Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

জলদেবী

Googleplus Pint
#1
।। জলদেবী ।।
লিখেছেনঃ আফরিন মৌনী
ওয়াশরুম থেকে টাওয়েলে মুখ
মুছতে মুছতে বের হয়ে
আসলাম আমি। মাহি বিছানায় উপুর
হয়ে,ল্যাপটপের
দিকে এক মনে চেয়ে আছে। অন-
লাইনে গল্প লেখে ও,গত
বইমেলায় একটা উপন্যাস বের
হয়েছে ওর। সামনের
বইমেলায় থাকছে বেশ কয়েকটি।
তবে,বাস্তব জীবনে
অসম্ভব রোমান্টিক হলেও রোমান্টিক
গল্প একদমই
লিখে না।
-মাহি....
-উমমম!!
মুখ না তুলেই,জবাব দিল ও।
-খেতে দিবা না?
-হুমমম!! দিব তো বাবু,আর পাঁচ মিনিট।
ওর পাঁচ মিনিট মানে,আরও আধা-ঘন্টা। মাহির
চোখ
এড়িয়ে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে
বারান্দায় চলে
এলাম। একটা শলা ঠোঁটে নিয়ে,আগুন
জ্বালাতে না
জ্বালাতেই চমকে উঠলাম মাহির তীক্ষ্ণ
কন্ঠস্বরে।
-মাহাদি....একদম সিগারেট খাবে না এখন।
পিছু ফিরতেই দেখলাম,কোমড়ে হাত
দিয়ে বারান্দার
দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ও!! শলাটা বাঁহাতে
নিতেই,মাহি
এগিয়ে বারান্দায় এলো। আকাশে
রূপোর থালার মত
একটা চাঁদ ভাসছে। মাহি আঙুল তুলে বাচ্চা
মেয়েদের
মত আমাকে চাঁদ দেখাচ্ছে।
-দেখ!! কওওওত্ত সুন্দর একটা চাঁদ।
মাহি হাসছে এখন। হাসলে ওর ডান গালে
টোল পড়ে।
আমি আলতো হাতে ওর টোলটা ছুঁয়ে
দিলাম। ও অবাক
চোখে আমার দিকে তাকাল।
-কি? খেতে দিবা না?? নয়ত তোমার
সুন্দর চাঁদটাকেই
খেয়ে ফেলব!!
-সরি!! দাঁড়াও এক্ষুণি দিচ্ছি।
জিবে কামড় দেয় মাহি। ওর কান্ড
দেখে হেসে
ফেললাম আমি। দ্রুত হেঁটে চলে
গেল ও। সিগারেটের
শলায় শেষ টান দিয়ে,পা বাড়ালাম
ডাইনিংয়ের দিকে।
আমাকে খাবার দিয়ে,পাশের চেয়ারে
বসে পড়ল ও।
নিজের প্লেটে খাবার নিয়ে নিল এবার।
-মারমেইড সম্পর্কে কোন ধারণা
আছে তোমার?
আচমকা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল ও।
-মারমেড?? ইউ মিন মৎসকন্যা??
অর্ধেক মানবী,অর্ধেক
মাছ..রাইট??!!
-হুম তাই। ধারণা আছে??
-উমমম!! ওগুলো তো মিথলজিক্যাল
ক্যারেক্টার কিংবা
ক্রিয়েচার। হঠাত এগুলো নিয়ে
পড়লে??
অবাক হলাম আমি। খাওয়া থামিয়ে ওর দিকে
তাকালাম
এবার।
-পড়তাম না। একটা গল্পের জন্য এ নিয়ে
কিছু ইনফরমেশন
দরকার ছিল। জানো বেশ অদ্ভুত কিছু
ইনফরমেশন পেলাম!!
-তাই?? তা কি পেলে??
ওর মুখের রং বদলে গেছে। বেশ
চিন্তিত লাগছে ওকে।
হেসে ফেললাম আমি। সামান্য বিষয়েও
ওর এত চিন্তা!!
