Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

[গল্প] ছদ্দবেশ (ভুতের গল্প)

Googleplus Pint
#1
আমার ছোট্ট মেয়েটির বয়স এখন নয় মাস।
ডাক্তাররা বলেন একটি শিশু সাধারণত ৭ থেকে ১২ মাসের মধ্যে প্রথম শব্দটি বলে। আমাদের রিশিতা এখনও কোন কথা বলেনি। তবে লক্ষন দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো মুহূর্তে সে তার প্রথম শব্দটি উচ্চারন করবে। আমি আর আমার স্ত্রী তাই সারাক্ষণ অধীর আগ্রহে আমাদের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকি।
রিশিতা এখনও কোন অর্থবোধক শব্দ উচ্চারণ করেনি, কিন্তু সে সারাক্ষণই কিছু না কিছু বলছে। মুখের ভেতর বুড়ো আঙুল ঢুকিয়ে সারাক্ষণ হাত –পা ছোঁড়াছুড়ি করে আর মুখ দিয়ে ‘আবুজু গুজু বুজু’ – এই জাতীয় বিচিত্র সব শব্দ উচ্চারণ করে। আমার শাশুড়ি তো প্রায়ই বলেন, “কিরে অনিতা? তোর মেয়ে কি জাপানিজ বলে নাকি চাইনিজ? বাংলা বলে না কেন রে?”
বলবে! বাংলাই বলবে! নয় মাস তো হল। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। যখন তখন বাংলায় কথা বলে উঠবে সে! সেই অপেক্ষাতেই তো আমরা আছি!
আমার স্ত্রী, অনিতার ধারণা রিশিতা সর্বপ্রথম “মা” বলে ডাকবে। অনিতা সারাক্ষণ সেই প্রচেষ্টাতেই লিপ্ত। প্রায়ই সে মেয়েটির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে থাকে,
“মামনি, ‘মা’ বল তো, কই দেখি? বলো? বলো ‘মা’, কই বললে না?” অনেক্ষন চেষ্টা করেও সে রিশিতার মুখে মা ডাক শুনতে পায় না। শেষে হতাশ হয়ে বলে, “নাহ! এই মেয়ের মায়ের প্রতি কোন টান নেই”।
আমি দূর থেকে তাকিয়ে দেখি আর মুচকি হাসি।
আমার বিশ্বাস, অনিতা যতই চেষ্টা করুক না কেন, কোন লাভ নেই। রিশিতা প্রথমে ‘বাবা’ বলেই ডাকবে। সবাই বলে, ‘রিশিতা ঠিক তার বাবার মত হয়েছে। একই রকম নাক, চোখ, কান আর মাথার গড়ন!’ রিশিতা শুধু যে দেখতে আমার মত হয়েছে, তা নয়! সে তার মায়ের তুলনায় আমার কাছেই বেশি থাকে। রাতের বেলা অনিতা অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও মেয়েকে ঘুম পাড়াতে পারে না। কিন্তু আমি একটু কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই টুপ করে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার রিশিতা যখন কাঁদে, অনিতা অনেক চেষ্টা করেও তার কান্না থামাতে পারে না। আমি একটু আদর করে দিতেই – চুপ! তাই রিশিতা ‘মা’ বলার আগে ‘বাবা’ বলে ডাকাটাই খুব বেশি স্বাভাবিক। কিন্তু কবে ডাকবে? নয় মাস তো হয়ে গেল!
আজ রিশিতা খিচুড়ি খাবে। সব্জি, ডাল, ডিম দিয়ে নরম করে রান্না করা খিচুড়ি। অনিতা খুব যত্ন করে মেয়ের জন্য খিচুড়ি রান্না করে। রান্না ঘরের গরমে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে। এক হাতে চামচ দিয়ে নাড়তে থাকে, আর অন্য হাতে আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মোছে। এই সময়টাতে তাকে দেখতে খুব ভাল লাগে আমার।
খুব বেশি দিন হয়নি আমাদের বিয়ে হয়েছে। মাত্র দু’বছর হোল। ছোট খাট একটা চাকরি করি আমি, দুনিয়ায় আপন বলতে কেউ নেই। এদিকে অনিতাও তার বাবা মায়ের এক মাত্র মেয়ে। তাই বিয়ের পর থেকে দুজনে অনিতার বাবার বাড়িতেই থাকছি। একা থাকার চেয়ে মানুষের মাঝে থাকতে আমার বেশি ভালো লাগে। যদিও লোকজন আড়ালে ‘ঘরজামাই’ বলে টিটকারি করে। আমি আমলে নেই না। লোকে যা বলে বলুক, আমার কিছু যায় আসে না। এখানে আমি সত্যিই খুব ভাল আছি।
অনিতা মেয়েকে কোলের উপর বসিয়ে খিচুড়ি খাওয়াচ্ছে। হাতের মুঠোতে ছোট লোকমা বানিয়ে মেয়ের মুখের সামনে তুলে বলছে, “হা কর তো মামনি। এই যে দেখ কত মজা খেতে। খাও খাও”।
রিশিতা খেতে চাচ্ছে না। তার ছোট ছোট হাত ছুঁড়ে অনিতার হাত সরিয়ে দিতে চেষ্টা করছে।
