতা একটু পর ভিতরে গেল। আবার সাথে সাথেই ফিরে
এলো। খুব সম্ভবত ভিতরে খবর দিয়ে আসলো যে আমি
এসেছি। হয়তো ভিতরের মানুষটাই আবার পাঠিয়েছে
ওকে। আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য
- খাওয়া শেষ হইছে। এবার ভিতরে আসুন
- আগে একটা পান তো খাই। আমি কিন্তু কখনো দোকান
থেকে কিনে পান খাই না। কোনো দাওয়াতে গেলেই
খাই। ফ্রিতে পাওয়া যায় তো। বলেই দাত বের করে এক হাসি
দিলাম।
অর্জিতার মুখের চিন্তার ছাপটা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।
চিন্তায় ঘেমে যাচ্ছে ও।
- তুমি তো দেখছি ঘেমে যাচ্ছ। চলো ওই ফ্যানের
নীচে বসে দুজন একটু গল্প করি
- আপনি তো দেখি অদ্ভুত এক মানুষ। আপনাদের জন্য
আমারই খারাপ লাগছে আর আপনি কিনা এইখানে আমার সাথে
মশকরা শুরু করেছেন!
- আরে তোমার সাথে না করলে আর কার সাথে করবো
বলো?
এবার অর্জিতা আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হাত
ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে গেল।
আমাকে দেখে অরিন এমনভাবে তাকালো তাতে
অন্যসময় হলে আমি ঝড়ের পুর্বাভাস পেয়ে ঠিকই ভয়
পেতাম। কিন্তু এখন আমার কেন যেন ভয় লাগছেনা। এবারও
আমি দাত বের করে এক হাসি দিলাম
- সবকিছু প্লান মতো হবে কিনা সেটা নিয়ে চিন্তায় মরি আর
তুমি এইদিকে খাচ্ছ! তুমি কি এইখানে খেতে এসেছ?
- তোমাদের বাড়িতে এতবড় এক আয়োজন আর আমি না
খেয়ে চলে যাবো ব্যাপারটা কি ভালো দেখায়?
- হ্যা হয়েছে এবার.!
- তবে যাই বলো। খাসির রেজালা টা খুব ভালো হয়েছে।
আচ্ছা কোথাকার কোন বাবুর্চি তা জানো তুমি? না জানলে
খোজ নিয়ে অবশ্যই জানাবে তো
অরিন রাগত স্বরে বলল, তুমি যাবে? সবকিছু ঠিকঠাক করা আছে
তো?
এ কথাটাও আমি ঘোরানোর চেষ্টা করলাম। বললাম,
- শার্টটা চিনতে পারছো? কেমন মানিয়েছে বললে না
তো!
ঠাস করে অরিন এক চড় মারলো আমাকে।
- তুমি এইখানে আসছো আমার সাথে ফাইজলামি করতে?
একটু মুচকি হেসে বললাম,
- দেখো অরিন। আর কিছুক্ষণ পরেই তোমার বিয়ে।
- হ্যা আমি জানি। সেজন্যই আর দেরী করা ঠিক হবেনা। রাজু
তোমাকে কিছু বলেনি? প্লান কি ওইটাই নাকি কোনো
চেঞ্জ করেছ?
এবার আমি খানিকটা নীরবতা নিয়ে বললাম, যার সাথে তোমার
বিয়ে হবে সে কি করে জানো? স্কোয়ার
কোম্পানিতে ভালো একটা পদে জব করে। মাসে তার
বেতন কত জানো? ষাট হাজার টাকা।
খানিকটা অবাক হওয়ার ভঙ্গীতে অরিন বলল, তুমি ঠিক কি
বলতে চাইছো?
গলাটা কেমন যেন ধরে আসছে। তবুও আমাকে আজ
বলতেই হবে কথাগুলো।
- জীবনটা কোনো সিনেমা নয় যে বিয়ের দিন বরযাত্রী
আসার ঘন্টাখানেক আগে সবার চোখ ফাকি দিয়ে কনেকে
নিয়ে তার প্রেমিক পালিয়ে যাবে। কিংবা হিরোদের মত
সবাইকে মেরে তুলে নিয়ে যাবে। পরবর্তীতে সংসার
সব বাধা অতিক্রম করে জয়ী হয়ে যাবে।
- তবে কি তুমি!
- হ্যা আমি কোনো প্লানই করিনি। আরো ভালো করে
বলতে গেলে আমরা পালাচ্ছি না।
ধপ করেই বসে পড়ল অরিন। ওর চোখ দুটো ছলছল
করছে। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার মত সাহস নেই
এখন আমার।
- তুমি কি বলছো এসব! স্বার্থপরের মতো তুমি এভাবে
আমায় ছেড়ে যেতে পারোনা
- জগতের প্রত্যেকটা মানুষই স্বার্থপর।
অরিন আমার গালে আরো দুইটা চড় মেরে বলল,
- এভাবে স্বার্থপরের মত যদি ছেড়েই চলে যাবে তবে
কেন সেদিন ভালোবেসেছিলে? কেন আমাকে স্বপ্ন
দেখিয়েছিলে। আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হবে। আর
কেনই বা আমার স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে এখন বলছো
পালানো সম্ভব নয়!
আমি কোনো উত্তরই দিতে পারলাম না। আমি কেন এমন
করছি সেটা তোমারও অজানা নয় অরিন। তুমিও খুব
ভালোভাবেই বুঝতে পারছো। শুধু ভালোবাসা দিয়েই
জীবন চলে না। জীবন চালাতে গেলে আরো অনেক
কিছুরই দরকার হয়। বলতে পারলাম না অরিন, তুমি হয়তো
ভাবছো আমি তোমাকে ঠকিয়েছি। কিন্তু তুমি কি জানো
আমি আমার নিজের কাছেই ঠকে গেছি!
- তুমি এখান থেকে যাও। আর কোনোদিন আমি তোমার
মুখ দেখতে চাইনা।
আমি কিছুই বললাম না। কেবল চুপ করেই বেরিয়ে আসলাম।
আজ কোনো কথা জবাব দেয়ার দিন নয়। আজ অরিনকে
বলতে দেবার দিন। সবকিছু মেনে নেয়ার দিন। আজ
শোনার দিন শুধু আমার
আসার সময় অরিনকে ভালো থেকো কথাটা বলা হয়নি।
তবে কি আবার যেয়ে বলে আসবো?
না থাক! ও যেমন থাকার থাকবে। আমার বলাতে তা বিন্দুমাত্র
পরিবর্তন হওয়ার কারণ দেখিনা।
ভাগ্যিস আগেভাগে খেয়ে নিছিলাম। নতুবা এতগুলা চড় খাওয়ার
পর এখন আর খেতেও ইচ্ছা করতো না। হাহাহা।
জীবন কি অদ্ভুত তাইনা! ভাবছেন এরপরেও আমি কিভাবে
খাওয়ার কথা চিন্তা করি! কিংবা স্বার্থপরভাবে নিজের ভালোবাসার
মানুষটাকে ছেড়ে কিভাবেই বা চলে যাচ্ছি? ভাবতে থাকুন
আপনারা।
আর লেখাপড়া শেষ করে এখনও কোনো চাকরি না পাওয়া
একটা ছেলে ভাবছে গতকাল টিউশনির টাকাটা পাওয়া যায়নি। আজ
দেবে বলেছিল। আজ যেতেই হবে। টাকাটা পাওয়া
গেলে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হবে। ছোট ভাইটার
অনেকগুলা বই কেনা বাকি রয়েছে।