-2500 থেকে 605 খ্রিষ্টপূর্বে
মেসোপটেমিয়ান
সিমেটিক রাজ্য অ্যাসিরিয়া(Assyria) এর
সৌন্দর্য্যের
দেবী অ্যাটারগ্যাটিস(Atargatis)
নিজেকে মাছে
রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেন,তাঁর মানব-
প্রেমিকের
দূর্ঘটনায় নিহত হবার শোকে। কিন্ত তার
সৌন্দর্য্যের
কাছে হার মেনে যায় সমস্ত প্রয়াস।
ফলস্বরূপ তাঁর
কোমরের নিচ অর্ধাংশ পরিণত হয়
মাছে,আর উপরের
অর্ধাংশ ঠিক থাকে। ধারণা করা হয় মারমেড
তথা
মৎসকন্যারা এই অ্যাটারগ্যাটিসের কন্যা।
-বাহ্!! দারুণ তো!!
-হুম।
মজা করার লোভ সামলাতে পারলাম না
আমি।
-তা এই মত্স্যকন্যাদের বাবা কে?
জানি এবার মিসাইলের মত ছুটবে ও।
হেসে ফেলল প্রশ্ন
শুনে। আবার গালে টোল পড়েছে।
বাঁ হাতে কপালের
ছোট চুলগুলো সরিয়ে আমার
চোখের দিকে তাকাল ও।
-মানব পুরুষ সম্প্রদায়।
একটু খটকা লাগছে। দেবীর
সন্তানের পিতা মানুষ!!
-কি বল? মানুষ কি করে হয়?
-হুম হয়। এই অ্যাটারগেটিস নানা সময়ে
নানান পুরুষের
প্রেমে পড়লে এই কন্যাদের জন্ম
হয়। আর
অ্যাটারগ্যাটিসের কন্যারাও বিভিন্ন
সময়ে,কখনও
জেলে,কখনও নাবিক কিংবা সমুদ্রে
বেড়াতে যাওয়া
মানুষের প্রেমে পড়ত। আর
প্রেমে পড়লে,তার সাথে
মিলিত না হওয়া পর্যন্ত তার পিছু ছাড়ত না।
আর
সবচেয়ে আজব কি জানো? আমি
বাংলাদেশেও এর
সন্ধান পেয়েছি। যার নাম "জলদেবী!!"
-জলদেবী!!
অস্ফুটে উচ্চারণ করলাম আমি।
-হুম জলদেবী!!
****
একুরিয়ামটার পাশে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের
মত্স্যকন্যাকে দেখছি একমনে। মাহি
ডাইনিং টেবিল
পরিষ্কার করে,এখন কফি বানাচ্ছে।
বেগুনী স্টার
ফিশটা কাচের গায়ে লেগে আছে।
হাত দিলাম কাচের
ওপর। একটা গল্প পড়েছিলাম। এই
মত্স্যকন্যা নিয়েই।
সমুদ্রদেব পসেইডান কন্যা
এরিয়েন,প্রেমে পড়েছিল
কোনও এক মনুষ্য রাজকুমারের।
এরিয়েন খুব সুন্দর গান
গাইতে পারত। পরবর্তীতে নানা ঘটনা
প্রবাহের মধ্য
দিয়ে এরিয়েনের মৃত্যু ঘটে। এই স্টার
ফিশেরা গয়নার মত
এরিয়েনের কানে,গলায় ডিজাইন করে
লেগে থাকত।
সবাই খুব ভালবাসত তাকে। এমনি
সমুদ্রদেব নিজেও তার
অন্যান্য পুত্র-কন্যাদের থেকে
এরিয়েনকেই বেশি
ভালবাসত। আর তাই তো,এরিয়েনের
মৃত্যুশোকে ক্ষুদ্ধ
পসেইডান বার বার পৃথিবীর বুক ভাসিয়ে
যায়।
মাহি কফির মগ নিয়ে কখন পাশে
দাঁড়িয়েছে বলতে
পারব না। আমার হাতে কফির মগ ধরিয়ে
দিয়ে
বারান্দায় যেতে বলল ও।
-মাহি!!
-উমমম!!
-বললে না তো!!
-কি??