অনিতা প্রায় জোর করে মেয়ের মুখে খিচুড়ির লোকমা ঢুকিয়ে দিল। রিশিতার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যেন চিরতার পানি খাচ্ছে। বহু কষ্টে সে খিচুড়ি গিলছে। তাই দেখে আমার খুব হাসি পেল। ভারী পাজি হয়েছে আমার মেয়েটা! অল্প বয়সে পাকনামো!
আরেক লোকমা হাতে নিয়ে রিশিতার মুখের সামনে ধরল অনিতা। রিশিতা আবার ফিরিয়ে দিচ্ছে হাত। খাবে না আর।
অনিতা জোর করল, “এই যে মামনি। খাও খাও। মুখ হা কর”।
রিশিতা তো কিছুতেই খাবে না! অতটুকুন মেয়ে কি জোরে মাথা নাড়ছে! আহারে!
অনিতা আবারো জোর করে তার মুখে খিচুড়ির লোকমা ঢুকিয়ে দিল।
তারপর যা ঘটে গেল তার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না!
রিশিতা “থু” করে মুখ থেকে খিচুড়ি ফেলে দিলো।
তারপর চিৎকার করে বলল, “রক্ত... রক্ত খাব...”
এক মুহূর্তের জন্য পাথর হয়ে গেল অনিতা। এটা ছিলো রিশিতার মুখের প্রথম শব্দ- ‘মা’ নয়, ‘বাবা’ নয়! “রক্ত”!
হাত থেকে খিচুড়ির প্লেট ফেলে দিল অনিতা। আতংকে মনে হচ্ছে তার চোখদুটো কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসবে! মেয়েকে এক পাশে ঝটকা দিয়ে ফেলে উঠে দাঁড়ালো সে। চিৎকার করে ডাকলো, “মাআআআআ! ও মাআআআ!”
পাশের ঘর থেকে হন্ত দন্ত হয়ে ছুটে এলেন আমার শাশুড়ি। “কিরে? কি হয়েছে?”
অনিতা ভয়ার্ত গলায় বলল, “তোমার নাতনি কি বলছে!
সে নাকি রক্ত খাবে! এ কোন পিশাচ জন্ম দিলাম আমি?”
শাশুড়ি হতবাক চোখে রিশিতার দিকে তাকালেন। রিশিতা আপন মনে হাতের পুতুল নিয়ে খেলছে। তিনি বললেন, “পাগল হয়েছিস তুই? দুধের শিশু! কথাই বলতে পারে না! সে খেতে চাইবে রক্ত?”
“বিশ্বাস কর মা। আমি নিজ কানে শুনেছি এই মাত্র”।
“তুই শুনতে ভুল করেছিস”
অনিতা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “এই তুমি কিছু বলছো না কেন? তুমি শুনেছো না রিশিতা কি বলেছে?”
আমি কিছু বলছি না। কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ! সবার ধারণাই ঠিক- রিশিতা আসলেই পুরোপুরি তার বাবার মত হয়েছে!
মেয়েকে নিয়ে আজ রাতেই বাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে। নাহ! মানুষের ছদ্মবেশে আর থাকা গেলো না....!!
Hasan
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  [গল্প] জানাযার লাশের ঘটনা Hasan 0 1,871 01-02-2018, 01:29 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] ব্যাপারটা যতটা না ভৌতিক তারচেয়ে বেশি রহস্যময় Hasan 0 2,033 01-02-2018, 01:29 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] ভৌতিক কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিলাম Hasan 0 2,208 01-02-2018, 01:26 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] রক্তখেকো (ভুতের গল্প) Hasan 0 1,886 01-02-2018, 01:23 PM
Last Post: Hasan
  ভুতের গল্পঃ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার Hasan 0 1,763 01-02-2018, 01:21 PM
Last Post: Hasan
  রহস্যকুঠীর রানী ( পিশাচ কাহিনী) কাহিনী : মানবেন্দ্র পাল Maghanath Das 0 4,767 02-20-2017, 04:16 PM
Last Post: Maghanath Das
  সত্যি কাহিনী অবলম্বনে- হৃদয় নাড়া দেয়ার মত গল্প। পুরোটা পড়ুন- ... Maghanath Das 0 2,318 02-20-2017, 04:13 PM
Last Post: Maghanath Das
  একটি সত্য ঘটনা। ভুত/প্রেত/জীন বিশ্বাস না করলে পড়বেন না কেউ। Maghanath Das 0 2,509 02-20-2017, 04:12 PM
Last Post: Maghanath Das
  অস্বাভাবিক তথ্য Hasan 0 1,932 01-17-2017, 08:04 PM
Last Post: Hasan
  আমার বাবার অসুস্থতা Hasan 0 2,008 01-17-2017, 08:03 PM
Last Post: Hasan

Forum Jump:


Users browsing this thread: 2 Guest(s)