- আহমেদ ফয়েজ
post: হেমন্তে বর্ষায় আমি
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  [গল্প] রিফাত ও সামিয়া অসাধারন গল্প Hasan 0 2,233 01-02-2018, 05:09 PM
Last Post: Hasan
  বন্ধুত্ব Hasan 0 1,878 01-02-2018, 04:48 PM
Last Post: Hasan
  আমি আর বলবো না তুমি ভালবাস আমাকে Hasan 0 2,102 01-02-2018, 04:48 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] অতৃপ্ত মন Hasan 0 2,001 01-02-2018, 04:47 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] মহাকাল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এক অশ্বথ বৃক্ষ! (কোন গল্প নয় । একটা অনুভূতি) Hasan 0 1,724 01-02-2018, 04:47 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] ভর-দুপুর Hasan 0 1,719 01-02-2018, 04:46 PM
Last Post: Hasan
  গল্প : সাদা-কালো Abir 0 1,907 01-02-2018, 04:44 PM
Last Post: Abir
  [গল্প] তিতির Abir 0 1,906 01-02-2018, 04:42 PM
Last Post: Abir
  [জানা ও অজানা] ‘অশালীন’ পোশাক পরায় ফের সমালোচনায় দীপিকা Salim Ahmad 0 1,828 06-11-2017, 12:14 AM
Last Post: Salim Ahmad
  গল্পঃ স্মৃতির অনুভূতি Hasan 0 1,788 03-01-2017, 06:33 PM
Last Post: Hasan

Forum Jump:


Users browsing this thread: 1 Guest(s)