-ডিনার টাইমে যা বলছিলে।
কৌতুহলি চোখে মাহি আমার দিকে তাকাল।
পাশ ঘেঁষে
বসতে বসতে কফিতে চুমুক দিল।
চাঁদের আলোয় সাদা-
নীল পোশাকে ওকে দারুন লাগছে।
গোল্ডেন
প্লোভারের মত বাদামী ত্বক চিকচিক
করছে। লম্বা-
সোজা লালচে চুলগুলো কোমর
ছাড়িয়ে নিচে নেমে
গেছে। আমার কাঁধে মাথা রাখতেই
ওকে আলতো করে
আঁকড়ে নিলাম।
-তার আগে একটা ছোট্ট গল্প
শোনো। চন্দ্রনগরের রাজা
ছিলেন রাজা রাজনারায়ণ রায়চৌধুরী। তাঁর
রানী
চন্দ্রিকা রায়চৌধুরী এক পূর্ণিমা রাতে
পুত্র সন্তানের
জন্ম দেন। রাজকুমারের সৌন্দর্য্য ছিল
অসাধারণ। ঠিক
তোমার মত।
আমার নাক টিপে দেয় ও। হেসে
ফেললাম আমি।
-এইটা কোনও কথা বললা??
-হুম!! সত্যিই তো বলছি। তারপরে
শোনো,রাজা
রাজনারায়ণ পুত্রের নাম রাখলেন
চন্দ্রকথন রায়চৌধুরী।
চন্দ্রকথন নিজের নামের মতই সুন্দর
ছিলেন। তিনি যখন
পঁচিশ বছরের যুবক,তখন একদিন সমুদ্র-
ভ্রমণে গেলেন তার
প্রিয় জাহাজ নিয়ে। বেশ কয়েকদিন
চলার পরে,জাহাজ
এক অচেনা দ্বীপে ভিড়ল। জন-মানব
শূণ্য সে দ্বীপে চলল
সবার আনন্দ-উল্লাস। আচমকা
রাজপুত্রের বন্ধু লক্ষ্য
করলেন রাজপুত্রকে দেখা যাচ্ছে না
কোথাও। সবাই
অস্থির চিত্ত তাঁকে খুঁজতে লাগলেন।
তিনদিন পর তাঁকে
অচেতন অবস্থায় দ্বীপের এক
কোণে পাওয়া গেল। এই
তিন দিনে,রাজপুত্র কোথায় ছিলেন তা
রহস্য-ই রয়ে
যায়।
-হুম। কোনও এক সুন্দরী মৎসকন্যা
তাঁকে কিডন্যাপ
করছিল।
মাঝখান থেকে টিপ্পনী কাটার
ফলস্বরূপ চুলটানা হজম
করতে হল।
-একদম ফাজলামী করবা না।
রেগে গেল মাহি। আমি কান ধরলাম।
-সরি। প্লিইইইইজ বলো।
-আর একটা কথাও বলবা না।
-ওকে ম্যাম।
মাহিকে সন্তষ্ট মনে হল।
-শোন তাহলে,তারপর সবাই তাড়াহুড়ো
করে চলে আসেন।
কিন্ত এক অজানা কারণে চন্দ্রকথন পাগল
হয়ে যান। আর
বার বার সাইরা নামের কাউকে খুঁজতে
থাকেন।
চন্দ্রকথনের কোনও ভাই না থাকায়,বন্ধু
নয়নমার্গ তাঁর
হয়ে রাজ্য শাসন করতে থাকেন রাজার
আদেশে। এর এক
বছর পর পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকে
ফেরার সময় ঝড়ের
কবলে পড়ে নয়নমার্গের জাহাজ।
অনেক কষ্টে
জাহাজ,সেই দ্বীপে ভিড়ায় মাঝিরা। পরদিন
সকালে
জাহাজ মেরামত করার সময়ে এক মাঝি
সমুদ্রের তীরে
দু/একমাস বয়সী এক কন্যা শিশুকে
দেখতে পান। ঠিক যে
জায়গায় চন্দ্রকথনকে পাওয়া গিয়েছিল।
নয়নমার্গ
বাচ্চাটিকে রাজ্যে নিয়ে আসেন।
আশ্চর্য্যের
বিষয়,চন্দ্রকথন মেয়েটিকে দেখা
মাত্রই শান্ত হয়ে
যান। ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে
ওঠেন। পরম মমতায়
মেয়েটিকে লালন-পালন করতে
থাকেন। কিন্ত মেয়েটি
ছিল বড্ড জল-ঘেঁষা। জলে নামলে আর
উঠতেই চাইত না।
-হুম। বুঝলাম। তারপর??
-বাকিটা কাল বলব। ঘুম পেয়েছে খুব।
লাল লাল চোখে আমার দিকে তাকাল ও।
ধীর পায়ে
বেডরুমে চলে গেল উঠে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে সাত-পাঁচ মেলানোর
চেষ্টা করতে
লাগলাম আমি। তাহলে কি সাইরা কোনও
মত্স্যকন্যা
ছিল!!
***
সূর্যের আলো চোখে লাগতেই
পাশ ফিরলাম। প্রচন্ড ঘুম
পাচ্ছে এখনও। মাহির ডাকাডাকিতে কান
দিচ্ছি না
মোটেও। শেষে বিরক্ত
হয়ে,উঠে বসলাম। মাহি আমার
সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কালো শাড়িতে
ওকে বেশ
লাগছে দেখতে।
-আর একটু ঘুমাই?
-একদম না। সাড়ে আটটা বাজে। ওঠো।
-নাউমমমমম।
আবার শুয়ে পড়লাম আমি। একটু পরই
টের পেলাম ফলাফল।
মাহি আমার মাথার নিচ থেকে বালিশ নিয়ে
গেল
একটানে।
-মাহাদিইইইইই.....ওঠো!! সাড়ে আটটা
বাজে।
শেষমেস উঠে বসলাম।
-নাস্তা টেবিলে রেডি,ফ্রেশ হয়ে
চলে এসো।
হুকুম দিয়ে চলে গেল ও। দ্রুত পায়ে
উঠে,ফ্রেশ হয়ে
নিলাম মাত্র! শার্টের বোতাম লাগানো
শুরু করতে না
করতেই ফোন বেজে উঠল।
সাজেদ ভাইয়ের ফোন.........
***
ভটভটির বিরক্তিকর ভটভট শব্দে কান
ঝালা-পালা
অবস্থা! ঘড়ির দিকে তাকালাম,সাড়ে পাঁচটা
বাজে।
সকাল ছ'টায় বাসা থেকে বেড়িয়ে
সোজা সাজেদ
ভাইয়ের বাসা গিয়েছিলাম। ওখান থেকে
পুরো টিম
নিয়ে বাসে করে হাকিমপুর অবধি
এসেছি। এরপর বাস
কিংবা গাড়ি চলার মত রাস্তা নেই। ভটভটি-ই
ভরসা।
মাটির খোয়া বিছানো উচুঁ-নিচু রাস্তায়
ভটভটি বিকট
শব্দে চলছে। মাঝে মাঝে নেমে
যেতে হচ্ছে প্রায়
একতলা বিল্ডিং সমান উঁচু ব্রিজে ওঠার
সময়ে।
আমাদের চারটি ভটভটি একসাথে মহরার
মত চলছে। শেষ
বিকেলের রোদ আর পথের ধূলো
মিশে প্রকৃতির এক
অন্যরূপ তৈরী করেছে। রাস্তার
দু'ধারে শুধু সবুজের
সমারোহ। ধানের ক্ষেতের উপর
বয়ে যাওয়া বাতাসের
ঢেউগুলো,ক্যামেরাম্যান রাকিব ধারণ
করছে। আমরা
চলছি চন্দ্রাছড়ি গ্রামে। স্থানীয় ভাষায়
একে
চন্দাছরি বলা হয়। এখানকার শতকরা প্রায়
আশি ভাগ
মানুষ চাষী।
শ্যূটিং ইউনিট নিয়ে চলে এসেছি আমি
আর খালাতো
ভাই সাজিদ অমি। দারুণ অভিজ্ঞ সাজিদ
ভাইয়ের প্রায়
প্রত্যেকটা নাটক-ই দর্শকপ্রীতি
অর্জন করেছে। সাজিদ
ভাইয়ের অভিনেতা নির্বাচন ক্ষমতা সত্যিই
অবাক করে
আমাকে। এবার ওনার "রূপালী নূপুর"
নাটকের শ্যূটিংয়ের
জন্য এখানে আসা। আমি সহকারী
পরিচালক হিসেবে
আজ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ওনার সাথে
আছি। গড়ে
নিচ্ছি নিজেকে।
এই গ্রাম-ই হচ্ছে মাহির বলা সেই
চন্দ্রনগর রাজ্য। তবে ও
তখন আমাকে সঠিক লোকেশান
বলতে পারে নি। গতকাল
রাতে মাহির কাছ থেকে বাকি গল্পটুকু
শুনেছিলাম।
চন্দ্রকথন,সেই মেয়েটির নাম দেন
চন্দ্রাবতী।
পরবর্তীতে তিনি সিংহাসনে বসেন এবং
বিয়ে করেন
লুসাই রাজকন্যা নয়নতারাকে। নয়নতারাও
চন্দ্রাবতীকে
মেয়ে হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে
চন্দ্রাবতী। তার অসামাণ্য রূপ-মাধূর্য্য
আর কমনীয়তার
সুনাম ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যে রাজ্যে। বহু
রাজাই তাকে
পুত্রবধূ কিংবা রাণী করার জন্য প্রস্তাব
দিতে লাগলেন
রাজার দরবারে। কিন্ত,চন্দ্রাবতী রাজি হল
না
কিছুতেই।
সেনাপতি বিম্বাসারের পুত্র বিভাসমোহন
ছিলেন
অসামান্য রূপবান যুবক। চন্দ্রাবতী তাকে-
ই মন দিয়ে
ফেলেছে। প্রণয় শুধু পরিণয়ে রূপ
নেয়ার অপেক্ষামাত্র।
রাণী নয়নতারার ভ্রাতুষ্পুত্র রাজপুত্র
রাথিনও
ভালবাসতেন চন্দ্রাবতীকে। কোনও
একভাবে জেনে
ফেলেন চন্দ্রা-বিভাসের প্রণয়ের
কথা। হিংসা আর
অন্তর্জালা মিটাতে হয়ে ওঠেন মরিয়া।
ষড়যন্ত্র করে
বিষাক্ত সাপের দংশনে হত্যা করান
বিভাসমোহন কে।
চন্দ্রাবতীর জেনে ফেলে সব।
কিন্ত মুখ খুললো না।
আগের চেয়ে জলে থাকার পরিমাণ
যেন তার আরও বেড়ে
যায়। রাজবাড়ির পেছনের দীঘিতে
প্রায় সারাদিন গা
ডুবিয়ে বসে থাকতে লাগল।
কন্যার এমন বিষন্নতায় চিন্তিত রাজা
চন্দ্রকথন,রাণী
নয়নতারার পরামর্শে লুসাই রাজপুত্র
রাথিনের সঙ্গে
চন্দ্রাবতীর বিয়ে ঠিক করেন। ফল হয়
উল্টো। চন্দ্রাবতী
স্বাভাবিক হবার পরিবর্তে দিন-রাতের প্রায়
চব্বিশ
ঘন্টাই পানিতে থাকা শুরু করল। বিবাহের দিন
সন্ধ্যাবেলায় চন্দ্রাবতীকে আর
খুঁজে পাওয়া যায় নি।
ধারণা করা হয়,সে দীঘিতেই নেমে
গেছিল।
কেননা,চন্দ্রাবতীর সমস্ত অলংকার
ঘাটের সিঁড়িতে
পাওয়া যায়।
কন্যা-শোকে রাজা পাগল হয়ে যান
আবার। ধ্বংস হয়
চন্দ্রনগর রাজবংশ ধীরে ধীরে।
লুসাই রাজকুমারের
পাপের অবসান হয়,লুমেক রাজার হাতির
পায়ের নিচে
পিষ্ট হয়ে।
শোনা যায়,তারপর চন্দ্রাবতীকে
অনেকেই দেখেছে
দীঘির জলে সাঁতার কাটতে। আর
আশ্চর্যের বিষয়,এ
পর্যন্ত বেশ কয়েকজন সুদর্শন
যুবকও লাপাত্তা হয়েছে
চন্দ্রনগরের রাজপ্রাসাদে ঘুরতে
এসে। তবে,এটাকে এক
প্রকার মিথও বলা চলে। আসলে কেউ-
ই এ সম্পর্কে সঠিক
ধারণা দিতে পারে নি। এখানকার বাজারে
দুপুরে
খাবার সময় এক প্রবীণের কাছ থেক
এক ফাঁকে জেনেছি
এ সম্পর্কে । তখন-ই সিওর হলাম,এর
কথাই মাহি বলেছে
আমাকে। স্থানীয়রা দীঘিটিকে বলে
"জলদেবীর
দীঘি"! প্রতি পূর্ণিমা রাতে নাকি এখনও
কোনও এক
নারীমূর্তিকে দেখা যায়!!
******
সাজেদ ভাইয়ার ডাকে চিন্তার ঘোর
ছুটল। পঁৌছে গেছি
আমরা। সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়।
ক্যাম্প সিস্টেমে তাবু
গাড়া হচ্ছে। আজ বিশ্রাম,কাল শ্যূটিং।
নাটকের হিরো
শুভ বেচার একদম কাহিল হয়ে
পড়েছে,নায়িকা
রিদিমারও একই অবস্থা।
রাত সাড়ে এগারটা। কেবল শুয়েছি। মাত্র
আড্ডাটা শেষ
হল। রীতিমত পার্টিও বলা চলে। মুরগীর
বারবকিউটা
অসাধারণ ছিল। প্রত্যেকেই অসম্ভব
এনজয় করেছি। আমি
আর সাজেদ ভাই একই তাবুতে শুয়েছি।
জেনারেটরেল
শব্দ,চারপাশের ঝিঝি পোকাদের হার
মানিয়েছে।
মোবাইলটা হাতে নিতেই
দেখলাম,তেইশটা মিসকল। হৈ-
হুল্লোড়ে কিছু টের-ই পাই নি।
সবগুলোই মাহির কল। তাবু
থেকে বেড়িয়ে এসে,সিগারেট
ধরালাম একটা। ফোন
দিলাম মাহিকে। জেনারেটরের শব্দ খুব
ডিস্টার্ব
দিচ্ছে। আর একটু এগিয়ে গেলাম
ধীর পায়ে। সবাই যার
যার নির্ধারিত তাবুতে,চারপাশ কেমন
নীরব। মাথার
উপর অদ্ভূত সুন্দর একটা চাঁদ। হাটতে
হাটতে দীঘির
সিঁড়িতে এসে বসলাম। পানিতে চাঁদের
পূর্ণ প্রতিফলন।
একদম টিউব লাইটের মত পরিষ্কার
আলোময় জোছনা।
-মাহাদী!!
-হুম!! বলো।
-কতবার ফোন দিছি তোমাকে?
-আর বইলো না,জেনারেটরের
শব্দে টের পাইনি কিছু।
-হুম!! জায়গাটা খুব সুন্দর না?
-অনেক। তোমাকে নিয়ে এখানে
আর একবার হানিমুন
করলে খারাপ হত না!!
-তাই নাকি?? তা আজ এত রোমান্টিক
হলেন যে জনাব!!
কাহিনী কি??
-কাহিনী কিছুই না।
-একটা গুড নিউজ আছে। আনন্দে নাচা-
নাচি করার
প্রস্তুতি নাও!
-নাচানাচি করার মত আনন্দের খবর?
কেমনে সম্ভব!!
মাহি হাসছে ফোনের অপর প্রান্তে।
কিন্ত সেই হাসি
স্পর্শ করছে না আমায়। চাঁদের আলো
যেন মুহুর্তে বেড়ে
গেছে!!
জল থেকে উঠে আসছে মেয়েটি।
পরনে তার নীল শাড়ি।
কোমড় সমান লম্বা কালো চুল আর
কাপড় থেকে ফোঁটায়
ফোঁটায় ঝরে পড়া পানিতে ভিজে
যাচ্ছে শান বাঁধানো
ঘাট। ভেজা পানপাতার মত মুখে এক
অপার্থিব মায়া।
কালো চোখের গহীনে আমি
তলিয়ে যাচ্ছি ধীরে
ধীরে।
-"জলদেবী!!"
অস্ফুটে উচ্চারণ করলাম আমি।
মেয়েটির পাতলা
গোলাপী ঠঁোটজোড়া তিরতির করে
কাঁপল বার দুয়েক।
হাত বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। চোখে
নিদারুণ
আহ্বান। এই আহ্বান এড়ানোর সাধ্য আমার
নেই। আমিও
সম্মোহিতের মত এগিয়ে যাচ্ছি। দূর
থেকে একটা সুরেলা
কন্ঠ ভেসে আসছে।
-তুমি বাবা হতে যাচ্ছ। মাহাদি...এই মাহাদি...মাহাদি
ইইইই.....
আমি মোহাবিষ্টের মত এগিয়ে যাচ্ছি।
কোমড় সমান
পানিতে নেমে গেছি মেয়েটির পিছু
পিছু। মেয়েটি এখন
গলাজলে। ডুব দিল মেয়েটি। আমি
নেমেই যাচ্ছি..........
পরিশিষ্টঃ
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে
অচেতন মাহাদি। পাশে
সাজেদ,মাহাদির মা আর মাহি। মাহি খুব
কাঁদছে,মা
ওকে বুঝাচ্ছেন বার বার। সে
রাতে,মাহাদির আসতে
দেরী দেখে সাজেদ ওকে
খুঁজতে বের হয়,নির্দেশক
নাঈমকে নিয়ে। দু'জন গিয়ে দেখতে
পায়
মাহাদি,দীঘিতে কোমড় সমান পানি
ভেঙে আর ভিতরে
যাচ্ছে। সাথে সাথে দু'জন মিলে
ডাকাডাকি শুরু করে।
শেষে দু'জনই নামে ওকে তুলতে।
উপরে তোলার সাথে
সাথে অজ্ঞান হয়ে যায় মাহাদি। রাতেই
ওকে শহরে
নিয়ে আসা হয়। ডাক্তার এসে চেক
করে আশ্বাস দিয়ে
গেছেন,সুস্থ আছে ও।
....তিন বছর পর....
জিহাদ,তামান্না,সজীব,নুহাশ,তিনা,মিষ্টি আর
তায়েফ
চন্দ্রনগর রাজবাড়ি ঘুরে ঘুরে
দেখছে। ওদের মধ্যে
সবচেয়ে সুদর্শন সজীব শখের
ফটোগ্রাফার। দীঘির
ভাঙাচোরা ঘাটে দাঁড়িয়ে,একের পর
এক ছবি তুলে
যাচ্ছে। আচমকা চোখ আটকে
গেল,ঘাটের শেষ প্রান্তে।
নীলরঙা একটা আচঁল ভেসে উঠছে
সেখানে..........
.
।। সমাপ্ত ।।
Hasan
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  [গল্প] জানাযার লাশের ঘটনা Hasan 0 1,876 01-02-2018, 01:29 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] ব্যাপারটা যতটা না ভৌতিক তারচেয়ে বেশি রহস্যময় Hasan 0 2,038 01-02-2018, 01:29 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] ছদ্দবেশ (ভুতের গল্প) Hasan 0 2,042 01-02-2018, 01:28 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] ভৌতিক কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিলাম Hasan 0 2,213 01-02-2018, 01:26 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] রক্তখেকো (ভুতের গল্প) Hasan 0 1,893 01-02-2018, 01:23 PM
Last Post: Hasan
  ভুতের গল্পঃ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার Hasan 0 1,770 01-02-2018, 01:21 PM
Last Post: Hasan
  রহস্যকুঠীর রানী ( পিশাচ কাহিনী) কাহিনী : মানবেন্দ্র পাল Maghanath Das 0 4,772 02-20-2017, 04:16 PM
Last Post: Maghanath Das
  সত্যি কাহিনী অবলম্বনে- হৃদয় নাড়া দেয়ার মত গল্প। পুরোটা পড়ুন- ... Maghanath Das 0 2,324 02-20-2017, 04:13 PM
Last Post: Maghanath Das
  একটি সত্য ঘটনা। ভুত/প্রেত/জীন বিশ্বাস না করলে পড়বেন না কেউ। Maghanath Das 0 2,514 02-20-2017, 04:12 PM
Last Post: Maghanath Das
  অস্বাভাবিক তথ্য Hasan 0 1,937 01-17-2017, 08:04 PM
Last Post: Hasan

Forum Jump:


Users browsing this thread: 3 Guest(s)